আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ২৫

0
872

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৫
_________________

আচমকাই প্রিয়তার ভয়েসটা কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকালো অপূর্ব। তার বিড় বিড় করা কথাগুলো প্রিয়তা শুনে নিল নাকি। যদিও সে বৃষ্টি নিয়ে কথা বলছিল। কিন্তু ভালোবাসা, প্রিয় মানুষ নিয়েও তো কথা বলেছিল। প্রিয়তা কি সেগুলো শুনে নিয়েছে। অপূর্ব তাকিয়ে আছে প্রিয়তার মুখের দিকে, মেয়েটা বোরকা খুলেই বেরিয়েছে বাহিরে পরবে বেগুনি কালারের থ্রি-পিচ, চুলগুলো এলেমেলো ভাবে একপাশে বিনুনি করা, মুখে তেমন সাজ নেই।’

অপূর্বের ভিতর থেকে একটু চিন্তিত ভাব থাকলেও বাহিরে মটেও প্রকাশ করছে না অপূর্ব।’

অন্যদিকে,

অপূর্বকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তা এগিয়ে গেল অপূর্বের দিকে। তারপর আবারও প্রশ্ন ছুড়লো অপূর্বকে,

‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন? আমায় এভাবে এখানে এনেছেন কেন?’

অপূর্ব কয়েক মুহূর্ত প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ তুমি কি জানো প্রিয়তা তোমায় ধরে নিতে তোমার চাঁচি লোক পাঠিয়ে ছিল?’

অপূর্বের আকস্মিক এমন কথা শুনে প্রিয়তার চোখ মুখ যেন বিস্ময়ের ছোঁয়া বয়ে গেল। চোখ দুটো হলো বড় বড়। প্রিয়তা অদ্ভুত এক শব্দ করে বললো,

‘ কি?’

অপূর্ব স্বাভাবিক হলো নিজের ভাবনা থেকে বের হলো নিজেকে সামলালো মুহুর্তেই তারপর শান্ত স্বরে বললো,

‘ বেশি কি কি করবে না খুব টেনশনে আছি।’

অপূর্বের কথায় আরো চমকালো প্রিয়তা। বললো,

‘ মানে?’

‘ মানে কিছুই না শোনো আগামী সাতদিন তুমি বাড়ি থেকে একদম বের হবে না। ভার্সিটি তো একদমই যাবে না। তোমার বোরকার কালার পাল্টাতে হবে, আর চোখে চশমা পড়বে কেমন?’

‘ আপনার কি মাথা গেছে অপূর্ব কি সব ভুলভাল বকছেন।’

হুট করেই অপূর্ব যেন রেগে গেল খানিকটা কড়া কন্ঠে বললো,

‘ যা বলেছি তাই শুনবে মেয়ে, আমার মুখের ওপর কারো কথা বলা আমি পছন্দ করি না।’

প্রিয়তা যেন থমকে গেল এই প্রথম যেন অপূর্বের রাগী লুকিংয়ের সম্মুখীন হলো সে। প্রিয়তা থমকানো স্বরে বললো,

‘ আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন অপূর্ব?’

অপূর্ব নিজেকে সামলালো হুট করেই প্রিয়তার হাতটা জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ তুমি কেন বুঝতে পারছো না মেয়ে বর্তমানে তুমি সেইভ নও।’

প্রিয়তা থেমে গেল। উত্তরে কিছুই বলতে পারলো না। এই অপূর্ব এমন করছে কেন? হুট করে রেগে যাচ্ছে আবার হুট করেই শীতল হচ্ছে। প্রিয়তা কয়েক মুহূর্ত অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ আপনি কি করে জানলেন অপূর্ব যে চাঁচি আমায় ধরতে লোক পাঠিয়েছে আর আমি তো বোরকা পড়ে থাকি তাহলে ওরা আমায় চিনবে কেমন করে?’

খানিকটা অসহায় ফিল করলো অপূর্ব। প্রিয়তাকে কি করে বোঝাবে কাল বৃষ্টির ভিড়ে যখন তার মুখের নিকাব সরে গিয়েছিল তখনই দূর থেকে একটা ছেলেকে কথা বলতে দেখেছে সে। কেন যেন সন্দেহজনক লেগেছে। পরে ছেলেটার পিছনে লোক লাগাতেই জানতে পারে অপূর্ব ছেলেটি প্রিয়তাকেই ধরতে এসেছে। অপূর্বকে ভাবতে দেখে আবার প্রশ্ন করলো প্রিয়তা,

‘ কি হলো আপনি কথা কেন বলছেন না অপূর্ব?’

প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব তাকালো প্রিয়তার দিকে, চোখে রাখলো চোখ, চোখের দৃষ্টি করলো শান্ত আর নিস্তব্ধ যেন চোখ দিয়েই কিছু বুঝাতে চাইছে সে। এরই মাঝে হুট করেই বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি বেয়ে গর্জন হলো, অপূর্ব প্রিয়তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো বৃষ্টির পানে। সে তো ভুলেই গিয়েছিল বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।

অপূর্বের হাবভাব কেন যেন ঠিক লাগছে না প্রিয়তার, সোজাসাপ্টা কথাগুলোর উওর কেন দিচ্ছে না। প্রিয়তা আবারও কিছু বলতে নিবে এরই মাঝে হুট করেই প্রিয়তার ঠোঁটে আঙুল দিল অপূর্ব। তারপর খুবই শান্ত স্বরে বললো,

‘ পাশাপাশি বসে বৃষ্টি দেখবে মেয়ে, আমার না বৃষ্টি খুব পছন্দ চলো একসাথে বসে বৃষ্টি দেখি।’

অপূর্বের কাজ আর কথা শুনে ওখানেই থমকে গেল প্রিয়তা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না সে। আর অপূর্ব প্রিয়তার কোনো জবাব না নিয়েই হুট করেই সামনের সিঁড়ির ওপর বসে পড়লো তারপর প্রিয়তাকেও ইশারায় বললো পাশে বসতে। প্রিয়তাও কোনো কথা ছাড়াই নির্ভয়ে বসলো অপূর্বের পাশে। তাকালো সামনের দিকে, বৃষ্টির তুমুল রেশ তখন, মাটিতে গড়া উঠোনটা বৃষ্টিতে ভিজে হচ্ছছিল টুইটুম্বর। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে এমন। আশপাশের গাছগাছালি সব বৃষ্টির ছোঁয়ায় হচ্ছে ভেজালো। অপূর্বের গুপ্তস্থানের বারান্দাটার সরু রাস্তায় সেজে আছে চারপাঁচটা পাখি হয়তো বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। প্রিয়তা পুরো জায়গাটায় চোখ বুলাতে লাগলো পরিশেষে অপূর্বের দিকে দৃষ্টি রাখতেই অপূর্ব বলে উঠল,

‘ কাল যখন তুমি বৃষ্টির ভিড়ে পড়ে যেতে নিয়েছিলে তখনই একটা ছেলেকে খেয়াল করি আমি, কেন যেন সন্দেহ লেগেছিল ছেলেটিকে কেন লেগেছিল তাও জানি না। তারপর সন্দেহের বসেই ছেলেটাকে ফলো করি দেন জানতে ও সেই বাসে বসে তোমায় ধরতে আসা লোকটার লোক। ব্যস আজ যে তুমি কিডন্যাপ হবে এটা আমি জানতাম তাই তোমায় ওইভাবে নিয়ে আসা। যাতে ওরা কনফিউশানে থাকে, আর মুখটা হয়তো কালই দেখেছিল ওরা। তাই বলছি মিনিমাম আগামী সাতদিন তুমি বাসা থেকে বের হবে না প্রিয়তা, তন্দ্রাবিলাসেই থাকবে চুপচাপ আমার মনে হয় না ওরা তোমার গ্র্যান্ডমার বাড়ি চিনে।’

প্রিয়তা এতক্ষণে বুঝলো বিষয়টা। কিন্তু এবার কি করবে প্রিয়তা তার সেইভটি কিভাবে করবে। চাঁচি যখন জেনেছে সে এখানে আছে তাহলে তো কোনো না কোনো ভাবে তাকে ধরে নিয়ে যাবেই। আর ধরে নিয়ে যদি আবার ওই বুড়ো লোকটার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় না না হুট করেই প্রিয়তা উত্তেজিত হয়ে জোরে শব্দ করে বলে উঠল,

‘ না,

আচমকাই প্রিয়তার মুখে না শব্দটা শুনতেই অপূর্ব বিস্ময়ের স্বরে বললো,

‘ কি না।’

প্রিয়তা থমকে উঠলো। বললো,

‘ আমায় চাঁচি ধরতে পারবে না তো অপূর্ব?’

প্রিয়তার এবারের কথা শুনে অপূর্ব বুঝলো প্রিয়তা ঘাবড়ে গেছে। অপূর্ব প্রিয়তাকে সান্ত্বনা দিতে বলে উঠল,

‘ এত ঘাবড়াচ্ছো কেন মেয়ে, আমি আছি তো। তোমার চাঁচি তোমায় কোথাও নিতে পারবে না।’

প্রিয়তা যেন একটু সাহস পেল, বিশ্বাস করলো মুহূর্তেই। অপূর্ব নামক এই ছেলেটাকে শুরু থেকেই বিশ্বাসের এক উঁচু জায়গায় রেখেছে প্রিয়তা। অপূর্বের কথায় কিছু একটা আছে যা বরাবরই প্রিয়তার মনকে শান্ত করে, নিস্তব্ধ করে, ভালো লাগার এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি জাগায়। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই অপূর্ব বললো আবার,

‘ আমায় কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবে প্রিয়তা?’

প্রিয়তা শান্ত দৃষ্টিতে থাকায় অপূর্বের চোখের দিকে তারপর বলে,

‘ জ্বি বলুন?’

‘ তুমি কিছু মনে না করলে তোমার এই বিষয় সম্পর্কে আমায় কিছু বলো তোমার চাঁচি কেন এমনটা করছে আর তোমার বাবা মাই বা কেন এসব হতে দিচ্ছে ওনারা কিছু বলছে না কেন তোমার চাঁচিকে?’

অপূর্বের কথা শুনতেই নিরদ্বিধায় বলে উঠল প্রিয়তা,

‘ কি করে বলবে ওনারা তো নেই অপূর্ব?’

অপূর্ব চরম বিস্ময়কর কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ নেই মানে?’

প্রিয়তা জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো, দৃষ্টি রাখলো বৃষ্টির পানে। তারপর বললো,

‘ ওনারা মারা গেছেন আজ অনেকদিন অনেক বছর হয়ে গেছে। বাবা একদিন হুট করেই এক্সিডেন্ট করে মারা যান বাবার চলে যাওয়াটা মা মানতে না পেরে কয়েকমাসের মধ্যে সেও মারা যান। ব্যস তারপরই থেকে আমি আর আমার বুবু এতিম হয়ে যাই। আর সেই এতিমদের সঙ্গ দিতে আসেন আমাদের চাচা আর চাঁচি। শুরুর দিক থেকে ভালোই চলছিল কিন্তু হুট করেই চাঁচির ব্যবহার পাল্টালো। খুলনা শহরে থাকা আমার বাবার তৈরি বাড়িটা বিক্রি করে নিয়ে গেল তার বাড়িতে। চাঁচির খুব লোভ আছে টাকার ওপর,টাকার জন্য আমার বুবুটাকে তার থেকে বয়সে অনেক বড় একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমাকেও দিতে চেয়েছিল টাকার এমাউন্টটা ঠিক জানা নেই আমার কিন্তু অনেকগুলো টাকার বিনিময়ে এক ৬০ বছরের বুড়োর সাথে আমায় বিয়ে দিতে চেয়েছিল চাঁচি। আমার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবো বাবার সাহায্য ব্যতীত নিজে কিছু করবো। কিন্তু হুট করে বাবা মা চলে যাওয়ায় আমার সব স্বপ্ন শেষ হতে চলছিল প্রায়। কিন্তু পরে নিজেকে সামলালাম, আমি আমার স্বপ্নে হলাম অটুট টিনশন পড়িয়ে চাঁচিকে লুকিয়ে কলেজ পাস করে এখানের ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিলাম তাই ওইদিন বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছিলাম আমি। কিন্তু দেখুন চাঁচি পিছুন এখনো ছাড়ছে না আমায় খোঁজার জন্য এখনও লোক লাগিয়ে রেখেছে। আমি জানি আমায় ধরতে পারলে আবারও জোর করে বিয়ে দিতে চাইবে। আমায় বাঁচাবেন তো অপূর্ব?’

শেষের কথাটা খুব অসহায় নিয়েই বললো প্রিয়তা। চোখ বেয়ে কখন পানি গড়িয়ে পড়লো বুঝতেও পারে নি সে। অপূর্ব দেখলো সেটা বুকের ভিতর কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো তার। প্রিয়তার চোখের পানি যে একদমই সহ্য হয় না অপূর্বের।

অপূর্ব প্রিয়তার কথা সবই শুনলো মন দিয়ে। মেয়েটার সাথে যা হয়েছে তা একদমই ঠিক হয় নি। অপূর্ব কিছু একটা ভাবলো তারপর প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ওর দু’গাল চেপে ধরে চোখের পানিটুকু মুছে দিয়ে বললো,

‘ এভাবে কাঁদতে নেই মেয়ে, আমি আছি তোমার পাশে। কেউ কোনো অন্যায় করতে পারবে না তোমার সাথে আর তোমার চাঁচিকে তো আমি দেখে নিবো।’

প্রিয়তা অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি করবেন আপনি?’

‘ কি করবো দেখি কি করা যায়।’

অতঃপর দুজনের মাঝে আসলো নীরবতা।
দেখতে দেখতে বৃষ্টির বেগ একটু কমলো। সন্ধ্যা হলো, মাগরিবের আযান দিলো,পাখিরা উড়ে গেল, প্রকৃতিরা হলো খানিকটানশান্ত প্রিয়তা অপূর্ব ওখানেই বসে ছিল চুপচাপ। হঠাৎই প্রিয়তা বললো,

‘ আপনি নামাজ আদায় করেন অপূর্ব?’

অপূর্ব জবাবে বললো,

‘ সত্যি বলবো না মিথ্যে?’

‘ সত্যিই বলুন।’

‘ মাঝে মধ্যে পড়ি।’

‘ মাঝে মধ্যে পড়েন কেন রোজ পড়বেন?’

‘ তুমি যখন বলেছো তখন কাল থেকে নিশ্চয়ই পড়বো।’

অপূর্বের জবাবে প্রিয়তা যেন খুশি হলো। বললো,

‘ ঠিক আছে।’

সময় গড়াতে লাগলো, প্রিয়তার খিদে পেয়েছে খুব আজ কি এখানেই থাকবে সে। বাড়ি ফিরবে না। অপূর্বকে কি একবার জিজ্ঞেস করবে সে। প্রিয়তা অনেক ভেবে জিজ্ঞেস করতে নিলো অপূর্বকে। বলতে নিলো,

‘ আমরা কি আজ বা..

আর কিছু বলার আগেই প্রিয়তার কথার মাঝখানে বলে উঠল অপূর্ব,

‘ তোমার নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে তাই না প্রিয়তা?’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আজ দু’দিন পর গল্প দিলাম পার্টটা অনেকটা খাপছাড়া হয়েছে আমি জানি। আসলে মন মস্তিষ্ক কোনোটাই ভালো নেই।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here