অস্তিত্বের খোজে part 8

0
759

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ৮
.
.
– শুভ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে পরী কে। গা অনেক ঠান্ডা হয়ে গেছে জাষ্ট গরম করার চিন্তা ভাবনা।
.
.
– শুভ্রের খুব অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। দেখ শুভ্র তুই নিজে খুব ভদ্র ছেলে। কোন মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাসনি কখনও। পূজার মধ্য কত মেয়ে তোকে প্রপোজ করেছে তবুও ভুলেও তাদের রেসপন্স দিসনি আর আজ ভদ্র হয়ে থাকতে পারছিস না। কোন মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিতে নেই সে তোর যতই বউ হোকনা কেন। এমনি ওর অনেক ক্ষতি করে ফেলছিস। এখন এমন কাজ করিসনা যেন ও তোকে সারা জিবন মন থেকে ডিলেট করে দেয়।
এসব কথা গুলো শুভ্র নিজেই নিজেকে উপদেশ দিচ্ছে এবং এভাবে ঘুমের মধ্য তলিয়ে গেল।
.
.
.
– ফযরের আযান হচ্ছে শুনতে পারছি কিন্তু উঠার মত শক্তি হচ্ছেনা। গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে মনে হয়। আমি একটু নড়ার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলাম আমি নড়তে পারছিনা। ১ মিনিট লেগে গেল আসল ব্যাপারটা বুঝতে। উষ্ণ গরম লাগছে বলে সামনে তাকাতেই শুভ্র কে দেখে চিৎকার করে উঠলাম। আমার শরীরের ক্লান্তি ওকে দেখেই পালিয়ে গেল।
.
.
.
– আমার চিৎকার শুনে শুভ্র চোখ মেলিয়ে বলল কি হইছে! ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন বলেই আমায় বুকের সাথে একদম জড়িয়ে ধরে সুয়ে পড়ল।
.
.
.
– উমমম্ ছাড়ুন বলছি বলেই গায়ের শক্তি দিয়ে বুকে কামড় বসিয়ে দিলাম।
.
– এবার শুভ্র আমাকে সহ নিয়ে ধড়পড়িয়ে উঠে বসল এবং আমায় জোড়ে ধাক্কা দিয়েই ঠাশশশ্ করে চড় বসিয়ে দিল।
.
.
– এই পাগল হয়ে গেছিস! কোন সাহসে আমাকে কামড় বসালি বলেই আমার সামনে গেঞ্জি খুলে ফেলল।
– আমিতো ওর দিকে কঠিন ভাবে তাকিয়ে আছি। আমার রুমে থেকে আমার বিছানায় এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থেকে আবার আমাকেই চড় বসানো!
.
.
.
– শুভ্রের বুকে আমার দাঁত বসে গিয়ে কেটে গেছে। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সেদিকে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি ওকে ধাক্কা দিতে যাব অমনি আমার হাত জোড়ে চেপে ধরে বলল একটা চড় কি কম হইছে? আরো দিতে হবে!
.
.
– কি ভাবছিস আমি ঐ সব ন্যাকামি ছেলের মত যে কামড় সহ্য করে ঐ অবস্থায় বসে থাকব। একদম মেরে বস্তা বানিয়ে দিব।
.
.
– কামড় দিছি বেশ করেছি। প্রয়োজনে আবার আরও জোড়ে দিব। আমাকে জড়িয়ে ধরার সাহস তোমাকে কে দিল হুম।
.
.
– হুম ঠান্ডায় তো কাল মরতে বসেছিলি। দয়া করে তোকে ঠিক করার জন্য……….. কথাটা ককমপ্লিট না হতেই পরী মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল মরতাম ভাল হত তোমার মত লুচুর সাথে বসবাস করতে হতনা।
.
.
.
– শুভ্র রেগে গিয়ে বলল আমার চরিত্রের উপর দাগ লাগাস। আমার মত কাউকে বলা শেষ না হতেই শুভ্র হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
– আমি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেলাম ওর তাকিয়ে থাকা দেখে।
.
– “কত রঙ্গ দেখাবিরে কালী….. ছিড়া খ্যাতায় মখমলের তালি” বলেই হাসতে লাগল।
.
– আমি আমার দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম মনে হয় লজ্জায় মাথা কাটা গেল। এ মাটি এদিক ওদিক সর আমি একটু মুখ লুকাই। চট করে টাওয়াল বুকে জড়িয়ে নিলাম।
.
.
– আমি শেষ আজ। টাওয়াল নিচে নেমে গেছে। টাওয়াল কখন পড়লাম তার মানে শুভ্র…………!
– মাথা নিচু হয়ে গেছে আমার….. সব ওর জন্য সব দোষ ওর।
.
.
– শুভ্র হাসছে মিট মিট করে। কি চুপ কেন মেডাম? আসেন আপনার সাথে লড়াই করি। উফ্ যে কামড় বসাইছেন এর একটা উল্টা প্রতিদান দিয়ে দেয়। কি হব্বে?
.
.
– বের হন বলছি রুম থেকে। এক্ষুনি বের হন বলে চেচিয়ে উঠলাম।
.
– এই এই এত ছটপফ করো না। অনেক দেখাইছো আর না বলেই শুভ্র হাসতে হাসতে উঠে গেল।
.
– আমি মনের দুঃখে ক্ষোভে কেঁদে উঠলাম। আজ শেষ আমার সব কিছু। ও কি……….. ভাবতেই ঘৃনা লাগছে।
.
– শুভ্র রুমে এসে কাটা জায়গায় ড্রেসিং করছে। আহহহ্ একদম বাঘিনী। এভাবে কেউ এত্ত জোড়ে কামড় দেয়! রক্ত মুছছিল আর বলছিল শুভ্র। শুধু বাঘিনী হলেও হত পাক্কা রাক্ষসী।
.
.
.
-শুভ্র আবার পরীর রুমে এসে দেখে ওভাবেই বসে আছে পরী।
– কি হলো পরী তুমি এখনো চেঞ্জ করনি!
– আমি শুধু শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচে
নামিয়ে নিলাম।
.
.
– শুভ্রর কাছে ব্যাপারটা ভাল ঠেকল না তাই পরীর কাছে গিয়ে চট করে কপালে হাত দিয়ে দেখে প্রচুর জ্বর আসছে।
– আমি শুভ্রর হাত বার বার সরে দিচ্ছি আর তত বারই কপাল চেক করায় ব্যাস্ত সে। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে চুপ করে রইলাম।
.
.
– ও ড্রেস নিয়ে এসে আমার সামনে ধরে বলল চেঞ্জ করতে পারবা না আমি সাহায্য করব! সিরিয়াসলি বলতেছি পারবা!
.
.
– নিকুচি করছি তোমার সিরিয়াসলি বলে ওকে ধাক্কা দিলাম।
– ও পিছনে সরে গেল।
– এই এত গায়ের জোর তোমার আসে কই থেকে? বলেই হাত পিছন দিকে বেকিয়ে ধরে।
.
.
– আহ্ শুভ্র আমার লাগছে প্রচুর।
– আমি তোমাকে আদর করার জন্য এভাবে ধরিনি ব্যাথা পাওয়ার জন্যই ধরেছি বলে ছেড়ে দিল।
.
.
– জলদি চেঞ্জ কর আমার ফ্রেন্ড আসবে বলে বের হয়ে আসল শুভ্র।
.
– পলা সকাল সকাল এসে পরীর ঘরে উকি দিল। দেখল পরী কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।
.
– পলা দ্রুত রুমে ঢুকে পরীকে ডাক দেয়। কিন্তু পরী কোন জবাব দেয়না।
– এই পরী বলে গা ঝাকাতে গিয়ে দেখল পরীর গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে।
.
.-
– পলা রুম থেকে বের হয়ে এসে শুভ্রের রুমে ঢুকে বলল এই শুভ্র তুমি ওকে কি করছ যে ওর গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে। খুব খারাপ কাজ করেছো ওর সাথে।
.
– শুভ্র কিছুক্ষণ পলার দিকে চেয়ে বলল আমি কি করেছি! তুমি একটু বেশিই বোঝ। যাও আর কার কান ভাঙ্গানো যায় তার কাছে। কাল রাতেও তোহ গিয়েছিলা মার কান ভাঙ্গতে….. কিছু করতে পারছ!.
.
– এবার বেশ লজ্জা পেয়ে পলা চলে গেল।
.
.
– একটু সকাল হতেই আসলাম চলে আসল শুভ্রদের বাসায়। শুভ্র বসেই ছিল ওর জন্য।
.
– তোরা ডাক্তাররা ঘুমাস না? মধ্য রাতে বাসায় ফিরলি আর এখন আবার সকালে বাসায় চলেও আসলি।
.
– হুম কাজ করে তোর বাসায় ঘুম দিয়ে যাব ভাবছি। কই কার কি সমস্যা হয়েছে চল দেখা।
.
– শুভ্র আসলাম কে সাথে নিয়ে গেল পরীর রুমে আর একজনকে বলল ওর মাকে ডেকে দিতে। বলা যায় না শুভ্রকে দেখে আসলামের সামনে যদি সিনক্রিয়েট করে তাহলে মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
.
– রুমের ভিতর ঢুকে দাড়িয়ে পড়ল শুভ্র।
– কি রে দাড়িয়ে পড়লি কেন? কাকে দেখতে হবে বল। এমন সময় শুভ্রের মা অনিতা এসে বলল আমি দেখাচ্ছি বলেই পরীর কাছে গিয়ে পরীকে ডাকতে লাগল।
.
– আসলাম বলল ঐ এইডা কে! রাতে একে আবার জরিয়ে ধরে টেকনিক গুলো কাজে লাগাসনি তোহ?
.
– যা ব্যাটা দেখ আগে তার পর কমেন্ট করে দেখিস।
.
.
– আসলাম জ্বর মেপে দেখে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর। বেশ বেশিই জ্বর বেড়ে গেছে বলে ওর কাজ ও করল।
.
– অনিতা শুভ্রকে বাহিরে যেতে বলল। শুভ্র বের হয়ে গেল রুম থেকে।
.
– আসলাম ওর কাজ কমপ্লিট করে বের হয়ে শুভ্রর রুমে ঢুকে বলল ১ কাপ কফি দিতে বলতো।
– কথা না শেষ হতেই পলা কফি এবং নাস্তা দিয়ে বলল ডাক্তার বাবু পরী ঠিক আছে তো?
.
– শুভ্র পলার দিকে চোখ গরম করতেই পলা চলে গেল। এই মহিলাকে বিশ্বাস নেই কখন যে অকথা বলে শুভ্রকে বেইজ্জতি করবে এর কোন গ্যারান্টি নেই।
.
– ওর নাম পরী! মেয়াটা দেখতে কিন্তু বেশ। নতুন দেখছি। কে হয় তোর?
– শুভ্র চুপ করে একটু পর বলল আমার বউ হয় ও…..
– কিহ্ বিয়ে করলি কবে! কাউকে জানালিনা পর্যন্ত।
.
.
– দোস্ত বাদ দে বহুত প্যারায় আছিরে বলে ট্রি শার্ট খুলে বলল এবার এটার ট্রিটমেন্ট কর।
.
.
– আসলাম একটু হেসে বলল নিশ্চয় বউ কে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে কামড় খাইছিস। এমনি তো এত্ত জ্বর তার ভিতর……… বলা শেষ না হতেই শুভ্র কথা কেরে নিয়ে বলল তোর বউ হোক বুঝবি ঠেলা।
.
.
– ৯ টায় অফিসে যাইতে হবে একটু জলদি কর।
– আসলাম বলল আচ্ছা দেখছি বলেই মুচকি হাসি দিয়ে উঠল।
.
.
– ৯ টায় নাস্তা সেরে শুভ্র আর আসলাম বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
– এই সুযোগে পলা গিয়ে সোজা বিমলার কাছে শুভ্র আর পরীর কথাটা তুলে ধরল।
– পলা বেচারী ভাবছিল হয়ত এতে শুভ্রকে পরীর কাছ থেকে দুরে রাখা যাবে। কিন্তু কপালের লিখন না যায় খন্ডন এতে আরও হিতে বিপরীত হয়ে গেল ব্যাপারটা। বিমলা রেগে চিৎকার দিয়ে তেড়ে পরীর রুমের দিকে পা বাড়াল।
.
– বেচারী পলা ভয়ে একদম শেষ….. কি করতে কি হয়ে গেল….
.
.
.
– বিমলা সোজা গিয়ে পরীর রুমে গিয়ে পরীকে একটানে তুলে ফেলে।
– বেচারী পরী ঘুমের ঘোরে এমন কান্ড হওয়ায় কিছু বুঝতে না পেরে বিমলার দিকে ভয়ে তাকিয়ে রইল। এই মহিলাকে পরী ভিষন ভয় পায়।
.
.
– এই মেয়ে সব শেষ করে দিলিতো? নিজের রুপের জাদু দিয়ে শুভ্রকে বস করেছিস তো সেটা আগেই জানতাম এবার জাত সম্মান টাও খেয়ে ফেললি।
– তোর কি লজ্জা নেই…… কি ভাবে ওর কাছে শুইলি!
.
.
– কথা গুলো শুনে মনে হয় পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল। এত্ত লজ্জা আর নিজের উপর ঘৃনা হতে লাগল বোঝাতে পারব না।
.
– বিমলার চিৎকার শুনে বাসার সবাই পরীর রুমে হাজির।
– বিমলা চিৎকার করছো কেন!
– আমি সাধে চিৎকার সাধে করছি! তোমার সাধের নিয়ে আসা মেয়ে শুভ্রের রুমে গিয়ে……….. কাজ গুলো করেছে। বেচারা শুভ্র ছেলে মানুষ ওকেই বা কি দোষ দিব বলে মিথ্যা কাহিনী বানাতে লাগল।
.
.
– শুভ্রর বাবা লজ্জায় রুম থেকে বের হয়ে গেল। অনিতা কিছু বলতে গিয়েও শাশুড়ির উপর কিছু বলতে পারলনা। শুধু রেগে পলার দিকে চেয়ে থাকল।
.
.
– আমি কান্না করেই যাচ্ছি। এই মহিলা চিৎকার করে এধরনের কথা কোন রুচিতে বলছে।
.
.
– জাত ধর্ম যাওয়ার আগেই এই মেয়েকে বিদায় করে দাও এক্ষুনি।
.
– এত অপমানের পর এই বাসায় থাকা কোন ভাবেই সম্ভব আর নয়।
– ও পরী দিদি কেঁদনা। দিদুন একটু বেশি বলে ফেলেছে কিছু মনে করনা বলে অর্পিতা পরীকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলল।
.
– নিতাই ও লজ্জায় কিছু বলতে পারলনা। সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেল।
.
.
– আল্লাহ্ আর কত? বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলাম। আর বাঁচার সাধ আমার নেই। এই জিবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছি আল্লাহ্। আমাকে নিয়ে নাও। তোমার পৃথিবী বড্ড খারাপ। আমার এখানে একদম ভাল লাগেনা।
.
.
– পুরোটা দিন আমার ওভাবেই কেটে গেল। অনিতা এসে নিজে এই প্রথম পরীকে খাবার খাইয়ে দিয়ে গেছে।
.
– রাতে শুভ্র এসে অর্পিতার কাছে সব শুনে একটু রেগে গেল। কিন্তু কাউকে কিছু না বলে পরীর রুমে গিয়ে দেখল পরী বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে।
– শুভ্র গিয়ে পরীর পাশে গিয়ে দাড়াল।
.
.
– পরী…… বলে ডাকতেই আমি জোড়েই বলে উঠলাম আপনি কি চান আমি সুইসাইড করি কিংবা বাসা থেকে
সারা জিবনের জন্য চলে যাই!
.
.
– আপনি যদি আর একবার আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন আমি সুইসাইড করতে বাধ্য হব।
.
– কথাটা শুনে শুভ্র হচকিয়ে উঠল এবং পরীকে ধরে ঝাকিয়ে বলে উঠল এই কি বলছো! পাগল হয়ে গেছ। এত প্যারা দাও কেন আমায়। আমি কি মানুষ না?
.
– আমার রাগ আরও বেরে গেল এবং আমি ধাক্কা দিতেই ও আমায় উল্টো জড়িয়ে ধরে আমাকে আর কোন সুযোগ না দিয়ে আমার ঠোট ওর ঠোট মধ্য নিল।



– উমম্ আমি ছটপটাতে লাগলাম। ও আমায় আরও জোরে চেপে ধরে তার বুকের সাথে।
.
– আমি আর ওর শক্তির সাথে না পেরে চুপ হয়ে গেলাম। আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে যাচ্ছে।
.
.
– পাক্কা ৩ মিনিট পর শুভ্র পরীকে ছেড়ে দিয়ে বলল তুমি যা চাও তাই হবে। আমি কখনও তোমার কাছেও ঘেষবনা কখনও যোগাযোগে এমনকি কথাও বলবনা বলেই চলে গেল……….
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here