আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ২৩

0
841

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৩
_________________

গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে প্রিয়তা চোখে মুখে অশেষ বিস্ময়ের ছোঁয়া। শরীর জুড়ে শীত শীত বিষন্নতা, খানিকটা অস্বস্তিতা তার ওপর অচেনা সেই মানুষের চিরকুট আর মোবাইল। প্রিয়তার পাশেই ড্রাইভিং সিটে বসে আছে অপূর্ব। কতক্ষন আগেই প্রিয়তাকে নিয়ে এখানে বসেছে অপূর্ব।’

হঠাৎই গায়ে মোটা কিছুর ভাড় লাগতেই খানিকটা চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকালো প্রিয়তা। অপূর্ব তার গায়ের মোটা কোটটা প্রিয়তার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে। প্রিয়তা কয়েকবার পলক ফেলে তাকালো অপূর্বের দিকে। এরই মাঝে অপূর্ব বলে উঠল,

‘ এভাবে তাকিয়ে থেকো না মেয়ে আমি যেন নিস্তব্ধ হয়ে যাবো।’

প্রিয়তা যেন চমকালো, ভড়কালো, অবাক হলো খুব। বললো,

‘ জ্বী,

হাসে অপূর্ব, প্রান খোলা এক মিষ্টি হাসি দেয় সে। তারপর বলে,

‘ তোমার অসস্থিতা আমি বুঝেছি মেয়ে তাই ওটা তোমায় দিলাম। তবে ভেবো না সবসময়ের জন্য দিয়েছে কাল ভার্সিটিতে নিয়ে আসবে আমি এসে নিয়ে যাবো।’

উত্তরে মাথা নাড়ায় প্রিয়তা। তবে কিছু বলে না।’

অপূর্ব হাসে। আজকে অপূর্ব একাই গাড়ি নিয়ে এসেছিল উদ্দেশ্য তেমন কিছুই ছিল না। তবে মনে মনে চেয়েছিল প্রিয়তার সাথে দেখা হোক তার। সত্যি সত্যি হয়ে যাবে এটা ভাবে নি। অপূর্ব বেশি ভাবলো না গাড়ি নিয়ে ছুটলো দূরে। বৃষ্টির রেশ এখনও অনেক বেশি। রাস্তার দুইপাশে বড় বড় গাছ আর মাঝখানে ভেজালো সরু রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে প্রিয়তা আর অপূর্ব। প্রিয়তা তাকিয়ে আছে অপূর্বের মুখের দিকে। সে সত্যি বুঝচ্ছে না ওই পার্সেলটা কি অপূর্ব পাঠিয়েছে। অপূর্বই হবে কারন এই অচেনা শহরে তার চাচা আর বোন সম্পর্কে অপূর্বই জানে, আর মোবাইল নিয়েও তো আগেরবার কথা বলেছিল অপূর্ব। তাহলে কি অপূর্বই পাঠিয়েছে মোবাইল। প্রিয়তা যখন অপূর্বের মুখের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে ব্যস্ত ঠিক তখনই হুট করে অপূর্ব তার গাড়ি থামিয়ে দিলো আচমকা এমনটা হওয়াতে খানিকটা চমকে উঠলো প্রিয়তা। বিস্ময়কর চোখ নিয়ে তাকালো সে অপূর্বের দিকে। অপূর্ব জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো তারপর বললো,

‘ কিছু বলার থাকলে বলে ফেলো প্রিয়তা এভাবে তাকিয়ে থাকো কেন?’

প্রিয়তা লজ্জায় যেন আড়ষ্ট হলো। সে তো তেমন ভাবে তাকায় নি আর অপূর্ব তো গাড়ি ড্রাইভিং করতে ছিল তাহলে বুঝলো কি করে? প্রিয়তা তার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়তা খানিকটা সাহস নিয়ে বললো,

‘ আপনায় একটা প্রশ্ন করবো অপূর্ব?’

অপূর্ব বেশি না ভেবেই বললো,

‘ হুম বলো,

‘ আপনি কি আমায় মোবাইল পাঠিয়েছেন অপূর্ব, সাথে চিরকুট।’

অপূর্ব কি ভড়কালো প্রিয়তার কথা শুনে মোটেও ভড়কালো না উল্টো স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

‘ কিসের চিরকুট?’

প্রিয়তা থমকে গেল তাহলে কি অপূর্ব পাঠায় নি ওগুলো পাঠালে তো এমন প্রশ্ন করতো না। প্রিয়তা জবাব দেয় না কি বলবে বুঝতে পারছে না। অপূর্ব যেন বুঝলো প্রিয়তার অবস্থাটা। গাড়ি স্ট্যার্ট দিতে দিতে বললো,

‘ এতো বেশি ভেবো না মেয়ে। জীবন যেভাবে চলে তাকে সেভাবেই চলতে দেও, বেশি ভেবে হবে কি? যদি মনের অশান্তি এক অচেনা চিরকুটপ্রেরক মিটিয়ে দিতে পারে।’

প্রিয়তা কি বুঝলো অপূর্বের কথার আগামাথাটা ঠিক বোঝা গেল না। কারন সে কোনো প্রশ্ন করে নি।’

অতঃপর নিশ্চুপতার ভিড়েই এগিয়ে চলো প্রিয়তা আর অপূর্ব।’

___

বড়জোর বিকেল ৫ঃ০০টা বাজে। আজ প্রিয়তার স্টুডেন্টটা পড়বে না মায়ের সাথে কোথায় যেন গেছে। গ্র্যান্ডমার কাছে ফোন করে বলেছে। তাই প্রিয়তা আর বের হয় নি বাড়ি থেকে। বর্তমানে নিজের রুমে চুপচাপ শুয়ে আছে প্রিয়তা সামনেই দড়ির ওপর টানিয়ে রাখা অপূর্বের দেওয়া কালো কোটটা। বাহিরে বৃষ্টি কমেছে অনেক আগেই তবে অন্ধকার হয়ে আছে এখনও। প্রিয়তা একা একাই বললো,

‘ অপূর্ব বলেছে কোটটা কাল এসে নিয়ে যাবে তার মানে কাল আবার অপূর্বের সাথে দেখা হবে।’

‘অপূর্বের সাথে দেখা হবে’ কথাটা ভাবলেই কেমন যেন লাগে প্রিয়তার। ভালোও লাগে আবার কেমন কেমন যেন করেও। অনুভূতিরা মাঝে মাঝে বড্ড জ্বালাতন করে প্রিয়তাকে। এক অদ্ভুত ফিলিংস যেটা মাঝে মাঝে নিতে পারে না প্রিয়তা।’

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই হঠাৎই বিছানার পাশে থাকা প্রিয়তার ফোনটা বেজে উঠলো। প্রিয়তা যেন আচমকাই লাফ দিয়ে উঠলো। ফোনটা দেখলো সে, উপরের নাম্বারটাও দেখলো অচেনা কেউ। প্রিয়তা ফোনটা তুলবে কি তুলবে না ভাবতে ভাবতেই প্রথম কলটা কেটে গেল। সেকেন্ডবার ফোনটা বাজতেই প্রিয়তা ফোনটা তুললো। খুব নমনীতার সাথে বললো,

‘ আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?’

উত্তরে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি বলে উঠল,

‘ ওলাইকুম আসসালাম। আমি কে সেটা কি আমার কন্ঠে শুনে বোঝা যায় না মেয়ে?’

প্রিয়তা ভয়ংকরভাবে চমকে উঠলো,চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল মুহূর্তেই। এটা তো অপূর্বের গলা। তার মানে অপূর্বই ফোনটা পাঠিয়েছে প্রিয়তাকে। প্রিয়তা বেশি না ভেবেই বললো,

‘ তাহলে আপনি ফোনটা পাঠিয়েছেন অপূর্ব?’

হাল্কা হাসে অপূর্ব। বলে,

‘ এখনও সন্দেহ হচ্ছে বুঝি।’

অপূর্বের কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো প্রিয়তা। বললো,

‘ তাহলে তখন জিজ্ঞেস করার সময় বলে নি কেন? না জানার ভান কেন করলেন?’

আবারও হাসে অপূর্ব। বলে,

‘ কি জানি সত্যি ভান করেছিলাম বুঝি আমার কেন মনে পড়ছে না।’

চোখ বন্ধ করে ফেলে প্রিয়তা। এ ছেলে তো বড্ড ত্যাড়া। প্রিয়তা নিজের চোখ খুলে জবাব দেয়,

‘ ফোন গিফট কেন করলেন?’

উত্তরে ফটাফট জবাব অপূর্বের,

‘ ভালো লেগেছে তাই।’

‘ আর চিরকুট?’

‘ ওটা তো তোমায় বিপাকে ফেলার জন্য। You may not know আমার আবার মানুষকে বিপাকে ফেলতে বেশ লাগে।’

প্রিয়তা যেন চরম ভাবে ভড়কালো এ ছেলে বলে কি মানুষকে বিপাকে ফেলতে নাকি বেশ লাগে। প্রিয়তা কি ভেবে যেন বলে উঠল,

‘ আপনার কি মাথা ঠিক আছে অপূর্ব?’

স্বাভাবিক জবাব অপূর্বের,

‘ আগে ঠিক ছিল কিন্তু এখন নেই।’

অপূর্বের এবারের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো প্রিয়তা,

‘ মানে,

উত্তরে একটু কেমন যেন নীরব আর শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো অপূর্ব,

‘ মানেটা আজ থাক অন্য আরেকদিন বলবো মেয়ে।’

প্রিয়তা কি জবাব দিবে ভাবতে ভাবতে বললো,

‘ কেন আজ বললে কি হবে?’

‘ আজ শনিবার আর একজন সুন্দর ভদ্রশদ্র জ্ঞানীগুনী মানুষ বলে গেছে শনিবার কোনো মানের উত্তর দিতে নেই।’

প্রিয়তা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো,

‘ কে বলে গেছে?’

উত্তরে হাসতে হাসতে জবাব দেয় অপূর্ব,

‘ মিস্টার তাহসান আহমেদ অপূর্ব।’

এবার না চাইতেও উচ্চস্বরে হেঁসে ফেলে প্রিয়তা প্রান খোলা দাঁত খিলখিল শব্দ করে হেঁসে ফেলে সে। আর প্রিয়তার হাসির শব্দ শুনে ফোনের অপর প্রান্তের থাকা অপূর্ব। বুকে হাত রেখে খুবই ধীর স্বরে বললো,

‘ এভাবে হেঁসো না মেয়ে তোমার হাসিতে আমার বুকটা কেন যেন ব্যাথা করছে আমি নিতে পারছি না।’

কিন্তু অপূর্বের এই অসহায়ত্বের কথাটা প্রিয়তা শুনলো কি, শুনলো না তো উল্টো আরো উচ্চ স্বরেই হাসতে লাগলো সে। সাথে অপূর্বের বুক ব্যাথা বাড়াতে লাগলো।’

শহর জুড়ে অন্ধকারের বিষন্নতা। গাছের বৃষ্টিতে ভেজা পাতাগুলোও বেশ চুপচাপ। পাখিরা তেমন ডাকছে না হয়তো বৃষ্টির ভয়ে লুকিয়েছে কোথাও। পরিবেশ ছুয়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে, দরজা সামনে ঝুলে থাকা ধূসর রঙের পর্দাটা নড়ছে। কেমন চুপচাপ পরিবেশ। আর এই চুপচাপের ভিড়েই মুঠো ফোনের ভিড়ে কথোপকথন করছে প্রিয়তা আর অপূর্ব। একজন হাসছে আর একজন বুক ব্যাথায় নড়ছে। ইস!’
____

আজ প্রিয়তাকে ভার্সিটি দিয়ে যেতে আয়মান এসেছে। প্রিয়তা আনতে চায় নি কিন্তু তাও আয়মান এসেছে। বলেছে একা একা বাসায় ভালো লাগছে না তাই এসেছে সে। ভিতরে ঢুকবে না শুধু ভার্সিটির সামনে দিয়েই চলে যাবে। রিকশা করেই এসেছে দুজন। অতঃপর ভার্সিটি আসতেই প্রিয়তা রিকশা থেকে নামলো তারপর বললো,

‘ এবার তবে আপনি বাড়ি যান আয়মান?’

আয়মানও শোনে। রিকশা থেকে নেমে মুচকি হেঁসে বলে,

‘ হুম যাচ্ছি তুমি আগে যাও,

প্রিয়তাও আর ভাবে নি আশেপাশে তাকিয়ে চলে যায় সে ভিতরে। আর আয়মানও কিছুক্ষন প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বলে,

‘ আমার কি তোমায় ভালো লাগতে শুরু করেছে প্রিয়তা?’

আয়মান একা মনে কথাটা আওড়িয়ে চোখের কালো চশমাটা পড়ে রিকশায় চড়ে চললো আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।’

অন্যদিকে ভার্সিটির পাশ দিয়েই থাকা একটা বড় বটগাছের পিছনে লুকিয়ে থাকা একটা ছেলে বললো,

‘ মেয়েটা কালও কি এই ছেলেটা সাথে ছিল কে জানে। এই বস কখন আসবে কে জানে। লোকটা অলওয়েজ লেট করে।’
____

খুলনাতে নিজের বাড়ির উঠানে বসে আছে প্রিয়তার চাচি শিউলি বেগম। কুলোর মাঝে চাল রেখে বাজছেন তিনি। চোখে মুখে প্রখর রাগ তার। আজ থেকে ঠিক দু’দিন আগে প্রিয়তার সাথে বিয়ে ঠিক করা সেই বুড়োর ছোট ভাই এসে প্রচুর শাসিয়ে গেছে শিউলি বেগমকে। কারন তাদের বলে যাওয়া একসপ্তাহ মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার কথাটা রাখতে পারে নি প্রিয়তার চাঁচি অর্ধেক দিয়েছেন আর বাকি অর্ধেক দিয়ে গয়না গাটি বানানোর কারনে দিতে পারে নি। এর জন্য অনেক কথাও শুনিয়ে গেছে তাকে। শিউলি বেগম শুধু রাগে ফুঁসেছে একবার যদি প্রিয়তাকে হাতের কাছে পেত তাহলে ওখানেই কেটে ফালা ফালা করতেন উনি। বাব-মা মরা মেয়ের এতো তেজ আর সাহস আসে কোথা থেকে?’

হঠাৎই প্রিয়তার চাঁচির ফোনটা বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠে ফোনটা তুললেন তিনি মতলেব ফোন করেছে। শিউলি বেগম কয়েকটা কড়াকড়া কথা শোনার জন্য ফোনটা তুলতেই অপর প্রান্তে মতলেব বললো,

‘ প্রিয়তার খোঁজ পেয়েছি ম্যাডাম?’

শিউলি বেগমের রিয়েকশনটা ঠিক বোঝা গেল না। এই কথাটা আরো দু’দিন আগে শুনলে বোধহয় বেশি খুশি হতেন তিনি। শিউলি বেগম নিজেকে সামলে বললেন,

‘ কোথায় আছে নবাবের বেটি?’

‘ জ্বী ম্যাডাম ঢাকাতে এখানের একটা ভার্সিটিতে ভর্তিও হয়েছে। সঙ্গে একটা ছেলেও আসে ভার্সিটি দিতে আসতে।’

শিউলি বেগম মতলেবের কথা শুনে রাগী রাগী কন্ঠে বললো,

‘ তার মানে নবাবের বেটি প্রেমিকের জন্য বিয়ের আসর ছেড়ে পলাইছে।’

‘ হতে পারে ম্যাডাম?’

‘ শোন ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রিয়তাকে আমার সামনে এই খুলনাতে চাই।’

উত্তরে মতলবেও বলে,

‘ ঠিক আছে ম্যাডাম।’

মতলেবের কথা শুনে প্রিয়তার চাঁচিও আর কিছু না বলে ফোন কাটলেন। তারপর একা একা আওড়ালেন,

‘ তাহলে এই কারনেই বাড়ি ছেড়ে পালানো হয়েছে প্রিয়তা, একবার সামনে পাই তোকে। তোর ঠ্যাং আমি ভাংবো। তোর জন্য আমার মান সম্মান সব গেছে। আমি এখানে অপমানিত হবো আর তুই বাহিরে পাখনা মেলে উড়ে বেড়াবি তাও নাগরকে সঙ্গে নিয়ে এটা আমি হতে দিবো নাকি।’
___

ভার্সিটি শেষে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। অপেক্ষা করছে সে অপূর্বের জন্য। কিন্তু অপূর্বের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। তবে কি অপূর্ব আসবে না আজ? কিন্তু উনি তো কাল বললো আসবে এখানে তার কোটটা নিতে?’

প্রিয়তার কেন যেন মন খারাপ হলো। মনে মনে বললো,

‘ আপনি কি সত্যি আসবেন না অপূর্ব?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here