#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৯
ওরা আমাকে হালকাই সাজিয়ে দিয়েছে।সানজানা ফিয়া সাথি ওরা নিজেদের বাসায় চলে গেল।আমিও বের হলাম RS Company উদ্দেশ্য।নার্ভাস লাগছে!রিকশা এসে থামলো একটা ১৫ তলা বিল্ডিংয়ের সামনে।সাইনবোর্ডে RS Company লেখা।আমি ভাড়া মিটিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করে বিতরে ঢুকলাম।লিফটে উঠে আটতলায় চলে আসলাম।এখনো ইন্টারভিউ শুরু হয়নি ওয়েটিং রুমে বসে আছি।
ওদের কথায় যে আমি ইন্টারভিউ দিতে আসলাম আদেও কি কেউ ইন্টারপাশ করা মেয়েকে পিএ এর চাকরি দিবে। ওয়েটিং রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম।সবাই ওয়েস্টার্ন পড়ে আছে।আমিই শুধু শাড়ি পড়ে এসেছি।এতে আফসোস নেই। কারণ এখানে আমার ড্রেস দেখে আমাকে চাকরি দিবে না আমার যোগ্যটা দেখে চাকরি দিবে।মেয়েগুলো আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি।এতে অবশ্য আমার কিছুই আসে যায় না।
একেকজন করে ইন্টারভিউ দিয়ে আসলো।সবার শেষে আমার পালা আসলো।আল্লাহ করে রুমে ঢুকলাম।আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো।আমি মোটামুটি উত্তর দিয়েছি।আমাদের সবাইকে চলে যেতে বলল।রাতে জানিয়ে দেবেন কে সিলেক্ট হয়েছে।
|
|
“স্যার ম্যাম মাত্র বাসায় ঢুকলেন”
“হুম তো তোমার ম্যামের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো”
“না স্যার আমি ম্যামকে ২৪ ঘন্টাই ফলো করতে থাকি।ম্যাম কোথায় যায় কি করে সবই দেখি”
“ও কি টের পেয়েছে নাকি যে ওর পিছু নেই কেউ”
“না না স্যার ম্যাম কিছুই বুঝতে পারেনি।আর আমি একেক সময় একেক রকম সেজে যাই”
“Good job nishan.take care your mam.i am coming tonight”
“yes sir!i will.”
ফোনটা কেটে ইশার ছবি হাতে নিয়ে বলল,,”আমি আসছি জানপাখি সবার খেলা এবার শেষ।৫টা বছর তোমাকে কষ্ট পেতে হয়েছে তার জন্য আ’ম রি’য়ে’লি স’রি।আমিও যে তোমাকে ছেড়ে ভালো নেই জান।তোমার আমার উপর পাহাড় সমান অভিমান জানি কিন্তু সেগুলো আমার ভলোবাসা দিয়ে তোমাকে ভুলিয়ে দেব।কালকেই তোমার সাথে আমার দেখা হচ্ছে জন”
ইশার ছবিতে চুমু দিয়ে রেখে দিলো।তারপর বাঁকা হেসে বলল,,,”গেমটা তোরা শুরু করছিলি আমি এসে শেষ করবো আমি শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।সময় এসে গেছে তোদের মুখোস খুলে দেওয়ার”
|
|
বাসায় এসেছি অনেক সময় হলো।রান্না করে দোলনায় গিয়ে বসলাম।কতো স্মৃতি আছে আমাদের এই দোলনায়।ভাবতে ভাবতে কল আসলো ফোনে।অচেনা নাম্বার। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলল,,,”আপনার চাকরিটা হয়ে গিয়েছে আপনি কালকে থেকে জয়েন্ট করতে পারেন”
কথা বলা শেষ করে ফারিনকে কল করলাম।প্রচুর খুশি লাগছে।
“দোস্ত”
“হ্যাঁ দোস্ত কেমন আছিস”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো রে”
“তোকে তো এটা বলতেই ফোন দিয়েছি।আমার চাকরিটা হয়ে গিয়েছে দোস্ত”
“সত্যিই ট্রিট দিবি না”
“দিবো নে বাসায় আসিস রাদ ভাইয়াকে নিয়ে”
“হুম আসবানি”
ফারিনের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কাটলাম।লামিসা কল করেছিলো।আমি কল দিলাম।কিছু সময় ওর সাথেও কথা বলে ফোন রাখলাম।ওর বিয়ে হয়েছে ৬ মাস কৌশিক ভাইয়ার সাথে।ভার্সিটিরই সিনিয়র ছিল।১ বছর ধুমসে প্রেম করে ওরা পরিবারের সম্মতি নিয়েই বিয়ে করছে।সবাই ভালো আছে,দিনশেষে সবারই একটা একান্ত মানুষ আছে আর আমার তো সেই মানুষটা পাঁচটা বছর আগেই হারিয়ে গিয়েছে।
উনি কি ফিরবেন আদেও!জানি না।অপেক্ষা করব আমি আপনার জন্য।ভালোবাসি খুব বেশি,আপনাকে বলা হলো না ভালোবাসি কথাটা।
খেয়ে নিলাম।একা একা খেতে বসলে তার খাইয়ে দেওয়ার কথা গুলো মনে পরে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় গেলাম।আয়াজের ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে দোলনায় বসে রইলাম।
আয়াজ শুনতে পাচ্ছেন,কবে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটবে!আমার যে আপনাকে ছাড়া দমবন্ধ হয়ে আসছে।আর কতোদিন ৫টা বছর কি কম আপনি ফিরলেন না কেনো?
কাঁদতে লাগলাম এখন আর আমার চোখের পানি মুছে দেওয়ার কেউ নেই।আপনি খুব খারাপ আয়াজ খুব।
|
|
সকালে উঠে রেডি হয়ে নিলাম।আজকেও শাড়ি পরেছি।অফিসে পৌছে গেলাম।ম্যানেজারের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমি যার পিএ সে এখনো আসেননি।তাই আমাকে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন কারণ পিএের ডেস্ক ও নাকি এমডির কেভিনে।প্রচন্ড অবাক হলাম এমন তো আগে শুনিনি।পিএর ডেস্ক কি কখনো এমডির কেভিনে হয় নাকি।যাই হোক এখন আমি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমাদের স্যারকে ফুল দেওয়ার জন্য।
একটু পরেই একটা গাড়ি এসে থামলো।গাড়িতে থেকে একটা ছেলে নেমে আসলো।ছেলেটা ফরলুকে আছে সাথে মাস্ক ও পড়া।
আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে বললাম,,,,”Good Morning Sir.This for you.”
ফুলটা দিলাম তাকে সে নিলো।আমি তার দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম কারণ স্যারকে দেখে আয়াজ মনে হচ্ছে।আমি তাকিয়ে আছি উনার দিকে।স্যার তুরি বাজিয়ে বললেন,,,”এই যে মিস কি এতো ভাবছেন?”
“দুঃখিত স্যার আমি আসলে আসলে..”
“থামুন বুঝতে পেরেছি আপনি কেভিনে আসুন”
স্যার হনহন করে চলে গেলেন।আমি ম্যানেজারের কাছে গেলাম স্যারের নাম জানতে।
“স্যার এমডি স্যারের নামটা কি”
“তুমি এখনো স্যারের নামটা জানো না।স্যারের নাম ইফাজ খান”
“ধন্যবাদ স্যার”
আমি স্যারের কেভিনে সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ঢুকতে ভয় লাগছে।সাহস করে নক করলাম।স্যার ভিতরে ঢুকতে বললেন।আমি বললাম,,,,”স্যার আমার কাজ যদি আমাকে বুঝিয়ে দিতেন ভালো হতো”
স্যার পিছনে ঘুরে কি জেনো করছিলেন।সামনে ফিরতেই ঝটকা খেলাম।আয়াজ আমার সামনে বসে আছেন।আপনাআপনিই চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো।
!এই যে মিস আপনি কাঁদছেন কেনো আমি তো আপনাকে কিছুই বলিনি”
আমি ছুটে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।কাঁদতে লাগলাম।উনি আমাকে ছাড়িয়ে নিলেন।আমি নাক টেনে বললাম,,,”আয়াজ আপনি কোথায় ছিলেন এতোদিন?আপনি খুব পচা খুব।আমাকে একটুও ভালোবাসেন না”
উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,,,,”এই তোমার সমস্যাটা কি আর এই আয়াজটা কে আর তুমি আমাকে জড়িয়েই বা ধরলে কেনো”
উনার কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে বললাম,,,”আপনি আয়াজ নন”
উনি আয়াজ নন।কিন্তু দেখতে যে আয়াজের মতো।আমি তো ভেবেছি আয়াজ ফিরে এসেছেন।
উনি ভ্রু-কুচকে বললেন,,,”এই আয়াজটা আবার কে!আমি ইফাজ খান”
উনি তাহলে আয়াজ না। পৃথিবীতে তো একই দেখতে অনেক মানুষ আছেন।আমি চোখ মুছে বললাম,,,”দুঃখিত স্যার আমি আপনাকে আমার হ্যাসবেন্ড ভেবেছিলাম।আমি অতন্ত্য দুঃখিত”
“তুমি বিবাহিত।তোমাকে দেখলে তো পুচকি মেয়ে মনে হয় এই খুব বেশি হলে ১৮-১৯ হবে”
আমি মুচকি হেসে বললাম,,,”এমনটা না স্যার আমার বয়স ২১ আর আমার বিয়ে আজ থেকে ৫ বছর আগে হয়েছে”
“তো তোমার হ্যাসবেন্ডের কি হয়েছে আর আমাকে তোমার হ্যাসবেন্ডই বা ভাবলে কেনো”
“স্যার আমার হ্যাসবেন্ড আমার থেকে পাঁচবছর আগেই হারিয়ে গিয়েছে।আর তাকে দেখতে একদম আপনার মতো দেখবেন দাড়ান”
আমি আমার ফোন বের করে আয়াজের ছবি দেখিয়ে বললাম,,,”এই যে স্যার আয়াজ”
“ওহ উনি দেখতে একদম আমার মতো।তোমার ভুল করাটাই স্বাভাবিক। তো তুমি কি এখনো তোমার হ্যাসবেন্ডর অপেক্ষায় আছো”
মলিন হেসে বললাম,,,,”আমি উনার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো।ভালোবাসি যে প্রচুর”
“ওহহ”
“তোমাকে আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না জান,আমি তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি বলবো যে তোমার আয়াজ বেঁচে আছে”(মনে মনে)
ইফাজ স্যার আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিলেন।আমি কাজ করতে লাগলাম।অফিস ছুটি দিলো ৭ টায়।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলাম।প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গিছে।বারান্দায় বসে আয়াজের কাছে অভিযোগ করা।
শুনছেন আয়াজ,অন্য একটা লোককে দেখে আজকে আপনায় ভাবলাম।জড়িয়ে ধরেছিলাম মনে হচ্ছিল আপনাকেই জড়িয়ে ধরেছি।জানেন ইফাজ স্যারকে আপনি ভেবে অনেক কিছুই বলে ফেলেছি।সরি আয়াজ উনাকে জড়িয়ে ধরেছি বলে আমার আপনি ছাড়া আর কোনো পুরুষ ছিলো ও না আর আসবেও না।
সেটা আপনি ফিরেন আর না ফিরেন।কিন্তু আমার বিশ্বাস আপনি ফিরবেন আমার কাছে। ভালোবাসি আপনায় আয়াজ খুব বেশি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,”অপেক্ষাটা যেনো আর বেশিদিন না টিকে।ভালোবাসার মানুষটার জন্য অপেক্ষা করা যে কতো কঠিন সেটা শুধু তারাই জানে যারা ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করে।আমার মতো অপেক্ষা জেনো কারো করতে না হয় আল্লাহ।পৃথিবীর সব ভালোবাসার মানুষকে ভালোরেখো।আপনি যেখানেই থাকেন না কেনো ভালো থাকেন প্রিয়”
দেরি হয়ে গিয়েছে রান্না করতে হবে।ভালোলাগে না কিছু।
|
|
জান আমি জানি আমার ওপর তোমার অনেক অভিযোগ।আর তো কিছু দিন বউ তারপর আবার আমি তোমাকে আমার বুকে আগলে রাখলো।
আজকে যখন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে তখন আমার ইচ্ছা করছিল জরিয়ে ধরতে কিন্তু আমি পারিনি তোমার যে ক্ষতি হবে আমি বেঁচে আছি জানলে।আর তো কিছুদিন একটু অপেক্ষা করো এতোদিন যখন করতে পেরেছো তখন আরেকটুও করতে পারবে বউ।
আয়াজ ল্যাপটপে ইশাকে দেখছে।আয়াজ এতো সময় ইশার প্রত্যেকটা কথা শুনেছে।আয়াজের চোখেও পানি।হঠাৎ আয়াজের চোখে মুখে হিংস্রতা দেখা গেলো।
আমি তোদের ছাড়ব না তোদের জন্যই আজ আমি আমার ইশাপাখির থেকে এতো দূরে।পাঁচটা বছর আমি আমার কিভাবে কেটেছে শুধু আমিই জানি।তোদের সময় ফুরিয়ে এসেছে যতো উড়ার উড়েনে।
কথাগুলো বলে আয়াজ ল্যাপটপ বন্ধ করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
|
|
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।সকালে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম।ভাবতে লাগলাম কালকে অনেকদিন পর তাড়াতাড়ি ঘুৃমাতে পারলাম।যেটাকে বলে শান্তির ঘুম।
খেয়ে অফিসে চলে আসলাম।১মাস পার হয়ে গিয়েছে।ইফাজ স্যারকে দেখলেই আয়াজের কথা মনে পরে।আজকেও প্রতিদিনের মতো রেডি হয়ে অফিসে গেলাম।অফিসে গিয়ে শুনতে পেলাম কালকে নাকি অফিস থেকে সবাইকে নিয়ে সাজেক যাওয়া হবে।আর এখানে সবাইকে যেতেই হবে।এটা নাকি ইফাজ স্যারের নির্দেশ।ইফাজ স্যারও কেমন সবার থেকে আলাদা।
চলবে,,,,?
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)