#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৪
_________________
বেশ হতাশা ভরা চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা অপূর্বের কোটটা আঁকড়ে ধরে। মন বেজায় খারাপ তার কারন অপূর্ব আসে নি। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা কিন্তু অপূর্ব আসছে না। হয়তো আসবেও না। প্রিয়তা আশেপাশে দেখলো তারপর ভাবলো আর দাঁড়ানো ঠিক হবে না তাকে যেতে হবে। প্রিয়তা অপূর্বের কোটটা পুনরায় ব্যাগে ভরে এগিয়ে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে। তবে মনে মনে আওড়ালো খুব,
‘ আপনি কেন আসলেন না অপূর্ব আমি অপেক্ষায় ছিলাম তো।’
ভেবেই জোরে নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে চলতে লাগলো প্রিয়তা।’
অন্যদিকে বটগাছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মতলবের দলে থাকা একটা ছেলে দেখছিল প্রিয়তাকে। প্রিয়তা চলে যাচ্ছে অথচ তার মতলেব বসের কোনো খবর নেই। এই লোকটা অলওয়েজ লেট করে। দেখা যাবে বস আসতে আসতে মেয়েটা চলে যাবে। এরই মাঝে সেখানে এগিয়ে আসলো মতলেব সাথে দুটো ছেলে শিহাব আর করিম। মতলেব এগিয়ে এসে বললো সামনের ছেলেটিকে,
‘ মেয়েটা কই আলী?’
ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে ঘাবড়ে গিয়ে পিছনে থাকালো খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিল সে। আলী মতলেবকে দেখেই উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
‘ এতক্ষণে আপনার আসার সময় হলো বস ওই দেখুন মেয়েটা চলে যাচ্ছে।’
বলেই প্রিয়তার যাওয়ার পানে আঙুল দিয়ে দেখালো আলী। আলীর কথা শুনে মতলেবও তাকালো প্রিয়তার দিকে। তারপর আলীর গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বললো,
‘ মেয়েটা চলে যাচ্ছে আর তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস হারামজাদা জলদি ধর গিয়ে,
বলেই শিহাব করিমকেও উদ্দেশ্য করে প্রিয়তাকে ধরার কথা বললো মতলেব। মতলেবের কথা শুনে শিহাব ওরাও এগিয়ে চললো প্রিয়তাকে ধরতে। প্রিয়তা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে গেছে।’
এদিকে,
ভার্সিটির কর্নার দিয়ে লুকিয়ে থাকা আরেকটা ছেলে নাম তাহের এগিয়ে গিয়েও যেতে পারলো না। এরা কারা মেয়েটির পিছন পিছন যাচ্ছে কেন। ছেলেটিও কি ভেবে এগিয়ে চললো আস্তে আস্তে ওদের থেকে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে বিষয়টা দেখতে হবে তাকে।’
বেশ মন মরা ভঙ্গিতেই এগিয়ে চলছিল প্রিয়তা। এই অপূর্ব ছেলেটা এমন কেন যদি নাই আসার ছিল তাহলে কাল বললো কেন কোট নিতে আসবে আজ? অদ্ভুত ছেলে একটা।’
প্রিয়তা যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তেই তার সামনে এসে থামলো একটা গাড়ি। প্রিয়তা বেশি না ভেবেই গাড়িটা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। এরই মাঝে হুট করেই পিছন থেকে প্রিয়তা কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাকে রুমাল ধরে অজ্ঞান করে ফেললো তাকে। সাথে গাড়িতে তুলে দ্রুত গাড়িতে বসে কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগলো তাকে।’
ঘটনাটা এতটাই দ্রুত ঘটলো যে মতলেবের লোকসহ তাহেরও চমকে উঠলো বিষয়টা কি ঘটলো। মেয়েটাকে কে তুলে নিয়ে গেল?’ তাহের গাড়িটা খেয়াল করেছে গাড়িটা যেন চেনা চেনা লাগলো তার। কতক্ষণ ভাবতেই বলে উঠল সে,
‘ এটা তো অপূর্বের গাড়ি। তার মানে,
ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল তাহেরের।’
গাড়ি ছুটছে তার আপন গতিতে। সামনেই গাড়ি ড্রাইভ করছে আকিব। আজ সে কতটা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে একটা জ্বলজ্যান্ত হেঁটে চলা মেয়েকে অজ্ঞান করে গাড়ি নিয়ে ছুটছে সে। প্রিয়তা এলিয়ে আছে কারো বুকে। প্রিয়তার জ্ঞানশূন্য চোখ দুটো দেখে বাঁকা হাসলো সে। তারপর আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ ওয়েল ডান মাই ফ্রেন্ড। তোমার সাহসীকতা আজ আমায় মুগ্ধ করেছে আকিব।’
আকিব মুচকি হাসলো লুকিং গ্লাসে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনিও না ভাই।’
হাল্কা হাসে অপূর্ব। অপূর্বের হাসি দেখে বললো আকিব,
‘ এবার কোথায় যাবেন ভাই?’
উওরে বেশি না ভেবেই বললো অপূর্ব,
‘ তুমি জানো এখন আমি কোথায় যাবো।’
আকিব হাসে। বলে,
‘ তাহলে যাওয়া যাক ভাই।’
‘ হুম কেন নয়।’
আর কিছু বলে না আকিব ছুটে চলে তাদের গন্তব্যের দিকে।’
প্রিয়তা লেপ্টে আছে, তার পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে আছে অপূর্বের বাহুডোরে। অপূর্ব জানতো আজ প্রিয়তাকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে আর এই তুলে নেওয়া লোকটা যে সেই বাসের লোকটা এটাও বুঝেছিল অপূর্ব। তাই তো এভাবে করে নিয়ে যাওয়া প্রিয়তাকে। যাতে কনফিউশান ওদের মাঝেও থাকবে। অপূর্ব কি ভেবে যেন প্রিয়তার হাতটা ধরলো শক্ত করে। তারপর নিশ্চুপ স্বরে বললো,
‘ আই এম সরি।’
____
বটগাছটার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মতলেবের দলের তিনটা ছেলে শিহাব,আলী আর করিম। মতলেব এদের তিনজনের চেয়েই খাটো তাই বললো,
‘ টুল নিয়ে আয়।’
সঙ্গে সঙ্গে করিম তার ব্যাগে করে আনা টুলটা বের করে দ্রুত রাখলো মতলেবের পায়ের কাছে। তারপর আবারও আগের ন্যায় শিহাবের পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।’
মতলেব চটজলদি টুলটার উপর উঠে সবার থেকে উঁচু হয়ে দাঁড়ালো। তারপর তিনটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ বিষয়টা কি হলো মেয়েটাকে আমরা ছাড়া আর কে কিডন্যাপ করতে চাইবে।’
উত্তরে শিহাব বললো,
‘ আমরা কেমনে কমু বস?’
শিহাবের কথা শুনে মতলেব চোখ রাঙানো ভাব নিয়ে কাট কাট গলায় বললো,
‘ আর একটু দ্রুত হাঁটতে পারলি না হতছ্যাড়াগুলো।’
এবার করিম মুখ খুললো,
‘ আমরা কি করে বুঝবো বস মেয়েটাকে আমরা ছাড়া অন্যকেউ কিডন্যাস করতে চাইবে।’
‘ এবার ওই মেয়ের চাঁচিরে কি কমু কবি তোরা?’
মতলেবের এবারের কথা শুনে আলী বললো,
‘ এইসব আপনাদের জন্য হইছে বস আর একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারলেন না।’
এবার শিহাব করিম দুজনেই একসাথে বললো,
‘ জ্বী বস সব আপনার জন্য আপনি যদি সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম দিয়া উঠতেন তাহলে আমরাও তাড়াতাড়ি এখানে আসতাম।’
এই বলে করিম, শিহাব, আলী তিনজনই কথা শুনাতে লাগলো মতলেবকে। আর এদের কথা শুনে মতলেব নিজেও হতভম্ব হলো। হয়তো এরা সত্যিই বলছে। আজ সকালে রোকেয়ারে নিয়ে সুইমিংপুলে সাতার কাটছে মতলেব এমনটা স্বপ্ন দেখতে ছিল যার মতলেব দরুন সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে তার। রোকেয়া হলো মতলেবে পাশের বাড়ির মোকলেসের ছোট বোইন। সেই ছোডো কাল হইতে মতলেব তারে ভালোবাসে খুব শীঘ্রই বিয়াটাও করবে নিবে। মতলেব এসব ভেবে আফসোসের স্বরে বললো,
‘ ধুরু এবার প্রিয়তর চাঁচিরে কি বলবে মতলেব।’
মতলেবের কথা শেষ হতেই শিহাব বললো আবার,
‘ বস এই রোকেয়া মানে পাশের বাড়ির রোকেয়া আন্টির চাপ্টারটা ক্লোজ করুন নয়তো ওই মাইয়ারে খুইজ্জা পাওয়া লাগবে না।’
এবার মতলেব রেগে গেছে তার রোকেয়ারে ভুলতে বলছে শিহাব। আজকে শিহাব গেছে। মতলেব তার চোখ মুখের ভাব পাল্টালো রাগী গলায় বললো,
‘ তুই কি বললি আমি রোকেয়ারে ভুইলা যামু।’
শিহাব ঘাবড়ে গেল। আয় হায় মুখ ফসকে কি বলে ফেললো সে। কিন্তু সে তো ভুলতে বলে নি জাস্ট চাপ্টার ক্লোজ করতে বলেছে তাও বিয়ে করে। রোজ রোজ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখার চেয়ে বিয়া করা উচিত না। কিন্তু এই বিয়ার বিষয়টা বসরে কে বুঝাবে।’
শিহাব কিছু না বলেই লাগালো ছুট কারন সে জানে এখন তার মতলেব বস কিছু বুঝতে চাইবে না শিহাব দৌড়াতেই তার পিছন পিছন লাঠি হাতে ছুটলোনমতলেব। তা দশটা না পাঁচটা একটা মাত্র রোকেয়া তাকেও নাকি ভুলতে বলছে শিহাব। আজকে তো শিহাব শেষ।’
‘ তোরে খাইছি শিহাব?’
বলেই ভো দৌড় দিল মতলেব। ওদের দৌড়াতে দেখে আলী করিমও ছুটলো ওদের পিছন পিছন।’
অন্যদিকে,
তাহের ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে মতলেব আর তার সাঙ্গো পাঙ্গোর দিকে। বিড় বিড় করে বললেও সে,
‘ আশ্চর্য! এরা কারা কোত থেকে এলো এরা, এরা নাকি কিডন্যাপার।’
তাহেরের কথা শেষ হতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো ফোনের ওপর লেখা ছিল SA Boss! তাহের উপরের নামটা দেখেই ফোনটা তুললো তক্ষৎনাত। তারপর বললো,
‘ জ্বী বস,
উওরে অপরপ্রান্তে থাকা সাদা পাঞ্জাবি পরিধিত সুদর্শন যুবকটি গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
‘ কাজটা কি হয়েছে তাহের?’
‘ বস আমি কাজটা করতেই আসছিলাম কিন্তু তখন,,
বলতে বলতে এগিয়ে চললো তাহের কতক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সব বললো ফোনের ওপাশে থাকা যুবকটিকে। তাহেরের সব কথা শুনে এস এ নামে সেইভ করা সুদর্শন যুবকটি বললো,
‘ খোঁজ লাগাও তাহের মেয়েটা অপূর্বের কি হয়?’
উওরে তাহেরও বললো,
‘ ঠিক আছে বস।’
ফোন কাটলো এস এ। দুপুরের শেষ ভাগের হাল্কা রোদ্দুরের প্রখর তেজ ছিল তখন। জানালার ধারে থাকা পর্দাদুটো নড়ছিল খুব। এরই মাঝে টেবিলের ওপর থাকা কাঁচের বোতলটা ধরেই দেয়ালে ছুড়ে মারলো এস এ। তারপর কাট কাট কন্ঠে বললো,
‘ কাজটা তুই একদম ঠিক করিস নি অপূর্ব। এর ফল একদমই ভালো হবে না। একদমই না।’
____
আকাশটায় হুট করেই মেঘ জমেছে। অন্ধকারে ভেসে গেছে চারপাশ বাড়ির ছোট্ট উঠান পেরিয়ে সারি সারি গাছের পাতাগুলো নড়ছে খুব, ধুলোতে ভরছে চারপাশ। অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে, হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশ দিয়ে। আর দরজার ভিতরেই বিছানায় শুয়ে আছে প্রিয়তা এখনো জ্ঞান ফেরেনি তার। হয়তো আকিব ঔষধের ডোজটা একটুু বেশি দিয়ে ফেলেছে। এই আকিবও না। অপূর্বের বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে কাজটা কি ঠিক হলো? কিন্তু না করলেও তো হতো না। প্রিয়তার সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন জাগছে অপূর্বের মনে। প্রিয়তা কে? খুলনার কোথায় থাকে? তার বাবা মা কোথায়? প্রিয়তার চাঁচি যে প্রিয়তার সাথে অন্যায় করছে এটা কি তারা দেখছে না তারা কি বেঁচে নেই? নাকি আছে?’
অপূর্ব যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত ঠিক তখনই আকাশ পথ বেয়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। অপূর্ব তার ভাবনা থেকে বের হলো। তারপর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে খুব শান্ত গলায় শীতল ভেজা কন্ঠে বললো,
‘ তুমিও না বড্ড বেখেয়ালি,
হুট করে আসো আবার হুট করে চলে যাও।’
বৃষ্টিতে যে আমার ব্যাথা হয় কিছু স্মৃতি মনকে নাড়িয়ে দেয় বোঝো না তুমি। কেন বোঝো না অপূর্ব কাউকে ভালোবেসে তার বিপদ বাড়াতে পারে না। নিজের লাইফ রিস্কের ভিড়ে অন্য কাউকে জড়াতে পারে না। একটা জিনিস কেন বুঝতে চাও না মানুষ নিজের ক্ষতি মেনে নিতে পারে, নিজের আঘাত সামলে উঠতে পারে কিন্তু প্রিয় মানুষের গায়ে একটু আঘাতও বিশাল ঘায়ের যন্ত্রনায় দেয়। ভোগায় অনেকদিন যা সহ্য করা আরও বেশি কষ্টকর। মেনে নেওয়া যায় না।’
অপূর্ব একমনে কথাগুলো বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এমন সময় হুট করেই তার পিছনে এসে দাঁড়ালো প্রিয়তা। মাথাটা চেপে ধরে বললো,
‘ আমায় এভাবে এখানে কেন নিয়ে এনেছেন অপূর্ব?’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️