#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৭
_________________
ঘড়ির কাঁটায় সকাল নয়টার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। উঠানের মাঝ বরাবর চেয়ার পেতে বসে আছে প্রিয়তার চাঁচি। চোখে মুখে অশেষ বিস্ময়ের ছাঁপ। কারন তার সামনে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে অপূর্ব। ভাবটা এমন যেন এ বাড়িতে এর আগেও বহুবার এসেছে সে। অপূর্বের একদিকে দাঁড়িয়ে আছে আকিব। আর অন্যদিকে দাঁড়িয়ে মতলেব। চোখে মুখে তারও বিস্ময়ের ছোঁয়া। আর এদের সবার থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মতলবের সাথে থাকা তিনটা ছেলে। যার একটা ঢাকা থেকে এসেছে। অপূর্ব আসার পথে এদেরকে ধরে নিয়ে এসেছে যতই হোক প্রিয়তাদের বাড়ি আর এদের সাবধান দুটোই করতে হবে তো।’
প্রিয়তার চাঁচি নড়ে চড়ে বসলেন খুব গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘ আপনারা কারা এখানে কি চাই?’
অপূর্ব তার চোখের কালো চশমাটা খুলে আকিবের হাতে দিলো। আকিবও নিলো সেটা। অপূর্ব তার মাথার সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়িয়ে প্রিয়তার চাঁচির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনার সাথেই দেখা করতে এসেছি ম্যাডাম?’
প্রিয়তার চাঁচি যেন অবাক হলেন চরম। অপূর্বকে এর আগে কখনো দেখেছিল বলে তার মনে পড়ছে না। অচেনা লাগছে পুরো দমে। প্রিয়তার চাঁচি চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
‘ আমার কাছে কি কাজ আপনার?’
অপূর্ব নিশ্চুপ থাকে তারপর বলে,
‘ পাঁচ কাপ চা নিয়ে আসেন ম্যাডাম খেতে খেতে কথা বলা যাবে। আমার আবার চা ছাড়া কথাটা ঠিক জমে না।’
প্রিয়তার চাঁচি যেন থমকে গেলেন মুহূর্তেই এ কি বললো ছেলেটা। অচেনা একটা ছেলে কিভাবে এভাবে বলতে পারে। প্রিয়তার চাঁচি কিছু বলতে নিবে এরই মাঝে তার সামনে এগিয়ে আসলো মতলেব। প্রিয়তার চাঁচিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ ম্যাডাম ভিতরে চলুন আমি আপনায় সব বুঝিয়ে বলছি,
বলেই প্রিয়তার চাঁচিকে নিয়ে গেল মতলেব। আর অপূর্ব আয়েশ করে বসলো। আকিবকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
‘ তুমি বসবে আকিব পা ব্যাথা করবে তো?’
উওরে আকিব শুঁকনো হেঁসে বললো,
‘ না ভাই আমি এখানেই ঠিক আছি।’
আকিবের কথা শুনে মুচকি হেঁসে বলে অপূর্ব,
‘ ঠিক আছে।’
___
রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তার চাঁচি রাগে তার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। এ কেমন ছেলে বাড়ি বয়ে এসে তার ওপর হুকুম চালায়। প্রিয়তার চাঁচি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মতলেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ তুমি আমায় এভাবে কেন টেনে আনলে মতলেব?’
উওরে মতলেব হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ এনেছি কি আর সাধে ম্যাডাম আপনি জানেন ইনি কে?’
মতলেবের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো প্রিয়তার চাঁচি,
‘ কে ছেলেটা?’
‘ ওনার নাম তাহসান আহমেদ অপূর্ব। ঢাকা শহরের একজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ। আর সবচেয়ে বড় কথা এ কিন্তু অন্যায়ের সাথে আপোষ করে না ম্যাডাম। আমি কি বুঝাতে চাইছে বুঝচ্ছেন তো। তাই ভালো ভালোই বলছি উনি যে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে সেটা পালন করার চেষ্টা করুন ম্যাডাম নয়তো আপনার কারবার,
বলেও থেমে গেল মতলেব। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
‘ বেশি ঘাঁটতে যাবেন না ম্যাডাম এতে বিপদ কিন্তু আপনারই হবে।’
প্রিয়তার চাঁচির কি ঘাবড়ালো মতলেবের কথা শুনে ঠিক বোঝা গেল না। তবে গভীর ভাবনায় মগ্ন হলেন তিনি। বললেন,
‘ এর উদ্দেশ্য কি মতলেব?”
উওরে শুধু এতটুকুই বলে মতলেব,
‘ প্রিয়তা।’
____
বাড়ির উঠানের কর্নারের পাশে থাকা ছোট ছোট ফুলগাছে পানি দিচ্ছে প্রিয়তা। খানিকটা টেনশন খানিকটা হতাশা আর অপূর্বের ভাবনা নিয়েই গাছে পানি দিচ্ছে সে। প্রিয়তা অপূর্বের কথা রাখবে তাই আর আজ ভার্সিটি যায় নি। আগামী সাতদিন কোথাও যাবে না এটাও ভেবে রেখেছে। গ্র্যান্ডমাকে সবটা বলার ইচ্ছে থাকলেও আবার কেন যেন বলে নি সে।’
‘ তুমি কাল সারাদিন ভার্সিটির পরে কোথায় ছিলে প্রিয়তা?’
হুট করেই এক পুরুষালির কন্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠলো প্রিয়তা। নিজের ভাবনা থেকে বের হলো মুহুর্তেই। প্রিয়তা পিছন ফিরে তাকানোর আগেই তার সামনে এগিয়ে আসলো আয়মান। আবারও বললো,
‘ কি হলো তুমি কথা বলছো না কেন প্রিয়তা?’
প্রিয়তা ফের চমকালো খানিকটা কিন্তু কিন্তু স্বরে বললো,
‘ সেটা তো কাল রাতেই বলেছি আয়মান, যে আমি আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম নোটস আনতে।’
প্রিয়তার কথা শুনে আয়মান এক গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
‘ সে তো আমি শুনেছি প্রিয়তা। কাল রাতে তুমি বাড়ি ফিরে গ্র্যান্ডমাকে এটাই বলেছো। কিন্তু তাই বলে ওত রাত অবদি তুমি বন্ধুর বাড়িতে ছিলে প্রিয়তা?’
‘ আপনি হয়তো ভুলে গেছেন কাল বৃষ্টি হয়েছিল খুব তাই আমি আটকা পড়েছিলাম।’
‘ কিন্তু আমার কেন মনে হচ্ছে তুমি মিথ্যে কথা বলছো।’
প্রিয়তা থমকে গেল অনেকটা, খানিকটা ঘাবড়িয়েছেও কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললো,
‘ আপনার মন যা ইচ্ছে মনে করতেই পারেন কিন্তু আমি যেটা হয়েছে সেটাই বলেছি। এখন আপনার বিশ্বাস না হলে আমার কিছু করার নেই। আমায় রুমে যেতে হবে কিছু কাজ আছে।’
বলেই আয়মানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলো প্রিয়তা। এরই মাঝে আয়মান বললো আবার,
‘ আজ ভার্সিটি কেন যাও নি প্রিয়তা।’
আয়মানের কথাটা শুনে দুই সেকেন্ড মতো দাঁড়িয়ে বললো প্রিয়তা,
‘ আজ ভালো লাগছে না ভার্সিটি যেতে তাই যায় নি।’
বলেই আর না দাঁড়িয়ে হন হন করে চলে গেল প্রিয়তা। এক মুহুর্তের জন্য হলেও আয়মানের এই একের পর একের প্রশ্নে বিরক্ত ফিল করছিল প্রিয়তা।’
___
ট্রে হাতে গুনে গুনে পাঁচ কাপ দুধ চা বানিয়ে এগিয়ে আসছে প্রিয়তার চাঁচি। চোখে মুখে এক গম্ভীরতার ছোঁয়া। প্রিয়তার জন্য এত বড় রাজনীতিবিদ তাদের বাড়িতে এসেছে বিষয়টা যেন হজম হচ্ছে না প্রিয়তার চাঁচির। তবে কি এই ছেলের সাথেই প্রিয়তা বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে ছিল নাকি। কিন্তু ঢাকার একজন রাজনীতিবিদের সাথে প্রিয়তার পরিচয় হলো কি করে, মেয়েটাকে তো সেইভাবে কখনো দূরে যেতে দেয় নি। প্রিয়তার চাঁচি নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে আসলো সামনে তারপর টেবিলের উপর চায়ের ট্রেটা রেখে বললো,
‘ এবার বলো এখানে কি কারনে এসেছো?’
উওরে ট্রে থেকে এক কাপ চা উঠিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ কেন মতলেব মশাই আপনায় কিছু বলে নি ম্যাডাম?’
প্রিয়তার চাঁচি যেন থমকে গেলেন সঙ্গে থমকালেন মতলেবও। মতলেব থর থর করে এগিয়ে এসে বললো,
‘ ভাই আমি সত্যি কিছু বলে নি।’
অপূর্ব চায়ের কাপে চুমুক দেয়। চায়ের স্বাদটা মুখে লাগতেই প্রিয়তার চাঁচিকে উদ্দেশ্য করে বললো অপূর্ব,
‘ আপনি মনে হয় চায়ে একটু চিনি বেশি খান।’
জবাব দেয় না প্রিয়তার চাঁচি। খানিকটা রাগান্বিত গলায় বলে,
‘ এতকিছু শুনতে চাই নি আমি উদ্দেশ্য কি সেটা বলুন?’
‘ আরে আরে এত রেগে যাচ্ছেন কেন ম্যাডাম উদ্দেশ্য তো একটা আছেই উদ্দেশ্য না থাকলে অপূর্ব এখানে আসে। তবে উদ্দেশ্যের কথা বলা আগে একটা কাজ করুন, আপনার বানানো চায়ের কাপগুলো একে একে সবার হাতে তুলে দিন। যতই হোক কতটা জার্নি করে এসেছে এরা।”
প্রিয়তার চাঁচি রাগে ফুসলেন কিছু বলতে নিলেও মতলেবের ইশারায় থেমে গেলেন। তারপর বাধ্য মেয়ের মতো রাগে ফুঁসতে ফুঁসতেই একে একে সবাইকে চা এগিয়ে দিলেন। আকিবকে দিলেন সবার আগে। সবাইকে চা দেওয়া শেষ হতেই অপূর্ব খানিকটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
‘ প্রিয়তার চাচা কোথায় ম্যাডাম?’
উওরে প্রিয়তার চাঁচি কিছু বলার আগেই মতলেব বললো,
‘ ভাই উনি তো কাজে গেছেন। সকাল সকাল দোকান খুলতে হয় কি না।’
অপূর্ব আর কিছু বলে না। এবার খুব সিরিয়াজভাবে বলে,
‘ এবার তবে কাজের কথায় আসা যাক ম্যাডাম।’
প্রিয়তার চাঁচি যেন খুশি হলেন। এটা শোনার জন্যই তো এতক্ষন অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। প্রিয়তার চাঁচির ভাবনার মাঝেই বলে উঠল অপূর্ব,
‘ দেখুন ম্যাডাম আমি কে সেটা হয়তো মতলেব মশাই আপনায় বলেছে। আমি অন্যায়ের সাথে একদমই আপোষ করা পছন্দ করি না। আর আপনি যা করছেন সেটা একদমই অন্যায়।’
‘ কি অন্যায় করেছি আমি?’
‘ কি অন্যায় করেছেন তা আবার প্রশ্ন করছেন।’
‘ দেখো ছেলে, প্রিয়তা আমার বাড়ির মেয়ে ওর ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার।’
‘ ভালো,
বলেই শুঁকনো হাসে অপূর্ব। তারপর বলে,
‘ একটা ৬০ বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে দিয়ে কি ভালো করছেন আপনি আপনার বাড়ির মেয়ের সাথে।’
প্রিয়তার চাঁচি থেমে গেলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছে না। প্রিয়তার চাঁচি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ এখন তোমার কি চাই? সেটা বলো।’
প্রিয়তার চাঁচির কথা শুনে হাসে অপূর্ব, উচ্চ স্বরে হাসলো সে। বললো,
‘ আমার তো অনেক কিছু চাই ম্যাডাম যার সবকিছু আপনি দিতে না পারলেও কিছু কিছু আমায় দিতে বাধ্য।’
____
গুনতে গুনতে কেটে গেল পুরো এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে অপূর্বের সাথে প্রিয়তার কোনোভাবেই যোগাযোগ হয় নি। প্রিয়তা যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও পারে নি কারন অপূর্বের ফোন বন্ধ। প্রিয়তার টেনশন হয় খুব, হুট করে অপূর্ব এমন গায়েব হয়ে গেল কেন?’
রৌদ্রময়ের দুপুর। ভার্সিটির শেষ করে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে আছে প্রিয়তা। আজ অনেকটা ভয় ভয় নিয়ে ভার্সিটি আসলেও তেমন সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়ে নি তার। প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। আজ অপূর্বকে দেখতে খুব মন চাইছে তার। অপূর্ব এমন কেন একটা বার কি তার সাথে দেখা করা যায় না আচ্ছা দেখা না হয় বাদ দিলাম একটাবার ফোন করেও তো কথা বলা যায় নাকি। প্রিয়তা সেদিন রাতের অপূর্বকে মনে করলো। অপূর্বের আচরণ, শীতল ভেজা কন্ঠ, বৃষ্টি দেখার অনুরোধ। এই সবকিছুর মাঝেই কিছু একটা তো দেখেছে প্রিয়তা সেদিন অপূর্বের মাঝে কিছু একটা ফিল করেছে প্রিয়তা। প্রিয়তা একা মনে বিড় বিড় করে উঠলো,
‘ আমি আপনার চোখের মাঝে কিছু একটা দেখেছি অপূর্ব গোপনে ফিল করেছি অনেক কিছু। কিন্তু আবার কেন যেন ভয় লাগে যদি না হয় তখন।’
প্রিয়তা নিশ্চুপে বসে রইলো চুপচাপ। এমন সময় হঠাৎই তার পাশে এসে বসলো কেউ। নিশ্চুপে বলে উঠল সে,
‘ এই রোদ্দের ভীড়ে, নিশ্চুপ পরিবেশে একা একা বসে কি করছেন মেয়ে?’ ভয় লাগছে না বুঝি।’
‘মেয়ে’ হুট করেই মেয়ে শব্দটা শুনতেই প্রিয়তা যেন থমকে গেল অপূর্ব এসেছে নাকি। প্রিয়তা অধিআগ্রহের সঙ্গে পাশ ফিরে তাকালো। সামনের ব্যক্তিকে দেখে এক অদ্ভুত শব্দ করে বললো,
‘ কে আপনি?’
#চলবে….