#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৫
_________________
আকাশ জুড়ে ঘন বর্ষণ। হুট করেই মাঝ রাস্তায় যাওয়ার পথে নেমেছে বর্ষণ। প্রিয়তা আনমনাই তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে বৃষ্টির ফোটা রাস্তায় গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখছে সে। এই বৃষ্টি, এই বৃষ্টি যেন কিছু মনে করায় তাকে সেই রাতে বিয়ের আসর থেকে পালানো, বাসে ওঠা, অপূর্বের পাশ বসা, মতলবের ভয়ে অপূর্ব হাত ধরা তার কাছে সাহায্য চাওয়া, তাকে বিশ্বাস করা আরও কত কি? সেদিনের অপূর্ব আর আজকের অপূর্বের মধ্যে কত পার্থক্য। সেদিনের অপূর্ব ছিল বড্ড অচেনা, আর দূরের মানুষ আর আজকের অপূর্ব কতটা চেনা, কতটা প্রিয় মানুষ। কিন্তু তারপরও কোথাও গিয়ে বড্ড দূরত্বতা। প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। অপূর্ব কোনোদিনও তার হবে না অপূর্ব যে রাজনীতিবিদ। যা প্রিয়তা চরমভাবে হেট করে।’
অন্যদিকে,
প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে অপূর্ব। কি যেন ভাবছে সে, বৃষ্টির রিমিঝিমি শব্দে যেন তাকেও কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই বৃষ্টিই যেন প্রিয়তাকে তার কাছে এনে দিয়েছে। বৃষ্টিই যেন প্রিয়তা আর অপূর্বের প্রথম সাক্ষাৎতের সাক্ষী। হঠাৎই অপূর্ব বললো,
‘ এভাবে মন খারাপ করতে নেই, জীবন যে খুব সুন্দর এটা তো মানতে হয়।’
প্রিয়তা ঘুরে তাকালো অপূর্বের দিকে। কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে এটা বুঝেছে প্রিয়তা। প্রিয়তা ফট করেই অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ এতই যখন বুঝেন তাহলে আমার মন ঠিক করার দায়িত্ব কেন নিচ্ছেন না অপূর্ব?’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব হুট করেই প্রিয়তার কাছাকাছি গেল। চোখে রাখলো চোখ এতে যেন প্রিয়তা খানিকটা ঘাবড়ে যায়। বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে তার, বুকের ভিতর ধড়ফড় শুরু করে মুহূর্তেই। অপূর্ব প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষন তারপর শীতল ভেজা কন্ঠে বলে,
‘ আমাতে বেশি আসক্ত হয়ে যেও না মেয়ে, এতে কষ্ট ছাড়া কিছু মিলবে না।’
প্রিয়তা যেন হতাশ হলো তবে কিছু বললো না। সে তো সত্যি আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাকে আসক্ত করেছে অপূর্ব নামক এক রাজনীতিবিদ।’
অতঃপর সময় গড়ালো, বৃষ্টি থামলো, কাছাকাছির থেকে দূরত্ব বাড়লো, বাড়ি ফেরার পথ এগিয়ে এলো।’
গ্র্যান্ডমাদের বাড়ির আগের গলির মুখে গাড়ি থামালো আকিব। প্রিয়তাও বেশি না ভেবে দ্রুত গাড়ি থেকে নামলো। তারপর বললো,
‘ আপনি আর আমার সামনে আসবেন না অপূর্ব। আমার সত্যি কষ্ট হয়। আমি আপনায় ভুলে যাবো। আপনার আমার কোনো ভবিষ্যত নেই। নিজের যত্ন নিয়েন আর ভালো থাকবেন।’
বলে আকিবের দিকে তাকিয়েও বললো প্রিয়তা,
‘ আপনিও ভালো থাকবেন ভাইয়া। আর হ্যাঁ দ্রুত আরোহী আপিটাকে বিয়ে করে নিবেন। আপনার ভাইয়ের আশায় থাকলে আর করা লাগবে না।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে গেল প্রিয়তা। না আর এমনটা হবে না, প্রিয়তা আর অপূর্বকে ভালোবাসা নিয়ে কোনোদিন কিছু বলবে না। একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে যেখানে তুই জানোস প্রিয়তা অপূর্ব তোর নয়। তাহলে, দূর্বল হওয়া ঠিক হচ্ছে না। ছ্যাচড়া মনে হয় নিজেকে। নিজের জীবন আর পড়াশোনার ওপর ফোকাস করতে হবে এখন। প্রিয়তা আর অপূর্বকে নিয়ে ভাববে না, অপূর্বের সামনেও আর পড়তে চায় না। এই রকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে অগ্রসর হলো প্রিয়তা। আর ঘুরে তাকালো না সে।’
অন্যদিকে অপূর্ব।
প্রিয়তা তাকে ভুলে যাবে কথাটা শোনা মাত্রই বুকে যেন ব্যাথা উঠলো তার। প্রিয়তার বলা শেষ কথাগুলো যেন এখনও কানে বাজচ্ছে। অপূর্ব চুপচাপ বললো,
‘ তুমি আমায় সত্যি ভুলে যাবে তুমি পারবে আমায় ভুলতে।’
আকিব শুনলো অপূর্বের কথা। বললো,
‘ ভাই ভুলতে তো আপনায় হবেই কেননা প্রিয়তাকে পেতে হলে রাজনীতি ছাড়তে হবে আপনি কি এটা ছাড়বেন ভাই।’
অপূর্ব জবাব দেয় না। শুধু বলে,
‘ বাড়ি যাবো আকিব গাড়ি চালাও।’
আকিবও শোনে বেশি না ভেবেই দ্রুত ছুটে যায় দূরে। আকিবও মন থেকে চায় এদের মিল হোক। প্রিয়তার শর্তের কথা আকিব শুনেছিল অপূর্বই বলে ছিল তাকে। রাজনীতি, এই রাজনীতি অপূর্ব ভাইকে কতজন ছাড়তে বলেছিল তার হিসাব নেই অপূর্ব ভাইয়ের বাবা, তার মা, তার ভাই এছাড়াও আরো কতজন ছিল অপূর্ব ভাইয়ের দাদিমাও পর্যন্ত বলেছিল কিন্তু অপূর্ব শোনে নি। কারন সে বলেছিল কোনোদিনও রাজনীতি ছাড়তে পারবে না। কিন্তু আজ ভাগ্যের কি পরিহাস ভালোবাসার মানুষটা পর্যন্ত রাজনীতির জন্য কাছে আসতে পারছে না। অপূর্ব ভাই ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রিয়তাকে তার জীবনে আনছে না। নিজেও কষ্ট পাচ্ছে প্রিয়তা মেয়েটাকেও দিচ্ছে।’
এখন দেখা যাক সামনে কি হয় ভাই রাজনীতি নাকি ভালোবাসা কোনটা আনে আর কোনটা ছাড়ে তার জীবনে।’
____
বৃষ্টির পানিতে কাঁদায় মাখোমাখো চারপাশ। প্রিয়তা খুব সাবধানে নিজের বোরকা ধরে বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে চলেছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে প্রায়। চারপাশ নির্জন আর চুপচাপ। প্রিয়তা গেট থেকে ভিতরে ঢুকে উঠোন পেরোতেই তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো আয়মান,
‘ সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি প্রিয়তা?’
আচমকাই আয়মানের কন্ঠটা কানে বাজতেই পিছন ঘুরে তাকালো প্রিয়তা। বললো,
‘ কেন গ্র্যান্ডমা আপনায় কিছু বলে নি আমি তো ফোন করে জানিয়ে ছিলাম তাকে।’
‘ হুম বলেছো তো তুমি নাকি জরুরি কাজে খুলনা গিয়েছিলে তোমার দুলাভাই নাকি মারা গেছে।”
উত্তরে প্রিয়তাও বলে,
‘ হুম। সব তো জানেন দেখছি তাহলে আবার প্রশ্ন করছেন কেন?’
বলেই এগিয়ে যেতে লাগলো প্রিয়তা। প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো আয়মান,
‘ তোমার সাথে গাড়িতে থাকা ওই ছেলেটার কি সম্পর্ক প্রিয়তা?’
প্রিয়তা আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। বেশ অবাক স্বরেই বললো,
‘ আপনি কোন ছেলের কথা বলছেন বলুন তো?’
‘ কতক্ষণ আগে গলির মোড়ে যে ছেলের গাড়ি থেকে নেমেছো তুমি।’
প্রিয়তা ভড়কালো, খানিকটা চমকালো। তার মানে আয়মান তাদের দেখে ফেলেছে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে আবারও বললো আয়মান,
‘ কি হলো তুমি কিছু বলছো কেন?’
প্রিয়তা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ ছেলেটা আমার অনেক প্রিয় মানুষ। এতটুকু শুধু জেনে রাখুন।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে ছুটে গেল প্রিয়তা। আর আয়মান ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তার কি হৃদয় ভেঙেছে, বোধহয় একটু ভেঙেছে। কারন সে যে সামনের রমনীকে কেবল মাত্র ভালোবাসতে শুরু করেছিল। এমন সময় আয়মানের ফোনটা বেজে উঠল তার বাবা ফোন করেছে। আয়মান বেশ বিরক্ত হলো ফোনটা না তুলেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সে।’
___
গোসল সেরে নিজের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বড্ড আঘাত লাগছে তার। প্রিয়তাকে চায় আবার চায় না। ভালোবাসা, বিয়ে, কাউকে সবসময় নিজের কাছাকাছি রাখার আকাঙ্খা যেন দিনকে দিন খুব বাড়ছে অপূর্বের। কিন্তু রাজনীতি কি করে ছাড়বে অপূর্ব আবার রাজনীতি নিয়ে প্রিয়তাকেও কিভাবে চাইবে অপূর্ব। যদি কেউ প্রিয়তার ক্ষতি করে দেয় তারওপর আহিল। অপূর্বের কেমন যেন নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। অপূর্ব তার ফোনটা নিলো। একটা কল করে বললো,
‘ কোথায় আছো তুমি?’
উত্তরে অপরপাশের ব্যক্তিটিও বললো,
‘ কেন কি হয়েছে?’
‘ রুমে আসো কথা আছে।’
বলেই ফোন কাটলো অপূর্ব।’
অপূর্ব ফোন কাটার চার মিনিটের মাথাতেই অপূর্বের রুমে হাজির হলো তার বাবা। কারন অপূর্ব তার বাবাকেই এই মাত্র ফোন করেছিল। অপূর্বের বাবা ভিতরে ঢুকেই অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমায় ডেকেছো কেন?’
‘ বিছানায় বসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।’
অপূর্বের বাবা বসলেন বিছানায় তারপর বললো,
‘ কাল সারারাত কোথায় ছিলে তুমি? এভাবে হুটহাট যে বেরিয়ে যাও বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করো না। তুমি জানো সকালে তোমার মায়ের কত বকুনি শুনতে হয়েছে আমায়।’
অপূর্ব বাবার কথা শুনলো তবে কিছু বললো না। বিছানায় বসে বাবার কোলে মাথা দিয়ে নীরব স্বরে বললো,
‘ আমি খুব খারাপ তাই না বাবা?’
হঠাৎই অপূর্বের এহেম কান্ডে চমকে উঠলো অপূর্বের বাবা। ছেলেটা আবার ইমোশনাল হয়ে পড়লো নাকি। কিন্তু কেন? সেদিন আকিব তো কিছু করে নি তবে আজ যেন একটু বেশি ইমোশনাল লাগছে। অপূর্বের বাবা অপূর্বের মাথায় হাত বুলালেন। বললো,
‘ কি হয়েছে অপূর্ব? তুমি ঠিক আছো তো।’
উত্তরে শান্ত স্বরেই জবাব অপূর্বের,
‘ জানো বাবা একটা মেয়ে আমায় ভালোবাসে আমিও তাকে চাই কিন্তু আবার চাই না। তুমি তো জানো বাবা আমার রাজনীতির জীবন যদি কেউ ওর ক্ষতি করে দেয় তখন।’
এতক্ষণে যেন ছেলের অবস্থা বুঝলেন অপূর্বের বাবা। তার মানে তার ছেলে প্রেমে পড়েছে। আর প্রেমে পড়ে এখন আঘাতও পাচ্ছে। অপূর্বের বাবার ভাবনার মাঝে আবারও বললো অপূর্ব,
‘ জানো বাবা ও না আজ আমায় বলেছে ও নাকি আমায় ভুলে যাবে। কথাটা শুনে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে আমি আঘাত পেয়েছি। তুমি জানো বাবা মেয়েটার নাম প্রিয়তা। খুলনা থেকে ফেরার পথে আলাপ আমাদের। ওর বাবাও একজন রাজনীতিবিদ ছিল বাবা। ও আমায় বলেছে ওকে পেতে হলে আমায় রাজনীতি ছাড়তে হবে আর আমিও রাজনীতি নিয়ে ওকে একসেপ্ট করবো না তাহলে আমার কি করা উচিত বাবা।’
‘ তুমি কি সত্যি মেয়েটাকে ভালোবাসো অপূর্ব?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। উল্টো বলে,
‘ ও আমায় কোনোদিন ক্ষমা করবে না, ও কিছু জানলে আমায় অপরাধী ভাববে। আমায় মেনে নিবে না।’
অপূর্বের বাবা যেন এবার অবাক হলেন। বললেন,
‘ ক্ষমা কেন করবে না কি করেছো তুমি?’
অপূর্ব জবাব দেয় না এবারও চুপ থাকে। গভীর রাতের কিছু ঘটনা মনে পড়ে তার। একটা লোক, সারা শরীরে রক্তে জর্জরিত, অপূর্ব দেখলো না আর ভাবলো না অপূর্ব। চোখ বন্ধ করে নিলো নিমিষেই।’
___
মাঝপথে কাটলো দু’দিন। আজ প্রিয়তা ভার্সিটি এসেছিল। দুপুরের মধ্যভাগ তখন, আজ আর বেশি ভালো না লাগায় আজকের মতো ক্লাস সেরে বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে নিলো প্রিয়তা। ভার্সিটির করিডোর বেয়ে যেতেই পিছন থেকে কেউ তাকে ডাকলো। বললো,
‘ প্রিয়তা দাঁড়াও তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে?’
প্রিয়তা পিছন ঘুরে তাকালো তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সেদিনের সেই স্যারটা আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি। কিন্তু কথা হলো প্রিয়তার সাথে এই স্যারের কি কথা থাকতে পারে?’
প্রিয়তা একটু একটু করে এগিয়ে গেল সামনে। খুব অবাক স্বরে বললো,
‘ জ্বী বলুন স্যার।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। ভেবেছিলাম আজকে অপূর্ব আর প্রিয়তার প্রপোজ পর্ব দিবো কিন্তু হয়ে উঠলো না। সবাই অপেক্ষা করো একটু ধীরে ধীরে গল্পের রহস্য খুলবো,]
#TanjiL_Mim♥️