অশান্ত বসন্ত পর্ব-৮

0
951

#অশান্ত বসন্ত।
(অষ্টম পর্ব)
(#প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
জয়া চক্রবর্তী
***************
অনেক সময় মন আর মনের শূন্যতা নিজেরাই পরস্পরের দিকে চেয়ে অনর্গল কথা বলতে পারে।আজ রাত্রিটা যেন তেমন ভাবেই ধরা দিয়েছে করুনার কাছে।শিখা বহ্নি দুজনে ঘুমিয়ে পরলেও কেন জানি না ঘুম নেই করুনার চোখে।

যখন অর্নবের হাত ধরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলো,ওর ঠোঁটের কোনে ছিলো ফালি চাঁদের হাসি।কি জানি ভাগ্যদেবী হয়তো আড়ালে হেসেছিলো সেদিন!

করুনা কিন্তু অর্নবকেই ভালোবেসে নিজের ইষ্ট মেনে ছিলো।নিজের মনের ফুল দিয়ে অর্নবকে সাজিয়েছিলো।তাই প্রথম যেদিন শেফালী অর্নবের অন্য সংসার পাতার গল্প শুনিয়েছিলো,কিছুতেই মন সায় দেয়নি করুনার।মেয়েদের সামনেই জিজ্ঞেস করেছিলো অর্নবকে।একটাই শান্তনা, অর্নব মিথ্যে বলেনি,মেনে নিয়েছিলো সবটা।

তারপর থেকে একার সংগ্রাম।একার বললে ভুল হবে,বহ্নিও সেই সংগ্রামের অংশীদার। আজ বহ্নি প্রভাত কুমার কলেজে ভর্তি হয়েছে, এর চাইতে বড়ো পাওনা আর কি হতে পারে করুনার কাছে।বহ্নির এক টিউশন বাড়ির কাকু ওই কলেজেরই প্রফেসর। তার উদ্দোগ্যেই কোনো টাকাপয়সা লাগেনি বহ্নির।

কিন্তু আজ এমন অস্থির লাগছে কেন করুনার!সবে তো বহ্নির কলেজে ভর্তির খবরে একটু শান্তির প্রলেপ লেগেছিলো বুকে।করুনা দরজা খুলে বাইরে এলো।একি!দরজার বাইরে কে পরে আছে!’বহ্নি মা শিগগিরই আলোটা জ্বালা,কে যেন বাইরের চাতালে শুয়ে আছে!’,মায়ের চিৎকারে বিছানায় ধড়ফড় করে উঠে বসলো বহ্নি।

দ্রুত বাইরের আলো জ্বালাতেই করুনা ব্যস্ত হাতে লোকটাকে সোজা করলো।একি,এ তো অর্নব,শিখা বহ্নির বাবা।কিন্তু নড়ছে না কেন?করুনা কান্নায় ভেঙে পরলো।বহ্নি কথা না বাড়িয়ে পাশেই ডাক্তার কাকুর বাড়ির দিকে ছুটলো।

না এ যাত্রায় বেঁচেই গেলো অর্নব।ধুম জ্বরে সাময়িক ভাবে জ্ঞান হারিয়েছিলো সে।ডাক্তার কাকু দুটো ইঞ্জেকশন দিয়ে, ঘসঘস করে বেশ কিছু ওষুধের নাম লিখে প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিলো বহ্নির দিকে।

বহ্নি ওর বাবার প্যান্টের পকেট থেকে টাকা বের করে ডাক্তার কাকুকে দিলো।ডাক্তার কাকু বললো,’ভয়ের কিছু নেই,আপাতত ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি।সকালে গিয়ে ওষুধ গুলো আনলেই হবে’।

ডাক্তার কাকুকে দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে এসে, মায়ের সাথে হাত লাগিয়ে বাবাকে ঘরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয় বহ্নি।ওর দিদিয়া এখন ওর বাবার পাশের বালিশেই ঘুমোচ্ছে।যেই দিদিয়াকে ওর বাবা দুচক্ষে দেখতে পায়না।করুনা বহ্নিকেও শুয়ে পরতে বলে,অর্নবের মাথার পাশে চেয়ারটা টেনে বসলো।

অদ্রিজার এবার বিরক্ত লাগছে। কোনো কান্ডজ্ঞান নেই অর্নবের।ফোনটা পর্যন্ত নিয়ে যায়নি।এমন নয় যে অদ্রিজা অর্নবকে নিজের ঘরসংসার বিসর্জন দিয়ে ওকে নিয়ে সংসার পাততে বলেছিলো!
ও তো ভাবেইনি কখনো অর্নবকে বিয়ে করবে।

এমনিতেই অর্নব ওর চাইতে বয়েসে অনেকটাই বড়ো। অর্নবকে দেখে ওকে কাছে পেতে ইচ্ছে করতো,সেটা অস্বীকার করবার জায়গা নেই।অর্নবের পেশিবহুল চেহারা,মুখে দৃঢ প্রত্যয় ভীষণ ভাবে টানতো অদ্রিজাকে।

তবে অদ্রিজা সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলো, যেদিন অর্নব ওকে না জানিয়েই রেজিস্ট্রার আর সাক্ষ্মীসাবুদ নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো।সেদিনের পর থেকে অর্নবের আদরটা ওকে আর উত্তেজিত করতে পারেনি।বরং যখন অর্নব ওর নিজের ছিলো না তখন অর্নবকে পাওয়ার মধ্যে চরম উত্তেজনা কাজ করতো।

অফিস ফেরত ওই ঘন্টা দুয়েক সময় দারুন ভাবে উপভোগ করতো অদ্রিজা।মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা অবধি আদরে ভরিয়ে দিতো অর্নব।অনেক সময় অর্নবকে আদরের সুযোগটাও দিতোনা অদ্রিজা। নিজেই অর্নবকে আদরের চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতো।অথচ বিয়ের ট্যাগ লাগানোর সাথে সাথেই সব উত্তেজনা অন্তর্হিত।

আজকাল সমীরকে বেশ ভালো লাগছে অদ্রিজার।সমীর বিবাহিত নয়।ওর ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকদিন গিয়ে সময় কাটিয়েছে অদ্রিজা।সমীর বলেছে,অর্নবকে মিউচুয়াল ডিভোর্স দিয়ে ওর ফ্ল্যাটেই পাকাপাকি ভাবে অদ্রিজাকে থাকতে।সমীরের কথাটা বেশ মনে ধরেছে অদ্রিজার।কিন্তু অর্নবের সামনে আর বলা হয়ে ওঠেনি কিছু।

সকাল হয়ে গেলেও অর্নব এখনো ঘুমোচ্ছে।করুনা থার্মোমিটার দিয়ে জ্বরটা মাপলো।না গায়ে জ্বর নেই।বহ্নিকে তুলে বললো,বড়ো রাস্তায় বোসদের বাড়ি গিয়ে ব্লাউজ চারটে দিয়ে আসতে।আর বোস গিন্নীর দেওয়া টাকাতে অর্নবের ওষুধ গুলো কিনে আনতে।মায়ের কথায় অবাক হয়ে যায় বহ্নি।বলে,’কেন ওনার মানিব্যাগে তো অনেক টাকা,ওষুধ গুলো ওনার টাকাতেই কেন আনবোনা?’

একটু চুপ করে থেকে করুনা বললো,’আচ্ছা তাই আনিস।কিন্তু লক্ষ্মীমা আমার, ব্লাউজ দিয়ে টাকাটাও নিয়ে আসিস।কিছু তো রান্না করতে হবে।অসুস্থ লোকটাকে তো আর ভাতে ভাত সেদ্ধ খাওয়াতে পারিনা’।

বহ্নি কামিজটা বদলে ওর ঝোলানো সাইড ব্যাগে ব্লাউজ গুলো ভরে নেয়।প্রেসক্রিপশন টাও সামনের দিকের চেনে ঢুকিয়ে আটকে নেয়।

কলিংবেল বাজাতেই পল্লব এসে দরজা খুলে দিয়ে বহ্নিকে দেখে হা হয়ে যায়।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here