#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৪
_________________
বেশ রহস্যময়ী চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়তা অপূর্বের মুখের দিকে। তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না অপূর্ব প্রেমার স্বামীকে মারে নি বলে। অপূর্ব যে তাকে মিথ্যে বলবে না এটাও প্রিয়তা জানে। তবে প্রশ্ন হলো অপূর্ব কিছু না করলে রহিম মির্জাকে মারলো কে?’ কার সাথে রহিমের শত্রুতা ছিল? কে এমনটা ঘটাতে পারে? কার এত সাহস হলো বাড়ির ভিতর ঢুকে লাইব্রেরির ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে রহিম মির্জার মৃত্যু ঘটানোর। প্রিয়তা যখন অপূর্বের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ব্যস্ত ছিল ঠিক সেই মুহূর্তেই অপূর্ব প্রিয়তার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল,
‘ ওভাবে তাকিয়ে থেকো না তো, আমার কষ্ট হয়।’
প্রিয়তা চমকে উঠলো। চোখ নামিয়ে ফেললো সঙ্গে সঙ্গে। তবে চুপ না থেকে বললো,
‘ আমারও কষ্ট হয় অপূর্ব।’
উত্তরে প্রিয়তার দিকে দৃষ্টি রাখলো অপূর্ব। খানিকটা অবাকের স্বরে বললো,
‘ কষ্ট হওয়ার কি আছে? আর এমনিতেও যে তোমার দুলাভাইকে মেরেছে সে না মারলেও আজ আমি মেরে দিতাম। তাই কষ্ট পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা অসহায় ফিল করলো। সে কি দুলাভাইকে নিয়ে কষ্ট পাওয়ার কথা বলেছে নাকি। প্রিয়তার বিন্দু মাত্র কষ্ট নেই তার দুলাভাই মারা গেছে বলে। শুধু বুবুটার জন্য খারাপ লাগা।
প্রিয়তা খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে খুব ধীর স্বরে বললো,
‘ আফসোস আপনি আমার কথার আসল অর্থ বুঝলেন না অপূর্ব।’
বলেই প্রিয়তা কিছু একটা ভেবে উল্টোদিক ঘুরে হাঁটা ধরলো। তার হাঁটার দিকে তাকিয়ে অপূর্ব বললো,
‘ আমি কিন্তু আধ ঘন্টার মতো আছি প্রেম বালিকা, তার মধ্যে বোনের সাথে কথা বলে ফিরে এসো আমরা একসাথেই ফিরবো।’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা চরমভাবে অবাক হলো। অপূর্ব কি করে বুঝলো সে এখন তার বোনের কাছে যাচ্ছে। প্রিয়তা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই অপূর্ব বলে উঠল,
‘ দ্রুত যাও আর দ্রুত ফিরে এসো মেয়ে, আর হা কিভাবে কি বুঝেছি তা নয় হয় অন্য আরেকদিন বলবো।’
প্রিয়তা আর দাঁড়ায় নি অপূর্বের কথার বিপরীতেও কিছু বলে নি শুধু কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায় সে। খুব সাবধানেই ঢোকে প্রেমার শশুর বাড়ির ভিতর। আশেপাশে মানুষের আনাগোনা খুব কম সবাই লাশের পিছু পিছু ছুটেছে।’
এদিকে,
অপূর্ব প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে খুব নীরব স্বরে বললো,
‘ আমি তোমায় বুঝবো না, তোমার কথার অর্থ বুঝবো না এমনটা কি হয় মেয়ে। কিন্তু আমারও যে ভয় হয়, হুম অপূর্বও ভয় পায়। এই প্রথম কোনো মানুষকে হারানোর চরম ভয় পাচ্ছে অপূর্ব। এটা তোমায় কি করে বোঝাবো?’ আমাদের মাঝে যে বড্ড অমিল, এত অমিলের মিলন ঘটাই কি করে বলো?’
এমন সময় অপূর্বের ফোন বাজলো আকিব কল করেছে। অপূর্ব ফোনটা তুলে বললো,
‘ আধ ঘন্টা অপেক্ষা করো আকিব, আমি প্রিয়তাকে নিয়েই আসছি।’
উত্তরে আকিবও বললো,
‘ ঠিক আছে ভাই।’
আকিবের কথা শুনেই কল কাটে অপূর্ব তারপর তার পাশে থাকা একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বুক হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ এখন শুধু অপেক্ষা প্রিয়তার আসার।’
____
নির্জন দুপুর! ঘড়ির কাঁটায় প্রায় দেড়টা বাজে। কিন্তু আকাশ পথে কোনো রোদ নেই। রহিমদের বাড়িটা বেশ ছাউনি দিয়ে গড়া বাড়ির চারদিকে বড়সড় গাছেদপর মেলা আছে কি না। দোতলার একদম কর্নারের রুমটায় জানালার পাশে বিছানার ওপর বসে আছে প্রেমা। চোখে পানি নেই, খুব চুপচাপ বসে আছে। কিছু একটা ভাবছে যেন। পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালো প্রেমা। রহিম বেশিভাগ সময়তেই পাঞ্জাবি পড়তো, সেই পাঞ্জাবিগুলোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো রুম জুড়ে। হঠাৎই প্রেমার চোখ গেল আলনার সাথে রহিমের একটা পাঞ্জাবি ঝুলে থাকার দিকে গতকাল ঠিক এই সময়তেই রহিম তার গায়ের ওপর ওটাকে ছুঁড়ে মেরে ধুতে বলেছিল কিন্তু শরীরটা একটু খারাপ থাকায় ধুতে পারে নি প্রেমা। সকালে ধুয়ে দিবে এমনটা ভেবে রেখেছিল ওখানে। রাতে অবশ্য এর জন্য রহিম কথাও শুনিয়েছিল তাকে। প্রেমার চোখ বেয়ে আপনাআপনি যেন পানি গড়িয়ে পড়লো তার কি কষ্ট হচ্ছে। এ কি কষ্টের কান্না নাকি আনন্দের? ঠিক বুঝচ্ছে না প্রেমা।’
‘ বুবু।’
হঠাৎই চিরচেনা বোনটার ভয়েসটা কানে আসতেই বিষন্নতায় ঘেরা চোখ দুটো দিয়ে তাকালো প্রেমা প্রিয়তার দিকে।’
বোনকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে প্রিয়তাও আর নিজেকে সামলাতে না পেরে দ্রুত ছুটে গেল বোনটার দিকে। ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,
‘ বুবু, তুই ঠিক আছিস তো?’
উত্তরে প্রেমা কিছু বলে না শুধু বোনকে জড়িয়ে ধরে চুপ থাকে অনেকক্ষন। বেশ কিছুক্ষন সময় যাওয়ার পর বোনকে ছাড়িয়ে বলে প্রেমা,
‘ তুই কেমন আছিস বোন?’
প্রেমার কথা শুনে প্রিয়তাও বলে,
‘ আমি ঠিক আছি বুবু। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিও হয়ে গেছি তোকে কতবার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু বেশিরভাগ সময় দুলাভাই ধরায় কথা বলতে পারি নি। জানিস বুবু,
প্রিয়তার কথা শুনে বেশ আগ্রহের স্বরে বললো প্রেমা,
‘ কি জানবো,
প্রিয়তা থেমে যায় জবাব দেয় না। চুপ থাকে। সাথে ভাবে, অপূর্বের কথা কি এই মুহূর্তে বুবুকে বলা ঠিক হবে তার।’
___
ঘড়ির কাটা টিক টিক শব্দ করে ছুটছে, অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে নিজের হাত ঘড়িটা দেখছে প্রিয়তা যাওয়ার পঁচিশ মিনিট হয়ে গেছে আর পাঁচ মিনিটের মাঝেই প্রিয়তা চলে আসবে তো। অনেকক্ষণ হয়েছে সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেউ কোনোভাবে কিছু ভাবছে কি না কে জানে বিশেষ করে প্রিয়তার চাঁচি যদিও তাকে চেনা একটু টাফ আপাতত। মুখে মাস্ক চোখে চশমা। হঠাৎই অপূর্ব খেয়াল করলো প্রিয়তার চাঁচি কারো সাথে খুব চেঁচিয়ে কথা বলছে। কিন্তু কি বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। এরই মাঝে সেখানে হাজির হলো প্রিয়তা, আর তার পাশেই প্রিয়তার চাচা নির্ঘাত আসার পথে দেখা হয়েছিল। অপূর্ব কিছু একটা ভাবলো বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে গেল প্রিয়তার দিকে, প্রিয়তার চাঁচি যদি তাদের দেখে সাথে চিনে ফেলে তাহলে সমস্যা। অপূর্বের যেতে যেতে কানে এলো প্রিয়তার চাঁচি কাউকে বলছে,
‘ রহিম মারা গেছে ইরশাদ তাই আজ থেকে আমার ব্যবসার সব দায়িত্ব অর্থাৎ রহিমের জায়গাটা তোকেই নিতে হবে। আর বিদেশি খদ্দেরদের বলবি মাল পৌঁছাতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এখনো সবটা জোগাড় হয় নি।’
অপূর্ব কোনো রকমের চাঁচির কথাগুলো কানে নিয়ে প্রিয়তার সামনে গিয়ে বললো,
‘ দ্রুত চলো এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না।’
প্রিয়তা শুনলো তার চাচাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমি পৌঁছে তোমায় ফোন দিবো।”
উত্তরে শুধু মাথা নাড়ায় প্রিয়তার চাচা। অতঃপর বোন আর চাচাকে বিদায় জানিয়ে চাঁচি দাঁড়িয়ে থাকার ঠিক উল্টো দিকের রাস্তা ধরে এগোতে লাগলো প্রিয়তা আর অপূর্ব। আর চাচা শুধু তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা কে? জানার ইচ্ছে থাকলেও এই মুহূর্তে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না উনি হয়তো এটা মূখ্য সময় নয়। বউডা জানি কোন চিপায় আছে যখন তখন দেখে ফেলতে পারে।’
____
গাড়ির ভিতর ড্রাইভিং সিটের জানালার ওপর মাথা রেখে পা তার উল্টোদিকের জানালার সোজাসুজি পায়ের ওপর পা রেখে শুয়ে শুয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে আকিব। আজ কতদিন পর আরোহীর সাথে কথা বলছে সে। হঠাৎই অপরপাশে থাকা আরোহী বললো,
‘ আমায় বিয়ে কবে করছো তুমি?’
সঙ্গে সঙ্গে আকিবের কাশি উঠে গেল। কাশতে কাশতেই বললো,
‘ এই তো আর কিছুদিন পর।’
‘ কেশো না তো একদম তুমি শুধু বলো তুমি নিজে অপূর্ব ভাইকে আমাদের বিয়ের কথা বলবে নাকি আমি বলবো।’
আরোহীর এবারের কথা শুনে আকিব থমকে গেলো গাড়ির দরজাটা খানিকটা খুলে যাওয়ায় আকিব হাল্কা নড়তেই ছিটকে পড়লো নিচে। বললো,
‘ ও মা গো গেলাম রে।’
বলেই উপরে দিকে তাকাতেই সামনে অপূর্ব আর প্রিয়তাকে দেখে আরোই ঘাবড়ে গেল আকিব। ওরা মাত্রই এসেছিল প্রিয়তা তো আকিবের কান্ড দেখে হেঁসে ফেলে মুহূর্তেই। আকিব প্রিয়তার হাসির শব্দ পেতেই লজ্জায় লাল হলো। আর অপূর্বের গম্ভীর চাহনি দেখে নিচে শুয়ে শুয়েই বললো,
‘ ভালো আছেন ভাই?’
উত্তরে অপূর্ব বললো,
‘ আমি তো ভালোই আছি কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি ভালো নেই আকিব।’
আকিব দ্রুত নিচে পড়া থেকে উঠে দাঁড়ালো হতভম্ব হয়ে ফোনটা কাটলো আরোহী ‘হ্যালো হ্যালো’ করছিল। আকিব ফোনটা কেটে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আসলে হয়েছে কি ভাই?’
আকিবের কথা শেষ হওয়ার আগেই অপূর্ব বললো,
‘ আরোহীর সাথে কথা বলছিলে নিশ্চয়ই।’
অপূর্বের কথা শুনে আকিবও মাথা নিচু করে হা বোধক মাথা নাড়ায়। যা দেখে অপূর্ব গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে,
‘ তুমিও না আকিব এবার তোমার আর আরোহীর বিয়েটা দিতেই হবে বুঝেছি আমি। গাড়িতে ওঠো জলদি।’
আকিব শুনলো অবাক কান্ড আরোহীও বিয়ের কথা বলছিল আর এখন অপূর্ব ভাইও বলছে। আকিব দ্রুত গিয়ে গাড়ির সিটে বসলো। তারপর বললো,
‘ আপনি বিয়ে না করলে আমি কি করে করি ভাই?’
উত্তরে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ আগে তুমি করো তারপর দেখছি।’
উত্তরে আকিব আর কিছু বলে না। ছুট লাগায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। আর প্রিয়তা চুপচাপ বসে থাকে জানালার দিকে মুখ করে। অপূর্বের কথাটা আপাতত নেয় নি সে কারন সে জানে অপূর্ব তার জন্য কখনোই রাজনীতি ছাড়বে। তাকে পেতে হলে অপূর্বকে রাজনীতি ছাড়তেই হবে।’
প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।’
বুবুর সাথে আবার কবে দেখা হবে কে জানে? তার সাথে আসার জন্য বলেছিল কিন্তু বুবু রাজি হয় নি। যদিও এই মুহূর্তে তার সাথে যাওয়াটা সত্যি যুক্তিযুক্ত নয়। তাও প্রিয়তা একবার এমনি বলেছিল।’
__
গাড়ি ছুটছে তার আপন গতিতে। হঠাৎ অপূর্ব বললো,
‘ তুমি কিন্তু এইভাবে হুট করে এখানে এসে কাজটা ঠিক করো নি প্রিয়তা।’
উত্তরে খুব শান্ত স্বরেই জবাব দেয় প্রিয়তা,
‘ আমি ঠিক ভুল জানি না অপূর্ব বুবুটার জন্যই এসেছিলাম।’
‘ বুঝতে পেরেছি তাও ঠিক হয় নি।’
‘ জীবনে যদি সবসময়ই ঠিক ভুল নিয়ে বসে থাকি অপূর্ব তবে কি জীবন চলবে বলুন। মাঝে মাঝে দু’একটা ভুলও করতে হয়। কেননা সব ভুলই কষ্ট দেয় না কিছু কিছু ভুল প্রশান্তিও আনে।’
প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব খুব শীতল দৃষ্টি নিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকালো। মনে হলো কথাটা যেন তাকেই বললো মেয়েটা।’
অপূর্ব কিছু বললো না শুধু আকাশ পথে তাকিয়ে নিজ মনে আওড়ালো,
‘ তবে কি আমারও একটা ভুল করা উচিত মেয়ে?’ যে ভুল আমায় প্রশান্তি এনে দিবে। আনন্দ দিবে হৃদয়টাকে। খন্ড খন্ড হতে থাকা মনটাকে জোড়া দিবে আনমনে। কিন্তু,,,
চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️