আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ১৫

0
965

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৫
_________________

আচমকাই কোনো পুরুষালির কন্ঠ কানে আসতেই থেমে গেল প্রিয়তা। আশেপাশে তাকালো সে, না সে ছাড়া আপাতত আশেপাশে কোনো মেয়ে নেই। কিন্তু তাকে কেউ ডাকবে কেন? প্রিয়তা কৌতুহলী পিছন ঘুরে তাকালো তার সামনেই একটা কালো গাড়ির দরজা খুলে এক পা বাহিরে রেখে মুখে মাস্ক চোখে কালো সানগ্লাস পরে বসে আছে একটা ছেলে। প্রিয়তার বুক কাঁপলো একে চেনে বলে তো হয় না, অবশ্য মনে হয় না কি চেনেই না প্রিয়তা। প্রিয়তা বুঝতে পারছে না কি করবে এগিয়ে যাবে নাকি যাবে না। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই আবারও হাতের ইরাশায় ডাকলো ছেলেটি। সাথে বললো,

‘ এই যে মিস কালো বোরকা আপনাকেই ডাকছি?’

এবার প্রিয়তা পুরোপুরি শিওর হলো ছেলেটা তাকেই ডাকছে। প্রিয়তা ভাবলো যাবে না এখান থেকেই দৌড়ে পালাবে। কিন্তু প্রিয়তা কিছু করার আগেই ছেলেটি বলে উঠল,

‘ দৌড়ে পালানোর মতো সাহসিকতার দেখিও না মেয়ে, ধরে ফেললে কিন্তু তোমায় ছাড়ছি না।’

কথাটা ছেলেটি শান্ত গলায় বললেও এর মাঝে ছিল এক প্রকার থ্রেট দেওয়ার মতো উক্তি যা প্রিয়তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে ভিতর থেকে। প্রিয়তা আর ভাবলো না এগিয়ে গেল ছেলেটির দিকে। বললো,

‘ জ্বী বলুন,

উওরে ছেলেটি বললো,

‘ গাড়িতে বসুন মিস,

ছেলেটির কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় প্রিয়তার। বলে,

‘ কি?’

‘ আপনি কি কানা নাকি।’

‘ দেখুন কিছু বলার থাকলে এখানেই বলুন। আর তাছাড়া আপনায় আমি চিনি না আপনার গাড়িতে কেন বসতে যাবো।’

‘ চিনতে পারলে বসবেন তো।’

‘ মানে,

এবার সামনের ব্যক্তিটি তার মুখের মাস্কটা খুললো। সঙ্গে সঙ্গে সামনের ছেলেটির মুখ দেখেই বলে উঠল প্রিয়তা,

‘ আপনি,

অপূর্ব সঙ্গে সঙ্গে তার মুখের মাস্কটা লাগিয়ে নিলো। বললো,

‘ হুম আমি এখন জলদি ভিতরে আসুন আপনার সাথে কথা আছে।’

প্রিয়তা আর ভাবলো না দ্রুত গতিতে গিয়ে বসে পড়লো গাড়িতে আজ পুরো তিনদিন পর অপূর্বকে দেখলো প্রিয়তা তাও এমন লুকিং এ। প্রিয়তা বসতেই অপূর্ব আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ আকিব গাড়ি চালাও দ্রুত।’

আকিবও আর দেরি না করে দ্রুত গাড়ি চালাতে শুরু করলো। অপূর্বের কথা শুনে প্রিয়তা তাকালো সামনের ড্রাইভার সিটে বসা আকিবের দিকে। ছেলেটাকে একদমই খেয়াল করে নি প্রিয়তা। আকিবও আজ মুখে মাস্ক পড়ে এসেছে। বিষয়টায় একটু কেমন লাগলেও বেশি ভাবলো না প্রিয়তা অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ আপনারা এখানে কি করছেন কোনো কাজে এসেছিলেন নাকি?’

অপূর্ব উত্তর দেয় না। উল্টো বলে,

‘ তুমি আমায় না বলে কেন চলে এলে প্রিয়তা?’

প্রিয়তা থমকালো, ভড়কালো, এক অন্যরকম হিমশীতল বাতাস বয়ে গেল যেন গা বেয়ে। এই প্রথম অপূর্ব তার নাম ধরে ডাকলো। তার মানে নিশ্চয়ই প্রিয়তার চিঠিটা পড়েছে অপূর্ব। কারন অপূর্ব তো তার নাম জানতো না। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বলে উঠল অপূর্ব,

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন?’

প্রিয়তা চমকায় নিজেকে সামলে বলে,

‘ আসলে,

‘ আসলে কি?’

‘ না মানে আরোহীর মা বাবা চলে এসেছিল, সাথে আমার শরীরটাও ঠিক ছিল। এইভাবে অপরিচিত কারো বাসায় কতদিন থাকা যায় বলুন তাই চলে এসেছি। আর আপনায় না বলে আসার ইচ্ছে ছিল না আমি আপনার অপেক্ষায় ছিলাম তো কিন্তু আপনি আসেন নি। তাই তো,

থেমে যায় প্রিয়তা। প্রিয়তার কথা শুনে তেমন কোনো রিয়েকশন দেয় না অপূর্ব। কারন এগুলো তো তার জানা তারপরও প্রিয়তার মুখ থেকে শুনতে মন চাইলো অপূর্বের। অপূর্ব তাকালো প্রিয়তার বোরকার আড়ালে লুকিয়ে থাকা টানা টানা চোখ দুটোর দিকে আজকে মেয়েটা চোখে হাল্কা কাজল দিয়েছে এতে যেন আরো বেশি মায়াবী আর আকৃষ্ট জনক লাগছে প্রিয়তার চোখ দুটো অপূর্ব তার চোখ সরিয়ে নিলো না। এভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না। মানুষ তো তাকে দুশ্চরিত্র ভাব্বে। অপূর্ব নিজেকে সামলে বললো,

‘ তা এখানে কি জন্য এসেছিলে?’

‘ ওই তো সামনের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে এখন বাড়ি যাচ্ছি।’

‘ কোথায় উঠেছো তুমি?’

উওরে প্রিয়তা বড় একটা নিশ্বাস ফেলে এক শ্বাসে বলে উঠল,

‘ এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটা নিস্তেজ নিরিবিলি মাখা পরিবেশের চারদিকে গাছপালায় ঘেরা তন্দ্রাবিলাস নামের এক একতলা ভবনে গ্র্যান্ডমার বাড়ি।’

প্রিয়তার কথা শুনে বিষম খায় অপূর্ব। আর আকিব ফিক করে হেঁসে দেয় সাথে বলে,

‘ বাবা গো বাবা এত বড় এড্রেস।’

নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পায় প্রিয়তা হয়তো একটু বেশি বলে ফেলেছে সে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বলে অপূর্ব,

‘ একটু বেশি না অনেকটাই বেশি বলেছো। যাইহোক স্বাস্থ্য পুরো ঠিকঠাক কথার ধাঁঝেই বোঝা গেল।’

উওরে দেয় না প্রিয়তা। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। প্রিয়তার কান্ডে হাল্কা হাসে অপূর্ব। কিন্তু মুখে মাস্ক থাকাই কেউই সেই হাসিটা দেখলো না। অপূর্ব একপলক তাকালো প্রিয়তার দিকে তারপর বিড় বিড় করে বলে,

‘ আমি কি তোমার শূন্যতা ফিল করি মেয়ে তুমি চলে যাওয়া পর যে মনটা হুট করে ব্যাথা দিচ্ছিল, তোমায় দেখার পর কেন সে আজ শান্ত। হোয়াই?’

প্রশ্ন তো এলো কিন্তু উত্তর তো মিললো না।’

গাড়ি ছুটছিল নীরবতা চলছিল সবার মাঝে। আর আকিবের দ্বিধায় পড়ে ফাটছিল মাথা, সে বুঝতে পারছে না এখন সে কোথায় যাবে আসলে অপূর্ব একটা মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল। কিন্তু মাঝরাস্তায় হুট করে প্রিয়তাকে দেখে গাড়ি থামাতে বলে অপূর্ব। তারপর সে নিজেও মাস্ক পড়ে নেয় আর আকিবকেও মাস্ক পড়তে বলে। কারন অপূর্ব চায় না তার সাথে প্রিয়তাকে কেউ দেখে নিক। যদিও মেয়েটা বোরকা পরিধিত তারপরও রিস্কটা ঠিক নিতে চাইছে না সে। আকিব ভাবছে, গভীর ভাবে ভাবছে কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না শেষে গিয়ে এক জায়গাতেই আঁটকে পড়ছে। আকিব যে অপূর্বকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তাও পারছে না। আকিবের অবস্থাটা যেন বুঝলো অপূর্ব। বললো,

‘ বেশি টেনশন নেওয়ার দরকার নেই আকিব আমরা যে রাস্তায় যাচ্ছিলাম সেখান থেকেই বাড়ি ফিরবো।’

অপূর্বের ইশারাটা যেন বুঝলো আকিব। তারপর আর বেশি না ভেবেই মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছুটতে লাগলো আকিব। কিন্তু সে বুঝলো না প্রিয়তাকে নিয়েই কি অপূর্ব যেতে চাইলে মিটিং অফিসে। অপূর্ব আবার বলে উঠল,

‘ সামনে গিয়ে ডানে যেও আকিব? বাদাম খাবো।’

সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে যায় আকিবের। অপূর্ব ভাই রাস্তার মোরে দাঁড়িয়ে বাদাম খাবে। আকিব লুকিং গ্লাস থেকে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এখন বাদাম খাবেন ভাই?”

‘ হুম চলো জলদি।’

আকিবও শুনলো। মিন মিন কন্ঠে বললো,

‘ ঠিক আছে ভাই।’

আকিবের কথা শুনে অপূর্ব তাকালো প্রিয়তার দিকে। বললো,

‘ তুমি বাদাম পছন্দ করো তো প্রিয়তা?’

প্রিয়তা থমকায়। বলে,

‘ হুম অল্প স্বল্প।’

____

কতক্ষণের মাঝেই আকিবের গাড়ি এসে থামলো একজন বাদাম বিক্রেতার ভ্যান গাড়ির সামনে। নানা পদের বাদাম বিক্রি করেন তিনি। সেখান থেকে কয়েক পদের বাদাম কিনে প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিলো অপূর্ব। সাথে বসে খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সময় নেই অপূর্বের। অপূর্ব প্রিয়তাকে নামতে বললো। প্রিয়তাও নামলো। এরই মাঝে অপূর্ব একটা রিকশা ডাকলো। রিকশা আসতেই সেই রিকশায় প্রিয়তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ আমার একটা জরুরি কাজ আছে প্রিয়তা তাই এখান থেকে তোমায় বাড়িতে একাই ফিরতে হবে।’

প্রিয়তাও মাথা নাড়ায়। বলে,

‘ ঠিক আছে।’

প্রিয়তার হাতে আর এক প্যাকেট বাদাম এগিয়ে বললো অপূর্ব,

‘ এগুলো বাসায় গিয়ে খেও, সঙ্গে তোমার গ্র্যান্ডমাকেও নিও। নিজের খেয়াল রেখো কেমন।’

প্রিয়তা মাথা নাড়ায়। শান্ত গলায় বলে,

‘ আপনাকেও ধন্যবাদ অপূর্ব সাহেব। ভালো থাকবেন সবসময়।’

মুচকি হাসে অপূর্ব। তারপর রিকশাচালককে ভালো মতো বুঝিয়ে দিয়ে সাথে ভাড়াটা দিয়ে নিয়ে যেতে বলে প্রিয়তাকে। প্রিয়তা বারন করলেও শোনে নি অপূর্ব। অতঃপর রিকশাচালক প্যাডেল ঘুরিয়ে চললো এগিয়ে। আর অপূর্ব দাঁড়িয়ে রইলো পিছনে। কেমন যেন প্রিয়তা চলে যাওয়ায় আবার খারাপ লাগছে তার। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিয়তার চোখের আড়ালে না যায় ততক্ষন পর্যন্ত অপূর্বও দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে। কিছু একটা চলছিল তার মাঝে। কিন্তু কি চলছিল তাই বোঝা গেল না।’

____

বিকেল পাঁচটা। মিটিং সেরে নিজের ক্লান্ত মাখা শরীরটা নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল অপূর্ব। কপাল বেয়ে খানিকটা ঘাম জড়ছে তার। তখন অপূর্বের পাশের সোফায় বসে টিভি দেখছিল অয়ন। অপূর্বকে দেখেই বললো,

‘ ভাই, আজ তোকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে মারামারি করে এসেছিস নাকি?’

উওর দেয় না অপূর্ব। বলে,

‘ এ গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো অয়ন।’

অয়নও শুনলো বাধ্য ছেলের মতো চলে যায় ভাইয়ের জন্য পানি আনতে।’

কিছুক্ষনের মধ্যে নিয়েও এসে দেয় অপূর্বের দিকে। বলে,

‘ নে ভাই।’

অপূর্ব হাতে নেয়। তারপর ঢকঢক করে পানিটুকু গিলে নেয়। গ্লাসটা এগিয়ে দেয় অয়নের দিকে। তারপর চোখ বন্ধ করে শরীরটাকে আবার এলিয়ে দেয় সোফায়। এরই মাঝে অয়ন সামনের সোফায় বসতে বসতে বলে উঠল,

‘ ভাই শুনলাম নাকি আশকোনার ছাত্রদলীয় নেতা আবু তালেবের ছেলে শাহরিয়ার আদনান নাকি এবারের ইলেকশনে দাড়াচ্ছে। কথা তুই জানিস ভাই?’

অপূর্ব চোখ বন্ধ করেও অয়নের পুরো কথাটা শুনলো। পরমুহূর্তেই ‘শাহরিয়ার আদনান’ নামটায় যেন মস্তিষ্ক আটকে গেল তার। দুবার মনে মনে উচ্চারন করলো ‘শাহরিয়ার আদনান’ ইংরেজিতে বললে Shahriar ‘S’ আর Adnan এর ‘A’ মানে SA. সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে ফেললো অপূর্ব। তবে কি ‘এস এ’ এই শাহরিয়ার আদনান। কিন্তু তা কি করে সম্ভব ছেলেটার সাথে তো দেখা হয়নি অপূর্বের। তাহলে ক্ষতি করতে চাইবে কেন? ফট করেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অপূর্ব। বললো,

‘ তুই শিওর অয়ন আবু তালেবের ছেলের নাম শাহরিয়ার আদনান।’

অয়ন যেন চমকালো। বললো,

‘ হুম এই দেখ পত্রিকায় নাম দিয়েছে।’

অপূর্বও দেখলো। মনে মনে কিছু একটা ভেবে হন হনিয়ে রুমে চলে গেল। আর অয়ন জাস্ট হা হয়ে দেখলো। সাথে বিড় বিড় করে বললো,

‘ ব্যাপারটা কি হলো?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here