#আঙুলে_আঙুল
পব (৪৩)
” আপনি শর্ত ভাঙুন ও অরুণিমার বিয়ের ব্যবস্থা করুন। নাহলে শূভ্রাকে আমি ঘরে তুলব না। এখানে ফেলে চলে যাব। আজ, এখনই। ”
কথাটা সঞ্জয়ান অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেও অসীউল্লাহর নিকট হু’ম’কির রূপ ধরে পৌঁছাল। আচমকা হুমকিতে তার বাক্য বিনিময় বন্ধ হয়ে গেল। চোখের চাহনি অস্বাভাবিক রকমের বড় হলো। স্থির পলক দুটিতে চেয়ে সে পুনরায় বলল,
” আপনি মাইমূন ভাইকে ভালো করে জানেননি, চিনেননি। দুটো খারাপ অভ্যাস শুনে তার বিপরীতে চলে গেছেন। যদি তার সম্পর্কে সব জানতেন তাহলে এতটা ক’ঠি’ন হতে পারতেন না। ”
” খারাপ অভ্যাস দুটো হলেও গ্রহণ করার মতো নয়। ”
অসীউল্লাহ নিজের বক্তব্য রাখতে সক্ষম হলেও গলাটা দুর্বল শুনাল। সঞ্জয়ান এক কদম এগিয়ে এসে বলল,
” গ্রহণ করতে বলছি না, বাবা। শুধু পাশে থাকতে বলছি। যদিও এই খারাপ অভ্যাস দুটোর অভিজ্ঞতা আমার নেই। কিন্তু আমি জানি, এভাবে একা ছেড়ে দিলে বেরিয়ে আসতে তার কষ্ট হবে। সময়টাও বেশি লাগবে। এমনও হতে পারে, সে কখনই বের হতে পারল না। তখন কী করবেন? অরুণিমা চিরকাল অবিবাহিত থাকবে? ”
জবাবে তিনি নিরুত্তর থাকলেও চোখদুটিতে বিস্ময়ের ঢেউ ওঠল। এই ঢেউ ভ’য়ে’র না, আনন্দের। যে মানুষটাকে এতদিন যাপত স্যার বলে এসেছে, সেই মানুষটা আজ তাকে ‘ বাবা ‘ বলে সম্বোধন করছে। এক ধা’ক্কায় স্যার থেকে ছেলে রূপে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। সঞ্জয়ান তার এই বিস্ময়ের অভিভূত ভাবটাকে ধরতে পারল না। নিজের মতো বলে চলল,
” যে মানুষটার সব আছে তাকে আপনি অভাব দেখাচ্ছেন। যা আমার কাছে বাড়াবাড়ি ও অন্যায় মনে হচ্ছে। মাইমূন ভাই, আপনার মেয়েকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছে বলে চোখ বুঁজে সব মেনে নিয়েছে, চেষ্টাও করছে৷ কঠিন ল’ড়া’ই করছে একা একা। আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন? যাকে পাওয়ার জন্য এত পরিশ্রম, এত লড়াই সেই তার পাশে নেই। আপনি তাকে নিজের কাছে আটকে রেখেছেন। বাবা..”
কথার মাঝে আরেকবার ‘ বাবা ‘ সম্বোধনটা আসতে তিনি চট করে উত্তর নিলেন,
” হ্যাঁ, বলো। ”
” মাইমূন ভাই অন্যের ছেলে তাই তার কষ্ট, দুঃখ, ব্যথা আপনার চোখে লাগছে না। কিন্তু অরুণিমা? ও তো আপনার মেয়ে। খুব আদরের, খুব ভালোবাসার। তাহলে ওর কষ্ট আপনার চোখে লাগছে না কেন? ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে চেয়ে আপনি ওর বর্তমানের সময়টাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। এটা ঠিক হচ্ছে না। আপনার উচিত, ওদেরকে বিয়ে দেওয়া। সাংসারিক ধ্যানজ্ঞানহীন, ছন্নছাড়া মানুষটা যখন সংসারে ঢুকবে, ভালোবাসার মানুষটার দায়িত্ব পাবে তখন এমনি সব বদলে যাবে। ”
” যদি না বদলায়? ”
” আপনার মেয়ের উপর ভরসা নেই? আমার আছে। ”
সঞ্জয়ান ভরসাপূর্ণ চাহনি রাখল অরুণিমার উপর। মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,
” আমার ভরসার মান থাকবে তো? ”
সে চমকাল। শিউরে ওঠল ভেতরে ভেতরে। ঘাবড়ানো ভাবটা মুখে ফুটে উঠতে সঞ্জয়ান বলল,
” মাইমূন ভাইকে কল করো। সকাল সকাল চলে আসতে বলবে। আমি দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারব। দেরি হলে, তোমাদের বিয়েটা দেখা হবে না। ”
অরুণিমা বাবার দিকে এক পলক চেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সহসা থেমে পেছনে ফিরল। সঞ্জয়ানকে জিজ্ঞেস করল,
” আপনারা আত্মীয়? জানতাম না তো! ”
সে হালকা হেসে কৌতুকভাবে বলল,
” এখনও হইনি। বিয়েটা হলে হব। তুমি শূভ্রার বড় বোন, সেই হিসেবে তোমার হাসবেন্ড আমার বড় ভাইয়ের মতোই। ”
অসীউল্লাহ তৎক্ষনাৎ কোনোরূপ প্র’তি’বাদ করেননি। একরকম দ্বিধা ও ঘোরের মধ্যেই স্ত্রীকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সকলে চলে যেতে শূভ্রার শান্ত ভাব কাটল। সোজা খাটের উপর উঠে বালিশে মুখ গুঁজল। অঘোষিত শব্দ কান্নায় লুটিয়ে পড়ল। সঞ্জয়ান অবাক চোখে চেয়ে থাকে কতক্ষণ। তারপর দূর থেকে জিজ্ঞেস করল,
” তোমার আবার কী হলো? ”
শূভ্রা কান্নারত অবস্থায় উত্তর করল,
” কপাল পুড়ল। ”
সঞ্জয়ানের মধ্যে উদ্বেগ ভাব দেখা দিল। এগিয়ে গেল বিছানার কাছে। শূভ্রার দিকে ঝুঁকে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
” কিভাবে? কখন? দেখাও তো। ”
সে দেখাল না। কান্নার শব্দ বাড়িয়ে দিল। দুই হাতে বালিশের দুই অংশ খামচে টেনে ধরে ভাবছে আপুর কথা। সে সত্যি বলতে বলেছিল, শূভ্রা বলেনি। ভ’য় পেয়ে যে মিথ্যাটা বলল সেটাও কাজ করেনি। সঞ্জয়ান নিশ্চয় সত্যটা ধরে ফেলেছে, সেজন্যই তাকে রেখে যাওয়ার কথা বলছে। ভাবনাগুলো মনের ভেতর আরেক দফা ভ’য় সৃষ্টি করতে সে কান্নার গতি আরও বাড়িয়ে দিল।
সঞ্জয়ানের সৃষ্টি হওয়া হালকা উদ্বেগটায় মায়ার আবহ তৈরি করল মনের ভেতর। যা দূরত্ব কমাতে উৎসাহ দিচ্ছে। শূভ্রার গায়ে হাত দিতে চেয়েও থেমে গেল আচমকা। সেই সময় স্মরণে এলো, সকালে বলা শূভ্রার কথা। তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে। যদিও তার কিছু মনে নেই। হতে পারে ঘুমের কারণে ভুলে গেছে। কিন্তু শূভ্রার মনে আছে। তাহলে এই অদৃশ্য বাঁধা, অস্বস্থি, লজ্জাকে পাত্তা না দেওয়ায় শ্রেয়। সে হাত রাখল শূভ্রার পিঠে। আলতো করে আদুরে চাপ দিয়ে বলল,
” কতটুকু পুড়েছে, দেখাও। ওষুধ লাগলে এনে দিচ্ছি। ”
শূভ্রা মুখ তুলল। সজল চোখে চেয়ে থাকল করুণভাবে। সঞ্জয়ান এই সুযোগে কপালটা দেখে নিল ভালো করে। অতঃপর বলল,
” কোথায় পুড়েছে? দেখতে পাচ্ছি না যে? ”
সে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ওঠল আবার। অসহায় ভঙ্গিতে মুখ নেড়ে বলল,
” এসব দেখতে পারবেন না। সত্যিটা ঠিকই ধরতে পারবেন। ”
” কোন সত্যি? ”
” এই যে আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি। তবুও আমি নাটক করে বলেছি সব হয়েছে৷ ”
না চাইতেও সত্যিটা সামনে আসায় সঞ্জয়ান এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। চোখের পলক থেমে গেল তৎক্ষনাৎ। মুখের মধ্যে কতগুলো শব্দ বন্ধ হয়ে পড়ে থাকল। রা’গ ভাবটা চোখে-মুখে ফুটতে চেয়েও ফুটল না। শূভ্রা চোখের পানি ফেলে চলেছে এখনও। সেই অবস্থায় অনুযোগের সুরে বলল,
” মানছি আপনি জ্ঞানী মানুষ, মাথা ভরা বুদ্ধি। তাই বলে একটা দিন অপেক্ষা করা গেল না? আমি নিজেই সত্যটা বলতাম! ”
” নিজ থেকে বলতে? ”
তার কণ্ঠে সন্দেহ, অবিশ্বাস। খানিকটা কৌতূকের আভাস। শূভ্রা টের পেয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে। তারপর ধীরে নিচু স্বরে বলল,
” প্রথমে আপনার মাকে বলতাম। তারপর আপনাকে। ”
” এজন্যই বাড়িতে যাওয়ার জন্য পাগল হচ্ছিলে? ”
” হ্যাঁ। এখানে বললে তো ফেলে চলে যেতেন। কেউ আটকাতে পারবে না। ওখানে মা আছেন, বাবা আছেন, মামা আছেন। সবাই আটকাত আপনাকে। ”
সঞ্জয়ান সরে এলো তার কাছ থেকে। বিছানায় নিজের মতো বসতে বসতে বলল,
” দল ভারী করার চেষ্টা! বুদ্ধিটা ভালোই। ”
শূভ্রা হামাগুড়ির ন্যায় তার কাছে এগিয়ে এলো। মনখারাপের সুরে বলল,
” ভালো বুদ্ধিটা খাটাতে পারলাম কোথায়? আপনি সব জেনে গেছেন। এখন তো ফেলেও চলে যাচ্ছেন। ”
সঞ্জয়ান তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। কান্নাটা থেমে গেলেও চোখের পানিতে ভাসছে মনিদুটো। এক মুহূর্ত নীরব থেকে বলল,
” আমি জ্ঞানী মানুষ হলেও বুদ্ধি দিয়ে তোমার মিথ্যা নাটক ধরতে পারিনি। তুমি নিজেই এইমাত্র সত্যিটা আমাকে জানালে। ”
শূভ্রা চোখ বড় বড় করে তাকাল। বিস্ফারিতনেত্রদ্বয় নিয়ে অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল,
” আমি জানিয়েছি? ”
” হ্যাঁ। তোমার বুঝায় একটু ভুল হয়েছে। আমি তোমার দোষে তোমাকে ফেলে যাচ্ছি না। ”
” তাহলে? কার দোষে? ”
সঞ্জয়ান চোখ সরিয়ে আনল। সামনে চেয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
” কারও দোষে না। আমি তোমাকে ব্যবহার করে একটা সুযোগ নিতে চেয়েছি। যাতে অরুণিমার বিয়েটা হয়। ”
” আমাকে ব্যবহার করছেন? ”
শূভ্রার কণ্ঠে রা’গের উত্তাপ। সঞ্জয়ান টের পেয়ে শশব্যস্তভাবে বলল,
” আবারও ভুলভাবে নিচ্ছ। ”
একটু থেমে চোখ বুঁজে মাথাটা ঝাঁকি দিয়ে বলল,
” না, আমি ভুল শব্দ ব্যবহার করেছি। তোমাকে ব্যবহার নয়, তোমার সাহায্যে একটা সুযোগ নিয়েছি। ”
শূভ্রার রা’গটা যেমন হঠাৎ করে উদয় হলো তেমন হঠাৎ করে হারিয়ে গেল। একটুক্ষণ নীরব থেকে সুধাল,
” আমার কোনো দোষ নেই? আপনি মাফ করে দিয়েছেন? বাবা বিয়েতে রাজি হলে আমাকে নিয়ে যাবেন? ”
” না হলেও নিব। তাছাড়া আমার মনে হয় না, বিয়ে নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হবে। ”
উত্তর শুনে শূভ্রা খুশি হয়ে গেল। দুই হাতে চোখের পানি মুছে নিল চটজলদি। চঞ্চলচিত্তে খাট থেকে নামতে নামতে বলল,
” আপনি বসুন, আমি আপুকে খুশির সংবাদটা দিয়ে আসি। ”
সে কথাটা বলতে বলতে দরজার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল প্রায়। তখনই সঞ্জয়ান প্রশ্ন করল,
” কোন খুশির সংবাদ? ”
” এই যে আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন। ”
” এই কথা বলেছি? ”
শূভ্রার ঠেঁটে লেগে থাকা নিশ্চিন্তের হাসিটা উবে গেল। তার দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়িয়ে সভ’য়ে জিজ্ঞেস করল,
” মাফ করেননি? ”
সঞ্জয়ান সরাসরি জবাব দিল,
” না। এত বড় অন্যায়ের এত সহজে মাফ হয়? ”
” তাহলে বললেন যে, আমাকে নিয়ে যাবেন। বিয়েটা ভাঙবেন না। ”
” হ্যাঁ, কিন্তু শা’স্তি ভোগ করতে হবে। ”
শূভ্রা রুমের ভেতর ফিরে এলো। খাটের উপর উঠে বসে জিজ্ঞেস করল,
” কী শা’স্তি? ”
” শুনেছি, পড়ালেখায় তুমি খুব খারাপ। সেটা মিথ্যা প্রমাণ করতে হবে। ”
” কিভাবে? ”
” পড়াশোনা করে। প্রচুর পড়তে হবে। ক্লাসে ফাঁকিবাজি চলবে না। আমার মায়ের শিক্ষিত মেয়ে খুব পছন্দ। আমি কালই তোমার জন্য টিচার ঠিক করব। দৈনিক তিন-চারটা প্রাইভেট তো থাকবেই। সাথে কোচিংও করবে। ”
____________
অরুণিমা ও মাইমূনের বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে নির্ঝঞ্ঝাটে, উভয়ের পিতা-মাতার সম্মতিতে। বিয়ের পর বাবা-মা ও স্ত্রীর ইচ্ছেতে নিজের বাড়িতে উঠেছে তারা। বাসররাতে অরুণিমার হাতের মাঝে হাত রেখে বলল,
” আমার একটা আবদার আছে। ”
সে লজ্জায় চোখ নামিয়ে রেখেছিল। লজ্জা জিয়িয়ে রেখেই কোমল স্বরে প্রত্যুত্তর করল,
” বলো। ”
মাইমূন সংশোধনের ভঙ্গিতে বলল,
” আবদার না অনুরোধ। ”
অরুণিমা চোখ তুলে তাকাল। নির্মল চাহনি রেখে মুখের আরক্ত ভাব কাটিয়ে বলল,
” এখন আমি তোমার স্ত্রী। অনুরোধ কেন আদেশ করলেও আমি মেনে নিতে বাধ্য। ”
” স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দায়-দায়িত্ব ও অধিকার সমূহ তোমার জানা থাকলেও আমার নেই। তুমি তো জানোই, বিয়ের ব্যাপারে আমার আগ্রহ আগে ছিল না। এখনও নেই। শুধুমাত্র তোমাকে খুশি করতেই করা। তাই এগুলো আমাকে বলার প্রয়োজনও নেই। আমি তোমাকে আগে যেভাবে ভালোবেসেছি, এখনও সেভাবেই ভালোবাসব। আমার দেহ ও মন শুধু একটা কথাই জানে, তুমি আমার ভালোবাসা। আজীবন ভালোবাসা হয়েই থাকবে। ”
” এটাই কি তোমার অনুরোধ? ”
মাইমূন মাথা নেড়ে না বুঝাল। অরুণিমা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি রাখলে সে তার হাতের আঙুলের মধ্যে নিজের আঙুলগুলো গেঁথে নিল খুব সাবধানে। তারপরে মুখের কাছে টেনে এনে ঠোঁট ছুঁয়াল অরুণিমার হাতের পিঠে। বলল,
” তুমি যেমন আমাকে দেওয়া কথা রেখেছ তেমন আমিও তোমার বাবার দেওয়া কথা রাখতে চাই। অনুমতি পাব? ”
অরুণিমা প্রথমে বুঝতে পারল না। জিজ্ঞেস করল,
” কী রকম অনুমতি চাচ্ছ? ”
” চাকরি করার। তোমার বাবা চেয়েছিলেন, বিয়ের পর তোমার ভরণ-পোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিই। আমার উপার্জিত অর্থে সংসার চলুক। আমি সেই চাওয়াটা পূরণ করতে চাই। ”
কথাটা শোনামাত্র তার চোখ-মুখের ভাব বদলে গেল। উৎসুক দৃষ্টি ধরা পড়তে মাইমূন বলল,
” ভ’য় নেই। অন্য কোথাও না, আমার বাবার ব্যবসায়ের মধ্যে থাকব। কিন্তু মালিকের ছেলে হিসেবে না একজন কর্মচারী হিসেবে। আমি যতটুকু কাজ করব তার হিসেব মতো বেতন নিব। সেই বেতনে সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র কিনব। ”
অরুণিমা পুরো কথাটার অর্থটা ধরে ফেলল চট করে। জিজ্ঞেস করে বসল,
” তুমি চাচ্ছ, এ বাসায় থেকেও আলাদা রান্না-বান্না ও খাওয়া দাওয়া করতে? ”
মাইমূনও সরাসরি উত্তর করল,
” হ্যাঁ। ”
” কী বলছ! বাবা-মা কী মনে করবেন? কষ্ট পাবেন না? ”
” সেটা আমি সামলাব। তুমি শুধু অনুমতি দেও। ”
অরুণিমা কিছু একটা বলতে চাইল, পারল না। মাইমূন বাঁধা দিয়ে হাত টেনে নিল বুকের মাঝে। অন্য হাত দিয়ে গাল ছুঁয়ে বলল,
” ভালোবাসা, তুমি না করো না। আমি খুব কষ্ট পাব! ”
সে চায় না আজ এই শুভ লগ্নতে মাইমূনকে কষ্ট দিতে। কিন্তু বউ হয়ে কী করে এক বাড়িতে সংসার আলাদা হওয়ার অনুমতি দিবে? এ যে অন্যায়! সমাজের চোখে খারাপ! কয়েকটা মুহূর্ত চুপ থেকে আচমকা বলল,
” অনুমতি দিলাম। কিন্তু রান্না-বান্না আলাদা হবে না। প্রয়োজনে বাবা-মায়ের খাবারের খরচটাও তুমি দিবে। ”
সে বিস্ময়াপন্ন হয়ে বলল,
” আমি পারব? ”
” পারতে হবে। বউয়েরটা পারলে বাবা-মায়েরটাও পারবে। ছেলে হিসেবে এটা তোমার কর্তব্য। তাদের পাওনা। ”
মাইমূনকে প্রথমে শ’ঙ্কি’ত দেখাল। পরক্ষণে হাসি ফুটে ওঠল চোখজোড়ায় ও ঠোঁটদুটিতে। অরুণিমার কোলে মাথা রেখে বলল,
” তুমি পাশে থাকলে সব পারব। ”
চলবে