~অভিমান
~১৯
…………….
.
.
উনি আমার দিকে তাকিয়ে ঝাজালো কন্ঠে বলে উঠলেন,
-কতবার তোমাকে বলেছি রুমের বাইরে গেলে চুল খোপা করবে না,তবুও তুমি কেন খোপা করলে,তুমি জানো না কথার অবাধ্য হওয়া আমার একদম পছন্দ নয়।
উনার কথায় আমি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম,
উনি আবার ধমক দিয়ে উঠলেন,
-কি হলো কথা বলছো না কেন?
উনার ধমক শুনে আমি মৃদু কেঁপে উঠলাম তারপর অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-খুব গরম লাগছিল আর ওখানে কেউ ছিলনা তাই চুলগুলো খোপা করে নিয়েছিলাম,
আমার কথা শুনে উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,
-ওখানে কেউ ছিলনা তাই না,তুমি কি জানো নিলয় ওখানে দাঁড়িয়ে মোহমুগ্ধের মতো তোমার দিকে তাকিয়েছিল,
-ও যে ওখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি ,
-ও বুঝতে পারো নি তাই না,সেটা বুঝবে কি করে,কাজে লাগলে তো দিন দুনিয়া ভুলে যাও,শাড়ী সরে গিয়ে কোনদিক দিয়ে পেট কোনদিক দিয়ে পিঠ দেখা যায় সেটা খেয়ালই থাকে না,
উনার কথার জবাবে কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম ,
উনি আবার বলে উঠলেন,
-নিলয়ের সাথে তোমাকে যেন বেশি কথা বলতে না দেখি,প্রয়োজন কথা ছাড়া ওর সাথে কথা বলতে যাবে না আর ওর সামনে ও যাবে না ,
-ও আমার বন্ধু যখন তখন আমার সাথে কথা বলতে আসতেই পারে ,
আমার কথা শুনে উনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
-ও কথা বলতে আসলেও ,তুমি ওর সাথে কথা বলবে না,ইটস ফাইনাল ওকে !!!বুঝতে পরেছো তুমি ।
উনার কথায় আমি কিছুটা অবাক হলাম,ব্রু কুচকে বললাম,
-কিন্তু কেন??
-কারন নিলয়ের তোমার দিকে তাকানো স্বাভাবিক নয়,তুমি ওকে বন্ধুর নজরে দেখলেও ও তোমাকে সেই নজরে দেখে না,ও তোমাকে অন্য চোঁখে দেখে ,আমি খেয়াল করে দেখেছি আমি যখন তোমার পাশে থাকি তখন ও কেমন হিংসাত্মক চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন তারপর সেখান থেকে রেগে চলে যায়,তুমি যখন একা থাকো ও মুগ্ধ চোঁখে তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে,আমি নিশ্চিত ও তোমাকে ভালবাসে,আর সেটা অনেক আগ থেকে।
উনার কথা শুনে আমি বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলাম ,অবাক হয়ে বলে উঠলাম,
-কি যা তা বলছো তুমি !! ও আমার খুব ভালো বন্ধু অনেক দিন থেকে আমি ওকে চিনি ,ও কখন আমার সাথে কোনো খারাপ আচরন করে নি,একজন বন্ধু হিসেবেই ও আমার কাছে আসে,বাইরের লোকদের সন্দেহ করতে করতে তুমি এখন নিজের আপন মামাত ভাইকে সন্দেহ করা শুরু করে দিয়েছো,মানছি বাইরের লোক আমার দিকে তাকালে তোমার রাগ হয়,তুমি মেনে নিতে পারো না,কিন্তু ও তো শুধু আমার বন্ধু নয় ও তোমার ভাই, তার নামে বানিয়ে বানিয়ে যা নয় তা বলছো,
-আমি জানি সুহা ও আমার ভাই কিন্তু ও আমার ভাই বলে সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে না,
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল,ভীষন রাগ হলো উনার উপর ,
মনে যা আসছে তাই বলে চলছেন এটা যদি নিলয় শুনে তাহলে তো ও খুব কষ্ট পাবে ,পুরোটা কলেজ লাইফ ও বন্ধু হয়ে আমার পাশে থেকেছে,বন্ধুত্বের বাইরে গিয়ে কোনো অসংযত কিছুই আমাকে বলে নি,
এক দিন আমি ওর সাথে থেকে কিছু বুঝতে পারলাম না আর উনি দুইদিন দেখেই বুঝে ফেলেছেন ও আমাকে ভালবাসতো,কি আমার মনোবিজ্ঞানী এলেন রে,
আমি রেগে বলে উঠলাম,
-এরকম আজে বাজে কথা আর কখনও আমার সামনে বলবে না,
বলেই আমি উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।
.
রাতে খাবার খেয়ে রুমে এসে উনার সাথে কোনো কথা না বলে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে রইলাম,
উনি ও কোনো কথা বলছেন না,গম্ভীর মুখ বানিয়ে রেখেছেন,মনে হয় সেই ব্যাপারটা নিয়ে এখনও রেগে আছেন,রেগে তাকলে থাকোক আমার কি,আমি ও রাগ করতে জানি ,উনি বাজে কথা বলবেন আর আমি তা মেনে নিবো কখনও না,উনি আগে কথা না বললে আমি কিছুতেই কথা বলবো না,আমি কি কথা বলার জন্য মরে যাচ্ছি না কি,
বিছানায় শুয়ে ছটফট করছি কিছুতেই ঘুম আসছে না ,কি এক বাজে অভ্যাস হয়েছে উনার বুকে না শুলে ঘুম আসেনা,ধুর কি যে করি ,
লোকটা কি করছে কোনো কথা বলছে না কেন ঘুমিয়ে পরলো না কি,অন্যপাশ ফিরে শুয়ে শুয়ে ছটফট করছি আর নিজেই নিজের সাথে কথা বলছি,
আস্তে আস্তে ওপাশ ফিরলাম উনি কি করছেন সেটা দেখার জন্য ,উনি যদি ঘুমিয়ে যান তাহলে আমি আমার জায়গায় ঘুমিয়ে পরবো ,তাকিয়ে দেখি উনি সোজা হয়ে এক হাত কপালের উপর রেখে চোঁখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন,জেগে আছেন কিনা ঘুমে আছেন বুঝতে পারলাম না ,চুরের মতো আস্তে আস্তে উঠে উনার মুখের উপর ঝুকে দেখতে লাগলাম উনি জেগে আছেন কিনা ,
আমি উনার মুখের উপর ঝুকতেই উনি চোঁখ মেলে তাকিয়েই আমাকে জরিয়ে ধরে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন ,
এভাবে ধরা খেয়ে আমি ভীষন লজ্জা পেলাম কিছু না বলে গুটিশুটি মেরে উনার বুকে শুয়ে রইলাম,
উনি দুহাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলেন,
-সুহারানী এই জায়গাটা শুধু তোমার ,এখানের অধিকার অনেক আগেই আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি,আমার বুকের মাঝে ঘুমানোর জন্য তোমাকে লুকচুরি করতে হবে না ,আমি রেগে থাকি বা যাই করি এই জায়গা থেকে তোমাকে কখনও সরিয়ে দেবো না,
উনি কথা বলেই চলছেন আর আমি উনার বুকে শুয়ে প্রশান্তিতে দু চোঁখ বুজে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
সকালে নাস্তার টেবিলে বসে আন্টি বলে উঠলেন কাল থেকে উনি যেন অফিসে যান,আন্টির বলা কথা শুনে উনার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল,কিন্তু উনি কখন ও উনার মায়ের কথার অবাধ্য হন না,তাই হাসি মুখে রাজি হয়ে গেলেন ,
আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনাকে কেমন অন্য রকম অন্যমনষ্ক লাগছে,
সবার আগে উনি খাওয়া থেকে উঠে পরলেন।
.
রুমের দিকে যাচ্ছি হঠাৎ সোফার দিকে চোঁখ পরল,
তাকিয়ে দেখি উনি আন্টির খোলে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছেন আর আন্টি উনার চুলে বিলি কাটছেন আর হেসে হেসে কথা বলছেন,
উনাদেরকে এভাবে দেখে আমার ভীষন মায়ের কথা মনে পরল,কত দিন হলো মাকে দেখি না ,ভীষন মন খারাপ নিয়ে রুমে চলে এলাম,রুমে এসে অনেকক্ষন কান্না করলাম।
সারা দিন রুমে বসে কাটিয়ে দিলাম ,দুপুরের খাবারও খেলাম না,এর একবার ও উনি রুমে আসেন নি,আমার ও খুঁজ করার ইচ্ছে জাগে নি,খুব খুব মন খারাপ লাগছে সব কিছু অসহ্য লাগছে ।
বিকেল বেলা উনি রুমে এসে জোর করে আমাকে বাইরে নিয়ে গেলেন,
বাইরে গিয়ে আমি অবাক ড্রইংরুমে মা বসে আছেন।
#চলবে???