অশান্ত বসন্ত পর্ব-৩৬

0
826

#অশান্ত_বসন্ত
(৩৬ পর্ব)
#জয়া_চক্রবর্তী
*******************
ব্যাঙ্গালোরের হোটেলের ঘরে এসে চুপচাপ শুয়ে আছে অর্নব চৌধুরী, শিখা বহ্নির বাবা। নিজের মেয়ের বিয়ে অথচ তার দায়িত্ব শুধু সম্প্রদানের। ব্যাঙ্কে এতো টাকা অথচ সে জানে তার টাকা ছুঁয়েও দেখবেনা মেয়েরা। এতো অসহায় লাগছে নিজেকে!

এদিকে শিখার মুখটা ভাসছে চোখের সামনে।মেয়েটা একবারও অর্নবের দিকে তাকায়নি।

তবে যাকে কখনো সন্তানের মর্যাদা দিতে পারেনি,যাকে কখনো বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারেনি,যার কপালে কখনো স্নেহের চুম্বন এঁকে দিতে পারেনি,তার কাছ থেকে এই নির্লিপ্ত ভাবটাই শুধু আশা করা যায়।

অর্নব ভাবছে যে মেয়েকে কখনো নিজের বলে ভাবতেই পারেনি,যার প্রতি সামান্য দায়িত্ব ও পালন করতে পারেনি বা এখনো পারছে না,তাকে আদৌ কি সম্প্রদান করবার অধিকার তার আছে!

তবে মনে মনে সে কৃতজ্ঞতা জানায় করুনার প্রতি,তার আদরের ডলের প্রতি,যাদের জন্য আজ শিখার জীবনে এমন একটা সুন্দর দিন আসতে চলেছে।

পল্লব বহ্নিকে ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো,’তুমি ভিতরে যাও,আমি কয়েকটা কাজ সেরে ফিরছি’,বহ্নি বললো,’এখন আবার বাইরে কিসের কাজ তোমার!’
‘আগামীকাল বিয়ে করবে বললে যে ,তুমি ভিতরে যাও,আমি ঘুরে আসছি ‘বলেই হেসে গাড়িটা ঘুরিয়ে নিলো পল্লব।তারপর সোজা চলে আসলো সেনকো গোলড এন্ড ডায়মন্ড জুয়েলারি সোরুমে।

কিছুদিন আগেই শিখার জন্য বহ্নিকে নিয়ে এখানেই এসেছিলো।
কিন্তু আসবার পর মনে হলো ওর বহ্নিকে নিয়ে আসা উচিত ছিলো। তবু নিজেই পছন্দ করে একটা নেকলেস,কানের দুল আর দুজনের জন্য দুটো আংটি নিলো। মনে মনে ভাবলো বিয়ের পর বহ্নিকে নিয়ে এসে ওর পছন্দের গয়না কিনে দেবে।

বিজয়লক্ষ্মী সিল্ক এন্ড শাড়ি তে গিয়ে দুটো শাড়ি ও নিলো পছন্দ করে।এই দিনটার জন্য কতোকাল ধরে প্রতীক্ষাতে ছিলো পল্লব। অথচ প্রস্তুতির সময় হিসেবে পেয়েছে মাত্র এই সন্ধ্যাটা।

বহ্নি বলেছে, ওদের বিয়ের কথা আগে থেকে কাউকে জানাবার দরকার নেই। ওর দিদিয়ার বিয়েতেই পুরো ফোকাস রাখতে। শুধু পন্ডিত মশাইকে বলে রাখতে যে পর পর দুটো বিয়ে দিতে হবে ওনাকে।

পল্লব শাড়ির দোকান থেকে বের হয়ে পন্ডিত মশাইকে ফোন করে সেই কথাই জানিয়ে রাখলো।

এদিকে বহ্নি ফ্ল্যাটে ঢুকেই হইচই শুরু করে দিলো।তার একমাত্র দিদিয়ার বিয়ে বলে কথা! এরমধ্যেই বরুন সাহার ফোন আসলো।শিখা ফোনটা ধরতে যেতেই বহ্নি ফোনটা মজা করে কেড়ে নিলো।

বহ্নির গলাতে হেলো শুনতেই বরুন সাহা বলে উঠলো,’শিখাকে একটু দেবেন ফোনটা’,বহ্নি হেসে বলে উঠলো,’আরে বরুন দা তোমার একমাত্র শালি হতে চলেছি কয়েকঘন্টা বাদে,এখনো আপনি সম্মোধন!’

বরুন সাহা হেসে বললো, ‘তাহলে তুমি না তুই কোন সম্মোধন চলবে?’,’বহ্নি হেসে বললো,’যেটা ইচ্ছে সেটাই চালাতে পারো’।

তারপর বললো,’দাঁড়াও ভিডিও কল করছি,আমার দিদিয়াকে আজ আরো ফাটাফাটি লাগছে দেখতে।আমি চাইনা এই সুন্দর মুহুর্তটা তুমি মিস করো’।

বরুন দাকে ভিডিও কল করে ফোনটা এমন ভাবে ধরলো যাতে দিদিয়াকে পুরোপুরি ভাবে দেখা যায়।
বহ্নি দেখলো,দিদিয়া ওর সামনে বরুনদার দিকে তাকাতেই যেন লজ্জা পাচ্ছে।এখন আর বহ্নির মনে কোনো সংশয় কাজ করছে না।মনে হচ্ছে এরপর ভালোই হবে সব।

বহ্নি ফোনটা দিদিয়ার হাতে দিয়ে হেসে বললো, ‘লজ্জা পেতে হবেনা, কথা বল,আমি পাশের ঘরে যাচ্ছি’।

অনেকক্ষন শুলেও আজ রাতে ঘুমটা আসছেই না পল্লবের।ভিতরে ভিতরে দারুন একটা উত্তেজনা কাজ করছে।এতো ভালো লাগা আগে কখনো আসেনি।

বহ্নি কি ঘুমিয়ে পরেছে!কথাটা মনে হোতেই মেসেজ করলো বহ্নিকে।
‘ঘুমিয়ে?’,বহ্নি মেসেজ সিন করে লিখলো,’না আসছে না ঘুম’।পল্লব মেসেজ করলো,’ছাদে যাবে?’,বহ্নি লিখলো,’কেউ জেনে গেলে! ‘,পল্লব লিখলো,’প্লিজ চলো,ভীষণ চাইছে যে মন’,বহ্নি কয়েকটা হাসির ইমোজি পাঠিয়ে লিখলো,’তুমি যাও আমি আসছি’।

ছাদে যেতেই বহ্নিকে জড়িয়ে ধরলো পল্লব।তারপর বহ্নির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।বহ্নি চোখ বুজে মুহুর্তটাকে উপভোগ করতে লাগলো।

পল্লব কিছু সময় পর পকেট থেকে আংটি দুটো বের করে বহ্নির হাতে দিলো। বললো,’প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে এসো আংটি বদল করি’,বহ্নি বললো,’তুমি এগুলো কিনতে গিয়েছিলে তখন?’।

পল্লব গয়না আর শাড়ির ব্যাগটা দেখিয়ে বলে উঠলো,’ওগুলো ও কিনেছি।আমি জানিনা তোমার পছন্দ হবে কিনা!কিন্তু চাই কালকে শিখার বিয়ের পর তুমি এই শাড়ি আর গয়না পরে আমাকে বিয়ে করবে’।

বহ্নি কিছু না বলে আংটি পরিয়ে দিলো পল্লবকে আর পল্লব বহ্নিকে। বাকি রাতটা হাতে হাত নিয়ে গল্প করেই কাটালো দুজন।

তবে সূর্যোদয় হওয়ার আগেই দুজনে ঘরে চলে আসলো। কারন বিয়ের দিনের নিয়ম হিসেবে সূর্যোদয়ের আগেই দধিমঙ্গল হয়।অর্থাৎ দই,চিঁড়ে,মিষ্টি খাওয়ানো হয় কনেকে।সেই হিসেবে শিখার ও দধিমঙ্গল হবে। বহ্নি এসে চুপচাপ শুয়ে পরলো দিদিয়ার পাশে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here