#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩০
_________________
‘ আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারেন নি অপূর্ব?’
খানিকটা হতাশা ভরা চেহারা আর কন্ঠ নিয়ে কথাটা বলে উঠল প্রিয়তা অপূর্বকে। আর প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব বললো,
‘ আমার কি তোমার কথাটা বোঝার খুব দরকার ছিল, না বুঝলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে প্রিয়তা।’
অপূর্বের কথা শুনে অসহায় ফিল করলো প্রিয়তা। তবে কি সত্যি সে ভুলভাল ভাবছে। প্রিয়তা আর বেশি ভাবলো না। টপিক চেঞ্জ করে বললো,
‘ আপনায় কিছু বুঝতে হবে না অপূর্ব। আপনার নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে আপনি বসুন আমি এক্ষুনি ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করছি।’
বলেই উঠে দাড়িয়ে চলে গেল প্রিয়তা। আর অপূর্ব শুধু তাকিয়ে রইলো প্রিয়তার যাওয়ার পানে। একা মনে আওড়ালো খুব,
‘ তুমি আমার চোখ দেখে সব বুঝে গেলে মেয়ে? আমার বোধহয় আর তোমার থেকে দূরে যাওয়া হলো না। কিন্তু,,,
থেমে গেল অপূর্ব। হঠাৎই চোখ গেল অপূর্বের তার ঘুমানো বালিশের একদম কর্নারে আটকে থাকা মোবাইলটার দিকে। অপূর্ব মোবাইলটা দেখেই দ্রুত হাতে নিলো তারপর আকিবের নাম্বারে ফোন করলো। আকিব তখন বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে ছিল। কাল বাড়ি ফিরে সাড়ারাত আরোহীর সাথে বক বক করতে ব্যস্ত ছিল সে, যার দরুন এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। প্রথম কলটা বাজতে বাজতেই কেটে গেল। পরে আবার কল বাজলো এবারের কলটায় আকিবের ঘুম ভাঙলো, কোনো মতে ফোনটা সাতরে হাতে নিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
‘ হেলু,,
সঙ্গে সঙ্গে অপরপ্রান্তে থাকা অপূর্ব কর্কশ কন্ঠে থমকানো স্বরে বললো,
‘ ফোন ধরতে এতক্ষণ সময় লাগে আকিব?’
অপূর্ব কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু আকিবে থমকে গিয়ে খাট থেকে পড়ে যাওয়া দেরি হলো না। এই সকাল বেলা অপূর্ব তাকে ফোন করেছে কেন। আকিব নিচে পড়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বললো,
‘ ও মা আমার কোমড়।’
আকিবের কথাটা শুনলো অপূর্ব। বললো,
‘ তুমি পড়ে গেলে আকিব?’
উওরে আমতা আমতা করে বললো আকিব,
‘ ইয়ে না মানে ভাই আমি ঠিক আছি।’
বলেই ঘড়ির দিকে তাকালো আকিব। দশটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। আর সে তো রোজ প্রায় এগারোটা সাড়ে এগারোটার দিকে অপূর্বদের বাসায় যায় তাহলে আজ এত দ্রুত ফোন করলো ভাই। তবে কি কাল ভাই দ্রুত যাওয়ার কথা বলেছিল আর আকিব তা ভুলে গেছে। আকিব শুঁকনো ঢোক গিলে বললো,
‘ আমাদের কি আজ দ্রুত কোথাও যাওয়ার কথা ছিল ভাই আমি না ভুলে গেছি।’
‘ কোথাও যাওয়ার নেই আকিব কিন্তু এখন তোমায় আসতে হবে।’
‘ কোথায় ভাই?’
আকিবের কথা শুনে অপূর্ব আশেপাশে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
‘ প্রিয়তারদের বাড়ি আমি এখানেই আছি।’
বলেই ফোন কান থেকে দূরে সরালো অপূর্ব। কারন সে জানে আকিব এখন কি বলবে।’
অন্যদিকে আকিব। অপূর্ব কথা শুনে চোখ বড় বড় করে জোরে আওয়াজ করে বললো,
‘ কিইইইই?’
তিন সেকেন্ড যাওয়ার পর অপূর্ব আবার ফোনটা কানে ধরলো। বললো,
‘ তোমায় সব বুঝিয়ে বলবো আকিব আগে তুমি আসো গাড়িতে বসে সব বলছি।’
এবার আর বেশি না ভেবেই বললো আকিব,
‘ ঠিক আছে ভাই আমি আসছি।’
‘ হুম দ্রুত এসো।’
বলেই ফোন কাটলো অপূর্ব। আর আকিবও কিছুক্ষন হেবলা কান্তের মতো বসে থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। কেন যেন তার মনে হচ্ছে কাল কিছু একটা ঘটেছিল তার অপূর্ব ভাইয়ের সাথে।’
___
ফোন কেটে চুপচাপ বসে আছে অপূর্ব। গভীর ভাবনায় মগ্ন সে, কালকের ফোন কলের ভয়েসটা খুবই চেনা চেনা লাগছে অপূর্বের। কে ছিল ব্যাক্তিটি?’ আর কার ক্ষতি করেছে অপূর্ব। অপূর্ব চোখ বন্ধ করে তার মনে থাকা পুরো জীবনের ঘটে যাওয়া মুহূর্তগুলোর কথা ভাবলো। কতক্ষণ ভাবতেই বেশ অদ্ভুত স্বরে বললো,
‘ আহিল তুই? তবে কি তুই আমার ক্ষতি চাস কিন্তু তা কি করে সম্ভব তুই তো বিদেশ গিয়েছিলি তবে কি ফেরত এসেছিস। আমায় আজও ভুল বুঝে চলেছিস ভাই।’
ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অপূর্ব।’
‘ আমরা খুব খারাপ একটুতেই মানুষের ক্ষতি ছাড়া আর কিছু বুঝি না।’
….
গ্র্যান্ডমার রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে রুটি বেলছে প্রিয়তা। খানিকটা ভয়, খানিকটা হতাশা নিয়েই কাজ করছে সে। আচ্ছা প্রিয়তার কি উচিত অপূর্বের কথা গ্র্যান্ডমাকে বলে দেওয়া। কিন্তু গ্র্যান্ডমা যদি তাকে ভুল বুঝে তখন। আর অপূর্ব তো থাকছে না এখানে কিছুক্ষন পরই চলে যাবে হয়তো এতক্ষণে নিশ্চয়ই আকিব ভাইয়াকে ফোন করা হয়ে গেছে ওনার।’
গ্র্যান্ডমা নিজ রুমে বসে আছে চুপচাপ। প্রিয়তা মুড়ি আর বাতাসা দিয়ে এসেছে আপতত সেগুলোই চিবুচ্ছে গ্র্যান্ডমা। প্রিয়তা দ্রুত নিজের কাজ সারতে লাগলো যদিও গ্র্যান্ডমা তেমন একটা প্রিয়তার রুমে যায় না প্রিয়তাই থাকে এদিকটায় কিন্তু আজ যদি যায় তখন। ভাবলেও বুক কাঁপছে প্রিয়তার। তারওপর আয়মান যখন তখন চলে আসতে পারেন উনি দেখে ফেললে তো চরম বিপদ। না জানি কতশত প্রশ্ন করতেন।’
প্রায় আধ ঘন্টা পর আটার রুটি আর আলুভাজি করলো প্রিয়তা। তারপর আগে গ্র্যান্ডমাকে দিয়ে চুপিচুপি চললো প্রিয়তা নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।’
ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে খুব সাবধানে খাটে বসলো অপূর্ব। এখানে বেশিক্ষণ থাকাটা ঠিক হবে না এমনিতেই খুব বিপাকে ফেলেছে সে প্রিয়তাকে। অপূর্ব নিজের ছেঁড়া শার্টটা নিলো কিন্তু পরার মতো উপযোগী নয় সেটা। অপূর্ব আবার তার ফোন ধরলো, আবার কল করলো আকিবকে। আকিব ফোন ধরতেই বললো,
‘ আকিব আমার জন্য আসার সময় একটা শার্ট বা টিশার্ট নিয়ে এসো আমি যেটা পড়া ছিলাম সেটা ছিঁড়ে গেছে।’
অপূর্বের এবারের কথা শুনে আকিব শেষ শার্ট ছিঁড়ে গেছে, শার্ট ছিঁড়লো কেমনে তবে কি ভাই ছিঃ ছিঃ কিসব ভাবছে আকিব। তোর অপূর্ব ভাই যথেষ্ট ভালো আকিব তুই দিনে দিনে খারাপ হচ্ছিল। আকিব নিজেকে অনেক কিছু বোঝালো তারপর বললো,
‘ আচ্ছা ভাই।’
উওরে অপূর্বও শুধু ‘হুম’ বলে ফোনটা কেটে দিলো। সে জানে এই আকিব তাকে নিয়ে এখন ভুলভাল ভাবছে, আপাতত ভাবুক সামনে এলে না হয় বোঝানো যাবে।’
‘ যতক্ষণে আকিব ভাইয়া আপনার জন্য শার্ট না নিয়ে আসে ততক্ষণ না হয় এটা পড়ে নিন অপূর্ব?’ (আয়মানের শার্টটা দেখিয়ে)
হঠাৎই নিজের ভাবনার মাঝখানে প্রিয়তার কণ্ঠ শুনতেই চোখ তুলে তাকালো অপূর্ব। প্রিয়তার হাতে খাবার আর একটা খয়েরী রঙের শার্ট দেখে বললো,
‘ এটা কার শার্ট?’
‘ গ্র্যান্ডমার নাতির আইথিংক আপনার হয়ে যাবে।’
অপূর্ব চুপ রইলো, অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ ঠিক আছে।’
অতঃপর অপূর্ব শার্ট নিলো খুব সাবধানে শার্টটা জড়ালো গায়ে খানিকটা আঘাত পেয়েছে ঠিকই কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। প্রিয়তা চেয়েছিল নিজ হাতে শার্টটা পড়াতে কিন্তু অপূর্ব একা পেরে ওঠায় আর ধরে নি।’
প্রিয়তা ড্রেসিং টেবিলের উপর মাত্র রাখা খাবারের প্লেটটা বিছানার উপর রাখলো তারপর অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ খেয়ে নিন অপূর্ব?’
উওরে অপূর্ব বললো,
‘ আমি এখন খাবো না প্রিয়তা।’
‘ এটা কেমন কথা কাল রাত থেকে আপনি না খাওয়া খিদে টিদে লাগে নি নাকি।’
‘ সত্যি বলতে কি খিদে খুব লেগেছে কিন্তু কেন যেন খেতে ইচ্ছে করছে না।’
‘ এটা কোনো কথা,
হাসে অপূর্ব। প্রাণ খোলা এক মিষ্টি হাসি দিলো সে। তার শরীরের আঘাতের অংশে বিষাক্ত যন্ত্রণা হচ্ছে তাও বোঝা যাচ্ছে না। প্রিয়তা শুধু তাকিয়েই রইলো অপূর্বের মুখের দিকে। যা দেখে অপূর্ব বললো,
‘ এভাবে তাকিয়ে থেকো না মেয়ে আমি কিন্তু প্রেমে পড়ে যাবো।’
প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকায় অপূর্বের দিকে, তারপর ফিক করেই হেঁসে দেয় আবার এই অপূর্ব ঠিক হওয়ার নয়। প্রিয়তাকে বিপাকে ফেলতে যেন তার বেশ লাগে।’
প্রিয়তা তার হাসি থামিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এবার খেয়ে নিন অপূর্ব।’
অপূর্ব শোনে তারপর বাধ্য ছেলের মতোই খেতে শুরু করলো সে। অপূর্বের খাওয়ার মাঝেই প্রিয়তা প্রশ্ন করে,
‘ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো অপূর্ব?’
উওরে অপূর্বও খেতে খেতে জবাব দেয়,
‘ হুম বলো,
অপূর্বের কথা শেষ হতেই প্রিয়তা বেশি না ভেবেই বললো,
‘ কাল রাতে আপনার কি হয়েছিল অপূর্ব? আপনায় আঘাত কে করেছিল? আপনার আঘাত দেখে যা বুঝলাম কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবেই আপনায় আঘাত করেছে কে করেছে এমনটা?’
প্রিয়তার কথাগুলো খুব মন দিয়েই শুনলো অপূর্ব। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ তোমার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে অনেক দিনই হলো কিন্তু তুমি হয়তো আমার বিষয়ে তেমন কিছুই জানোও আজ একটা বিষয় জানাই তোমায়, আমি একজন রাজনীতিবিদ প্রিয়তা। যে প্রয়োজন মনে করলে মানুষও খুন করতে পারে।’
প্রিয়তা আটকে গেল, থমকালো, ভড়কালো, চরমভাবে অবাক হলো। একা মনে বিড়বিড় করলো, ‘ কি অপূর্ব একজন রাজনীতিবিদ।’ প্রিয়তা কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে বললো,
‘ তার মানে এই আঘাতগুলো,
‘ হুম বিরোধীদলেরই কেউ দিয়েছে।’
প্রিয়তা আর কিছু বলতে পারলো না। তার বাবার কথা মনে পড়লো তার নিথর দেহের কথা মনে পড়লো প্রিয়তার। কারন প্রিয়তার বাবাও একসময় একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। প্রিয়তা বাবার মৃত্যুর সময় এই জিনিসটা না জানলেও বা না বুঝলেও মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে জেনেছে সাথে এটাও বুঝেছে বিরোধী দলের কোনো লোকই তার বাবাকে মেরে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। আর আজ কি না অপূর্বও রাজনীতির দলেরই একজন হলো। প্রিয়তার কেমন যেন শুন্য শুন্য লাগছে, সে তো ভালোবাসে অপূর্বকে কিন্তু অপূর্বের পেশা। প্রিয়তা ছল ছল চোখে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে কেমন উদাসীন কন্ঠে বললো,
‘ রাজনীতিবিদ হওয়া কি খুব জরুরি ছিল অপূর্ব?’
প্রিয়তার কথা আর কন্ঠ শুনে অপূর্ব তাকালো প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তার ছলছল চোখের দিকে। প্রিয়তার চোখে পানি দেখতেই ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো অপূর্বের। খুব অদ্ভুত স্বরে বললো,
‘ তুমি কাঁদছো কেন?’
প্রিয়তা নিজেকে সামলালো চোখের পানিটুকু মুছে বললো,
‘ না আমি কাঁদছি না তো চোখে কি যেন একটা পড়েছে অপূর্ব?’
প্রিয়তার কথা কি অপূর্বের পছন্দ হলো মটেও হলো না। অপূর্ব খুব গম্ভীর স্বরে বললো,
‘ তুমি মিথ্যে বলতে জানো না মেয়ে?’
অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা কেন যেন নিজেকে সামলাতে পারলো না। চোখ বেয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো তার। প্রিয়তা খুব বেশি ইমোশনাল হলে অপূর্বের হাত ধরে বললো,
‘ আমি আপনায় ভালোবাসি অপূর্ব?’
#চলবে……
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️