অস্তিত্ব,পর্ব:১৯

0
804

#অস্তিত্ব
#পর্বঃ১৯
#বনলতা

আদালতে উপস্হিত সকলেই চেয়ে আছে কাঠগোড়ায় দাড়ানো মেয়েটার দিকে।আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন মেয়েটা ইমরানের সাথে প্রবেশ করে।মেয়েটাকে বড্ড চেনা চেনা লাগছে আসলামের কাছে।চোখদুটি ছাড়া পুরো শরীর কালো বোরকার ঢাকা।এই নাকি এডভোকেড শান্তার গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী।কত উকিল কত স্বাক্ষী গেলো।কেউ তো আজ অবদি কেস জিততে পারল না।কত বাঘা বাঘা উকিল এই কেসটা নিলো তবু হার মেনে চলে গেলো আর সেদিনের এই পুচকে মেয়েটা এ নাকি মামলা জিতবে।হাতি ঘোড়া গেলো তল,মশা বলে কত জল।কথাগুলো আপনমনে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে আসলামের।

আজ এতবছর ধরে চলা এই মামলায় আজকের মতো অতি হাস্যকর কখনো মনে হয়নি তার।এতদিন ধরে শুধু এসেছে হাজিরা দিতে হাতে দুহাজার টাকা নিয়ে।প্রতিবারই আদালতে এসে মোরশেদ এর পাংশু মুখখানা ব্যাতিত ব্যাতিক্রম কিছুই নজরে পরেনি।কিন্তু আজ এই ঘটা করে আয়োজন দেখে আসলাম এর মনে কিঞ্চিৎ ভাবনা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু কাঠগোড়ায় দাড়ানো বোরকা পরিহিতা মেয়েটাই বা কে।

জজ এর আদেশে মুখ থেকে হিজাবটা খুলে ফেলে মেয়েটা।মুখটা দেখে রাগে ফেটে পড়ে আসলাম।কাঠের বেঞ্চিটায় হাত দিয়ে মুচড়ে ধরে।রাগে কপালের রগগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার।এত বড় স্পর্ধা কলির।আজ শুধু বাড়ি যাক।যে বিষয়ে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের কখনও ছাড় দেয়নি,আজ সেই কারনেই কেনো শুধু বাড়ির বউ হিসেবে কলি ছাড় পেয়ে যাবে।

চেয়ার ছেড়ে উঠে সামনে এসে দাড়ায় শান্তা।বিচারকের সামনে এসে নিজের বক্তব্য পেশ করে।নিজের কথার সাপেক্ষে প্রমাণ ও দেয়।মায়ার মেডিকেল রিপোর্ট কারচুপির বিষয় এ সত্যতা ও প্রমান করে।

এত এত প্রমাণ পেশ করার পর এটা প্রমাণ হয় যে মায়া আত্মাহত্যা নয় কিন্তু এটা প্রমাণ করতে পারেনা যে আসলামই খুনটা করেছে।তাইত কাঠগড়ায় কলি আজ দাড়িয়ে।বিচারকের আদেশে কলি বলা শুরু করে……

“আমি সাদিয়া আফরোজ। ডাকনাম কলি।চারবছর আগে আমার বিয়ে হয় বড়বাড়ির বড় নাতি তমাল শেখ এর সাথে।মাত্র কিশোরী থেকে যৌবনে পা দেওয়া এক মেয়ে ছিলাম। বিয়ে, বর,শ্বশুরবাড়ি এসব বিষয়ে অন্যরকম এক অনুভূতি ছিলো।স্বামী অনেক ভালোবাসবে, আমাকে বুঝবে,বেড়াতে নিয়ে যাবে,রাতের আধারে সোডিয়ামের আলোতে হাতধরে হাটবে,এই এত এত স্বপ্ন আর এক বুক আশা নিয়ে আমি বিয়ে হয়ে আসি ওই বড়বাড়িতে।বিয়েতে এত এত আলো,মরিচবাতি,বাজি ফুটানো সকলের হইচই আর মারাত্মক হাসি দেওয়া দেওয়া রাজপুত্রের মতো বর দেখে ভেবেছিলাম স্বপ্ন বুঝি সত্যি হলো।কল্পনায় সুখের রাজ্যে ভেসে বেড়ানো এই কলি বুঝতেই পারেনি এই আলো এই বাজি পটকা এইসব কিছুই মরিচীকা।আজ রাজপুত্রের মতো বরটাও আমার কাগজ কলমেই থাকবে শুধু।

বিয়ের সাতদিন চলে গেলো।স্বামী সংসারকে নিয়ে দেখা স্বপ্নটা আমার স্বপ্নই থেকে গেলো।সারাটা দিন কাটতো জৌলুস এর মধ্যে। নিজের ভেতরে জমে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিমানগুলো এক গোলক ধাধায় পরিণত হয়।রাতটা কাটে একা একা নিজের চোখের পানির সাথে।কালেভদ্রে দিনের আলোয় তার দেখা মিললেও রাতে কখনও তাকে দেখিনি।বিয়ের সাতদিন পরে সে দেশ ছেড়ে চলে যায়।পরে রইলাম এই দেশে।

আমার দিন কাটে একা একা।মুখ ফুটে কখনও কিছু বলতে পারিনি।আর শোনারও সময় কারো ছিলোনা।তবে আর্থিক কোনো কষ্ট হয়নি।সময়মতো হাতখরচের টাকা,দামী দামী প্রসাধনী,দামী মোবাইল সেট সবচেয়ে উন্নতমানের জামাকাপড়,গায়ের গহনা সবকিছু পেয়ে গেছি।শুধু যার অপেক্ষায় দিন গুনতাম তার দেখা পেতামনা।দিনের পরে দিন যায়,রাতের পরে রাত যায় আমার অপেক্ষা শেষ হয়না।পান থেকে চুন খসলেই শুনতে হতো দাদী শ্বাশুড়ির গঞ্জনা। তাইত বাবার বাড়ির লোকদের মিথ্যা বলতাম দিনের পর দিন।অতঃপর বাড়ির লোকদের চাপে বিয়ের পুরো তিন বছর পর সে বাড়ি আসে সে।কিন্তু আমার অপেক্ষার অবসান ঘটেনা।

কলি নামের কেউ যে তার বিয়ে করা বউ এই কথাটা তার মনে কি আদৌও ছিলো তার নিশ্চয়তা নেই।ওর দিন যেতো ওর মতো।সারাদিন শেষে রাতে বাড়ি আসত।খেয়ে শুয়ে পড়ত।আমার কিছুর দরকার পড়লে তাকে বলতাম।এটাতে ভুল করত না। সাথে কোথাও বেড়াতে গেলে কখনও সাথে হাঁটত না। একই বিছানায় থেকেও কখনও মনের ভুলেও ওপাশ ফিরে দেখতো না।কাজল রাঙা চোখে কখনও অপলক চেয়ে থাকতনা।খোলা চুলে কখনও হাত বুলিয়ে বলতো না এই খোলা চুলে নেশা হয়।কিন্তু কারো ছবি হাতে ঠিকই তার কাজল চোখে অপলক চেয়ে থাকত।রাতে যখন চুপি চুপি তার কাছে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করতাম তখন তার মুখ থেকে অস্পষ্ট সুরে শোনা যেতো,”মায়া,

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here