আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ৩৩

0
794

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৩
_________________

অপূর্বের এমন খুন করার মেসেজ দেখে ভয়ংকরভাবে চমকে উঠলো প্রিয়তা। কাকে খুন করার কথা বলছে অপূর্ব। প্রিয়তা কতক্ষণ ভেবেই বুঝতে পারলো অপূর্ব কার কথা বলছে। প্রিয়তা হতভম্ব হয়ে দ্রুত লিখলো,

‘ এমনটা করবেন না অপূর্ব। আমার জন্য আপনি খুনি হবেন না প্লিজ।’

মেসেজ তো লিখলো কিন্তু অপূর্ব কি দেখলো মোটেও দেখলো না। উল্টো মোবাইল অফ করে নিজের গন্তব্যে ছুটলো সে।’

আর প্রিয়তা,
অপূর্বের মেসেজের রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লো পড়ার টেবিলের বইয়ের ভাজের ওপরে।’

গভীর রাত তখন। আকাশে তারা নেই কোনো,নির্জন পরিবেশ একদম গাছের পাতাও নড়ছে না তবে মেঘ জমেছে, চাঁদটাকে পুরোদমে ডেকে দিয়েছে মেঘেদের ভিড়ে। তবে কি আজও বৃষ্টি নামবে?’

হয়তো নামবে হয়তো না।’
____

ভয়ংকর সকাল! হঠাৎই মোবাইলটা বিকট শব্দে বেজে উঠতেই ঘুমটা ভাঙলো প্রিয়তার। ধড়ফড়িয়ে উঠলো সে, কাল রাতে কখন টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই তার। প্রিয়তা চটজলদি ফোনটা ধরতে নিলো কিন্তু ধরতে ধরতে কলটা কেটে গেছে একবার। প্রিয়তা মোবাইলের টাইমটা দেখলো সকাল ৬ঃ০০টা বাজে এত সকালে কে ফোন করলো। এরই মাঝে আবারও ফোনটা বেজে উঠলো প্রিয়তা নাম্বার দেখেই বুঝলো প্রিয়তার চাচা ফোন করেছে সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভিতর কামড় দিয়ে উঠলো প্রিয়তার। তাহলে কি অপূর্ব? আর ভাবলো না প্রিয়তা দ্রুত কলটা ধরে বললো,

‘ হ্যালো ছোট আব্বু।’

সঙ্গে সঙ্গে অপরপ্রান্তে থাকা চাচার মুখে সব শুনেই স্তব্ধ হয়ে গেল প্রিয়তা। শরীর মন মস্তিষ্ক সব থরথর করে কেঁপে উঠলো তার, তবে কি অপূর্ব কাজটা করেই ছাড়লো। প্রিয়তা কতক্ষণ থ মেরে থেকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

‘ আমি আসছি ছোট আব্বু।’

ব্যস এতটুকু বলেই ফোনটা কাটলো প্রিয়তা। না এই মুহূর্তে এখানে বসে থাকা যাবে না তার বুবুর যে তাকে প্রয়োজন।’

প্রিয়তা দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে ছুট লাগালো। অপূর্ব সত্যি সত্যি তার দুলাভাইকে মেরে দিবে এটা কল্পনাও করতে পারে নি প্রিয়তা। প্রিয়তার বুক কাঁপছে, ভয় লাগছে হুট করেই। প্রিয়তা কান্নাভেজা স্বরে বললো,

‘ আপনি দুলাভাইকে সত্যি সত্যিই মেরে দিলেন অপূর্ব?’ আমি বারন করে ছিলাম তো।’

প্রিয়তা আর ভাবতে পারছে না। তার দুলাভাই অনেক খারাপ এটা প্রিয়তা জানে কিন্তু তাও এইভাবে মেরে দেওয়াটা কি ঠিক হলো। বুবুটা কি মেনে নিতে পারছে স্বামীর মৃত্যুটা। কষ্ট পাচ্ছে খুব, নাকি মনে মনে আনন্দিত হয়েছে।’

না প্রিয়তা আর ভাব্বে না বলতে বলতে ঢুকলো সে ওয়াশরুমের ভিতর।’

প্রিয়তা তার ব্যাগটা নিলো, একটা জামা নিল। যদিও সে থাকবে না। প্রিয়তা একটা ঢিলাঢালা কালো রঙের বোরকা নিকাব সুন্দর মতো পড়ে নিয়ে দ্রুত ব্যাগ নিয়ে রুম লক করে বের হলো। গ্র্যান্ডমাকে এখন কিছু বলবে না পরে না হয় ফোন করে জানাবে। এমনটা ভেবে দ্রুত বের হলো প্রিয়তা। এখন বের হলে নির্ঘাত ১১টার মাঝে খুলনা পৌঁছাবে সে, জ্যাম না থাকলে তার আগেও যেতে পারে।’

____

বিষন্নতায় ঘেরা গ্রাম। খুলনার গ্রাম। ঘড়িতে বেলা সাড়ে এগারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। ‘বড় বাড়ি’ নামক কাল্পনিক এক পাড়ায় কান্নার রোল পড়ে গেছে। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনে ভরে গেছে চারপাশ। রহিম মির্জা মারা গেছে, কিভাবে মারা গেছে? কেউ মেরেছে নাকি নিজে মরছে বোঝা যাচ্ছে না। সকাল বেলা হুট করেই রহিম মির্জার বউ প্রেমা মির্জার হতভম্ব হয়ে দৌড়ে শশুর শাশুড়ির রুমে যাওয়ায় সবাই ছুটে গেলে রহিম মির্জার লাইব্রেরি রুমে ছেলেকে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখে জ্ঞান হারালেন রহিম মির্জার মা ফাতেমা মির্জা সচরাচর এই রুমটাতে রহিম ছাড়া আর কেউ আসে না। কালও আসে নি। সকালে স্বামীকে ডাকতে এসে এমন কান্ড দেখে থমকে গেল প্রেমা তক্ষৎনাত দৌড়ে ডাকলো সবাইকে।’

বাড়ির উঠোনে মানুষের ভিড়। একপাশে রহিম মির্জার বউ আর একপাশে মা মাটিতে বসে আছে। সামনেই ছেলের মৃতদেহ চাদরে মুড়িয়ে পাটিতে শোয়ানো। প্রেমা কাঁদছে না, চোখের পানি বোধহয় শুকিয়ে গেছে তার। বউয়ের না কান্নার কারনটা হয়তো অনেকেই বুঝেছে কারন বউটাকে আনার পর একদিনও না মেরে রেখেছে কি না জানা নেই কারো। আর রহিমের মা উনি কাঁদছেন ওনাকে শান্ত করা হচ্ছে। তবে প্রেমা শব্দ করে না কাঁদলেও নীরবে চোখের পানি ফেলছে স্বামীর দেহের দিকে তাকিয়ে, তাকে অত্যাচার করা মানুষটি আর নেই। তাকে আর মারবে না কেউ, অহেতুক কথা শোনাবে না কেউ। কিন্তু , প্রেমা তার পেটে হাত দিলো আজ তিন মাস হলো প্রেমা গর্ভবতী অথচ গর্বের সন্তানের বাবা আর বেঁচে নেই।’

প্রেমা নিজেকে শক্ত করলো। নানা কিছু ভাবছে আর স্বামীর দেহের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রেমার চাচা চাঁচিও এসেছে এখানে। চাঁচির অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না। রহিম মারা গেছে এটাই যেন মানতে পারছেন না তিনি। কিভাবে কি হলো, কাল রাতেও তো ছেলেটা ঠিক ছিল তাহলে মরলো কি করে? লোকের মুখে শুনেছে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু রহিম আত্মহত্যা করবে কেন?’ এসব ভাবছে চাঁচি চাঁচি।’

অন্যদিকে,

এদের সবার থেকে দূরে মুখে মাস্ক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব। তার পাশেই আকিব। সেও মাস্ক পড়া। তাদের দৃষ্টিও রহিম মির্জার মৃতদেহের দিকে। অপূর্বকে দেখেও কিছু বোঝা যাচ্ছে না, চোখ শান্ত, মনে প্রশ্ন আর অশেষ গরমিল।’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো কালো বোরকা পরিধিত এক রমনী। রমনীটি আর কেউ না আমাদের প্রিয়তা। যদিও এত মানুষের ভিড়ে তাকে তেমন কেউ নজরে আনছে না। তবে প্রিয়তার বাড়ি ঢুকেই সর্বপ্রথম নজরে গেল মাস্ক পরিধিত দুই যুবক আকিব আর অপূর্বের দিকে। প্রিয়তা যেন চরম অবাক হলো অপূর্বকে এখানে দেখে। অপূর্ব যায় নি কেন?’ খুন করেও কি শান্তি মেলেনি তার। প্রিয়তা মনে মনে কথাগুলো বলে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল বোনটার দিকে। বোনটা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে মাটিতে। চোখ মুখ অগোছালো।’

প্রিয়তা ধীরে ধীরে গিয়ে বসলো বুবুর পাশে। হাতটা ধরলো চুপ করে তারপর খুব ফিসফিস করে বললো,

‘ বুবু।’

সঙ্গে সঙ্গে প্রেমা তাকালো প্রিয়তার দিকে। মেয়েটার চোখ ছাড়া কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এমন ভাবে এসেছে ও যে প্রিয়তা এটা বোঝা দায় প্রায়। তবে প্রেমা চিনেছে প্রিয়তার কন্ঠস্বর শুনেই বুঝেছে সে। প্রেমা খানিকটা শব্দ করে কেঁদে উঠলো বোনকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও ধরলো না। প্রিয়তা দেখলো সেটা তার ভিতরটাও দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। তার বুবুটা ভালো নেই। বুবু খুশি হয় নি। অপূর্ব কাজটা ঠিক করে নি।’

প্রিয়তা প্রেমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

‘ কাঁদিস না বুবু দেখবি ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে গেছে।’

প্রেমা জবাব দেয় না। চুপচাপ বসে রয় শুধু।’

পুলিশ এসেছে অনেক আগে, চারপাশে জিজ্ঞাসা বাদ চলছে। কেউ কোনো কিছু সন্দেহ জনক দেখেছে কি না তাই জিজ্ঞেস করছে। কতক্ষণের মাঝেই বডি পোস্ট মর্টেমের জন্য নিয়ে যাবে। এটা খুন নাকি আত্মহত্যা সবই বেরিয়ে আসবে তখন। অনেক আগেই নিয়ে যেতেন কিন্তু রহিমের বাবার জন্য নেওয়া হয় নি। উনি কোথাও একটা গিয়েছেন সাথে বলে গেছেন উনি না আসা পর্যন্ত তার ছেলেকে কোথাও না নিতে। গ্রামের মেম্বার তিনি।’

অতঃপর সময় ঘনিয়ে এলো রহিমের বাবাও চলে এলেন। ছেলের মৃত্যু সইতে পারছেন না তিনি। শেষমেশ সবাইকে ছেড়ে রহিম পাড়ি জমালো দূরে প্রেমা শুধু দেখেই গেল চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তার। কেন যেন মনে হচ্ছে তার স্বামী তাকে বলছে,

‘ আমি চলে যাচ্ছি তুমি ভালো থেকো।’

কিন্তু আধও কি প্রেমার স্বামী এমনটা বলতে পারে। কখনোই পারে না। লোকটা আঘাত ছাড়া আর তো কিছু দেয় নি। প্রেমা বাড়ির ভিতরের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো খুবই স্তব্ধ পায়ে। প্রিয়তা শুধু তাকিয়ে রইলো বোনের যাওয়ার পানে। কি করে যে বলবে তার বোনকে, আজ এই ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী প্রিয়তা। কারন প্রিয়তা যদি কাল অপূর্বকে ওই কথাগুলো না বলতো তাহলে অপূর্ব আজ কিছুই করতো না। তার বোনের স্বামীটা আজ বেঁচে থাকতো।’

প্রিয়তা অজানা ক্ষোভ নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব আর আকিব তখনও ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। আকিব তাদের দিকে একটা মহিলাকে আসতে দেখে বললো,

‘ ভাই ওই মহিলাটা আমাদের দিকে তেড়ে আসছে কেন?’

উওরে আকিব মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়েই বললো,

‘ ও প্রিয়তা আকিব।’

সঙ্গে সঙ্গে বিষম খেল আকিব। বললো,

‘ কি, দেখে বয়স্ক বয়স্ক মনে হচ্ছে।’

‘ বুঝতে হবে আকিব ও ছদ্মবেশ নিয়ে এসেছে, আমি জানি ও এখন আমায় কি বলবে তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো আমি আর প্রিয়তা আসছি।’

আকিবও শুনলো তক্ষৎনাত ‘ঠিক আছে ভাই’ বলেই চললো সে।’

অন্যদিকে অপূর্বের দৃষ্টি প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা সবার চোখে ফাঁকি দিতে পারলেও তাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। প্রিয়তার উপস্থিতি তো অনেক আগেই বুঝেছিল অপূর্ব। আর প্রিয়তার ওই চোখ এত সহজে ভোলা যাবে নাকি।’

প্রিয়তা দ্রুত এগিয়ে আসলো তারপর অপূর্বের পাশ দিয়ে দাড়িয়ে রাগান্বিত গলায় বললো,

‘ আপনি দুলাভাইকে কেন মারলেন অপূর্ব? আমি আপনায় বারন করেছিলাম তো।’

উওরে বুকে হাত বেঁধে খুব শান্ত স্বরেই বললো অপূর্ব,

‘ তুমি কি বিশ্বাস করবে মেয়ে আমি তোমার দুলাভাইকে মারি নি। হুম এটা ঠিক কাল আমি তোমার দুলাভাইকে মারার উদ্দেশ্যেই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু কাল অনেক রাত করে এদিকে আসায় আমার এখানে আসতে আসতে সকাল হয়ে যায়। ভেবেছিলাম আজ রাতে মারবো কিন্তু তার আগেই কেউ তোমার দুলাভাইকে মেরে দিয়েছে। তোমার দুলাভাই তার লাইব্রেরির রুমের ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিল। সবাই বলছে আত্মহত্যা করেছে কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা আত্নহত্যা নয় খুন হয়েছে।’

অপূর্বের কথা শুনে এবার যেন সত্যি সত্যিই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো প্রিয়তার। কি বলছে এই অপূর্ব উনি মারে নি রহিম মির্জাকে। তাহলে মারলো কে? কে ঘটালো প্রেমার স্বামীর মৃত্যু?’

#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here