আজও বৃষ্টি নামুক❤️ পর্ব ১৪

0
889

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৪
_________________

বেশ রাগী রাগী ভাব নিয়ে গাড়িতে বসে আছে অপূর্ব। চোখে মুখে অত্যাধিক হারের বিষন্নতা। মেজাজ পুরোই তীক্ষ্ণ। আসিফ নামের ছেলেটি মুখ খুললেও আসল কালপিটের নাম বা চেহারার বর্ননা কিছুই দিতে পারে নি। নাম একটা বলেছে অবশ্য SA! নামটা যে টোটালি ভুয়া সেটা বুঝতে অপূর্বের বাকি রইলো না। এস এ নামটা বলেই আসল কালপিট যোগাযোগ করতো আসিফ নামের ছেলেটির সাথে কখনো সামনে আসে নি যা বলার ফোনেই বলেছে সুযোগ বুঝে টাকা পাঠিয়েছে এই যা। অপূর্ব জোরে এক নিশ্বাস ফেললো এই ‘এস এ’ কে আর এই নামের ফুল মিনিংও বা কি। নামটা কি টোটালি ভুয়া নাকি আছে কিছু সত্যটা। অপূর্ব নানা ভাবনায় ব্যস্ত। অপূর্বের ভাবনার মাঝে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে উঠল আকিব,

‘ ভাই এখন কি করবেন?’

অপূর্ব উওর দেয় না চুপ থাকে। অপূর্বের চুপ থাকার মাঝেই আবারও বলে আকিব,

‘ভাই, আমার কিন্তু মনে হচ্ছে না আসিফ সত্যি কথা বলেছে? মিথ্যেও তো বলতে পারে।’

উওরে নিজের মাথা নাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল অপূর্ব,

‘ না আকিব মিথ্যে বলে নি ছেলেটির চোখ দেখেছি আমি। জানো তো আকিব দুনিয়ার নাইটিং পারসেন্ট মানুষ মিথ্যে কথা বলার সময় চোখে একটা বিষন্নতার ছোঁয়া দেখা যায়, তাদের চোখ কাঁপে কথা বলতে গেলে। কিন্তু এই ছেলেটা, না না হিসাব মিলছে না। যত দ্রুত সম্ভব এই এস এর পরিচয় আমার চাই আকিব। আমাকে জানতেই হবে এ আমায় মারতে কেন চাইছে শুধুই কি ইলেকশনে জেতার জন্য নাকি অন্যকিছু।’

অপূর্বের কথা শুনে আকিব চুপ থাকে পরক্ষণেই বলে,

‘ কিন্তু লোকটার হদিস আমরা পাবো কিভাবে ভাই? আর লোকটা যে কোনো বিরোধী দলেরই কেউ সেটাও বা বুঝলো কিভাবে অন্য কেউও তো তা হতে পারে তাই না ভাই।’

‘ হুম হতে পারে,

‘ তাহলে উপায় ভাই?’

‘ একটা না একটা উপায় তো বের হবেই আকিব,

‘ তাও ঠিক আচ্ছা ভাই বাড়ি যাবেন এখন?’

‘ হুম বাড়িই চলো,

অতঃপর অপূর্বের কথা শুনেই আকিব গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চললো। কোথাও যেন রহস্য রহস্য গন্ধ ছড়াচ্ছে।’ কেউ তো আছে যে পিছন থেকে আঘাত করতে চাইছে। কিন্তু কে? আর এই এস এই বা কে?’
____

রুম জুড়ে নিস্তব্ধতার ছড়াছড়ি। সন্ধ্যার আভাস নেমেছে চারদিকে, জানালা জুড়ে থাকা কালো পর্দাটা নড়ছে খুব। আর এসবের মাঝেই বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে এক যুবক। পরনে তার শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, হাল্কা ফর্সা মুখ, চোখ দুটো বড় বড় সাথে রাগী রাগী ভাব, চোখ দেখলেই বোঝাই যায় ছেলেটা ভীষণ রাগী। বর্তমানে চোখে মুখে গভীর ভাবনার আচ্ছাদনে জর্জরিত সে। হঠাৎই ছেলেটির ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠল। বেশি না ভেবেই টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা তুললোও ছেলেটি। তবে কিছু বললো না চুপ থাকলো। এরই মাঝে অপর পাশের মানুষটি বলে উঠল,

‘ বস আসিফ ধরা পড়ে গেছে সাথে আপনার নামটাও বলে দিয়েছে যদিও পুরো নামটা বলতে পারে নি শুধু ‘এস এ’ এতটুকুই বলেছে। অপূর্ব আপনায় খুঁজে বের করতে চায় বস।’

উওরে এপাশের ব্যক্তিটি কিছু বলেনি। ফোনটা কেটে দেয় তক্ষৎনাত। তারপর বাঁকা হেঁসে ভাড়ি কন্ঠে বলে,

‘ এস এ কে খোঁজা এতই সোজা নাকি মিস্টার তাহসান আহমেদ অপূর্ব। আপনিও ভাবতেও পারবেন আসলেই এই ‘এস এ’ কে?’

বলেই ভাড়ি কন্ঠে হেঁসে ফেলে যুবকটি। ঘর কাঁপানো এক হাসি। তার হাসির শব্দে সামনের গাছ জুড়ে মাত্র বসা দুটো পাখি ভয়ে কেঁপে উঠে উড়ে যায় আকাশে।’
____

রাত জুড়ে বিষন্নতা বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে প্রিয়তা। মনটা বড়ই খচখচ করছে অপূর্ব কি তার চিঠিটা পড়েছে সাথে বোনটা আর চাচাকেও যে একটা ফোন করবে তাও পারছে না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জীবনে ফোন না থাকার বড় আফসোস হচ্ছে প্রিয়তার। সে যে সুস্থ সবল এখানে এসেছে সেটা কিভাবে চাচাকে জানাবে প্রিয়তা, তার সাথে তার বোনটাকেও। কাল প্রিয়তা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাবে, আর কাল থেকেই তার জীবনের নতুন সূচনা হবে। জানা নেই সূচনার অধ্যায়টা ঠিক কেমন হবে কিন্তু প্রিয়তা চায়, মন থেকে চায় সব যেন ভালোভাবেই হয়ে যায়। জীবনে আর কোনো সমস্যা না আসুক। তপ্ত নিশ্বাস ফেললো প্রিয়তা। এরই মাঝে তার দরজায় নক করলো তন্দ্রা গ্র্যান্ডমা। বললেন,

‘ এই মেয়ে রুমে আছো?’

প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর চটজলদি গায়ে ওড়না মুড়িয়ে দরজা খুললো। বললো,

‘ জ্বী দাদিমা বলুন?’

গ্র্যান্ডমা হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলো তারপর বললো,

‘ রুমে একা একা কি করো? রাত তো অনেক হইছে খাইবা না।’

প্রিয়তা হাল্কা হাসে। বলে,

‘ জ্বী আসলে মানে,

‘ এত কিন্তু কিন্তু করার মতো কিছু হয় নাই নাতনি। আমিও এই বাড়িতে একা থাকি, পোলাপাইন সব বিদেশ থাকে। মাঝে মধ্যে কথা সাক্ষাৎ হয় আমায় ছাড়া ভালোই আছে বোঝা যায়। তোমার দাদা, মানে আমার স্বামী যখন জীবিত ছিল তখন ওত একলা একলা মনে হয় নাই। কিন্তু গত দু’বছর যাবৎ খুব একলা থাকার কষ্ট লাগে। তুমি আইছো আমার খুব ভালো লাগছে ভেবেছিলাম এবার বুঝি একলা থাকার কষ্ট ঘুচবে কিন্তু এহন দেখি তুমিও চুপচাপ। বুড়িয়ে ভালো লাগে নি বুঝি।’

প্রিয়তা গ্র্যান্ডমার শেষের কথাটায় থমকে যায়। মুখের বিষন্নতা সরিয়ে বলে,

‘ না না দাদিমা তেমন বিষয় নয় আসলে কাল ভার্সিটির ভর্তি হতে যাবো, চাচা বড় আপুকে একটু ফোন করতে মন চাচ্ছিল তাই আর কি।

‘ ফোনে কথা কইবা এটা আগে বলবা না আমার লগে আহো?’

বলেই চললো গ্র্যান্ডমা। প্রিয়তা শুনলো এগিয়ে গেল গ্র্যান্ডমার পিছু পিছু।’

____

টেবিলের উপর গরম কফির ধোঁয়া উড়ছে, তার পাশেই লুটিয়ে পড়ে আছে প্রিয়তার রেখে যাওয়া কানের দুলটা। আর তার পাশে প্রিয়তার চিঠি। কতক্ষণ আগেই প্রিয়তার চিঠির কথাটা মনে পড়ে অপূর্বের। কি লিখে গেছে মেয়েটা জানার কৌতুহল জেগেছে মনে। অপূর্বের দৃষ্টি বর্তমানে চিঠিটার দিকেই। অপূর্ব বেশি না ভেবে চিঠির খামটা হাতে নিলো। তারপর বেশি না ভেবেই খাম থেকে চিঠিটা বের করে ভাজ খুলে পড়তে লাগলো। যেখানে প্রথমেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

“প্রিয় অপূর্ব। যদিও আপনি আমার প্রিয় না অপ্রিয় জানি না আমি। একদিনে কি কেউ কারো প্রিয় বা অপ্রিয় হতে পারে বলুন। আপনাকে কাছ থেকে ধন্যবাদ দেওয়ার আমার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু আপনি তো এলেনই না কাল আমি চলে যাবো। নিজের অগোছালো জীবনটাকে গোছাতে শুরু করবো। আমি জীবনে চলার পথে আপনার বলা প্রতিটা কথা আমি খুব মনে রাখবো অপূর্ব। সত্যি বলছি বাবার পরে একমাত্র আপনি সেই ব্যক্তিই যে আমায় শক্ত হতে বলেছেন নিজের জীবনের লক্ষ্য ইস্থির করতে বলেছেন। আমিও শোনার চেষ্টা করছি আগামীতেও করবো ইনশাআল্লাহ। আজকাল মানুষ বড্ড স্বার্থপর জানেন তো। আমার আপন মানুষগুলোও নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজি হয় নি, আমি কি ফেলনা বলুন যে সবার স্বার্থের জিনিস হবো তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। আমার চাচি জোর করে টাকার লোভে আমাকে এক ৬০ বছরের বৃদ্ধের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল তাই আমি পালিয়ে এসেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম এই কথা গুলো আপনায় বলবো না কিন্তু পরে আবার ভাবলাম যে আমায় এত সাহায্য করেছে আমায় নিঃশব্দে সে আমার ‘আপন মানুষ’। তাই বলে দিলাম। আপনার অপেক্ষায় ছিলাম দু’দিন ভেবেছিলাম আপনি আসবেন কিন্তু আসলেন না। হয়তো আমাদের আর দেখা হবে না। তবে আমি মন থেকে চাই আপনি ভালো থাকুন সবসময়। সবশেষে বলবো,
আমাদের এত সাহায্য করার জন্য আপনায় অসংখ্য ধন্যবাদ ‘অপূর্ব সাহেব’। ভালো থাকবেন আপনার আগামী পথ চলা শুভ হোক,
ইতি
প্রিয়তা”

‘প্রিয়তা’ শেষের নামটা আরো একবার উচ্চারন করলো অপূর্ব। সাথে হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ তাহলে মেয়েটির নাম প্রিয়তা।’

ফাইনালি মেয়েটার নামটা জানলো অপূর্ব। এক অন্যরকম প্রশান্তি বয়ে গেল তার ভিতর। কিন্তু মেয়েটা এখন আছে কোথাও, সুস্থ আছে তো।’

মনটা আবার দোটানায় পড়লো অপূর্বের। মেয়েটার সাথে দেখা করতে মন চাইছে তার। ইস মেয়েটা তার অপেক্ষায় ছিল অথচ সে গেল না। অপূর্ব আফসোসের স্বরে বললো,

‘ কেন আমি গেলাম না প্রিয়তা? আমার তো যাওয়া উচিত ছিল তাই না।’
____

প্রচন্ড হাসি মাখা মুখ নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে প্রিয়তা। আর তার সামনেই গ্র্যান্ডমা। তিনিও খাচ্ছে এটা ওটা বলছে আর হাসছে খুব মিশে গেছে প্রিয়তার সাথে। এবার বোধহয় এই মহিলার একাকিত্বতা কাটবে।’

কতক্ষণ আগেই গ্র্যান্ডমার ফোন দিয়ে চাচার সাথে কথা বলেছে প্রিয়তা। বোনটা নাকি বাপের বাড়ি চলে গেছে তাই আর কথা হয় নি তার সাথে তবে চাচার সাথে কথা হয়েছে বলে মনটা খুব ফুড়ফুড়ে প্রিয়তার। ভাগ্যিস চাঁচি বাড়ি ছিল না তাই এত ইজিলি কথা বলতে পারলো প্রিয়তা আর প্রিয়তার চাচা। প্রিয়তা বলেছে পরে আবার ফোন দিবে। চাচাও শুনেছে সাথে চিন্তামুক্তও হলেন তিনি।’

অতঃপর একজনের কফির কাপের ধোঁয়ায় জড়ানো আফসোসের স্বর নিয়েই কাটালো রাতটা আর আরেকজনের চাচার সাথে কথা বলে প্রশান্তিতে আটকালো সব। তবে এই দুজনের মাঝে একটা বিষন্নতা খুব নাড়াচ্ছে সেটা হলো,

‘ আমাদের কি সত্যি আর দেখা হবে না?’
____

পরেরদিন দুপুর সাড়ে বারোটা। বরেন্দ্রমোহন ইউনিভার্সিটির (কাল্পনিক নাম) বাহিরে কালো বোরকা পরিধিত দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। ফাইনালি সে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেরেছে। এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে কাল থেকে ভার্সিটি আসাও স্ট্যার্ট করবে প্রিয়তা। ভাবতেই ভালো লাগছে প্রিয়তার। প্রিয়তা আর বেশি ভাবলো না আনমনেই হাঁটতে লাগলো বাড়ির উদ্দেশ্যে এখান থেকে কতদূর হেঁটেই বাসস্ট্যান্ড যাবে প্রিয়তা তার পর বাসে করে বাড়ির উদ্দেশ্যের পাড়ি জমাবে। বাস থেকে নেমে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই গ্র্যান্ডমার বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। এবার কিছু টিউশনি পেলেই হয়ে যাবে। গ্র্যান্ডমাকে বলেওছে প্রিয়তা টিউশনির কথা সেও বলেছে খুঁজে দিবে। প্রিয়তা নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলছিল সামনে। এমন সময় হুট করেই তার সামনে এসে থামলো একটা কালো গাড়ি। প্রিয়তা বেশি না ভেবে গাড়িটা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলো। কতদূর এগোতেই হঠাৎই পিছন থেকে ভাড়ি কন্ঠে বলে উঠল কেউ,

‘ এই মেয়ে দাঁড়াও?’

#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here