অস্তিত্বের খোজে part 36+37

0
682

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩৬



– শুভ্রর এরকম কথা শুনে পরী প্রচন্ড রেগে গিয়ে ট্রী টেবিলের উপর থেকে গ্লাসটা নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে বারি দিয়ে।

ভাঙ্গা গ্লাস আর পানির বোতল ২ টাই শুভ্রর দিকে এক সাথে ছুড়ে মারে।


– গ্লাস টা শুভ্রর পেটে এসে পড়ে আর বোতলটার কাছ থেকে শুভ্র নিজেকে বাচিয়ে নেয়।


– শুভ্র এতটাই রেগে যায় যে,,,,,, শুভ্রর ২ টা ফোন, ল্যাপটপ এবং পরীর একটা ফোন সব কিছুতে এক সাথে আযান চালু করে দেয়।

আর পরীর কাছে এসে ঠাশঠাশ করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দেয় শুভ্র।


– এদিকে বাসার সবাই ভাঙ চুরের শব্দে রুমে এসে দেখে পরী ছটফটানি শুরু করে দিছে।


– শু,,,,,ভ্র বলছি এগুলো বন্ধ করো বলেই পরী দাপাতে লাগল। পরীর গায়ে বিড়ালের পায়ের পাতার মত আঙ্গুল গুলোর ছাপ পড়তে লাগল গায়ে। এবং সে গুলো লাল আকার ধারন করল।


– শুভ্র পরীকে ওভাবেই রেখে বাহিরে এসে সিলেটের যে মাওলানার কাছে কোরআন শিখতো তাকে কল দিয়ে সব কিছু বলল।


– আচ্ছা শুভ্র আমার যেতে একটু সময় লাগবে তুমি ততক্ষনে তোমার ওয়াইফের কাছে থাক আর কিছু প্রসেস শিখিয়ে দিল শুভ্রকে। আশা করি কিছু সময়ের জন্য ওরা তোমার ওয়াইফকে ছেড়ে যাবে।


– পরীর কষ্ট দেখে অনিতা কেঁদে ফেলল। ওর আর্তচিৎকার শুনে যে কেউ কেঁদে ফেলবে। কিন্তু কেউ কাছে যেতে পারছেনা।


– শুভ্র রুমে এসে দেখে পরী ঐ রকমই করছে। আর শরীরের অনেক জায়গায় লাল লাল ছাপ পড়া দাগ।

শুভ্র পরীর একদম কাছে এসে বসে ওর কপালে হাত দিয়ে মাওলানার বলা কথা অনুযায়ী আমল করতে শুরু করে দিল।


– একটু পর পরী আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করে আর বিছানায় পরে যায়। তবুও শুভ্র আরও কিছুক্ষন দোয়া পড়তে লাগল।


– কিন্তু জ্বীন গুলো জান্নাতের উপর নজর ফেলে। অনিল জান্নাত কে নিয়ে ডাইনিং রুমে বসে ছিল।

অনিল হঠাৎ চেয়ে দেখে জান্নাত কাঁপছে আর ওর গা প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্ছে। অনিল আর দেরি না করে জান্নাতকে নিয়ে সোজা ওদের বাসার মন্দিরের ভিতর চলে যায়। এবং জান্নাত কে নিয়ে সেখানে বসে পড়ে।


– মসজিদে যেমন ধার্মিক জ্বীন থাকে এবং নামায আদায় করে তেমন মন্দির গুলোতেও ধার্মিক হিন্দু জ্বীন থাকে। তাই ঐ শয়তান জ্বীন গুলো ভিতরে আসতে বাঁধা পায়। আর জান্নাত অবদি পৌছাতে পারল না।অনিল ও ভাবেই বসে থাকে জান্নাতকে নিয়ে।


– কাজের লোক এসে শুভ্রর রুমটা পরিষ্কার করে চলে যায়। শুভ্র পরীর পাশে বসে আছে আর পরী চুপ করে সুয়ে আছে। শুভ্রর সাথে কোন কথা বলছেনা।

পরীকে ওভাবে চড় না মারলেও হত। কিন্তু নিজের রাগ কন্টোল করতে পারেনি শুভ্র। পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে ২ গালে শুভ্রর আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।



– শুভ্র কেবল উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে গেন্জী টা খুলে দাড়িয়েছে এমন সময় পরী বলে উঠল শুভ্র তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে আমার নেশা লেগে যায়। কেন এরকম হয়ে থাকো আমার সামনে শুভ্র!


– এখন আমি ফ্রী আছি পরী! নেশা লাগাতে পারো আমি অল টাইম রাজী বলেই একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে উঠল শুভ্র।

শুভ্র আর পরীর দিকে না তাকিয়েই নিজের পেটে হাত দিল । কাঁচ লেগে অনেক খানি কেটে গেছে। এতক্ষনে বুঝতে পারেনি। এখন বেশ জ্বালা করছে।



– পরী এখন পুরো স্বাভাবিক। তাই দেরি না করে পরী উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্রর সামনে একটা ছেলে কে দেখতে পেল। পরী এটা দেখে চমকে গেল। এটা কে?


– শুভ্র তোমার সামনে ঐ ছেলেটা কে!


– শুভ্র পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। কিন্তু শুভ্র সব বুঝতে পেরে বলল ওটা কোন খারাপ জিনিস । ওকে যেতে বলতো পরী……….! স্বামী-স্ত্রীর রোমান্সের সময় থাকতে নেই কোন ৩য় ব্যাক্তিকে।


– ওর নাম কি শুভ্র! আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমাকে মারবে। আমার ভয় করছে শুভ্র!


– আমার সাথে এত্ত লাগতে পারো আর ওকে শায়েস্তা করতে পারছোনা? তুমিও ওকে আঘাত কর। (শুভ্র)


– শুভ্র এবার খাটে বসে বলল,,,,,, পরী! আমার মনে হয় তুমি “”আয়াতুল কুরসি”” ভুলে গেছ।

একটু আমাকে পড়ে শোনাও তো। জোড়ে জোড়ে পরবা। আমার কান অবদি যেন আসে। তাছাড়া ১ সপ্তাহেও আমার আদর তোমার কপালে জুটবেনা কিন্তু।


– ” আয়াতুল কুরসি” আমি ভুলে যাইনি শুভ্র। ওয়েট আমি তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি।


– আমার দিকে তাকিয়ে না,,,,,,, যে তোমার আর আমার মাঝখানে আছে তার দিকে তাকিয়ে বল। যত জলদি পাঠ করবে ততই আমাকে কাছে পাবা। দেখি তোমার কেমন মনে আছে। শুরু কর।


– এবার পরী ঐ ছেলেটির দিকে তাকিয়ে
“” আয়াতুল কুরসি”” পাঠ করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু ঐ জিনিসটা যাচ্ছেনা।
শুভ্র! সে তো যাচ্ছেনা। রাগী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।


– তোমার পড়ার ভিতর ভুল হচ্ছে পরী!
♥আল্লাহু আকবার♥ ৩ বার বলে আবার শুরু কর। আর ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই বল। আমি এখানেই আছি। কোথাও যাচ্ছিনা। ফটাফট কাজটা করে আমার কাছে আসো।


– এবার আমি শুভ্রর কথা মত ওভাবেই পড়তে লাগলাম আর ছেলেটির কাছে এগুতে লাগলাম। ছেলেটি একটা বিশ্রী চেহারার রুপ ধারন করল। এতে আমি সব ভুলে গিয়ে চিৎকার করে উঠলাম।


– শুভ্র যা বোঝার বুঝে গেল। পরী! ঐ জিনিসটা তোমার শুভ্র আর জান্নাতকে মেরে ফেলে দিতে চায়। সব তোমার হাতে। তুমি কেমন আমাকে ভালবাস সেটার পরীক্ষা আজ। আবার শুরু কর। বার বার পড়। তোমাকেই করতে হবে। তাছাড়া সব শেষ করে ফেলবে ও।

শুভ্রর এই কথা তেই ব্যাপক কাজ হল পরীর মধ্য।


– ঐ ব্যাটা আমার রুমে কিয়ের লায় ঘুর ঘুর করোস। বলেই জোড়ে জোড়ে আমল গুলো করতে শুরু করল পরী।


– এই তো আমার বউ ফর্মে ফিরে আসছে। গুড জব পরী। এ না হলে তুমি আমার বউ! শুভ্রও কখনও কারো সাথে আপোস করে না তুমিও না করে দেখিয়ে দাও। ওদের সাহস কি করে হয় শুভ্র আর পরীর মাঝে আসা!


– একপর্যায়ে জ্বীন টি সহ্য না করতে পেয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় পরীর সামনে থেকে। ইয়েশ,,,,,,,!শুভ্র আমি পেরেছি।


– পেরেছো যখন ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন! এখানে আসো। তুমি প্রতিযোগিতা তে ফাষ্ট হইলা তোমাকে আমার বড় একটা উপহার দিতে হবেনা!


– পরী এবার শুভ্রর সামনে এসে বলল,,,,,, শুভ্র! আমার প্রচন্ড খুদা লাগছে। শরীর টা খুব দুর্বল লাগছে।


– শুভ্র আর একমুহুত্ব দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে পলাকে জোড়ে ডাক দিয়ে বলল,,,,,,, আন্টি খাবার রেডী করেন তো! পরী খাবে।


– শুভ্র রুমে এসে বলল,,,, কি কি খাবা বল? যা যা মন চায় সেটাই বল।


– শুভ্র! আমার প্রচন্ড খুদা লাগছে শুধু ভাত হলেও চলবে বলেই শুভ্রর পেটের দিকে নজর যায় পরীর।
শুভ্র! ওখানে কাটলো কিভাবে? কি করছো তুমি বলেই শুভ্রের কাছে গেল পরী।


– কিছু না পরী! এমনি কেটে গেছে। বলতে পারো যন্ত্রনা ময় সুখ।


– পরী কিছু না বলে শুভ্রর পেটের কাছে গিয়ে একটু নিচু হয়ে চোষক দিয়ে রক্ত গুলো সব শুষে নেয়।


– তুমি কি ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছ পরী! তাই আমার রক্ত গুলো শুষে খেয়ে নিলে।


– হুম,,,,, বলে আর কোন কথা না বলে জায়গাটা ড্রেসিং করে দেয় পরী।


– পলা খাবার নিয়ে রুমে ঢুকতেই শুভ্র বলল,,, আন্টি নিচে নিয়ে যান খাবার গুলো পরী নিচে যাচ্ছে একটু পর।


– পলা খাবার গুলো নিয়ে চলে গেল। আর শুভ্র পরীকে নিয়ে নিচে নামল।


– ভাত! খুব খুদা লাগছে আন্টি। আমারে তরকারি দিতে হবে না আমি এমনি খেতে পারব বলে চিয়ারে বসে প্লেট টা কাছে নিল পরী।


– পরী! আস্তে আস্তে খাও। তাছাড়া বিষম উঠবে। শুভ্রর চোখ ছলছল করছে। ২ টা দিন ধরে কিছু খাওয়াইতে পারে নি শুভ্র আর আজ নিজে একাই খাবার খাচ্ছে।

পরী তুমি খাও। আমি উপরে যাচ্ছি বলেই শুভ্র চলে গেল।


– শুভ্র একটি বড় বালতি তে পানি নিয়ে সেই পাথর ডুবিয়ে আবার নতুন করে পানির ভিতর হাত ডুবিয়ে রুকাইয়া করে পানি পড়ে নিল। তারপর বিছানার বেড শির্ট সহ সব কিছু চেঞ্জ করে সেখান থেকে কিছু পানি নিয়ে পুরো রুমে ছিটিয়ে দিয়ে নিজেই পুরো ফ্লোর মুছে ফেলে। সব কাজ কমপ্লিট করে বেড শির্ট গুলো নিয়ে নিচে নেমে এসে সেগুলো ওয়াস করতে বলল কাজের লোককে।


– পরীর খাওয়া শেষ হলে ওকে নিচের ওয়াসরুমে গোসল করতে বলে,,,,, বালতিতে পানি তুলে পাথরটি ওর মধ্য দিয়ে পরীকে ওয়াসরুমে ঢুকে দিয়ে শুভ্র ওর মাকে ডাকল।


– অনিতা বলল,,,, ও কি স্বাভাবিক হয়ে গেছে?

– না মা! আবার হয়ত কিছু হবে। তবে সময় লাগবে ওর কাছে আসতে জ্বীন গুলোর। সেই ব্যবস্থায় করেছি। জান্নাত কই!


– তোর বাবা তো সেই কখন থেকে ওরে মন্দিরে নিয়ে বসে আছে। জান্নাতের সমস্যা হচ্ছিল তাই ও এই কাজটা করেছে।


– শুভ্র মন্দিরের ভিতর আর না গিয়ে বলল,,,, বাবা ওকে নিয়ে আসো। আমি আছি কিছু হবে না।


– অনিল জান্নাত কে নিয়ে বের হয়ে এল মন্দির থেকে। জান্নাত শুভ্রকে দেখে বা,,,,,বা বাবা বলে ডেকে উঠল।
মাধুরীর কিছু হবে না তো শুভ্র?


– শুভ্র হেঁসে বলল,,,,, বাবা তুমি থাকতে ওর কিছু হতে পারে নাকি বলেই জান্নাতকে কোলে নিয়ে চলে গেল শুভ্র।


– পরী গোসল সেরে বের হয়ে ওর রুমে চলে যায়। এবার শুভ্র জান্নাতকে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে এক বালতি পানির মধ্য ওকে ছেড়ে দেয়।


– জান্নাত তো সেই খুশি। ছোট ছোট ২ হাত দিয়ে পানিতে থাবা মারছে আর হেঁসে উঠছে। শুভ্র ২হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,,,,, মা! আমার বুকে আসতো?


– জান্নাত এবার শুভ্রের বুকে আসে। অদ্ভুদ রকম শান্তি। অনিল দাড়িয়েই ছিল সামনে। শুভ্র ওর বাবার কাছে জান্নাতকে দিয়ে নিজে গোসল সেরে বের হয়ে এসে জান্নাত কে নিয়ে উপরে চলে আসলো।


– পরী ওর মেয়েকে শুভ্রের কোলে দেখে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু সাহস পায়না কাছে নিতে। শুভ্র পরীর কাছে এগিয়ে এসে জান্নাত কে ওর কোলে দিয়ে বলল ওকে একটু ফিডিং করাও তো!


– ওকে সরাও শুভ্র। আমি ওর গায়ে হাত দিবনা। ওর সমস্যা হতে পারে। কিন্তু জান্নাত ওর মাকে ধরে মা মা করে ডাকছে আর জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।


– যা হয় হোক। এমনি কয়েক দিন হল ও তোমাকে কাছে পায়নি। প্রচুর কান্না কাটি করছে। ওকে নিয়েই থাকো।

আমি যহোরের নামায পড়ি ততক্ষনে। এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। তুমি পড়ছো নামায!


– হুম,,,,,,, শুভ্র।


– ওকে বলে চলে যায় শুভ্র।


– অনেক সাহস করে জান্নাতের শরীর স্পর্শ করলাম। আমি কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। আমার নিজের ভুলের জন্য এত্ত কিছু হয়ে গেল। ক্ষমা করে দাও মা আমাকে বলেই জান্নাতকে ফিডিং করাইতে লাগলাম।


– শুভ্র নামায কমপ্লিট করে এসে পরীর কাছে বসে বলল কোন সমস্যা হচ্ছে আর?


– না।


– শুভ্র দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বলল হয়তবা ঘন্টা খানেকের ভিতর ওনারা এসে যাবেন। শাড়ী চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পড়ে নাও।


– আমি জান্নাতকে শুয়ে দিয়ে চেঞ্জ করার জন্য উঠে গেলাম। মেয়েটা আমার ঘুমিয়ে গেছে।


– পরী শাড়ীটা খুলতেই শুভ্র ওর দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকায়। শুভ্রর মাথা আর কাজ করছেনা। পরী শুভ্রর মস্তিষ্কে এভাবেই এ্যাটাক করে।

শুভ্র উঠে গিয়ে পিছন থেকে পরীর ঘাড়ে কিস করতেই পরী শিউরে ওঠে।

– শুভ্র! ওনারা নাকি আসবে। চেঞ্জ করবতো।


– এখন করতে হবে না তোমাকে কিছু দেওয়া আমার বাঁকি আছে,,,,,, বলেই শুভ্র পরীকে পাগলের মত একটার পর একটা শব্দ করে কিস করতে থাকে। পরীও জাড়িয়ে ধরে শুভ্রকে খামচে।



– পরী,,,,,,!

– উম্

– এই রকম করে জড়িয়ে ধরলে আদর করব কেমনে? এটা শুধু আদর ভাবোনা এটা তোমার কাজে দিবে পরে। শুধু মনযোগ দিয়ে অনুভব আর উপভোগ কর।

– আমি করি আদর তোমাকে?

– না,,,,,, কয়েকদিন ধরে তুমি আমায় খুব প্যারা দিছ। তাই আমি আগে বলেই পরীর ২ ঠোট নিজে ঠোটের ভিতর নিল শুভ্র।


– অনেকক্ষন পর শুভ্র পরীকে ছেড়ে দিয়ে বলল আর না। তখন প্রমিস করছিলাম ঐ খারাপ জিনিসটাকে তাড়িয়ে দিতে পারলে আদর পাবা সেটা পূর্ন করলাম।


– আমার আর শুভ্রকে ভাল লাগছে না। আমিই শুভ্রকে ঝিটকানি দিয়ে সরে গেলাম।


– শুভ্র এবার জান্নাতকে রুম থেকে বের করে ওর মাকে দিয়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয় আর পরীর দিকে এগুতে লাগল। কারন শুভ্র বুঝে গেছে আবার ওরা আসার চেষ্টা করছে।


– পরী চেঞ্জ করছিল এমন সময় শুভ্র ওকে এক টানে নিজের বুকের ভিতর নিয়ে বলল,,,,,,,, পরী জানো না আগে বর কে খুশি করতে হয়। তাছাড়া ♥ আল্লাহ্♥ নারায হয়ে যাবে তোমার উপর।


– শুভ্র আমার ভাল লাগছেনা ছাড়ো আমায়।


– কি বল শুভ্রকে তোমার ভাল লাগছেনা! এত্ত সুন্দর একটা তোমার বর আর তুমি তাকে হাত ছাড়া করছো!


– পরী জোড়ে ধাক্কা দেয় শুভ্রকে কিন্তু নিজের কাছ থেকে সরাতে পারেনা । শুভ্র শক্ত করে ওকে ধরে আছে।


– ♥আল্লাহ্♥ আমাকে তোমায় নেয়ামত হিসেবে দিছে পরী। কেমনে তোমায় ছাড়ি বলেই শুভ্র পরীর বুকে কিস করে।


– দাঁতে দাঁত চেপে,,,,, উমহ্ ছেড়ে দাও বলছি।


– পরী! তোর জন্য সব কিছুর সাথে লড়তে রাজি আছি। সব কিছু বিসর্জন দিতে পারি। আমি নিজেই তোর ভিতর নতুন ভালবাসা তৈরি করব। আমি তো তোরই। এটাও বুঝতে পারিস না?


– ছাড়বা! বলেই রাগী চোখে শুভ্রর দিকে তাকালো পরী।


– শুভ্র পরীর কানে কিছু দোয়া পড়তে থাকে এতে পরী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে যায়।


– এবার পরীকে ধাক্কা দিয়ে সরে দেয় শুভ্র। তোর জন্য এতটুকুই। আর না। যা ড্রেস পরে নে বলে শুভ্র পিছন ফিরতেই,,,,,,,

– পরী দৌড়ে এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে নিজের সমস্ত শরীরের ভার শুভ্রর উপর দিয়ে বলল,,,,,, তবুও তোমাকেই আবার চাই আমি। আরও চাই মানে আরও,,,,,,,,,, আরও চাই বলে পরী শুভ্রকে বুকে, পিঠে, গলায় কিস করতে লাগল।


– শুভ্র পরীকে সোজা আরও উপরে উঠিয়ে নিজের ঠোটের কাছে পরীর ঠোট এনে বলল,,,,,,,,, এত্ত কিস করতে হয়না সুইটহার্ট তাহলে নিজেকে control করা কঠিন হয়ে যাবে।


– শুভ্র! এভাবেই আদর করতে হয় তাছাড়া তোমার ফিলিংস উঠবে কি ভাবে হুম বলেই শুভ্রের নাকের সাথে নিজের নাক ঘষাল পরী। আমি তোমার নেশায় পরে গেছি শুভ্র।


– পরীর কাছ থেকে শুভ্র নিজেকে জোড় করে ছাড়িয়ে নিতেই পরী এক দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে বমি করতে শুরু করল।


– শুভ্রও জলদি এসে দেখল বমির সাথে ব্লাড যাচ্ছে। শুভ্র পরীর নাভিতে হাত দিয়ে একটু চাপ দিতেই পরীর বমি বন্ধ হয়ে যায়। অস্থির হয়ে গেছে মেয়েটা এতটুকু সময়ে।


– পরীকে ওযু করে নিয়ে এসে বলল জলদি চেঞ্জ করে নাও।


– শুভ্র! আমার মাথা প্রচন্ড ঘুরছে আমি পারবনা এখন। আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে শুভ্র! বলেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগল পরী।

শেষে শুভ্র নিজেই পরীকে চেঞ্জ করে দিয়ে কানে ইয়ার ফোন গুজিয়ে সুরা শুনাতে লাগিয়ে দিল।


– শুভ্র! আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। আমার কষ্ট হচ্ছে। এগুলো সরাও আমার কাছ থেকে।


– যতই সমস্যা হোক ওগুলো সরানো যাবেনা বলে পরীর ২ হাত আর পা শক্ত করে বেঁধে ফেলে শুভ্র পরীর ওড়না দিয়ে।

ওর এখন সমস্যাই হবে। কেন যে আমি ওকে ছুতে গিয়েছিলাম তার ফল এটা।


– প্রায় ১ ঘন্টা পর মাওলানা আসলো বাসায়। সাথে আরও ৪ জন কে নিয়ে আসছে। সবাই রাকি।


– শুভ্র বলল,,,,,ফারুখ ভাই আমি খুব সমস্যাই আছি। একটা কিছু করেন। আমার ওয়াইফ প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়তেছে।


– শুভ্র চিন্তা করনা। এবার সব ঠিক হয়ে যাবে বলেই শুভ্রর রুমে যেতেই পরী একটা হুংকার ছেড়ে বলল,,,,, এই তোরা এখানে কেন আসছিস! কি চাস তোরা?


– আম্মাজান! চিন্তা করেন না,,,,,,,, আপনাকেই আমরা শায়েস্তা করতে আসছি।


– ৫ জন রাকী কাজে নেমে গেল। ৪ কোনা একটা বর্গাকার একে ৪ জন রাকীকে ৪ কোনায় রেখে মাঝ খানে আরও একটি বৃত্ত একে তার ভিতর পরীকে বসিয়ে দিল ফারুখ।


– পরী মাথা নিচু করে বসে আছে গম্ভীর হয়ে। ওর চুপ থাকা দেখে মমনে হচ্ছে এখুনি কিছু একটা ঘটে যেতে পারে চোখের পলকে।

চলবে——

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩৭



– রাকীগুলো তাদের কাজ শুরু করে। কিন্তু পরী কোন কথায় বলে না। রাকী গুলোর কাজ বার বার ব্যার্থ হচ্ছিল। অবশেষে ফারুখ বলে উঠল,,,,, এটা করা খুব কঠিন হবে। এগুলো অনেক পুরনো জ্বীন। এদের অভিঙ্গতা আমাদের থেকে অনেক বেশি। এরা সব কিছু জানে আমরা কি কি দ্বারা এদের আঘাত করব। সেই প্রস্তুতি নিয়েই পরীর চারপাশে বসে অবস্থান করছে। যেকোন সময়ে অঘন ঘটে যাবে।


– রুমে শুভ্রের সাথে সাথে অনিল, নিতাই,বিমলা,অনিতা আর কৌশিক আছে সোফায় বসে। বাঁকিরা দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে।


– অনেক চেষ্টার পর ওদের রুমের ভিতর থেকে একটা একবিগ সাইজের একটা অদ্ভুদ কাগজ পাওয়া গেল। যেটার ভিতর বিকৃতি মানুষের ছবি আঁকানো ছিল। এটার জন্যই ওরা বেশি শক্তিশালী ভাবে বসে অবস্হান করছে পরীর পাশে।


– ফারুখ সেটা পরীর সামনে দিয়ে বলে,,,,, এর উপর পা দিয়ে দাড়িয়ে থাকুন।

কিন্তু কোন কথায় শুনছেনা পরী। ওভাবেই বসে আছে।


– শুভ্রও এসে বলল তাও কোন কাজ হল না। সবাই বলল তাও হলনা। এবার কৌশিক এসে বলল,,,, পরী কথা শুনছোনা কেন? যা বলছে তা কর।


– এবার পরী কৌশিকের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকায় কৌশিক ভয় পেয়ে দুরে সরে আসে। শেষ পর্যন্ত অনিল এসে বলল,,,,, পরী! সবাই অনুরোধ করছে শুনছোনা কেন?


– বাবা! আমি দাড়াতেই পারছিনা। আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।


এবার অনিল নিজে পরীর কাছে গিয়ে ওকে দার করিয়ে কাগজটার উপর পরীকে পা দিয়ে দাড়াতে সাহার্য্য করে এবং গোলক থেকে বের হয়ে আসে অনিল। এর মধ্যও একটা কথা আছে।

যদি কোন জ্বীনগ্রস্ত মানুষ পুরো পুরি জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত না হয় তাহলে তার নিজের এমন একটা মানুষকে তাকে সাহার্য্য করতে হবে সেই আক্রান্ত মানুষটি তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। সেটা অনিলের ক্ষেত্রেও হয়েছে। পরী ওর শশুরকে অত্যাধিক শ্রদ্ধা করে।


– সব কাজ করে ঐ কাগজ পুরানোর ব্যবস্থা করে। আজব একটা একবিগ কাগজ হাফলিটার পেট্রোল দিয়েও পুরছেনা। শেষে অনেক কষ্টে সেটা পুরানো হল কিন্তু এবার পরী একদম অদৃশ্য হয়ে গেল। আর সেটা দেখে বাহিরে দারিয়ে থাকা অর্পিতা বউদি বলে জোড়ে একটা চিৎকার দেয়।

ফারুক তো অসম্ভব রকম ভয় পেয়ে যায়। এটা কেমনে হল,,,,,,, পরীকে নিয়ে গেছে তাদের সাথে। আর কোন উপায় নেই। কি হয়ে গেল। কাগজ পুরানোর মগ্নে সবাই ছিল আর এটারই সুযোগ তারা নিয়েছে।


– শুভ্র হাটু গেরে মাটিতে বসে পড়ল স্তব্ধ হয়ে। এমন সময় একটা আধা বয়সী লোক হঠাৎ করে রুমে ঢুকে বলল কাজটা কঠিন হবে কিন্তু আপনারা যদি আমাকে সাহার্য্য করেন তাহলে আমি ♥ইনশাল্লাহ্♥ সফল হতে পারব। কারন আমি যা যানি আপনারা তা জানেন না। লোকটিকে দেখে শুভ্র বুঝে গেল যে এটা কে ছিল। এটা সেই জ্বীন যে শুভ্রকে সাহার্য্য করেছিল।



– শুভ্র জলদি ওযু করে এসে তার পাশে বসে গেল। জ্বীনটি বলল আমার নাম “রাকিম”। শুভ্র! নিশ্চয় তুমি বুঝতে পারছো আমি কে? আমাকে সাহার্য্য কর শুধু তুমি। আর বাঁকিরা ওদের মত কাজ চালিয়ে যাক।



– পরী সম্পূর্ন ওদের কন্ট্রোলে। পরী রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলছে আর একটা মানুষ একটু দুরে বাতাসে ভেসে চলছে। রাস্তাটি সম্পূর্ন অচেনা।

– একটা লোক দুর থেকে সেটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে কাছে আসতেই কাউকে দেখতে পায়না আর। এখানেই তো তারা ছিল। গেল কই?

আবার বহু দুরে পরীকে ওভাবে দেখা যায়। এভাবেই ওকে নিয়ে যাচ্ছিল ওরা। তাদের শক্তি আছে কিন্তু তারা পুরোটা ব্যবহার করতে পারছেনা রাকিমের জন্য। তাই এভাবেই পরীকে নিয়ে যাচ্ছে হয়ত।


– এবার রাকিম তিন জ্বীনের নাম এবং ওদের পূর্ব পুরুষদের নাম ধরে বার বার ডাকতে লাগল আর কি জানি সব দোয়া পড়তে লাগল। একপর্যায়ে রাকিম সফল হয়। ওরা পরীকে নিয়ে আবার হাজির হয়। ওদের উদ্দেশ্য ছিল পরীকে ইন্ডিয়াতে নিতে যেতে। যেখানে ওরা থাকত। অনেক জ্বীনও সেখানে আছে।


– এবার রাকিম ওর কাজ শুরু করে দেয়। ফারুখ কে বলল আপনারা আযান দিন ততক্ষন পর্যন্ত বার বার যতক্ষন না আমি বন্ধ করতে নিষেধ করছি।

এবার রুমের ভিতর ১১ টা জ্বীন একসাথে প্রবেশ করে রাকিমকে সাহার্য্য করারর জন্য।


– পরীর কাছে ৩ টা জ্বীন ছিল যারা অনেক পুরনো জ্বীন। বয়স কত বলা যাবেনা। সেদিন রাতে বাহিরে গাড়ীর সাথে একজনকে ধাক্কা খেতে দেখেছিল ওরা। শুভ্রদের সাথে ঐ কাহিনীর পর থেকে পরীর পিছে পড়ে ছিল। মারার উদ্দেশ্য এসেছিল জ্বীন গুলো কিন্তু,,,,,,,

পরীকে তাদের খুব পছন্দ হয়ে যায়। তাই ওর সাথে ছিল এতদিন কিন্তু শরীর স্পর্শ করতে পারেনি । রাতে আম গাছে ওঠার কারনে ওরা সম্পূর্ন পরীকে আয়ত্বে এনে ফেলে।


– এবার রাকিম বলল,,,,,,, শুভ্র! ফারুখ সহ যারা যারা আছে তাদের সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বল। একজনও যেন রুমে না থাকে। শুধু তুমি ছাড়া।


– শুভ্র সবাইকে ইশারা করে বাহিরে যেতে বলল। ওরা চলে গেলেই একা দরজা বন্ধ হয়ে গেল। এবার শুভ্র গভীর ঘুমে টলে ফ্লোরে পড়ে গেল।


– এবার বাঁকি জ্বীন গুলো মিলে ঐ ৩ জ্বীনকে পরীর শরীর থেকে টেনে হিচড়ে নামায় এক নিমিষেই। কিন্তু বাধা হল শুভ্রদের বাসার মন্দিরে যেসব জ্বীন ছিল তারা। ওরা কিছুতেই মেনে নিবেনা এই বাসাতে কোন মুসলিম জ্বীন প্রবেশ করাতে।


– আমরা চলে যাব,,,,,কিন্তু আপনারা এই মেয়েটাকে আপনাদের নিয়মেই মুক্তি করে দেন। আমরা এখানে থাকতে আসিনি। শুধু অসহায় মেয়েটাকে সাহার্য্য করতে এসেছি। এরা এমন নিকৃষ্ট জ্বীন যারা ঐ ছোট বাচ্চাকেও ছাড়েনি।

আপনাদের এখানেও আমাদের আসা নিষেধ। কিন্তু মেয়েটার উপর কিছু ঋন ছিল আমার তাই সেটা পূর্ণ করেই চলে যাব। কথা গুলো রাকিম হিন্দু জ্বীনদের বলল।


– অনেক তর্ক বিতর্কের পর ৩ শক্তিশালী পিশাচ জ্বীন কে আগুনে পুরে ভষ্ম করে দেয় রাকিম। যাতে পরবর্তী তে না আসতে পারে। পরী ওখানেই পরে আছে সেন্সলেস হয়ে। রুম থেকে সব জ্বীন বের হয়ে যায় শুধু রাকিম ছাড়া।


– শুভ্রকে ডেকে তুলে বলল,,,,, শুভ্র! কাজগুলো আমি একা করতে পারতাম কিন্তু ফারুখ আমাকে ধরে ফেলত। ওর কাজে ব্যবহারের জন্য। ফারুক তোমার জন্য ভাল হতে পারে কিন্তু আমার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমার মত জ্বীন আয়ত্বে আনার প্রতিটা মানুষের একটা স্বপ্ন। বিশেষ করে ফারুখদের মত মানুষদের।

আমি চলে যাচ্ছি। আমার সম্পর্কে কোন কথা ফারুখ কে বলবেনা। আর বলেও কোন লাভ নাই। আমি সেই ব্যবস্থায় করে ফেলছি। কিন্তু তোমার কোন ভুলের জন্য আমারও কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। আসা করি বুঝবে।

পরীর সাথে আমার একটা গভীর সম্পর্ক আছে তাই রিক্স নিয়ে কাজগুলো করেছি। এতে আমি মারাও যেতাম। কিন্তু ♥আল্লাহ্♥ আমার উপর দয়া করেছেন। তাই এখনও সুস্থ আছি।

পরীর পৃথিবীতে কেউ নেই। তাই তুমিই একমাত্র ওর সব কিছু। ও বার বার ভুল করবে। তুমি ওকে শাস্তি দিয়েই ভালবেসো না হয়। তবুও ছেড়ে দিওনা কখনও।

♥ ইনশাল্লাহ্♥ স্বামী-স্ত্রী ২ জনেই একসাথে জান্নাতে থাকতে পারবে বলেই চলে যায় রাকিম।

শুভ্রর কোন দিন আর জানা হল না পরীর সাথে রাকিমের কি সম্পর্ক ছিল।


– শুভ্র পরীকে খাটে সুয়ে দিয়ে দরজা খুলে কাজের লোককে ডেকে পুরো রুম সাফ করতে বলল।
তার পর নিচে ফারুখদের কাছে চলে গেল।


– ফারুখ শুভ্রকে সবার সামনে রাকিম সম্পর্কে অনেক কিছু জিঙ্গাসা করে কিন্তু শুভ্র অত্যন্ত কৌশলে সব কিছুর জবাব দেয় যাতে ফারুখের শুভ্রর উপর কোন সন্দেহ আর হয়না।

কারন ফারুখ জানে কিছু কিছু ধার্মিক জ্বীন আছে তারা নিস্বার্থে এমনি ভাবে মানুষের উপকার করে।
হয়ত এই জ্বীনটাও তেমন ছিল।


– সেদিন সন্ধার পর খাওয়া দাওয়া সেরে ফারুখরা চলে গেল। যাওয়ার আগে শুভ্রকে বলল,,,,, তোমার ওয়াইফ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে। ভুলেও ওর কাছে যাবেনা। ওকে সুস্থ হতে দাও। ও স্বাভাবিক হলে ওর কাছে যেও। তুমি অত্যন্ত মেধাবী একটা ছেলে তাই কি বোঝাতে চাইছি অবশ্যই বুঝে গেছ।


– কয়েকদিন পুরো পরিবারের উপর দিয়ে যা গেলনা! সবাই ভিষন ভয় পেয়ে গিয়েছিল।


– শুভ্র! রাকিম নামের লোকটা কে ছিল?( অনিতা)


– মা! উনিও একটা বড় বুযুর্গ মানুষ ছিলেন। আমার অনেক উপকার করেছে। বিনিময়ে কোন কিছুই নেয়নি। শুধু দিয়েই গেল।


– শুভ্র রুমে এসে পরীর কাছে বসে ওকে ডাকতে লাগল। পরী চোখ খুলে বলল শুভ্র! আমার শরীর প্রচন্ড ব্যাথা করছে। আমি গায়ে শক্তি পাচ্ছিনা। আমার এমন কেন হল?


– কিছু হয়নি পরী। সব ঠিক হয়ে যাবে বলে ডাক্তার কে কল করে বাসায় আসতে বলল। পরীকে স্যালাইন করা হল।
দুর্বলতা কাটানোর জন্য মেডিসিনও দিল কিছু।


– এভাবে আরও ৪ দিন কেটে যায়। পরী একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে লাগে। শুভ্র পরীর কাছ থেকে দুরে দুরে থাকে। বাসায় ও আর ঠিক মত সময় দেয়না। যদি নিজের জন্য আবার পরীর শরীর খারাপ হয়ে যায়। এই জন্য মেয়ের কাছেও আসতে পারেনা।


– শুভ্র একদিন ফ্লোরে সুয়ে আছে এমন সময় পরী আস্তে আস্তে করে কেবল শুভ্রর কম্বলের ভিতর ঢুকছে অমনি শুভ্র উঠে পড়ে।


– তুমি নিচে কেন নেমে আসছো! আমি বলিনি আমার কাছে আসবানা?


– ঠান্ডা লাগছিল শুভ্র!


– হিটার অন করতা যদি এতই ঠান্ডা লাগত। সব সময় আমার কাছে আসার বাহানা খোজ কেন পরী?
আমার ভাল লাগছেনা। ঘুমাতে দাও আমাকে এবং নিজেও সুয়ে পরো।

আমাকে বিরক্ত করনাতো! বলেই শুভ্র আবার সুয়ে পড়ল।


– পরী আর কিছু না বলে বেডে এসে কাঁদতে শুরু করল।


– পরী তোমার কান্না থামাবা! অসহ্য লাগছে। কাল আমার অফিস আছে। আমাকে ঘুমাতে দাও প্লিজ।


– শুভ্রর ধমক শুনে পরী চুপ হয়ে গেল। এভাবে কথা বলল শুভ্র! বালিশ নিয়ে বেডের নিচে অপর প্রান্তে সুয়ে পরল পরী। বর ফ্লোরে সুয়ে আছে আমি কেমনে বেডে সুয়ে থাকি।


– শুভ্রর আর ঘুম আসেনা। চুপ করে শুধু সুয়েই থাকে।
পরীর আর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে একটু উঠে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে শুধু জান্নাত আছে পরী নেই।


– শুভ্র লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। আবার কোন জ্বীন এসে ওকে নিয়ে গেল না তো! এমনি অনেক ভয়ে থাকে শুভ্র পরীকে নিয়ে।

বেডের কাছে যেতেই পরী কে ফ্লোরে সুয়ে থাকতে দেখল।




– এই মেয়ে আমাকে শান্তি দিবেনা। এতটুকু জানেনা যে ও অসুস্থ হলে জান্নাতও অসুস্থ হয়ে যাবে। এই ঠান্ডায় ফ্লোরে কেন ঘুমাইতে হবে!

শুভ্র পরীকে কোলে নিয়ে বেডে সুয়ে দিয়ে নিজে সোফায় গিয়ে সুয়ে পড়ল।


– পরী বুঝে উঠতে পারেনা কোন ঝগড়া হয়নি তারপরও শুভ্র কেন ওর সাথে কথা বলেনা! এত্ত কেয়ারিং তারপরও কথা না বলা!
বের করছি দারাও বলে পরী উঠে সোজা শুভ্রের পেটের উপর বসে বলল,,,, ঐ তোমার হইছে টা কি হুম। আমার সাথে এরকম কর কিয়ের লায়? আমি কিটা করছি হের লায় এমন ব্যবহার কর!


– শুভ্রতো চমকে উঠছে। কেবল চোখে ঘুম আসছে আর এরকম কান্ড। শুভ্র কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলল,,,
আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে পরী!

এমনি পুরোটা দিন আমি সময় পাইনা। এই রাতেও ঘুমাতে দিবা না আমাকে!


– নাহ্,,,,, আগে বল আমায়! এরকম করছো কেন? আমি কোন দোষ করছি! না তোমাকে কোন কষ্ট দিছি! তাহলে এমন ব্যবহার কেন শুভ্র!
কেন কষ্ট দিচ্ছো আমাকে,,,,,,,


– আগে নিচে নামো তার পর বলছি। পেটে লাগছে তো পরী!


– উমমমমমহ্ এরকম কর কেন বলেই ওখানেই শুভ্রের বুকের উপর সুয়ে পরে পরী।


– শুভ্র কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এ শারিরীক ভাবে এত্ত দুবর্ল যে এর কাছে যাওয়া ও রিক্স।


– পরী!

————————–?

– কথা বলবানা?

—————————-?

– শুভ্র এবার পরীকে নিয়েই উঠে বসে পড়ল। এরকম বুড়ী খুকিকে বুকের উপর নিয়ে থাকা যায়! কি ভারি,,,,,,দম বন্ধ হয়ে আসছে।

– আমি বুড়ি না শুভ্র!

– তাই! একটা কাজ করতো পরী,,,,,,,,,, আমার সামনে এখুনি আমাদের পুরো ফ্লোর টা মুছে দেখাও তো?


– এই রাতে!
আমি,,,,,, ফ্লোর মুছবো?

– হুম এখুনি। সময় ৫ মিনিট তোমার জন্য বরাদ্দ। জলদি যাও।

– কি অদ্ভুদ আমার বর,,,,,, তার কাছে যাওয়াতে আমাকে নাকি এই রাতে ফ্লোর মুছতে হবে। কি আর করা বর বলে কথা তাই বাথরুমে গিয়ে বালতিতে পানি এনে ফ্লোর টা মুছে ফেললাম। কিন্তু ৫ মিনিট দিয়ে হলনা বেশি সময় লেগে গেল।

আমি কাজ গুলো কমপ্লিট করে উঠতেই আমার মাথা ঘুরে এল। আমি যে দাড়াবো সেই শক্তি টুকু নেই। আস্তে আস্তে ওয়াল ধরেতো উঠলাম কিন্তু হাটার শক্তি পাচ্ছিনা। পুরো শরীর কেঁপে যাচ্ছে।


– শুভ্র জানতো এমনই হবে। তাই ওকে কাজটা করতে দিছিলো।
পরী! ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন? বালতিটা বাথরুমে রেখে ফ্রেস হয়ে আমার কাছে এসো।


– আমি হাঁটতে পারছিনা শুভ্র! আমার গায়ে একটুও শক্তি নেই। আমাকে নিয়ে যাও শুভ্র?


– না,,,, তোমাকে ঐ টুকু কাজ করতেই হবে। আস্তে আস্তে কর। তারপর আসো বলে শুভ্র সুয়ে পড়ল।


– আমার সব কাজ করতে অনেকটা সময় লাগবে। তুমিতো ঘুমিয়ে পরবা ততক্ষনে।


– আমি জেগে আছি পরী! তুমি আস্তে আস্তেই কর বলেই শুভ্র ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকল।


– পরী আস্তে আস্তে বালতি রেখে নিজে ফ্রেস হয়ে শুভ্রর কাছে এসে দাড়াল। আমার কাজ শেষ শুভ্র!
আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে।


– না না তোমাকে একটু আদর করব,,,,,, এত্ত তারাতাড়ি কিসের ঘুম। আমার কথামত কাজ করলা তুমি আর এমনি ফ্রীতে তোহ্ তোমায় ছেড়ে দিতে পারিনা!

তোমাকে কে তোহ্ আমি আজ পরিপূর্ন করেই ছাড়ব বলেই শুভ্র উঠে পড়ল।


– শুভ্র! সত্যি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা। আমি পারবনা আজ। আমি ঘুমাব। পরী দাড়িয়েই শুভ্রর বুকে মাথা রাখে।


– তুমি আমার ঘুম ভেঙ্গে এখন ঘুমাতে যাবা! আজ যদি কাছে না আসো আর কখনও আসবানা বুঝছো। এর পর আর সুযোগ পাবানা।


– ওকে সেটা পরে দেখা যাবে,,,,, আমাকে একটু বেড অবদি রেখে আসো না । আমি আর পারছিনা দাড়িয়ে থাকতে। আমার মাথা অসম্ভব রকম ঘুরছে আর যন্ত্রনা করছে। প্লিজ আমি ঘুমাব।


– শুভ্র পরীকে কোলে নিয়ে বেডে সুয়ে দিল। দেন পরী একটু পর ঘুমিয়ে গেল। অত্যাধিক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল মেয়েটা।


– শুভ্র পরীকে একটা কিস করে বলল,,,,,, আমি জানতাম তোমার এমন হবে। আমি বললে তো তুমি বিশ্বাস করবা না তাই এই ব্যবস্থা। নিজে থেকেই আর আমার কাছে না এসে ঘুমিয়ে পড়লে তো!

যাহোক শুভ্রর প্লান সাকসেস তাই একটা মুচকি হেঁসে শুভ্র গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।



– আরও ২ দিন কেটে গেল। পরী জান্নাত কে ডাইনিং টেবিলের উপর বসিয়ে রেখে দারিয়ে থেকে কাজ করছিল। এমন সময় জান্নাত এসে পরী কে জড়িয়ে ধরে বলল মাম দুদু খাব।

এখন না বাবা কিছুক্ষন পরে। কাজটা শেষ করি! তারপর। কিন্তু জান্নাত ওখান থেকে ওর মায়ের শাড়ীর আচল টেনে ধরে অন্য দিকে যেতেই লাগতেই সবজির বাটি পড়ে যায়। সব সবজিগুলো নষ্ট হয়ে যায়।


– পরী প্রচন্ড রেগে গিয়ে জান্নাত কে জোড়ে একটা ধমক দেয়। এতে জান্নাত কেঁপে উঠে ওর মায়ের আচল ধরেই কান্না করতে লাগে।


– অনিতাও চমকে ওঠে পরীর ধমক শুনে। সামনে অনিলকে দেখে অনিতা ভয় পেয়ে গেল। আজ পরীর কপালে দুঃখ আছে।




– অনিল সোজা পরীর কাছে গিয়ে বলল,,,, বাচ্চা যদি মানুষ নাই করতে পারো আমাকে বল। মাধুরীর দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ন রেহাই দিব তোমাকে। একদম ওর সাথে উচু স্বরে কথা বলবেনা।
অনিল মাংসের বাটিটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে। একটা ফেলেছে তার জন্য এত্ত জোড়ে ওকে ধমক দিবা! আজকে কারো খাবারের দরকার নাই।

আর অনিতা পরী যেন একটা কাজেও হাত দেয়না। কখন থেকে মেয়েটা ওর কাছে দাড়িয়ে আছে। ওকে খাবার না দিয়ে যখন কাজই যখন ওর কাছে বড় হয়ে গেছে তাহলে ওর এই বাসায় আর কোন কাজ করার দরকার নাই। কথা গুলো বলে অনিল চলে গেল।


– বাবা আমাকে এভাবে বলল! আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। জান্নাত কে নিয়ে চলে আসলাম রুমে।


– আমার চোখে যেন পানি পড়া থামছেই না। কোন দিনও যে মানুষ আমাকে কিছু বলেনি আর সে এভাবে বলল। জান্নাত কি আমার মেয়ে না! ওকে কি আমি ধমক দিতে পারিনা। এভাবে কেন বলল।


– জান্নাত ও কি বুঝল না বুঝল ওর মাকে জাড়িয়ে ধরেই দাড়িয়ে রইল। আর পরী ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে।


– জান্নাত এবার এসে বলল মাম দুদু,,,,,,,,বলেই পরীর দিকে চেয়ে থাকল। পরীও ওকে খেতে দিয়ে কেঁদেই চলছে।



– অনিতা ভাল করেই বুঝছে অনিল কেন ক্ষেপে গেছে।
এর মধ্য একদিন জান্নাত কে খাবার দিতে দেরি হইছিল এর জন্য অনিলের কাছ থেকে অনিতাকে প্রচুর কথা শুনতে হইছিল। শুধু গায়ে হাত তোলা বাঁকি ছিল। পরীর জায়গায় যদি অর্পিতা থাকতো তাহলে এতক্ষনে ওর গালে অনিলের হাতে চড় পড়ত।


– পলাকে ডেকে ফ্লোর পরিষ্কার করতে বলে অনিতা আবার রান্না ঘরে চলে গেল। দুপুরের খাবার আবার রেডী করতে হবে।



– শুভ্র এখন আর দুপুরে বাসায় খেতে আসতে পারেনা। ১৫ দিনের বেশি অফিসে ঠিকমত যায়নি বলে কাজ জমা পরে গেছে।
অনেক কাজ তবুও পরীকে কল দিল। কিন্তু পরী আর রিসিভ করল না।
শুভ্র আবার ট্রাই করল। এবার রিসিভ হল।


– কই ছিলা পরী! ফোন রিসিভ করছোনা কেন?
এধরনের কাজ আমি একদম পছন্দ করিনা জানো না?


– স্যরি শুভ্র! বলেই কাঁদতে লাগল পরী…।

– শুভ্র তো হতবাক ও কাঁদছে কেন! ফোনটা কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিল শুভ্র।


– পরী চোখ মুছে কল রিসিভ করে বলল তুমি লান্স করছো?

– কাঁদছিলা কেন সেটা আগে বল।

– বাবা খুব বকছে শুভ্র! আমার খুব কষ্ট লাগছে।

– বাবা তোমাকে বকার মত মানুষ না। কি করছো! নিশ্চয় বড় কিছু করে ফেলেছো তার জন্য বকা দিছে।

—————————?

– এই ওয়েট ওয়েট তুমি জান্নাতকে বাবার সামনে নিশ্চয় বকা দিছো তাইনা?

– জোড়ে ধমক দিছি শুধু।

– তুমি কোন দিনও মানুষ হবা না পরী! ওতটুকু মেয়েকে কেউ জোড়ে ধমক দেয়!

হ্যাঁ মানতাম আমি তখন যদি জান্নাত চঞ্চল একটা বাচ্চা হত। এতটা শান্ত একটা বাচ্চাকে কেমনে জোড়ে ধমক দাও তুমি। আর তোমার এত্ত সাহসইবা কেমন করে হয় ওকে ধমক দেওয়া!

জান্নাত যে তোমার জন্য নষ্ট হয়ে যাবে এটা আমি বুঝতে পারছি। আমি থাকলে ফটাফট গালে থাপ্পর বসাতাম তোমার। শুভ্র আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দেয়।

চলবে——

বিদ্রঃ যানিনা কতটা সাজাইতে পারছি গল্পটা। ভুলত্রুটি মার্জনার চোখে দেখবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here