আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ৩৬

0
791

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৭
_________________

নিস্তব্ধতায় ঘেরা চারপাশ, পরিবেশটা থমকানো। প্রিয়তা এখনও অপূর্বের বুক বরাবর রিভলবার রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আর অপূর্ব তাকিয়ে আছে, তার চোখ যে কিছু বলছে এটা কি প্রিয়তা বুঝতে পারছে না, নাকি বুঝতে চাইছে না। অপূর্ব প্রিয়তার থেকে একপলক চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো সত্যি পৃথিবী যেন গোল অপূর্ব নিজেও ভেবেছিল প্রিয়তাকে কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই প্রিয়তা। আর ভাবতে পারছে না অপূর্ব।’

অন্যদিকে প্রিয়তা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে প্রায় অসহায় শব্দে আবারও বললো,

‘ আমার বাবাকে কেন মারলেন অপূর্ব?’

অপূর্ব চুপ থাকে এবারও কিছু বলে না। অপূর্বকে চুপ থাকতে দেখে প্রিয়তার যেন আরো রাগ হয়। তবে নিজেকে দমিয়ে রেখে শান্ত স্বরে বলে,

‘ কি হলো জবাব দিন তিন বছর আগে কেন মেরেছিলেন আমার বাবাকে? কি দোষ ছিল আমার বাবার অপূর্ব?’

অপূর্ব এবার অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে,

‘ এসব তোমায় কে বলেছে?’

‘ যেই বলে থাকুক না কেন আপনি শুধু বলুন কেন মেরেছেন আমার বাবাকে?’

অপূর্ব এগিয়ে যেতে নেয় প্রিয়তার দিকে। বলে,

‘ তুমি আমার কথাটা শুনবে,

উত্তরের প্রিয়তা বলে,

‘ একদম সামনে আসবেন না অপূর্ব ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুক না হলে আমি কিন্তু গুলি চালিয়ে দিবো।’

অপূর্ব দাঁড়িয়ে পড়ে বলে,

‘ তুমি আমায় মারতে পারবে না মেয়ে, তোমার হাত কাঁপবে।’

‘ আপনি আমার বাবার খুনি অপূর্ব?’

‘ তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আমি তোমার বাবার খুনি?’

প্রিয়তা হাল্কা হাসে। তারপর বলে,

‘ প্রমাণ, আপনি দেখতে চান অপূর্ব?’

বলেই নিজের ফোনটা বের করে একটা ভিডিও দেখায় অপূর্বকে। অপূর্ব দাড়িয়ে পড়ে, কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। অপূর্বকে থেমে যেতে দেখে বলে প্রিয়তা,

‘ কি হলো অপূর্ব এখন থেমে গেলেন কেন? পেয়ে গেছেন প্রমাণ এবার কি বলবে?’

অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ তুমি আমায় মারতে পারবে মেয়ে?’

প্রিয়তা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,

‘ আপনার জন্য আমার বুবুর জীবনটার আজ অসহায়ের দশা, আপনার জন্য আজ আমরা অনাথ। আমাদের মাও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, আমাদের বাড়ি, বাবা মায়ের সাথে কাটানো আমাদের বাড়িটার স্মৃতি সব হারিয়ে গেল আর এসবের মধ্যেও আপনি প্রশ্ন করছেন আমি আপনায় মারতে পারবো না। আজ আমি আপনায় ঠিক মারবো।’

প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব বেশি না ভেবেই বললো,

‘ ঠিক আছে মারো, তুমি যখন আমার কথা শুনবে না, জানি বুঝবেও না তখন মারো।’

এতক্ষন আকিব অপূর্বদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চুপচাপ সব শুনলেও এবার আর চুপ থাকতে পারলো না হতভম্ব হয়ে অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ এসব কি বলছেন ভাই? ও,

আর কিছু বলার আগেই অপূর্ব হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় আকিবকে। বলে,

‘ থেমে যাও আকিব আর ভালো লাগছে না।’

এতটুকু আকিবকে বলে পুনরায় প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বললো অপূর্ব,

‘ তুমি গুলি চালাও প্রিয়তা, আমি তোমার হাতের গুলির আঘাত পেতে প্রস্তুত।’

অপূর্বের কথা শুনে আশেপাশের সবাই হলো হতভম্ব, চিন্তারা ঘিরে ধরলো তাদের অপূর্ব ভাই পাগল হলো নাকি। অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা আশেপাশে তাকালো কতগুলো মানুষ ঘিরে ধরে আছে তাদের। প্রিয়তাকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে অপূর্ব বলে,

‘ ভয় নেই মেয়ে তুমি আমায় মারলেও আমি তো তোমায় মারতে পারি না তাই ওরা তোমায় কিছু বলবে না।’

প্রিয়তা তাকালো অপূর্বের মুখের দিকে, চোখের দিকে, ঠোঁটে থাকা ওই হাসির দিকে, তার কি মায়া লাগছে না, প্রিয়তার হাত কাঁপতে শুরু করলো কিন্তু প্রিয়তা সামলে নিলো দুই হাতে রিভলবার চেপে ধরলো। অপূর্ব হাসলো প্রিয়তার কান্ডে। বললো,

‘ তুমি একহাতে মারতে পারছো না প্রিয়তা, তাই দু’হাত নিলে।’

প্রিয়তা জবাব দিলো না খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অপূর্বের দিকে। অপূর্বও প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ আমি জানি তুমি আমায় মারতে পারবে না মেয়ে কারন তুমিও যে আমায় ভা…

আর কিছু বলতে পারলো না অপূর্ব। গুলির তীক্ষ্ণ শব্দে পরিবেশ উঠলো কেঁপে, গাছ জুড়ে থাকা পাখিরাও ভয়ের চোটে ডানা ঝাঁপটালো, আশেপাশের সবাই মুহুর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে গেল কারন অপূর্বকে সত্যি সত্যিই গুলি করা হয়েছে প্রিয়তা মেরে দিয়েছে অপূর্বকে। অপূর্ব তার বুকের দিকে তাকালো তাজা রক্ত বের হয়ে আসছে সেখান থেকে অপূর্ব কি খুব আঘাত পেয়েছে, পেয়েছে হয়তো তবে সেটা শারীরিকের চেয়ে মনের আঘাতটা বেশি ক্ষত হয়েছে তার। অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি আমায় সত্যি সত্যি মেরে দিলে মেয়ে তবে কি আমি ভুল ছিলাম হয়তো ছিলাম। তুমি ভালো থেকো। শুধু আফসোস এতটুকুই রয়ে গেল তুমি আমার মুখের ভালোবাসি শব্দটা নিতে পারলে না। আর একটু অপেক্ষা করে শব্দটা তো শুনতে পারতে। তাও শুনলে না। তুমি এত নিষ্ঠুর কি করে হলে মেয়ে?’

ব্যস এতটুকু বলেই নিচে এলিয়ে পড়লো অপূর্ব হাতে থাকা ফুলের তোড়া ছিটকে পড়লো দূরে পাপড়িরা ছিঁড়ে এসে পড়লো প্রিয়তার গায়ের ওপর। প্রিয়তার চোখে পানি জমলো। অপূর্ব দেখলো সেটা, আকিব দ্রুত দৌড়ে আসলো অপূর্বের দিকে। নিচে গড়িয়ে পড়া অপূর্বকে ধরলো সে। অপূর্বের লোকেরা প্রিয়তাকে ধরতে নিতেই আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো অপূর্ব,

‘ প্রিয়তাকে যেতে দেও আকিব ওর যেন ক্ষতি না হয়।’

শেষ, অপূর্ব আর কিছু বলতে পারলো না চোখ বন্ধ হয়ে গেল তার। উপস্থিতি সবাই চমকে উঠলো। আকিব পাগলের মতো চেঁচিয়ে বললো সবাইকে,

‘ দ্রুত গাড়ি আনো অপূর্ব ভাইকে হসপিটালে নিতে হবে।’

আকিবের আর্তনাথে দুজন দৌড়ে গেল গাড়ি আনার জন্য। বাকি কয়জন প্রিয়তার দিকে গুলি তাক করে বললো,

‘ মেয়েটাকে কি মেরে দিবো আমরা?’

আকিব কিছুক্ষন ভেবে বললো,

‘ দরকার নেই ছেড়ে দেও।’

সবাই শোনে রিভলবার সরিয়ে নেয় প্রিয়তার দিক থেকে। অতঃপর গাড়ি আসলো অপূর্বকে নেওয়া হলো গাড়িতে। আকিব লাস্ট বারের মতো প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি কাজটা ঠিক করো নি প্রিয়তা?’

উত্তরে প্রিয়তা কিছু বলে না। পরিশেষে সবাই চলে যায় শুধু থেকে যায় প্রিয়তা। আর তাকে ঘিরে নিচে গড়িয়ে থাকে অপূর্বের আনা ফুলের পাপড়িরা। প্রিয়তা ধাপ করে নিচে বসে পড়ে চেঁচিয়ে উঠে হুট করে। কেঁদে কেঁদে বলে,

‘ আমি আপনায় মেরে দিলাম অপূর্ব?’
___

ফ্ল্যাসবেক,

কাল ভার্সিটি শেষে আব্রাহাম স্যারের ডাক শুনে যখন প্রিয়তা গিয়েছিল তখন।’

দুপুরের কড়া রোদ্দুরে আচ্ছন্ন চারপাশ। গাছের পাতাগুলো বিন্দু বিন্দু নড়ছে। দূরে পথের গাছ বেয়ে কাঠবিড়ালি দৌড়াচ্ছে। চোখে মুখে অশেষ হতাশার ছাপ প্রিয়তার। প্রায় এক ঘন্টা আগে ভার্সিটি থেকে খানিকটা দূরে একটু জঙ্গল টাইপের গাছপালায় ভর্তি এক নিরিবিলি জায়গায় এসে বসেছিল আব্রাহাম আর প্রিয়তা। আব্রাহাম অনেক কিছু বলেছে প্রিয়তাকে। যেগুলো প্রিয়তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। আব্রাহাম অপূর্বকে চেনে, অনেক ভালোভাবেই চেনে। আব্রাহাম এটাও জানে প্রিয়তা অপূর্বকে ভালোবেসে ভুল করছে। আব্রাহাম বললো,

‘ আমি আর অপূর্ব একসময় ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তু একদিন যখন জানতে পারি ও একটা লোককে মাঝরাতে মেরে দিয়ে খুনি হয়ে গেছে তখন থেকেই ওর সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয় আমার। আমি ওকে আত্নসমর্পণ করতে বলেছিলাম কিন্তু ও শোনে নি তাই আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই ওর থেকে।’

সেই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না তাই আমি কিছু করতে পারি নি কিন্তু আজ আমার কাছে প্রমাণ আছে এই সিসিটিভি ফুটেজ। যেটা অনেক আগেই প্রিয়তাকে দেখিয়েছে আব্রাহাম। ভিডিও টা এমন ছিল রাতের আঁধার, একটা লাইটপোস্টের নিচে একটা লোকের পেটে ছুরির আঘাতে ছটফট করছে একটা ছেলেও ছিল পাশে। আর ছেলেটা অপূর্ব ছিল। অপূর্ব লোকটার পেটের ভিতর থেকে ছুরিটা টান দিয়ে বের করতেই লোকটা আরো ছটফট করতে লাগলো, লোকটার চেহারাটা হাল্কা অস্পষ্ট হলেও হাতের ঘড়িটা দেখে চিনলো এটাই তার বাবা। প্রিয়তা বিশ্বাস করতে পারে নি অপূর্বই তার বাবাকে মারবে। প্রিয়তার কথা শুনে আব্রাহামের ভাবটা এমন ছিল সে নিজেও সেদিন অবাক হয়েছে, সে ভাবতে পারে নি লোকটা প্রিয়তার বাবা হবে।’

এই কথা গুলো আব্রাহাম এই কারণেই বলে প্রিয়তাকে, সে অপূর্বকে প্রমাণসহ পুলিশে দিবে। আর এতে নিশ্চয়ই অনেকদিনের জেল হবে অপূর্বের। তাই অপূর্বের এই পরিনতিতে প্রিয়তা যেন ভেঙে না পড়ে তাই এসব বলা। আর প্রিয়তাও একটা ভিডিও দেখে বিশ্বাস করলো আব্রাহামকে। মনে মনে অপূর্বকে খুন করার ভাবনায় মগ্ন হলো, কারন প্রিয়তা তো অনেক আগে থেকেই তার বাবার খুনিকে মারতে চেয়েছিল। রিভলবারটাও নিজে সংগ্রহ করেছিল প্রিয়তা এতটাই প্রতিহিংসায় জর্জরিত ছিল সে।’

ফ্লাসবেক ওভার__

পর পর কথাগুলো ভেবেই চোখের পানি বিসর্জন দিলো প্রিয়তা। কতক্ষণ আগে আব্রাহামের ভিডিওটাই দেখিয়ে ছিল প্রিয়তা অপূর্বকে। হঠাৎই তার পাশে থাকা রিভলবার দিকে চোখ গেল প্রিয়তার। হাত দিয়ে ধরলো সেটা তারপর কিছু ভাবতেই বললো প্রিয়তা,

‘ আমিই আপনায় মেরে দিলাম অপূর্ব?’

____

মাঝপথে কাটলো দু’দিন। টানা দুইদিন হসপিটালের অবজারভেশনে থাকার পর জ্ঞান ফিরলো অপূর্বের। গুলিটা বুক থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে পড়ায় বেঁচে যায় সে। অপূর্বের বাবা, মা আর অয়ন তিনজনই হতভম্ব ছিল বিষয়টায়। অপূর্বের মা কান্নায় ভেঙে ছিল প্রচুর। কতক্ষণ আগেই অপূর্বের সাথে দেখা করে চলে যায় তারা। অপূর্বই যেতে বলে তাদের। অপূর্বের বাবা মা আর ভাই যেতেই আকিব ঢুকে ভিতরে। বর্তমানে আকিব আর অপূর্ব একসাথে। আকিব ভিতের ঢুকে অপূর্বের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘ আপনি ঠিক আছেন তো ভাই?’

উত্তরে অপূর্বও বলে,

‘ হুম। তোমরা থাকতে আমার কিছু হতে পারে আকিব।’

আকিব জবাব দেয় না। অনেক্ক্ষণ পর বলে,

‘ আমার এখনও বিশ্বাস হয় না ভাই প্রিয়তা আপনায় মেরেছে।’

আকিবের কথা শুনে অপূর্ব খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

‘ আমায় প্রিয়তা মারে নি আকিব?’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here