#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৯
_________________
চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে আকিব অপূর্বের মুখের দিকে কি থেকে কি হলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। পুরোই বাকরুদ্ধ আকিব। তার বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটার মতো দক দক করছে। অন্যদিকে অপূর্ব সরে আসলো আকিবের থেকে হাতের চাকুটা ছুঁড়ে মারলো তুহিনের পাশে। তারপর ডাকলো কিছু লোককে তারা আসতেই তুহিনকে নিয়ে যেতে বললো তারাও বেশি কিছু না বলে নিয়ে যেতে লাগলো তুহিনকে। কারন তারা জানে মৃত ব্যক্তিকে এখন কি করতে হবে। অপূর্ব আবার আগের ন্যায় বসলো পিছনের চেয়ারে। হাতে খানিকটা রক্ত লেগেছে তার। তাই পায়ের পাশ দিয়ে থাকা পানির বোতলটা উঠিয়ে ধুয়ে নিলো হাত। আকিব শুধু নীরব দর্শকের মতো দেখে গেল অপূর্বকে। আকিব সত্যি ভেবেছিল অপূর্ব বুঝি সত্যি তাকে মেরে দিল। অপূর্ব তার পকেট থেকে রুমালটা বের করে ভেজালো হাতটা মুছে বললো,
‘ খুব ভয় পেয়েছিলে আকিব?’
আকিব জবাব দেয় না৷ তার ধ্যান এখনো ভাঙে নি। আকিবের অবস্থাটা বুঝলো অপূর্ব খানিকটা গম্ভীর কণ্ঠে জোড়ালো আওয়াজ করে বললো,
‘ আকিব,
আকিব চমকে উঠলো নিজের ধ্যান থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর দ্রুত পায়ে অপূর্বের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ ভাই আমি কিছু বুঝচ্ছি না।’
‘ পাশে বসো সব বোঝাচ্ছি তোমায়,
আকিব শুনলো আশেপাশে তাকিয়ে তার থেকে চার হাত দূরত্বে থাকা একটা চেয়ার দেখে তক্ষৎনাত এগিয়ে গিয়ে সেটাকে অপূর্বের পাশে রেখে বসলো আকিব। তারপর থমথমে গলায় বললো,
‘ এখন বলুন ভাই?’
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ থাকলো। তারপর বললো,
‘ তুমি কি জানো আকিব তোমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র চলছিল?’
আকিব বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ আমি সত্যি এসব কিছু জানি না ভাই।’
‘ সেদিন তুমি শাহরিয়ার আদনানের বাড়ি গিয়েছিলে ওইরকম সিচুয়েশনে পড়েছিলে আমায় বলো নি কেন?’
আকিব এবার থমকালো। হয়তো সে সেদিন তুহিনের কথায় অপূর্বকে কিছু না বলে ভুল করেছে। আকিবকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো অপূর্ব,
‘ কি হলো আকিব কথা বলছো না কেন?’
এবার আকিব মুখ খুললো খানিকটা থমথমে গলায় বললো,
‘ আমায় ভুল বুঝবেন না ভাই। আমি আপনার থেকে কিছু লুকাতে চাই নি, কিন্তু সেদিন আপনার ফোন করে শাহরিয়ার আদনানের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার কথাটা শোনার পর আমি তুহিনকে ফোন করি ওকে বলি শাহরিয়ার আদনানের খোঁজ খবর নেওয়ার কথা। ও সেদিন খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে ঠিক আছে। এরপর ও একটা এড্রেস দেয় বলে এখানে গিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করলেই আমি নাকি শাহরিয়ার আদনানের সব খোঁজ পেয়ে যাবো। আমিও তাই করি, সত্যি বলতে ভাই শাহরিয়ার আদনানের বাড়িটা আগেই চিনতাম আমি কিন্তু ওটাই ওনার বাড়ি কিনা শিওর ছিলাম না। সেদিন শাহরিয়ার আদনানের বাড়িতে একজন কাজের লোক আর শাহরিয়ার আদনান ব্যতীত কেউ ছিল না। আমি দরজায় নক করার পর কাজের লোকটা দরজা খুলে দেয়। আমি শাহরিয়ার আদনানের কথা জিজ্ঞেস করলেই বলে উনি উপরে আছেন। আমিও ভাবি এসেই যখন পড়েছি তখন দেখা করে যাই। যেহেতু ওনায় চিনতাম না চেনাও যাবে এইভেবে উপরে উঠি, উপরে উঠতেই দেখি আদনানের রুমেই ওনায় কেউ মেরে দিয়ে চলে গিয়েছে পেটে চাকু আর মুখটা পুড়োই থেতলে দিয়ে চলে গেছে আমি খুব ঘাবড়ে যাই ভাই। আদনানের বিশ্রিত মুখটা দেখে আমার কলিজা কেঁপে উঠে। আদনান তখন ব্যাথায় জর্জরিত ছিল আমি কিভাবে যেন এগিয়ে গিয়ে পেটের চাকুটা উঠিয়ে দেই তারপর পেটটাকে শক্ত করে বেঁধে দেই কিন্তু কেউ যে সেইসময় তার অর্ধেক ভিডিও করে নিবে এ আমি ভাবি নি। আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো বেঁচে আছেন তাই দ্রুত হসপিটাল নেওয়ার কথা ভাবি কিন্তু তার আগেই উনি মারা যায়। কাজের লোকটা তখন পুলিশে খবর দেয় আমি কোথাও যাই নি ওখানেই ছিলাম। মিডিয়ার লোক আসার আগ পর্যন্ত ওখানেই ছিলাম তারপরই আপনার কাছে ছুটে যাই। এসব ঘটনা আমি আগেই তুহিনকে বলি ওই বলে আমি যেন আপনায় কিছু না জানাই আমি সেদিন খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম তাই তুহিনের কথাটা মেনে নিয়েছিলাম।’
বলেই আকিব থেমে গেল। যা অপূর্ব দেখে বললো,
‘ ঠিক আছে এখন শান্ত হও আকিব। নেক্সট টাইম এমন কিছু ঘটলে সবার আগে আমায় জানাবে।’
উওরে মাথা নাড়িয়ে বলে আকিব,
‘ ঠিক আছে ভাই।’
অপূর্ব কিছুক্ষন চুপ রইলো। তারপর বললো,
‘ তুমি জানো আকিব আমাকে মারার বোম ফিট করার এস এর সাথে হাত মেলানো শাহরিয়ার আদনানকে মারা এইসবই তুহিন করেছে। এস এর সাথে মিলে।’
আকিব অপূর্বের কথা শুনে বেশ হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ কিন্তু তুহিন এমনটা কেন করলো ভাই? ও তো আমাদের অনেক বিশ্বস্ত ছিল।’
অপূর্ব খানিকটা হাসে তারপর জবাব দেয়,
‘ তুহিন তোমার আর এস এ আমার জায়গাটা নিতে চেয়েছিল আকিব। অবশ্য চায় বলছি কেন এখনো হয়তো চায়।’
অপূর্বের কথা শুনে আকিব থমথমে গলায় বলে,
‘ কি?’
‘ হুম।’
‘ তার মানে এস এ সম্পর্কে তুহিন আগেই জানতো ভাই?’
‘ হুম।’
‘ তুহিনকে তো মেরে দিলেন এবার এস এ কে কি করে খুঁজে বের করবেন?’
‘ একটা আশ্চর্যের বিষয় কি জানো আকিব তুহিন নিজেও চিনে না এই এস একে।’
এবার আকিব যেন আরো চমকালো। হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ কি বলছেন ভাই?’
‘ আসলে কি বলো তো কাল রাতে তোমার ওই ভিডিওটা দেখার পর আমি অনেক ভেবেছি আমি আগেই জানতাম তুমি এমন কিছু কখনোই করবে না। পরে সন্দেহের বসে তুহিনের পিছনে লোক লাগাই আর তখনই তুহিনকে এস এর সাথে কলে কথা বলতে দেখে আমার লোকেরা। আর তুহিনও যে এস এ কে চেনে না তাও কলের কথা বলার মাধ্যমে বোঝা যায় কারন তুহিন একবার বলে ‘আপনি আমার সামনে কবে আসবেন বস?’
তখনই সব ক্লিয়ার হয়। এস এ কে জানলে তুহিন হয়তো এখনও বেঁচে থাকতো আকিব।’
বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অপূর্ব। তুহিনের সাথে অপূর্বের পরিচয় চার’বছরের তাও অপূর্বের বাবার বন্ধুর ছেলের সুবাদে। তুহিনই ঝেচে এসেছিল অপূর্বের দলে। তুহিন ল্যাপটপ কম্পিউটার চালাতে খুবই পারদর্শী ছিল। তাই তো অপূর্ব রেখেছিল তার দলে ধীরে ধীরে বিশ্বাস জয় করলো আর বিশ্বাস ভেঙেও দিল।’
আকিব নিশ্চুপে বসে রইলো আর তাকিয়ে রইলো অপূর্বের ভাবনাময় মুখের দিকে। অপূর্ব ভাই তাকে কতটা বিশ্বাস করে আর কতক্ষণ আগে মনে মনে কতকিছু ভেবে নিয়েছিল আকিব। নীরবতা চললো দুজনের মাঝে। হঠাৎই আকিব বললো,
‘ সবই ঠিক আছে ভাই। তবে আমি একটা জিনিসই বুঝলাম না তুহিনই তো আমাদের আসিফকে খুঁজে বার করতে সাহায্য করলো এস এর নাম বললো তাহলে ওই কিভাবে আপনায় মারতে চাইলো ভাই?’
‘ এগুলো তো আমি বেঁচে যাওয়ার পরের ঘটনা আকিব। শুরু থেকেই সন্দেহের বসে ছিলাম আমি। কারন আমি যে খুলনা গিয়েছি সেটা তো হাতে গোনা কয়েকজনই জানতো। নিশ্চয়ই তাদের মধ্যেই কেউ লিক করেছিল কথাটা। তুহিন বুঝেছিল আমি জেনে যাবো ওই সবটা করেছে তাই আসিফকে ধরিয়ে দিয়েছে সাথে এস এর নামটার কথা বলেছে।’
‘ তাহলে কি এস এর নামটা ভুয়া ভাই।’
উওরে শুধু এতটুকুই বলে অপূর্ব,
‘ হতে পারে।’
নিশ্চুপ বনে যায় আকিব। কি সাংঘাতিক ব্যাপার তাহলে কি তারা এতদিন যে নামের মানুষটিকে খুঁজতে ছিল সেই নামের কোনো মানুষই নেই। আকিব অনেক ভেবে আবার প্রশ্ন করে,
‘ তাহলে শাহরিয়ার আদনানের খুনের বিষয়টা কি ভাই?’
‘ এটা এখনো অজানা আকিব?’ এই রহস্য এখনো রহস্য হয়েই থাকুক না হয় এটা নিয়ে পরে ভাববো এবার বিয়েটা করতে হবে আকিব। অনেক ভেবে দেখলাম আমার জন্য দু’দুটো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এটা ঠিক হচ্ছে না।’
বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অপূর্ব। আবারও বললো,
‘ চলো আকিব একজনকে খুঁজতে যাবো দু’দিন হলো মানুষটার সাথে দেখা হয় না।’
আকিবও উঠে দাঁড়ালো। তারপর এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
‘ কাকে ভাই?’
‘ দেখি কাকে পাওয়া যায়।’
বলেই হেঁটে গেল অপূর্ব। আর ওর পিছু পিছু আকিব। তবে রহস্য একটা রয়েই গেল সেটা হলো এস এ নামের আসলেই কি কেউ নেই? নাকি আছে। আর যদি নাই থেকে থাকে শাহরিয়ার আদনানকে মারলো কে?’
___
দুপুরের মাঝ বরাবর সময়। ভার্সিটি ছেড়ে বেরিয়ে আসলো প্রিয়তা। ভার্সিটিটা ঠিক কতটুকু মনে ধরেছে তার জানা নেই। কিন্তু কেমন যেন খাপছাড়া। প্রিয়তা কাল রাতের চিরকুটটার কথা মনে করলো কে লিখলো ওমন চিরকুট। প্রিয়তার এসব ভাবনাতেই তার বাস চলে আসলো প্রিয়তাও বেশি না ভেবে দ্রুত উঠে পড়লো বাসে। বাসের শেষ প্রান্তে দুটো সিট খালি থাকায় একটায় গিয়ে বসলো সে। সে বসতেই বাস চলতে শুরু করলো। কতক্ষণ পর আবার বাস থামলো কেউ উঠলো বাসে প্রিয়তা বেশি ভাবলো না নিজের মতো করে কিছু ভাবনা নিয়ে বসে রইলো। হঠাৎই কেউ একজন তার পাশে বসে বললো,
‘ তুমি কি সারাদিন এভাবেই নানান ভাবনায় মগ্ন থাকো মেয়ে?’
#চলবে….