অষ্টপ্রহরে পেয়েছি তোমায় পর্ব ১৬

0
900

#অষ্টপ্রহরে_পেয়েছি_তোমায়🥀
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৬

আমি জানি এখন যদি আমি রুমে থাকতাম তাহলে আয়াজ আমায় বিভিন্নভাবে লজ্জা দিতেন।আমি পেইন্টিং রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেছি।কারণ এখানে সব প্রায় আমার ছবি।অনেক দিন হয়েছে এখানে আসা হয় না।আমি দৌড়ে আয়াজের কাছে গেলাম।উনি মাত্রই বের হলেন ওয়াশরুম থেকে।আমি উনাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম।

উনি কিছু না বুঝতে পেরে বলল,,,
“কি হয়েছে কি,এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ”

আমি উনাকে ওই রুমে নিয়ে গিয়ে পেইন্টিং দেখিয়ে বললাম,,,”কি এইগুলো”

উনি স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,,,”তোমার ছবি তো”

আমি অবাক হলাম উনার স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিয়া দেখে।আমি বললাম,,,”আপনি এগুলো কখন আঁকলেন?”

উনি আমায় হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসলেন।তারপর বললেন,,,,”সেগুলো তোমার জানা লাগবে না”
|
|
রাতে আয়াজের আসতে অনেক দেরি হচ্ছে।আমি উনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।দরজা নক করার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।আজকে হয়তো উনি চাবি নিয়ে যাননি।আমি দরজা খুলতেই উনি ভিতরে ঢুকলেন।হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলেন।প্রতিদিন আমার কাছে এসে আমার কপালে চুমু দিয়ে তারপর ফ্রেশ হতে যান।আজকের ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছি অনেক।

আমি না খেয়ে আয়াজের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।খাবার ঢেকে রেখে আগের রুমটায় চলে আসলাম।কাথা গায়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমি শূন্যে ভাসছি।চোখ খুলে দেখি আয়াজ আমায় কোলে তুলে নিয়েছেন।আমি নামার চেষ্টা করলাম।
উনি বললেন,,,,
“বেশি লাফালাফি করো না।ফেলে দিবো”

ফেলে দেওয়ার কথা শুনে আয়াজের কলার চেপে ধরলাম।উনি ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে আমাকে বসালেন,নিজে একটা চেয়ারে বসলেন।তারপর বললেন,,,”আজকে তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে”

“পারব না আমি”

“তুমি যদি আমাকে এখন না খাইয়ে দাও তাহলে আমি তোমাকে অনেক বড়ো পানিশমেন্ট দিবো!”

আয়াজের পানিশমেন্ট সম্পর্কে আমার ধারনা হয়ে গিয়েছে এতো দিনে।আমি চুপচাপ ভাত মেখে উনাকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।উনি ভাত খাচ্ছেন কম আমার হাত কামড়াচ্ছেন।আমি দ্রুত খাইয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম।উনি আমায় টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিলেন।

রুমে এসে আয়াজ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,,,”মামনি ফোন দিয়েছিল।আমার সাথে তোমাকে নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে।সেজন্যই মেজাজটা খারাপ ছিল”

আমি অবাক হয়ে বললাম,,,,”আমাকে নিয়ে কি কথা কাটাকাটি হলো?”

“তোমাকে ডিভোর্স দিতে বলেছে”

ডিভোর্স শব্দটা কানে আসতেই বুকটা কেঁপে উঠল।আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলাম।আয়াজ নরম গলায় বললেন,,,
“আমি বলেছি তো বউ তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।”
|
|
আমরা এখন আয়াজদের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছি।সন্ধ্যায় আয়াজ হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসেন।আমাকে রেডি হতে বলেই নিজেও পাঁচমিনিটের ভেতরে রেডি হয়ে আসলেন।আমি কিছু জিজ্ঞেস করতেই বলেন তাদের বাড়িতে যাচ্ছেন।আয়াজদের বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছিলাম।উনি আমার চোখ দেখে বুঝতে পেরে বলেন,”আমি আয়াজ বেঁচে থাকতে তোমায় ছাড়বো না”

কথা শুনে একটু শান্ত হয়েছিলাম।আয়াজদের বাসায় আসতে আসতে আমাদের প্রায় অনেক রাতই হয়ে গেলো।আমি আর আয়াজ এখন বসে আছি আয়াজদের বাড়ির ড্রইংরুমে।এখানে এসে জানতে পেরেছি আয়াজের আম্মু মানে আমার শাসুমা অসুস্থ।

আয়াজের বাবা বললেন,,,”তোমাকে যে এই তিনদিন তোমার মা এতোবার ফোন দিলো ধরোনি কেনো?তোমার জন্যই তোমার আম্মু আজকে অসুস্থ।”

আয়াজ আনাকে নিয়ে শাশুড়ী মায়ের রুমে আসলেন।শাসুমা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন।আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুললেন।আয়াজ তার আম্মুর পাশে বললেন,,,”মামনি আ’ম স’রি”

আয়াজের আম্মু উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,,,”তোর কোনো দোষ নেই আয়াজ দোষটা আমার আমিই তোকে জোর করেছিলাম।কিন্তু পরে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছিলাম।তোর বাবা আমাকে বুঝালেন।আমি তোকে ফোন দিয়েছিলাম তোদের বিয়ে কথা বলতেই বাবা”

আয়াজ শাশুড়ী আম্মুর হাত ধরে বললেন,,,”আমি দুঃখিত মামনি এমন ভুল হবে না”

শাশুড়ী আম্মু আমাকে ডেকে অনেক কথা বললেন।আমি উনাকে কি ডাকবো ভেবে না পেয়ে বলেই ফেললাম,,,”শাশুড়ী আম্মু আমি কি আপনাকে শাশুড়ী আম্মু বলেই ডাকবো”

উনি হেসে বললেন,,,”আয়াজের আমি যেমন মামনি তেমনি তোমারও মামনি।তুমি আমাকে মামনি বলেই ডেকো”

মামনি উঠে কাবার্ড থেকে একটা বাক্স নিয়ে সেখন থেকে একটা সোনার বালা বের করে আমাকে পরিয়ে দিলেন।আয়াজ মামনিকে অসুস্থতার কথা বললে মামনি আয়াজকে ধমক দিয়ে বলেন উনি এখন সুস্থ আছেন। মামনি আমাদের ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলেন।ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই আয়াজের সব কাজিনরা আমাকে চেপে ধরে।আয়াজ তাদের ধমক দিয়ে খেতে বসিয়ে দেন।আয়াজকে যে এরা সবাই খুব ভয় তা এদের কাজ দেখেই বুঝে গিয়েছি।

খাবার শেষ মামনি আমাদের সবাইকে ড্রইংরুমে ডাকলেন।বড়রা সাবাই সোফায় আর ছোটরা সবাই ফ্লোরে বসে পড়লো।আমিও নিচে বসে পড়লাম,আয়াজও আমাকে ফ্লোরে বসতে দেখে আমার পাশে বসে পড়লেন।ছোটরা সবাই মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।লজ্জা লাগলেও আমি সেদিকে পাত্তা দিলাম না বেশি।

মামনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
“সবাইকে তো বলে ছিলামই ওদের আবার বিয়ে দিবো।আমি ঠিক করেছি এই শুক্রবারই ওদের বিয়েটা ধুমধাম করে দিয়ে দিব,একটাই ছেলে আমার তার বিয়ে তো আমি অনেক বড় করেই দিতে চেয়েছি”

সবাই মামনির কথায় সায় দিলো।মামনি আবার বলল,,,”হাতে আছে আর মাত্র ৫ দিন,তাই আমাদের এখন থেকেই কেনাকাটা শুরু করতে হবে।আর ইশার ফ্যামিলিকে জানিয়ে দাও তারা যেনো কালকেই চলে আসে।ওখানে তো যাওয়া সম্ভব না।আর তোমার ছেলেও তার বউকে ছাড়বে না।আর আয়াজ ইশা কালকে থেকে আলাদা থাকবে।ইশা আরশির সাথে থাকবে এই কয়েকদিন”

মামনির শেষের কথা শুনে করুন চোখে আয়াজের দিকে তাকালাম।উনাকে ছাড়া আমি যে থাকতে পারিনা।
উনি কিছুটা জোরেই বললেন,,,
“ইম্পসিবল আমি আমার বউকে ছাড়া এতোদিন থাকতে পারব না”

আমার লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে।উনি ঠোঁটকাটা জানতাম কিন্তু এতোটা!আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।মামনি বললেন,,,
“বাবজান আপনাকে তো থাকতেই হবে কিছু করার নেই!আর তুমি যদি জোড় করে রাখতে চাও তাহলে আমি ওকে ওর বাড়ি পাঠিয়ে দিবো”

আয়াজ কোনো কথা বললেন না।উনার মুখের অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পেলো।আমি কোনো মতে হাসি চেপে আরশিকে ফিসফিস করে বললাম,,,
“আরশি তোমাদের বাসার সবাই কি এমন ফ্রি মাইন্ডের”

“হুম ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড বলতে গেলে মামনিই”

আমি এখানে আসার পরে আরশির সাথেই বেশি কথা বলেছি।ও আমার বয়েসি।আয়াজের বাবারা তিনভাই একবাড়িতেই থাকেন।তিনভাইয়ের ৬টা ছেলে-মেয়ে।আয়াজ সবার বড়ো,আর বাড়ির একমাত্র ছেলে।উনাকে সবাইকে একটু বেশিই ভালোবাসে।আয়াজের বাবা সবার বড়ো।আরশি আয়াজের আপন বোন।আর দুটো মেয়ে আছে আয়াজের মেঝো চাচ্চুর।ইরফা আর ফুইরা দুজনে যমজ।আয়াজের ছোট চাচ্চুর একটা মেয়ে ছোট মাত্র ৭ বছর বয়স।

সবকিছু আমাকে আরশি বলেছে।বড়রা সবাই যার যার রুমে চলে গেলেন। ছোটরা সবাই আড্ডা দিতে লাগলাম।ফিহান আর ইহান ভাইরাও এসেছেন।ওনারা আয়াজের ফুফাতো ভাই।কালকে নাকি আয়াজের ছোট ফুফুরা আসবেন।আমরা আড্ডা দিয়ে যার যার রুমে চলে আসলাম।

আজকেই উনার সাথে আমি থাকতে পারব।এরপর বিয়ের ব্যাস্ততায় ঠিকমতো কথাটাও বলতে পারবো না।আজকে সারা রাত আয়াজের সাথে গল্প করব বলে ঠিক করলাম।
আমি উনাকে বললাম,,,”চলুন না আজকে সারা রাত গল্প করি পাঁচদিন থাকবো না আপনার সাথে”

আমরা আয়াজের রুমের বারান্দায় বসে গল্প করতে লাগলাম।আয়াজ আর আমি গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।সকালে আগে আমার ঘুম ভাঙলো।আমি আয়াজের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম।আমি উঠার সাথে সাথে উনিও উঠে গেলেন।

আমরা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।মামনি বলল,,,”তাড়াতাড়ি এসো তোমরা সবাই তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছে”

সবাই একসাথে খেয়ে আবার প্লান করতে বসে গেলো।সবাই মেহেন্দি থেকে শুরু করে সব করবে।মামনিও মেনে নিলেন।আমরা ড্রইংরুমে বসে কথা বলছিলাম।এমন সময় একটা মহিলা আর একটা মেয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।সবাই চেঁচামেচি করতে লাগলো।বুঝলাম এটা আয়াজের ছোট ফুফু।

উনি এসেই সোফায় বসে বললেন,,,”ভাবি আয়াজের বউ কোথায় ডাকো ওকে দেখি কেমন মেয়ে বিয়ে করল”

উনি শেষের কথাটা কিছুটা ভেঙ্গিয়েই বললেন।মামনি আমাকে সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন,,,,”এই যে আমার আয়াজের বউ”

আমি উনাকে বললাম,,,”আসসালামু আলাইকুম ফুফি”

উনি আমায় একবার স্ক্যান করে বললেন,,,”ওমা ভাবি এ কেমন বউ যে এমন থ্রি-পিছ পড়ে আছে।আর হাইটও তো তেমন না বলতে গেলে খাটো।আমার মেয়েকে দেখো ভাবি যেমন সুন্দর তেমনি লম্বা”

উনার কথা শুনে আমার কান্না চলে আসলো।কান্নাটা চেপে মাথা নিচু করে রাখলাম।আসলেই উনার মতো ছেলের সাথে আমাকে মানাি না।

আয়াজ হুট করে এসে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললেন,,,

“ছোট ফুফি তোমার আমার বউকে নিয়ে ভাবতে হবে না বুঝেছো।আর ও আমার হার্টবিট শুনতে পেলেই হবে। আর কি যেনো বলছিলেন আপনার মেয়ে অনেক সুন্দর তাই না, আমার বউতো আপনার মেয়ের মতো এককেজি মেকাপ করে ঘুরে না আর না হাইহিল পড়ে লম্বা সাজার চেষ্টা করে।আমার বউ আমার কাছে সুন্দর হলেই চলবে।আর ড্রেসের কথা বলছেন আপনার মেয়ের মতো শর্ট ড্রেস পড়ে না।”

আয়াজের কথা শুনে ফুফির মুখটা কালো হয়ে গেলো।উনি উনার মেয়েকে নিয়ে তাড়াতাড়ি নিজেদের রুমে চলে গেলেন।
আয়াজ আমাকে টেনে নিয়ে রুমে আসলেন তারপর বললেন,,,”তুমি মন খারাপ করো না বউ।ফুফির সপ্ন ছিলো তার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার তাই তোমাকে দেখে এগুলো বলেছে।আর নিজেকে কখনো ছোটো মনে করবা না বুঝেছো”

আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।উনি অস্থির হয়ে গেলেন।আমি বললাম,,,”আমি অনেক ভাগ্যবতি যে আপনার মতো একজন স্বামী পেয়েছি”

দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা শপিং করার জন্য বের হয়ে পড়লাম।ফুফির মেয়ে রিনি গাড়িতে আয়াজের পাশে বসার চেষ্টা করেছিলো আমিও কায়দা করে ওকে আমার বরের কাছ থেকে সরিয়েছি।ডায়নি পেত্নী কোথাকার আমার বরের দিকে নজর দিস।ভালো হবে না তোর হুহ!

চলবে,,,,,,?

(দুঃখিত দেরিতে দেওয়ার জন্য।

ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here