আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা♥ সিজন ১ পর্ব ৭

0
700

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_৭
#সাহেদা_আক্তার

কোনমতে খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে দরজা খুলতে যামু তখনই গায়ের দিকে নজর পড়ল। আয় হায়!!! ক্রাশের শার্ট এখনো গায়ে। এখন এইভাবে গেলে তো আমার খবর হই যাইতো। আমি তাড়াতাড়ি কইরা শার্ট খুইলা আলমারিতে লুকাই রাখলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে দেখলাম আমার হবু শ্বাশুড়ি আম্মা মানে পাশের বাসার আন্টি এসেছেন। আম্মার সাথে গল্প করতেছেন। আমাকে দেখে ডাকলেন। আমি কোনোমতে গিয়া আন্টির পাশে বসলাম। আন্টি জিজ্ঞেস করলেন, পায়ের কি অবস্থা?

– ব্যাথা আছে এখনো।

– দেখেন না ভাবি, বলসি বিকালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবো আর সে পড়ে পড়ে ঘুমাইসে। কেমন লাগে। পায়ের কি অবস্থা করেছে। পুরা কালো হয়ে গেসে।

– ভাই কোথায়?

– আপনার ভাই, নাস্তা আনতে গেছে। দেখি নাস্তা খেয়ে তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

– ও। জানেন ভাবি, আজকে আমার ছেলের শার্ট চুরি হয়ে গেসে।

– কি বলছেন? কি করে?

– আরে ছাদে ধুয়ে শুকাতে দিয়েছিলাম। কাপড় আনার সময় দেখি শার্টটা নেই। আমার ছেলের প্রিয় শার্ট ওটা।

– কি যে শুরু হল? দিনে দুপুরেও চোরের উৎপাত।

আমি ভিজা বিড়ালের মতো দুইজনের দিকে তাকাইতেসি আর মনে মনে হাসতেসি। নাচতে মনে করতেসে, শার্টটা আমার ক্রাশের ফ্যাবোরেট। ভালো হইসে, ওই চাঁদনী না শুঁটকি ওইটার সাথে এত হেসে হেসে কথা বলে ক্যান? চুরি করসি বেশ করসি। ওর জিনিসের উপর শুধু এই ছোঁয়ার অধিকার আছে। আর কারো না।

এমন সময় আমার ক্রাশ ঢুকল। আমি তখন তারে নিয়া ভাবতেসি। খেয়াল করি নাই। সে এসে কইল, আম্মু, চল। নাস্তা খাবে।

– তুই যা, আমি আসছি। ভাবি, আজকে আমার ছেলে নিজে নাস্তা বানিয়েছে।

শুনেই আমি সাথে সাথে বললাম, আন্টি, আমাকে দিয়েন তো। আমি দেখবো কি রকম নাস্তা বানিয়েছে। ক্রাশ বলল, তোমাকে দিবো কেন? জানো আম্মু, কালকে না আমার কলেজ শার্টের শেষ বোতামটা কেউ চুরি করেছে। শুনেই সাথে সাথে আমার মুখ আমসি হয়ে গেল। আমি আমতা আমতা করে গলায় ঝোলানো বোতামটা হাত দিয়ে ঢেকে বললাম, আন্টি, আমি আসতেসি। রেডি হতে হবে। আমি বের হওয়ার আগে আপনাদের বাসায় যাবো। নাস্তা খেতে।

– আচ্ছা, আসিস।

আমি আঙ্গুল দিয়া চোখ টেনে জিহ্বা বের করে ওরে ভেংচি কেটে নিজের রুমে চইলা আসলাম।

আন্টি চলে যাওয়ার পর আম্মা আমার রুমে আইসা একটু থমকে গেল। তারপর আমার উপর চিক্কুর দিয়া কইল, গোয়াল ঘরও তো তোর রুম থেকে ভালো। কি করছিস? ডাক্তারের কাছেই তো যাবি। এত জামা কাপড় বের করে বিছানার এই অবস্থা করছিস কেন?

– ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি তো কি হইসে? বাইরেই তো যাইতেসি। একটু সুন্দর হয়ে যাইতে হবে না?

– আল্লাহ গো, কি মেয়ে দিলা!?

আম্মা বের হই গেল। আমি মনে মনে হেসে বলতেসি, হি হি, আমি তো ক্রাশের বাসায় যাবো। একটু সাজুগুজুর ব্যাপার আছে না। কি যে কও না আম্মা। আমি বোতামটার সাথে মিলাইয়া একটা সোনালী রঙের থ্রিপিস পরলাম। মাথায় বেণী করে ওটাকে প্যাঁচাই খোঁপার মতো বেঁধে নিলাম। ছোট চুলগুলা মুখের দুই পাশে ঝুলতেসে। আমি চোখে হালকা কাজল দিয়ে ওড়না পরে বের হয়ে আসলাম। আম্মারে চিল্লাই কইলাম, আম্মু, আমি আন্টির বাসায় যাইতেসি। আব্বু আসলে নক দিও। আমি বের হওয়ার সময় আম্মা জিজ্ঞেস করল, তুই সত্যি সত্যি যাচ্ছিস?

– হুম।

আমি নক দিলাম। ক্রাশ দরজা খুলে বলল, কি চাই? আমি কইলাম, খেতে আসছি। সরেন। সে না সরে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি ভাবলাম আমার উপর ক্রাশ খাইল নাকি? যেভাবে তাকাই আছে। আমি তো মনে মনে খুশিতে বান্দরের মতো লাফাইতেসি। কিন্তু তার কথা শুইনা আমার মন ফুঁটা বেলুনের মতো চুপসাই গেল।

– এটা কোনো রেস্টুরেন্ট না। যে যেই আসবে তাকে খাওয়াবো। বাপরে, মেয়েরা কতই না ঢঙ করতে পারে। ডাক্তারের কাছে যাইতেসে না প্রেম করতে যাইতেসে বুঝাই যাইতেসে না।

– তাতে আপনার কি। সরেন।

– না।

আমি চিৎকার দিতে লাগলাম, আন্টি……। হঠাৎ ক্রাশ এসে আমার মুখ চেপে ধরল। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সে বলল, চুপ। আমি বলেছি না ভেতরে যাওয়া নিষেধ……আউ……। আমি তার হাতে কামড়াই দিলাম। সে ব্যাথায় হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, বাপরে, রাক্ষসী একটা। আমি পায়ের ব্যাথা নিয়া দৌঁড়ে ওদের বাসায় ঢুইকা গেলাম। যাওয়ার আগে ওর দিকে ভেংচি কাইটা আন্টির কাছে চইলা আসলাম।

– এতক্ষণে আসার সময় হলো?

– একটু দেরি হয়ে গেছে রেডি হতে। তার উপর এক বিরাট পাহাড় অতিক্রম করে আসছি।

– পাহাড়!

– হুম, কই, আমাকে দাও না। খিদে পেয়েছে।

আন্টি দুটো পিচ্চি বড়া বের করে দিলেন। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, মাত্র দুটো!!! তাও এত্তো ছোট!!! এগুলা তো আমার পেটের কোণা দিয়েও যাবে না। আন্টি আমাকে সান্ত্বনা দিয়া বলল, কি করব? আমার ছেলেটা এত ফাজিল। তোমার জন্য রাখতেই দিল না। আমি ফোঁপাতে ফোপাঁতে দুটো বড়া একসাথে মুখে পুরে দিয়া কইলাম, আমারে কেউ ভালোবাসে না। আন্টি বলল, আচ্ছা মা, আর কাঁদে না। আমি কালকে তোমার জন্য বানিয়ে দিবো। আমি উজ্জ্বল মুখে কইলাম, সত্যি?

– হুম।

– তাহলে কালকে বিকালে আমি শিখতে আসবো।

আমি দরজার দিকে তাকাতেই মনে হল কেউ একজন সরে গেল। ভাবলাম চোখের ভুল হয়তো। কিছুক্ষণ পর আব্বা নক করলো দরজায়। আমি আন্টি থেকে বিদায় নিয়ে বাইর হই গেলাম। যাওয়ার সময় বললাম, আন্টি কালকে কিন্তু আমি আসবো। আন্টি হাসলেন।

নয়টার সময় বাসায় আসলাম। পায়ে প্লাস্টার করা। হাড় নড়ে গেছে। হাড় নড়ার আর সময় পাইলো না। আম্মা সাফ জানায় দিসে বিছানা থেকে নামা যাবে না। আমি মুখ গোমড়া করে বিছানায় বইসা আছি। পাটার দিকে তাকাই ইচ্ছা করতেসে লাথি মারি। কিন্তু পা দিয়ে পাকে কেমনে লাথি মারি! আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, কালকেও যদি আম্মা ১৪৪ জারি কইরা রাখে আমি ক্রাশের বাসায় যামু ক্যামনে? যত দোয়া দুরুদ আছে সব পইড়া ফু দিয়া কইলাম, ভালা পা তোরে আর বকুম না। তুই তাড়াতাড়ি ভালা হই যা। রাতে আম্মা এসে খাওয়াই দিলো। এতদিন তার হাতে খাওয়ার জন্য আমি কল্লা পিটতাম। এখন খাওয়াই দিতেসে তাও সব তিতা লাগতেসে। কোন দুক্ষে আগের ভাড়াটিয়া চলে গেসিলো!!!!
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামতেই পা ভারি লাগল। তাকাই দেখি প্লাস্টার বাঁধা পাটা আমার দিকে চিনা হাসি দিয়ে তাকাই আছে। আমি মনে মনে কইলাম, পা, তোরে যে কি করতে মন চাইতেসে। আমি আস্তে আস্তে ওয়াশরুমে গিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে আবার বিছানায় বসলাম৷ পায়ের কারণে স্কুল যাইতে হবে না এটা আনন্দের বিষয়। কিন্তু ঐ বাসায় যাইতে পারমু কি না সেটাই এখন মুখ্য বিষয়।

আম্মা এসে দেখল আমি বিছানায় বইসা হা হুতাশ করতেসি। জিজ্ঞেস করল, কি অবস্থা? আমি খেয়াল করি নাই৷ তখনও আমি ভবিষ্যতের কথা ভাইবা নিজেরে সান্ত্বনা দিয়েতেসি, একদিনেরই তো ব্যাপার৷ জামাইকে না দেখলে কিছু হবে না। আম্মা ভ্রূ কুঁচকাই কইল, তোর জামাই আসছে কোথা থেকে? আমি চমকাই উঠে আমতা আমতা করে কইলাম, আসলে পায়ের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার জামাইকে তো খোঁড়া বউ নিয়ে সংসার করতে হবে তো, তাই ভাবছিলাম। আম্মা আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, এত দূরে না ভেবে সামনের পরীক্ষার কথা চিন্তা কর।

– ওমা, দূরে চিন্তা না করলে তোমার মেয়ের কি হবে! তোমার ভবিষ্যত জামাই তো মনে দুঃখ পাবে।

– মাইর খাবি। দাঁড়া, তোর জে এস সি শেষ হলেই বিয়ে দি দিমু।

এই রে!!!! কথা অন্যদিকে মোড় নিতেসে। যদি সত্যিই ধরে বেঁধে অন্য কারো সাথে বিয়া দিয়া দেয়। আমি কইলাম, বাদ দাও না আম্মু। আজকে কি নাস্তা বানাইসো?

– দুধে পাউরুটি চুবাই খাবি।

– এ্যাঁ…… দুধ ক্যান।

– দুধ খাবি। তাইলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি। নইলে তোর আব্বুকে দিয়ে নিমপাতা আনাবো।

আমি নিমপাতার রস দিয়ে পাউরুটি খাইতেসি। ভাবতেই শিউরে উঠে বললাম, না আম্মু, থাক। এত কষ্ট করা লাগবে না। আমাকে দুধ পাউরুটিই দাও। আম্মা এক মগ দুধ আর পাউরুটি দিয়ে গেল। আমি দুধে পাউরুটি ডুবাই নিয়া চিবাইতে লাগলাম। পাউরুটিও আমার দুঃখে দুধে ঝাঁপ মারে। বাকিটা মুখে যায়। হঠাৎ গাজর বন্ধুর কথা মনে পড়ল। আমি চিল্লাই কইলাম, আম্মু, আমারে গাজর দাও।

– এসে নিয়ে যা। আমি কাজ করতেসি।

এখন নামতে ইচ্ছে করতেসে না। তাই যেভাবে পাউরুটি খাইতেসিলাম, ওভাবেই খাইতে লাগলাম। ক্রাশের জ্বালায় জীবন একেবারে ত্যানা ত্যানা।
চলবে…

বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here