অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৫
.
– শুভ্রের কথা গুলো আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকলনা। আমি তাদের সামনে দিয়ে গেলে তাদের কি সমস্যা আর শুভ্রর বা কি সমস্যা……….
.
.
.
– অর্পিতা এসে বলল পরী দিদি আমার স্কুলে যাবে?
– কেন?
– না এমনি তোমাকে দেখাতাম আমার স্কুলটা।
– আন্টি বকা দিবে অর্পিতা।
– ও চুপ করে গেল। কারন ও জানে ওর মা বকাই দিবে।
.
.
.
– আমি রাতে সবার সাথে খেতে বসতেই শুভ্রের বাবা অনিল আঙ্কেল বললেন শুভ্র আকিকের বাবা আমাকে কল করেছিল।
– শুভ্রের গলা দিয়ে ভাত আর নামেনা। যা ঘটার ঘটে গেছে।
.
.
– নিতাই সেন তার ছেলেকে বলল….. কেন কল দিয়েছিল?
– আকিকের নাকি পরীকে খুব পছন্দ হয়েছে তাই প্রস্তাব পাঠাতে চায়। শুভ্রের মা তো বলেই দিছে কাল সকাল ১০ টায় আসতে।
.
.
– আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে বিয়ের কথা শুনে।
.
.
– বাবা আমাকে তো একবার জিঙ্গাসা করে ওদের আসতে বলতে।
– বিমলা ধমক দিয়ে বলে তোর মা যা করেছে একদম ঠিক করেছে। পরিচয় হীন একটা মেয়েকে আকিকের মত ছেলে বিয়ে করতে চেয়েছে এতেই অনেক। তাছাড়া আকিকের পরিবারও অনেক বড় পরিবার। বিয়ে হয়ে গেলে ঝামেলা চুকে যেত। চোখের সামনে আর তো দেখতে হত না।
.
.
– দিদুনের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি বেয়ে যাচ্ছিল।
– আমি অমল আঙ্কেল কে বললাম তারা যদি বিয়ে করতে চায় আমি রাজি বলে উঠে এলাম।
– দেখছিস মেয়েটার তেজ! আমার বাসায় খাবে আর আমাকেই তেজ দেখাবে।
– নিতাই সেন চুপ করে গেল, অন্তত পরীর মুখ থেকে এই কথা আশা করেননি।
.
.
– শুভ্র আর না খেয়েই উঠে গেল।
– অনিতা ছেলের দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবল শুভ্রের মতি গতি ভাল ঠেকছেনা তাই মেয়েটি এ বাসা থেকে চলে গেলে বাঁচি।
.
.
.
-শুভ্র রুমে এসে প্রচন্ড রেগে গেছে।
জিবনে কত মেয়ের প্রপোজাল ফিরিয়ে
দিয়েছি শুধু ক্যারিয়ার গড়ার উদ্দেশ্য। আর
আজ নিজের বউকে অন্যর হাতে তুলে
দিতে হবে বলে সামনে একটা টেবিলে
লাথি মাড়ল।
– হকনা দুর্ঘনা বশত বিয়ে তবুও ও আমার বউ
তো!
.
.
.
– আমি খাটে হেলান দিয়ে বসে কাঁদছি।
অভাগী যেদিকে যায় সেদিকেই সাগর
পুরাই। তবে একটা দিক থেকে ভাল আমি
আমার অস্তিত্ব খুজে পাব। একটা নিজের
পরিচয় হবে। এখানে কারো কথা শুনতে
হবে না তো……..
.
.
– সকাল থেকে বাসায় জোগাড় চলছে
আমাকে দেখতে আসবে বলে।
– দাদু কোন দিক দিয়ে কমতি রাখেনি।
কিন্তু দাদু কই উনি কাল থেকে একবারও
কথা বলেননি আমার সাথে। আজ জগিং এ
নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেনি।
.
.
– নিচে নেমে দেখি শুভ্র অফিসে
যাচ্ছে। আমার দিকে একবার তাকাল
তারপর রাগী লুক নিয়ে চলে গেল।
– এখানে রাগ কারে দেখালো হুম।
.
.
.
– আজ অর্পিতা স্কুলে যায়নি আমাকে
দেখতে আসবে বলে।
– আমি লাল আর সাদা মিশ্রিত পাড়ের
শাড়ী পড়েছি। লাল লিপিষ্টিক। হালকা
গহনা ব্যাস এই টুকুই।
.
.
.
-পরী দিদি তোমাকে যা লাগছেনা!
একদম দেবীর মত।
– যাও কি বলো।
– হুম দিদি সত্যি বলছি।
.
.
.
– তোমায় সত্যি বলতে হবেনা।
– জানো দিদি আকিক দাদাও অনেক সুন্দর।
– তাই!
– তুমি আকিক দাদারে দেখ নি?
– না অর্পিতা।
.
.
– অনিতা এসে বলল কি মেয়ে তুমি
রেডী?
– হুম আন্টি।
– অনিতা পরীকে দেখে আবিভূত হয়ে
যায়। আসলেই মেয়েটি অমায়িক সুন্দর। এই
জন্য জলদি এই বাড়ি থেকে সরাতে
চাচ্ছে। শুভ্রর মতিগতি ভাল ঠেকছে না।
– পলা ডাকতে এলে চলে যেও অর্পিতার
সাথে বলে অনিতা চলে গেল।
.
.
.
– আকিক ওর বাবা-মা আর বোন পরীকে
দেখতে এসেছে।
– নিতাই সেন তাদের সাথে কথা বলছে
সাথে শুভ্রের বাবাও আছে।
– বিমলা পলাকে বলল পরী কে ডেকে
আনতে।
.
.
– প্রায় ১০ মিনিট পর পরী মাথায় ঘোমটা
দিয়ে হাজির।
– আকিক তো just ফিদা। শুভ্রকে আকিক
ফোন দিল একটু আড়ালে গিয়ে।
– হ্যাঁ আকিক বল
– দোস্ত বিস্বাস কর পরীকে দেখে
কলিজায় টান পড়ল। এই মেয়ে যদি সারা
জিবন বলে তার ক্রীতদাস হয়ে থাকতে
এতেও আমি রাজি।
– শুভ্র বলল বাসায় তোরা এসে গেছিস?
– ও আমার সামনে দোস্ত…. তাহলে বোঝ
আমি কোথায়।
– আমি আসছি বলে শুভ্র কল কেটে দিল।
শুভ্র কল কেটে দিয়েই ফোনটি গায়ের
শক্তিতে ফ্লোরে ছুড়ে মারল।
-Sir কিছু হয়েছে! বলে বডি গার্ড রুমে
ঢুকল।
– না কিছুনা। গাড়ি বের করেন আমি বাসা
যাব।
.
.
.
– আকিকের বাবা মা পরীকে খুব পছন্দ
হয়েছে।পারেনা যে আজই ছেলেকে
বিয়ে দিয়ে নিয়ে যান। এতিম মেয়ে
বলে তাদের কোন সমস্যা নেই।
.
.
– আমি আমার রুমে এসে বসে আছি। আকিক
দেখতে অনেক smart এবং সুন্দর। তাকে
অপছন্দের কোন প্রশ্নই আসেনা। আমি
একটা পরিচয় পাব। আমারও একটা সংসার
হবে। আমার সব কিছুতে অধিকার থাকবে
এটাই আমার কাছে অনেক।
– কেবল দরজা বন্ধ করে দিব এমন সময় শুভ্র ঝট
করে রুমের ভিতর ঢুকে পড়ল।
.
.
– এই আপনি এভাবে কেন ঢুকলেন! ও কোন
কথা না বলে খাটে গিয়ে বসে আমার
দিকে চেয়ে থাকল।
– এই আপনি কি বোবা! কথা শুনতে
পারছেননা?
– আর টেনশন করতে হবেনা আমাকে
নিয়ে আমি কখনও আর এ বাসায় আসবনা হুম।
.
.
– বিয়ের কথা শুনে শুভ্র রেগে গিয়ে
আমাকে চড় মারল ঠাশশশ্ করে।
– আমার এত্ত খারাপ লাগল যে কাঁদো
কাঁদো হয়ে বললাম আর কয়েকদিন মাত্র
অপেক্ষা করুন আমি বিদায় হয়ে যাব।
– এবার ও শুভ্র কষে আর একটা চড় মেরে
বলল লজ্জা করে না! নিজের husband
থাকা স্বতেও অন্য পুরুষ কে বিয়ে করতে
চাও। আমি আকিকের থেকে কোন দিক
থেকে কম বরং ১০ গুন সব দিক দিয়ে
বেশি…
– আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে বলি কিসের
স্বামী! আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে
মানিনা। আমি যেই বিয়েটাই মানিনা
সেখানে স্বামী কোথা হতে আসে?
.
.
– শুভ্র পরীকে সোজা হাত ধরে টেনে
নিচে ড্রয়িংরুমে এনে দাড় করাল।
– সবাই শুভ্রের কাজ দেখে দাড়িয়ে গেল।
– আকিক sorry তুই পরীকে বিয়ে করতে
পারবিনা because she is my wife….
.
.
-শুভ্র কি পাগলামি করছিস?
– বাবা আমি সত্যি বলছি। তোমাদের
বিশ্বাস না হলে পরীকে জিঙ্গাসা করে
দেখ আরও ৪ মাস আগে আমাদের বিয়ে
হয়েছে হিন্দু রিতীতে।
– কি হল পরী বল সবাইকে?
– আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
.
– শুভ্র ছুটে যায় মন্দিরের কাছে এবং
একমুঠো সিঁদুর নিয়ে এসে হঠাৎ করে পরীর
মাথায় সিঁদুর দিয়ে বলে ওঠে এটা দিয়ে
৩ বার ওর মাথায় সিঁদুর দিছি। ও আমার
বিবাহিতা স্ত্রী। তাই ও শুধু আমার বলে
পরী কে একদম কাছে টেনে নিল।
.
– আমি লজ্জায় মাটিতে মনে হয় মিশে
যাচ্ছি। যতই নিজে ওর কাছ থেকে
ছাড়তে চেষ্টা করছি ততই শক্ত করে ধরেই
যাচ্ছে।
.
.
.
– তুই খুব বড় অন্যায় করেছিস পরীর সাথে।
– সেটা তোর দেখতে হবেনা আকিক।
নিজের চরকায় নিজে তেল দে দোস্ত।
আর পরী তোর বৌদি হয় তাই সম্মানের
চোখে দেখিস।
.
.
– নিতাই সেন হাত জোড় করে বলে
দেখেন এই ঘটনা আমাদের পরিবারের
কেই জানেনা না। তাই এখন যখন
জেনেছি তাই জেনে শুনে আর ভুল
করতে পারবনা।
.
.
– আকিক ও ওর পরিবার চলে যায়।
.
.
– শুভ্রের মা যেটা ভয় করেছে আজ
সেটাই হলো।
– পুরো বাসা স্তব্ধ হয়ে গেছে।
– তার মানে তুই পরীর সাথে এমন বাজে
কাজ করেছিস বলে নিতাই সেন শুভ্রর
গালে ঠাটিয়ে চড় মারে।
– বিমলা এসে নিতাই কে শাসায়…….
শোন! বাহিরের মেয়েকে নিয়ে একদম
তর্ক করবেনা বলে দিচ্ছি।
– বাসায় যম নিয়ে এসে তুলেছে। আমার
সংসারটা একনিমিষেই শেষ করে দিছে
মেয়েটি।
.
.
– আমি সেখান থেকে দ্রুত রুমে চলে
আসলাম।
এখান থেকেও আশ্রয় আমার শেষ হয়ে
গেল।
.
.
.
– পুরোটা দিন রুমের ভিতর বসে আছি কেউ একবার ডাকতেও আসেনি খাবার খেতে যাওয়ার জন্য। না আর না আমি এখানেও থাকবোনা আজ রাতেই চলে যাব।
.
.
.
– রাত ২ টা বাজবে এমন সময় এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হওয়ার চিন্তা করলাম।
.
– শুভ্র একের পর এক সিগারেট টানছে। পুরোটা দিন কিছু খাওয়া নেই। অনিতা এসে ছেলেকে বার বার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু শুভ্র কিছুই খায়নি। ওর মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
.
– আমি আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামতেই অন্ধকারে হুরমুর করে পরে যাই।
– কোন একটা শব্দ পেয়ে শুভ্র বাহিরে এসে লাইট জ্বলেই দেখে নিচে পরী পরে আছে।
– শুভ্র দ্রুত নিচে নামতেই আমি ঐ অবস্থায় কোনমতে উঠে মেইন গেটের কাছে দৌড়াতে লাগলাম। আমি একবার মেইন গেট খুলে বের হতে পারলেই বাহির থেকে গেট লাগিয়ে দিব এতেই কাজ হয়ে যাবে।
.
.
– শুভ্র পরীর মতলব বুঝতে পেরে দৌড়ে নিচে নেমে যায় এবং এক নিমিষেই ধরে ফেলে।
– আমি শুভ্রর সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিছি। ছাড়ুন বলছি।
– ছাড়ব কিন্তু এখানে নয় বলে আমাকে কোলে নিয়ে উপরে উঠে গেল।
– নির্জন রাতের এই কাহিনী শুধু একজনের মানুষের কাছে প্রকাশ হল সেটা হল নিতাই সেনের কাছে।
.
.
.
– ছাড়ুন বলছি আমাকে ছাড়ুন। আমি কিন্তু চিৎকার দিব।
– দাও এতে তোমার কি হাল করব তুমি নিজেও বুঝতে পারবেনা বলে শুভ্র ওর রুমে এসে পরীকে জাষ্ট ছুড়ে ফেলে দিল।
– জিম করা বডি বুঝছো mam…. তোমাই যদি সামলাতেই না পারি তাহলে জিম কররে কি লাভ আমার।
– দেখ আমি যেমন ভাল বাসতে পারি তেমন শাস্তিও দিতে পারি। এমনি বিসিএস এ ১ম ক্যাটাগরিতে ক্যার্ডার হয়নি। ঘটে নিশ্চয় অসংখ্য বুদ্ধি আছে তোমায় ঘায়েল করার জন্য।
.
.
– সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে এমনি পা মচকে গেছে মনে হয় তার উপর ওভাবে খাটে ফেলে দেওয়াতে ভিষন জোরে লেগেছে।
.
.
– এত্ত কাঠখড়ি পুরে বাসার সবাইকে বললাম, আকিকের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলাম আমায় ছেড়ে যাওয়ার জন্য………
– আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম কত দিন এভাবে আটকে রাখবেন….. আমি সুযোগ পেলেই বের হয়ে চলে যাব।
– তুমি যেন সুযোগ না পাও সেই ব্যবস্থায় করছি বলে শুভ্র আমার কাছে চলে এল।
.
.
এই আপনি কি করবেন হুম। আমার গলা শুকিয়ে এল।
চলবে……..