#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৭
_________________
বেশখানিকটা চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছে প্রিয়তা। মনোযোগ দিয়েছে ঠিকই তবে মস্তিষ্ক আটকে রয়েছে তখনকার শ্যামবর্নের ছেলেটার ওপর। ছেলেটা কে ছিল, আর তন্দ্রা বিলাসে কাজ কি তার। প্রিয়তা নানা কিছু ভাবলো পরমুহূর্তেই মাথা থেকে সবটা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মনোযোগ দিলো স্টুডেন্টের পড়ার দিকে।’
পাক্কা এক ঘন্টা দশ মিনিট পর স্টুডেন্টকে পড়িয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো প্রিয়তা। আজ প্রথম দিন থাকায় সেই হিসেবে খারাপ কাটে নি বিকেলটা। প্রিয়তা এগিয়ে চললো, হাঁটতে হাঁটতে যখন এসে তন্দ্রা বিলাসের পৌঁছালো সে বাড়ির সদর দরজা ছিল খোলা প্রিয়তা সদর দরজা দিয়েই ঢুকলো ভিতরে, ভিতর থেকে কথা বলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল খুব তবে কি ছেলেটা এখনো দাদিমার কাছেই আছে। প্রিয়তা কৌতুহলী এগিয়ে গেল, মেইলি কন্ঠই কানে আসছে তার। প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো গ্র্যান্ডমার রুমের সাদা পর্দাটার আড়াল করে এরই মাঝে গ্র্যান্ডমা তাকালো দরজা দিকে প্রিয়তাকেও দেখলো সে। সাথে বললো,
‘ তুমি এসেছো প্রিয়তা? ভিতরে আসো তোমার সাথে আয়মানের পরিচয় করিয়ে দেই।’
হুট করেই গ্র্যান্ডমার মুখে কোনো মেয়েকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা শুনতেই আয়মান তাকালো পিছনে। আসার পথের সেই এড্রেস বলে দেওয়া মেয়েটাকে দেখে চরম অবাক হলো সে। আয়মান তক্ষৎনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আরে আপনি এখানে?’
প্রিয়তাও তাকালো ছেলেটার দিকে। তার ধারনাই ঠিক হলো৷ এই ছেলে সেই ছেলেই। প্রিয়তা এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমার দিকে। এরই মাঝে গ্র্যান্ডমা আয়মানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি ওকে চেনো আয়মান?’
উওরে আয়মানও বললো,
‘ হা, তোমায় বলেছিলাম না গ্র্যান্ডমা আসার সময় একটা মেয়ে রাস্তা না দেখিয়ে দিলে আমি আসতে পারতাম না সে তো এই মেয়েই।’
‘ ওহ,
গ্র্যান্ডমা আর আয়মানের কথা শুনে এবার প্রিয়তা গ্র্যান্ডমাকে প্রশ্ন করলো,
‘ উনি কে দাদিমা?’
উওরে গ্র্যান্ডমাও হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ ও আমার নাতি প্রিয়তা কিছুদিনের জন্য আমেরিকা থেকে এখানে থাকতে এসেছে আমার সাথে।’
এবার যেন আরো অবাক হলো প্রিয়তা। এর মানে এই আয়মান ছেলেটি গ্র্যান্ডমার ছেলের ছেলে। অতঃপর প্রিয়তা আর বেশি ভাবলো না। খানিকটা ক্লান্তমাখা গলায় বললো,
‘ ওহ, আচ্ছা দাদিমা আমি আমার রুমে গেলাম তোমরা কথা বলো,
‘ ঠিক আছে।’
উওরে আর কিছু না বলে চলে গেল প্রিয়তা। আর আয়মানও কিছুক্ষন প্রিয়তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে কথা বলতে ব্যস্ত হলো গ্র্যান্ডমার সাথে।’
___
রাত আটটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। নিজের রুমের পড়ার টেবিলে বই পড়ছিল প্রিয়তা এমন সময় হঠাৎই তার রুমের বেলকনি বেয়ে বিকট এক শব্দ আসতেই চমকে উঠলো প্রিয়তা ঘাবড়েও গেল খানিকটা। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে কৌতুহলী এগিয়ে গেল সে বেলকনির দিকে বেলকনির দরজা খুললো আস্তে আস্তে হঠাৎই প্রিয়তা দেখলো একটা বড় লাল রঙের বড় এক টুকরো ইটের সাথে একটা চিরকুট পেঁচানো প্রিয়তা এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু না কেউ নেই আশেপাশে প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ইট সমেত চিরকুটটা নিয়ে সোজা ঢুকে পড়লো রুমে তারপর বেশি না ভেবেই চিরকুটটা বের করলো সে। চিরকুটের ভাজটা খুলতেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা দেখলো প্রিয়তা। কেউ লিখেছে তাকে,
‘ প্রথম দিন বোরকা ব্যতিত বাসা থেকে বের হয়েছো মেয়ে আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু নেক্সট এমন ভুল করলে তোমার কিন্তু ক্ষতি হবে।’
প্রিয়তা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো চিরকুটটার দিকে। এমন থ্রেট জনিত কথা কে লিখতে পারে তাকে। প্রিয়তা চরমভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো চিরকুটটার দিকে আবারও চিরকুটের লেখাটা পড়লো সে। এ কেমন কথা? কিন্তু চিরকুটটা লিখলো কে?’
____
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা বাড়ির চারপাশ। আজ আবার ডিনার সেরে বাড়ির ছাঁদে উঠেছে অপূর্ব। ঘড়িতে তখন প্রায় বারোটা ছাড়িয়ে। মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অপূর্বের। এস এ কে? শাহরিয়ার আদনানকে কে মারলো? কেন মারলো? কারন কি। কেউ কি আছে যে তাদের দলে থেকে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে। না হলে কাল আকিবকে আদনানের খবর আনতে বললো আর আজই ওর মৃত্যুর খবর আসলো। কি করে কি সম্ভব? আচ্ছা আদনানের মৃত্যুর সাথে এস এর কি কোনো সম্পর্ক ছিল বা আছে। অপূর্ব ভাবছে অনেক কিছু ভাবছে সে, হঠাৎই কি ভেবে কাকে একটা ফোন করলো সে। তারপর বললো,
‘ কোনো খবর পেয়েছো বা কোনো হদিস আমাদের দলেই কি কেউ বিশ্বাসঘাতক আছে।’
উওরে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি বললো,
‘ একটা ভিডিও পেয়েছি ভাই কিন্তু ব্যক্তিটিকে দেখলে আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না।’
‘ খুব কাছের কেউ?’
‘ জ্বী ভাই।’
‘ ভিডিও পাঠাও আমি দেখবো।’
‘ আচ্ছা ভাই,
বলেই ফোন কাটলো অপূর্ব। কিছুক্ষনের মাঝেই অপূর্বের ফোনে একটা ভিডিও মেসেজ আসলো। অপূর্বও দেখলো, বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখলো,ভিতর থেকে রাগ উঠার কথা থাকলেও চোখ মুখ রাখলো শান্ত। মোবাইলটা উল্টে রাখলো তারপর আকাশ পথে তাকালো সে। শান্ত স্বরে হাল্কা হেঁসে বলে,
‘ আবারও প্রমাণিত হলো আপন মানুষগুলোই বড্ড বেইমান হয়।’
সময় গেল পাঁচ সেকেন্ড, দশ সেকেন্ড করে সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিটে গিয়ে থামতেই অপূর্ব আবার কাউকে ফোন করলো। অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি ফোনটা তুলতেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বললো অপূর্ব,
‘ ছাঁদে আসো কথা আছে?’
বলেই ফোন কেটে দিল অপূর্ব।’
কতক্ষনের মাঝেই কারো পদধ্বনি পাওয়া গেল ছাঁদে। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে সে অপূর্বের দিকে। অপূর্ব নিশ্চুপে বসে আছে চুপচাপ, চোখ মুখ স্বাভাবিক।’
—-
‘ এত রাতে এখানে কেন ডেকেছো অপূর্ব?’
হুট করেই বাবার কন্ঠটা কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকালো অপূর্ব। চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখেই বললো,
‘ ভাবছি কি বাবা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নিবো সিঙ্গেল লাইফ আর ভালো লাগে না?’
এভাবে মাঝরাতে ছাঁদে ডেকে এনে ছেলের মুখে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে ভড়কে গেল অপূর্বের বাবা। ছেলের পাশ দিয়ে বসে পড়লেন তিনি। বললেন,
‘ তোমার মাথা ঠিক আছে অপূর্ব কিসব আবোলতাবোল বকছো নেশা করে এসেছো নাকি?’
বাবার কথা শুনে ভ্রু-জোড়া কঠিনভাবে কুঁচকে বললো অপূর্ব,
‘ তোমার কি মাঝরাতে আমাকে নেশাখোর মনে হচ্ছে,
‘ চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না কিন্তু কথা শুনে মনে হচ্ছে।’
‘ এটা কিন্তু ঠিক না বাবা এতদিন তুমি যখন মিঙ্গেল হওয়ার জন্য জোর করতে আমি বারন করতাম আর আজ যখন আমি মিঙ্গেল হতে চাইছি তখন তুমি বাহানা করছো?’
‘ তোমার মতো এমন রাগী রাজনীতিবিদকে বিয়েটা কে করবে? কোনো ছকিনার বাবাও তো মেয়ে দিবে না।’
‘ তুমি আমায় অপমান করছো বাবা তুমি জানো আমি রাস্তায় বের হলো কত মেয়েরা আমার জন্য পাগল হয়ে বসে থাকে,
অপূর্বের কথা শুনে নাক ছিটকানি দিয়ে বললো অপূর্বের বাবা,
‘ ছিঃ ছিঃ শেষে কি না তুমি রাস্তাঘাটে বের হয়ে পাগলদেরও খেয়াল করছো।’
বাবার কথা শুনে কি অপূর্ব ভড়কালো মটেও ভড়কালো না। উল্টো বললো,
‘ শুধু পাগল বাবা আমি তো পাগলীদের দিকে বেশি নজর দেই। আমি ভেবে রেখেছি বিয়ে করলে কোনো পাগলী মেয়েকেই বিয়ে করবো।’
অপূর্বের বাবা ভেবেছিল আজ প্রথম হয়তো ছেলের কথার মাঝে একটা ভড়কানোর মতো কথা বললো। আর অপূর্বও কথা শুনে ভড়কাবে কিন্তু তা আর হলো কই উল্টো সে নিজেই ভড়কে গেল। অপূর্ব তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আহ তোমার স্টক শেষ বাবা।’
অপূর্বের বাবা জবাব দেয় না। উল্টো গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
‘ তুমি কি এতরাতে আমার সাথে মশকরা করার জন্য ফোন করে ডেকে এনেছো অপূর্ব?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। হুট করেই বাবার কোলে মাথা রাখে সে। তারপর বলে,
‘ দুনিয়ায় কেউ আপন হয় না তাই না বাবা?’
হুট করেই ছেলের এমন আচরন আর কথা শুনে চমকালেন অপূর্বের বাবা। খানিকটা হতভম্ব হয়ে বললেন,
‘ কি হয়েছে অপূর্ব?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। উল্টো বলে,
‘ আচ্ছা বাবা এই যে আপন মানুষগুলো পিছন থেকে পিঠে ছুড়ি মারে তাদের কি কষ্ট লাগে না বলো,
‘ আমি তোমার কথার আগামাথা বুঝচ্ছি না অপূর্ব।’
বাবার এবারের কথা শুনে অপূর্ব থমথমে গলায় বললো,
‘ তা বুঝবে কেন? তুমি তো শুধু বোঝো সাবানা আন্টি আর ববিতা আন্টিকে।’
‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে অপূর্ব?’
‘ এখন তো বাড়াবাড়ি হবেই তুমি ওদের বুঝলে দোষ নেই আমি বললেই যত দোষ।’
‘ তুমি যে আমাকে কোনো কাজের জন্যই ডাকো নি অপূর্ব তা আমি হারে হারে বুঝেছি। তোমার মতো বজ্জাত ছেলে আমি দুটো দেখেনি। যে মাঝরাতে বাবাকে ছাঁদে ডেকে এনে মশকরা করে।’
‘ উফ মনে হচ্ছে কতদিন পর যেন তোমার গালাগাল শুনলাম কানটা যেন পরিষ্কার হলো। আচ্ছা রোজ রোজ এসে মিনিমাম দশ বারোটা গালাগালও শুনিয়ে যেতে পারো তুমি না আসলে কোনো কাজের নও।’
‘ আমি কোনো কাজের না হলে তুমি আজ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে বুঝি।’
‘ হুম হাঙ্গা জীবনে কাম তো ওই একটাই করছো আমারে অয়নরে দুনিয়ার আলো দেখাইছো। তাও তো তুমি দেও নি মাই তো করছে সব।’
‘ আমি কিছু করি নি তোমাদের জন্য?’
‘ কি করেছো বলো,
‘ ওই ছোট বেলায় যখন তোমাদের ডায়াপার শেষ হয়ে যেতে তখন কে কিনে আনতো।’
‘ ওরে বাবারে কি কাম করছে রে, আমার এখনও মনে আছে অয়নের বেলায় আমি নিজেই হাফপ্যান্ট পড়ে যাইতাম ওই হায়পার না ডায়াপার আনতে।’
‘ সে তো আমি অফিসে থাকলে,
‘ তো কথা তো একই হলো।’
‘ তুমি আমার সাথে এই মাঝরাতে ঝগড়া করার জন্যই ডেকেছো অপূর্ব?’
উওরে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ ঝগড়া করতে ডেকেছি কি ঝগড়াই তো করছি?’
আর কিছু বললো না অপূর্বের বাবা। চুপ হয়ে গেলেন তিনি। এ ছেলে চরম খারাপ। একদমই কথায় পারা যাবে না এমন।’
অপূূর্বের বাবা আর মুখ খোলে নি অপূর্বও আর কিছু বলে নি। এভাবে বেশ কিছুক্ষন নীরবতা চললো দুজনের মাঝে হঠাৎই অপূর্ব বলে উঠল,
‘ কাল যদি তোমার এক বন্ধুর ছেলেকে আমি খুন করে ফেলি তবে কি তুমি খুব বেশি কষ্ট পাবে বাবা?’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। সরি ফর লেট গাইস। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে রেগুলার গল্প পাবে।]
#TanjiL_Mim♥️