অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪
.
,
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আমি হাতে কামড় দেই শুভ্রের।
,
শুভ্র এতে আরও রেগে যায় এবং এক ঝটকায় ওড়না খুলে নেয়।,,,,,,,, আমি বলেছিলাম না আমার পিছে না লাগতে!,,,,, আজ তোমার হাল এমন করব যাতে মুখটা কাউকে দেখাতে না পারো….
.
– আমি গায়ের শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয় এবং চিৎকার দিয়ে উঠি।
– তোমার চিৎকার কারো কান অবদি যাবেনা বলে আমার হাত ধরে একটানে ওর বুকের ভিতর নিয়ে যায়।
– ছাড়ুন বলছি।
– কেন আমার চরিত্র সবার সামনে দেখাবা সেটার একটা ব্যবস্থা করতে হবেনা!
.
.
– এবার আমার চোখ বেয়ে পানি ওর বুকে পড়ল। এটা দেখে ও একঝটকায় আমাকে খাটের উপর ছুড়ে ফেলে দিল।
– আমার বাসায় থাকবা আবার আমার সাথেই পাঙ্গা নিবা! হয় এখান থেকে চলে যাবা না হয় চুপ করে থাকবা বলে চলে যেতে লাগতেই আমি ছোট্ট ফুলদানি টা শুভ্রর দিকে ছুড়ে মারি।
.
.
.
– ফুলদানী টা ওর হাতের সাথে বাড়ি লেগে ভেঙ্গে যায় এবং ওর হাত দিয়ে ঝর ঝর করে রক্ত পড়তে লাগে।
.
.
– আমার সাথে লাগতে আসার ফল এটাই…
– এবার শুভ্র এসে ঠাশশশ্ করে ২ টা চড় মেরে ওর রক্ত আমার সিঁথিতে দিয়ে বলল সামাজিক রিতিতে আমার বউ তুমি। তাই তোমাকে রেপ করলেও আমার পাপ নাই কিন্তু তোমার সম্মান কোথায় দাড়াবে সেটা বুঝে আমার সাথে লাগতে এসো। আর তুমি কিভাবে এই বাসায় থাক আমি সেটা দেখব বলে চলে গেল।
.
.
– আমি গাল ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি। অহ্ আল্লাহ হয় আমাকে নিয়ে নাও না হয় মুক্তি দাও।
.
.
– শুভ্র রুমে এসে হাত ড্রসিং করে। বেশ কেটে গেছে। বিয়াদপ মেয়ে কোথাকার সাহস হয় কি করে আমার গায়ে হাত তোলা! নিজের বাবা মা কোনদিন হাত উঠাইনি সেখানে কিনা! বাহিরের মেয়ে উঠাই। ওর অবস্থা যদি খারাপ না করে ছাড়ছি তো আমার নাম শুভ্র নয় বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
.
.
.
– পলা এসে বার বার দরজা নক করছে। আমি বিরক্ত হয়ে গিয়ে খুলে দিলাম।
– এই পরী তোমাকে এত ডাকতে হয়! বলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল একি! তোমার চোখমুখ এত লাল কেন?
– কিছু হয়নি,,,,,,, আপনি কি কিছু বলবেন?
– হুম চল খেতে আমি সব বেড়ে দিছি।
– আপনি যান আমি আসছি।
– দরজার কাছে রক্ত দেখতে পেয়ে বলল এখানে রক্ত কই থেকে এলো?
– আমার পা কেটে গেছে সেখান থেকে বলে ঐ অবস্থায় তাকে নিয়ে নিচে চলে আসলাম।
.
.
–
– নিচে এসে বললাম পলা আন্টি আমার
খেতে মন চায় না। ভাল লাগছেনা।
– সবাই আমারে পলা বলে ডাকে তুমি
আমাকে এত সম্মান কেন দিচ্ছ?
– কারন সব মানুষ সমান। মানুষের মধ্য
ভেদাভেদ নেই। তুমি এই বাসায় কাজ
কর সেটাও তোমার একটা পেশা। ধর
তুমিও চাকরি কর একটা। তাই আমার
কাছে তুমি এবাড়ির সবার মত সম্মানীয়
বলে উপরে চলে আসলাম আবার।
.
.
– পলার চোখের জল গাল দিয়ে বেয়ে
পড়ছে। এভাবে কেউ তাকে কখনও
বলেনি।
.
.
– সন্ধার পর সবাই সপিং করে বাসায়
এসে পরে।
– কই রে পলা সবাইকে শরবত দে জলদি।
বাইরে কি গরম বলে নিতাই সেন
সোফাতে বসে পড়ল।
-পলা এসে সবাইকে শরবত দেয়।
– –
–
– কর্তা সবার জন্য কাপড় আনছেন পরীর
জন্য আনেন নি?
– পরীর কথা শুনে বিমলা পলা কে ধমক
দিয়ে বলে মানুষের জন্য তোর দরদ
উতলে উঠছে দেখছি। খামোকা কথার
মধ্য বাঁ হাত ঢুকে দিলি!
– পলা মাথা হেলে চলে গেল।
.
.
– রাত ৯ টার দিকে দাদু আমার রুমে
এসে একটা আনড্রয়েড সেট দিল এবং
কিছু প্যাকেট।
– দেখতো পছন্দ হয়েছে কিনা?
– আমি সব প্যাকেট খুলে দেখলাম
গর্জিয়াস ড্রেস।
– পছন্দ হয়েছে?
– হুম দারুন
– জানো তোমার বয়সী তোমার মতই
দেখতে আমার একটা বান্ধবী ছিল।
রেনু…… অকালে অসুস্থ হয়ে মারা গেল
বলে মাথা নিচু করে ফেলল।
– দাদু আমিই তো রেনু বলেই হেসে
উঠলাম।
– উনিও আমার কথায় হেসে উঠলেন।
.
.
– ওনার চয়েস আছে বলতে হয়।
– আমি কাল ৫ দিনের জন্য দিনাজপুর
যাব। অনেক দুরের পথ । তোমাকে কিন্তু
ফোন দিব। নাম্বার সেভ করাই আছে।
তুমি ৫ দিন ভালভাবে থেক। নিচে
যাওয়ার তেমন দরকার নেই। বিমলার
কাছ থেকে দুরেই থেক বলে আমাকে
নিয়ে নিচে নামলেন।
.
.
– নিচে নামতেই দেখি শুভ্রের মা
কাঁদছে আর শুভ্র সোফায় বসে আছে।
হাত কেমনে কাটল তোর বাবা! কখন
কাটলো এইসব হাবিজাবী কথা।
– মা বাদ দাও তো আমি ঠিক আছি
বলে কটমট করে আমার দিকে
তাকালো।
– আমিও সাথে সাথে তাচ্ছিল্য হাসি
দিয়ে মনে মনে বললাম দেখ ব্যাটা
কেমন লাগে!
.
.
.
– পরের দিন সকালে দাদু চলে গেলে।
উনি যাওয়ার আগে হাতে ২ হাজার
টাকা দিয়ে গেছেন। আমি কাঁদছি,,,,,,,
আমাকে কেউ কখনও এভাবে যত্ন করে
টাকা দেননি।
.
.
– সকাল ৯ টার দিকে ডাক পড়ল নিচে।
তাই বাধ্য হয়েই গেলাম।
– বিমলা আড়চোখে পরীকে দেখছে
একদম মাথা থেকে পা অবদি। মেয়েটা
দারুন সুন্দরী। কমোড় ছাপিয়ে চুল নেমে
গেছে। গায়ের রং দুধ আর হলুদ
মিশানো এককথায় অমায়িক চেহারা।
– এই মেয়ে! তুমি যে আমার স্বামীর
বন্ধুর নাতনী নও সেটা আমি জেনে
গেছি।
আমার স্বামী ভাল মানুষ তাই তোমায়
রাস্তা থেকে তুলে আনছে। কিন্তু
এখানে বসে বসে খেলে চলবেনা।
কাজ করতে হবে।
.
.
– দিদুনের পাশে বসে শুভ্র মুচকি মেরে
হাসছে। এবার বুঝছি এই ব্যাটাই ক্লিক
লাগাইছে বলে শুভ্রর দিকে তাকাতেই
ও বলল দিদুন কেউ যদি তোমাকে
অকারনে আঘাত করে তাহলে তাকে
কি করা উচিত।
.
– তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত।
.
.
– আপাতত ৫ দিন তাদের সাথে
টেবিলে খাওয়া নিষেধ।
– সকালে সবাই খেতে বসেছে শুভ্রর
বাবা অমল সেন বলল বলল কি ব্যাপার
পরী আজ নেই?
– শুভ্রের মা অনিতা বলে উঠল ও খেয়ে
নিছে।
– কেমনে এরা যে ডাহা মিথ্যা কথা
বলে আল্লাহই ভাল জানে।
.
.
– সকাল ১১ টা থেকে কাজ শুরু হয়ে গেল
পুরো বাসা মোছা। এই কাজটা আমি
কখনও করিনি তাও আবার এত বড় বাসা!
.
.
.
.
– আমি রান্নাঘর মুছছি এমন সময় শুভ্র এসে
মোছা জায়গায় পা দিয়ে ফ্রীজ
থেকে পানি নিয়ে খেল এবং আমার
কাছে এসে বলল এখনও সময় আছে বাসা
থেকে বিদায় হও তাছাড়া এই ক দিনে
এমন হাল করব যে তুমি কল্পনাও করতে
পারবেনা।
– ওর কথা শুনে রেগে গিয়ে বালতির
ময়লা পানি শুভ্রের গায়ে ঢেলে
দিলাম।
– Oh shit বলেই আমাকে কষে একটা
থাপ্পড় দিল।
– আমি গালে হাত দিয়ে বললাম ঘুঘু
দেখেছো ফাঁদ দেখনি। আমি কি
জিনিস সেটাও তোমাকে দেখতে
হবে না!
– ও রাগে বের হয়ে গেল।
– শুভ্র তোর গা ভেজা কেন?
– পানি পড়েছে মা বলেই ওর রুমে চলে
গেল।
– শুভ্র সাওয়ার নিচ্ছে আর ভাবছে হাটু
বয়সী মেয়ে সে কিনা আমাকে
নাস্তহাল করে ছাড়ছে,,,,,,,,,,,,
.
.
.
– আজ পুরো দিন প্রচুর কাজ করেছি। পলা
সাহায্য করতে এসেছিল কিন্তু দিদুন
একদম নিষেদ করে দিছে।
.
.
– পলা রাতের খাবার উপরে দিয়ে
গেল। আজ আর ভাল খাবার নেই শুকনো
রুটি আর ভাজি।
– আমার প্রচুর খিদা লাগছে তাই জলদি
খেতে শুরু করলাম।
–
–
–
– সুয়ে আছি আর বাসার কথা মনে করছি
এমন সময় ফোনে কল আসল। দাদু কল
করেছে।
– পরী কেমন আছো?
– কথাটি শুনে আমার চোখ দিয়ে
পানি বেয়ে যাচ্ছিল। অনেক কষ্টে
নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম খুব
ভাল আছি।
– নিতাই সেন গম্ভীর গলায় বললেন তুমি
কাঁদছো পরী?
– ধরা পরে গিয়ে বললাম আপনাকে খুব
মনে পড়ছে দাদু তাই কাঁদছি।
– উনি আরোও কিছু কথা বলে ফেন
রেখে দিল।
.
.
– যে মানুষ আমার এত্ত উপকার করছে
তার পরিবারের ক্ষতি কি করে করব!
–
–
–
– সকালে সেই আবার কাজে ভর্তি
হওয়া।
– আমি কাজ করছি এমন সময় দাদু এসে
আমায় বলল পরী তুমি কাজ করছো?
– আমি চমকে উঠে দেখি দাদু সামনে।
উনি কেমনে আসল। আরও কয়েকদিন পর
তো আসার কথা।
– উনি চিৎকার করে বাসার সবাইকে
ডাকল।
– এই বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে কাজ করার হুকুম
কে দিয়েছে?
– পলা মুখ ফসকে বলেই দিল। কর্তা!,,,,,
গিন্নী মা দিয়েছে।
– বিমলা পলার দিকে রাগী ভেবে
তাকিয়ে ধমক দিল।
– বিমলা তুমি খুব খারাপ কাজ
করেছো….. পরী আর উপরে থাকবেনা
আজ থেকে। আমাদের সাথেই আমাদের
মত নিচে থাকবে। যাওতো সমরেশ
পরীর সব জিনিস পত্র নিয়ে ঐ কনার
রুমটাই রাখ। আজ থেকে ও ঐ রুমেই
থাকবে। কারও যদি অসুবিধা হয় সে
যেন বাসা হতে চলে যায় বলে
আমাকে নিয়ে ওনার রুমে ঢুকলেন।
– এই প্রথম ওনার রুমে আসলাম। খুব সুন্দর
রুমটি। আমাকে সোফায় বসতে দিয়ে
আলমারি থেকে একটা খাম এনে
আমার হাতে দিল
– আমি খামটি খুলে দেখলাম আমার
বয়সী একটা মেয়ের সাদা কালো ছবি।
২ দিকে ২ টা বেনী করে চুল ছেড়ে
দেওয়া। দারুন দেখতে। দাদু এটা রেনু!
– উনি মুচকি হেসে বললেন হুম ৪৫ বছর
আগেকার ছবি এটা।
.
.
– বিমলা রুমে এসে পরীকে ঐ অবস্থায়
দেখে খেকিয়ে উঠে বললেন আপনি
অন্য জাতের মেয়েকে ঘরে থাকতে
দিছেন কিছু বলিনী, এক পাতে ওকে
নিয়ে খেতে হইছে তবুও কিছু বলিনী
আজ শেষ অবদি আমার ঘরেও তুললেন!
– আমি দাদুকে ছবিটা দিয়ে বের হয়ে
আসলাম। অযথা সেখানে থাকার কোন
মানে হয়না।
.
.
.
– দিন গুলো ভালয় কাটছিল। বিকেলে
দাদু আমাকে আর অর্পিতা কে নিয়ে
পার্কে যাওয়া। ফুসকা খাওয়ানো।
সকাল বেলা আমাদের নিয়ে জগিং
করা সহ লং ড্রাইভে যাওয়া। দাদু মনে
হয় নতুন একটা জিবন পেয়েছে।
– শুভ্রও ১ম পদেই কার্ডার নির্বাচিত
হয়েছে। সরকার থেকে গাড়ি, বাড়ি
সব পেয়েছে। কিন্তু বাসা থেকেই সব
কাজ করে। আমার পিছে তেমন
লাগেনা।
– প্রায় ৩ মাস কেটে যায় এভাবে।
– দাদু একদিন আমাকে ভার্সিটি তে
নিয়ে গিয়ে অর্থনীতি তে অর্নাস
ভর্তি করিয়ে দেয়। প্রাইভেটে।
.
.
– আমি সেদিন ওনার সামনে খুব
কেঁদেছিলাম। আমার কান্না দেখে
উনিও কাঁদছিল প্রচুর।
পরী মনে কর আমি আমার রেনুর জন্য সব
করেছি।
.
.
.
– একদিন শুভ্র ওর সব ফ্রেন্ডদের বাসায়
ইনভাইট করে।
– খাওয়া দাওয়া মাস্তি সবই চলছিল।
– আমি আর অর্পিতা বিকেলে দাদুর
সাথে পার্কে যাব বলে বের হতেই
শুভ্রের এক ফ্রেন্ড বলল দোস্ত অর্পিতার
সাথে মেয়েটি কে?
– তখন সবাই আমার দিকে তাকাতেই
আমি জলদি বের হয়ে আসলাম।
.
.
– ওর নাম পরী আমাদের বাসায় থাকে।
মুসলিম মেয়ে।
– শুভ্রের ফ্রেন্ড আকিক বলে উঠল
মাশাআল্লাহ নামেও পরী দেখতেও
পরী। দোস্ত আমার একে চাই। আমিও
মুসলিম ও মুসলিম। এদিক থেকে কোন
সমস্যা হবেনা। প্রয়োজন হলে বাবা-
মা কে পাঠাবো তুই সব মানেজ করে
দে দোস্ত।
.
.
– হৈ হৈ কিরে আকিক তুই নাকি কোন
মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবিনা
আজ পরীকে দেখে ফিদা? সব ফ্রেন্ডরা
এক সাথে বলে হেসে উঠল।
.
.
.
– শুভ্রের কথা গুলো শুনে চড় চড় করে
মাথায় রক্ত উঠে গেল। কিন্তু সবার
সামনে কিছু বলল না।
– সবাই চলে যাওয়ার আগে আকিক
আবার অনুরোধ করে গেল।
.
.
.
– রাত সাড়ে ১১ টা বাজে আমি বই
নিয়ে পড়ছি এমন সময় শুভ্র আমার রুমে
ঢুকে ছিটকি লেগে দিতেই আমি
শিউরে উঠলাম।
– এই আপনি আমার রুমে……… কথা বলা
না শেষ হতেই ঠাসসসস করে আমার
গালে চড় বসিয়ে দিল।
– আমি গায়ের জোরে ধাক্কা দিয়ে
বললাম আপনার সাহস কি করে হয় আমার
গায়ে হাত তোলা! আপনাকে কে
অধিকার দিছে?
– আমার ফ্রেন্ড সার্কেলদের সামনে
দিয়ে তোমায় কে যেতে বলছে।
নিজের রুপ দেখানোর জন্য
গিয়েছিলে! ফের যদি এমন কাজ কর
তাহলে হাত পা ভেঙ্গে রেখে দিব
বলেই চলে গেল।
চলবে……….