#অভিমান
#পর্বঃ১৮
……………..
.
.
শালা আস্ত একটা বজ্জাত এই সাধ সকালে জোর করে আমাকে দিয়ে এক প্লেট ফুচকা খাওয়ালো,কে জানতো এভাবে ফেসে যাবো আমি তো ভেবেছিলাম এতো রাতে উনি ফুচকা কিছুতেই আনতে পারবেন না,
কোথা থেকে যে খুঁজে নিয়ে এলো কে জানে,
কতবার করে মানা করলাম আমি সব খেতে পারবো না শুনলই না আমার কথা,
জোর করে আমাকে দিয়ে সব গুলো ফুচকা গিলালো,
যখন যা মন চায় তাই করে আমার সাথে,
কোনদিন ভালো হবে না তোর একটা নিরিহ মেয়েকে এভাবে টর্চার করার ফল ভোগ করবি,
আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি তুই একদিন ফুচকাওলা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবি,
উনাকে গালি দিতে দিতে নিচে নামলাম।
.
নাস্তার টেবিলে সবাই মিলে নাস্তা করছি সবাই যার যার মতো খাচ্ছে আমি কিছুই খেতে পারছি না ,খাবো কি ভাবে সকালের ফুচকা গুলোই পেটের মাঝে রয়েছে,
খাবার ছেড়ে উঠতেও পারছি না উঠলে তো সবার নানা রকম প্রশ্নের সম্মোখিন হতে হবে,বসে বসে খাবার নাড়া ছাড়া করছি,
আন্টি খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যেতেই ভাবলাম উঠে পরবো কিন্তু তার আগেই উনি বলে উঠলেন,
-খেতে খেতে টায়ার্ড হয়ে পরছি হাতে ভীষন ব্যাথা করছে,সুহা তোমার তো খাওয়া শেষ আমার বাকি খাবার গুলো আমাকে তুমি খাইয়ে দাও তো,
উনার কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে আপু আর নিলয়ের দিকে তাকালাম ,তাকিয়ে দেখি আপু মুখ টিপে হেসে মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছেন আর নিলয় কেমন গম্ভীর মুখ বানিয়ে তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
এই নিলয়টার যে কি হল আসার পর তো কত খুশি ছিল এর পর থেকে কেমন যেন আপসেট হয়ে রয়েছে,
উনার কথায় সবার সামনে আমি বিব্রত হয়ে পরলাম,
বলে কি এখানে আপু ,নিলয় আর কাজের লোকের সামনে আমি উনাকে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিব,নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে এত যখন টায়ার্ড হয়ে পরেছে তাহলে খাওয়া ছেড়ে উঠে পরলেই তো হয়,
আমি উনার দিকে বিস্ময় নিয়ে কপাল কুচকে তাকালাম,
আমি তাকাতেই উনি বলে উঠলেন,
-এভাবে আমাকে দেখছো কেন?আমাকে দেখতে বলি নি খাইয়ে দিতে বলেছি,
আহ্ !হাতে প্রচুর ব্যাথা খেতে পারছি না ,একটু খাইয়ে দাও না গো,
উনার কথায় আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলাম,
-এতক্ষন ধরে তো খেয়েই গেলেন হাতে যখন এতো ব্যাথা আর খাওয়ার কি দরকার উঠে পরলেই তো হয়,
-তার মানে তুমি বলছো আমি খিদে নিয়েই উঠে পরবো,ছি!সুহা স্বামী হাতের ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে খেতে পারছে না আর তুমি তার মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে পারছো না,
উনার কথায় আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আপু বলে উঠলেন ,
-সুহা এই সব কি ভাইয়া কি খিদে নিয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠবেন না কি,তোর তো খাওয়া শেষ একটু খাইয়ে দিলে কি এমন হবে,বেচারা হাতের ব্যাথায় খেতে পারছে না,
-কিন্তু আপু আমি
-সুহা কোনো কথা নয় ,
আপুর কথার উপরে আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না,
অসম্ভব মেজাজ খারাপ নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে উনাকে খাওয়াতে লাগলাম ,
আর উনি মহা আনন্দে লাট সাহেবের মত মনে সুখে খাচ্ছেন,
হঠাৎ নিলয় কিছু না বলে অর্ধেক খাবার রেখে উঠে চলে গেল,
ওর এমন কান্ড আমরা সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এর আবার কি হল কে জানে,
.
এভাবেই উনার সাথে খুনশুটির মধ্য দিয়েই দিন চলছে,
রাতে ঘুমাতে সময় উনি শর্ত দিয়ে বসলেন ,হয় উনার বুকে ঘুমাতে হবে না হয় বেলকুনিতে গিয়ে একা শুতে হবে, আমি যা ভয় পাই জীবনেও একা বেলকুনিতে ঘুমাতে পারবো না ,
তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন উনার বুকের উপরই ঘুমাতে হয়,
প্রথম প্রথম অস্বস্তি হলেও এখন আর কোনো সমস্যা হয় না অভ্যাস হয়ে গেছে,
এখন মনে হয় উনার বুকের উপর না ঘুমালে আমার বোধ হয় ভালো করে ঘুমই হবে না।
আমি কম যাই না রাত বিরাতে এটা ওটা খেতে মন চাইছে বলে উনাকে জ্বালাতন করি,
আর উনিও যত রাতই হোক না কেন সেটা নিয়েই আসেন,
আবার কখন ও চাঁদ দেখতে মন চাইছে বলে সারা রাত উনাকে ঘুমাতে না দিয়ে বেলকুনিতে আমার পাশে বসিয়ে রাখি,
কখনও বা ঘুম আসছে না বলে উনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি নিয়ে গিয়ে ছাদে হাঁটা হাঁটি করি,আর উনি ঘুম ঘুম চোঁখ নিয়ে আমার পাশে হাঁটতে থাকেন,
উনার ঘুম কাতর অবস্তা দেখে আমার খুব হাসি পায়,
উনাকে এভাবে জ্বালাতন আমার ভীষন ভালো লাগে,
আর উনি ও কম যান না,সারা দিন আমার পেছনে পড়ে থাকেন,
নিচে যখন কাজ করি হুট করে এসে পেছন দিক থেকে জরিয়ে ধরেন আবার কখনও কখনও সবার সাথে বসে আছি হুট করে এসে সবার চোঁখের আড়ালে গালে কিস করে বসেন,
আমি ভয়ে লজ্জায় একাকার হয়ে যাই যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয়ে,
খাবার খেতে বসে প্রায়ই একি বাহানা থাকে হাতের ব্যাথা খেতে পারছি না ,তখন আমাকে খাইয়ে দিতে হয়,
রান্না ঘরে গিয়ে শান্তি নেই সেখানে কোনো না কোনো বাহানায় চলে যান,তখন কাজের লোক ,আপু সবাই মিলে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসা হাসি করেন,কাজের লোকেরা তো ফিসফিসিয়ে বলা শুরু করে,
ছোট ভাইজান বিয়ের আগে কোনো দিন ভুলেও রান্না ঘরে এসে পা দেন নি,এখন কেমন ভাবির জন্য রান্না ঘরে এসে উকিঁ মারেন,
ওদের ফিসফিসানি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসা হাসির কারনে লজ্জায় আমি রান্না ঘর থেকে চলে আসি।
মাঝে মাঝে উনি যখন আমার উপর রেগে যান আমি কিছুই বলি না চুপচাপ দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করি,পরে যখন উনার রাগ কমে আমার সাথে কথা বলতে আসেন তখন আমি কথা না বলে মুখ গুমরা করে বসে থাকি ,সেটা দেখে উনি কান ধরে উঠা বসা শুরু করেন,এমন বদ রাগী লোককে এভাবে বাচ্চাদের মত কান ধরতে দেখে যে কারোই হাসি পাবে,উনার এমন বাচ্চাদের মত কান্ড দেখে আমি আর গুমরা মুখে বসে থাকতে পারি না হেসে ফেলি।
.
উনার এই সব ছোটখাটো আবদার পাগলামো এখন আর খারাপ লাগে না বরং ভালোই লাগে,উনাকে ও আগের মতো বিরক্তিকর লাগে না,
মাঝে মাঝে উনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে প্রায়ই আবেগ মাখা কন্ঠে এই কথা গুলো বলেন,
-তোমার কাছে আমার দুইটা জিনিস চাওয়ার আছে সুহা ,এক হলো তোমার ভালবাসা আর দুই হলো আমাদের ছোট্ট প্রিনসেস,এ ছাড়া আমি আর কিছুই চাই না,তুমি কি এই দুইটা জিনিস আমাকে দিবে,এ দুটি জিনিস ছাড়া আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই ,তুমি কবে আমাকে ভালবাসবে ,নিজের মুখে আমাকে ভালবাসার কথা বলবে নিজ থেকে আমাকে তোমার কাছে টেনে নিবে,
উনার এই কথাগুলো শুনলে আমাকে উনার জোর করে বিয়ে করার কথা মনে পরে যায় ,আমার প্রতি বাবা,মায়ের অভিমানের কথা মনে পরে যায়,তখন আমি কিছু না বলে মন খারাপ করে উনার কাছ থেকে সরে যাই ,ছাদে গিয়ে একা একা বসে কান্না করি,
উনার প্রতি এখন আমার কোনো রাগ না থাকলেও অনেক অনেক অভিমান জমা আছে,উনি আমার সাথে যা করেছেন সেটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারবো না।
.
নিলয় এখন ও আমাদের বাসাতেই আছে ,
আমি যখন একা থাকি ও কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিন্তু উনি যখন আমার আশে পাশে থাকেন তখন ও সেখান থেকে সরে যায়,ওর আচরন ও কেমন অদ্ভুত লাগে,উনি যখন বাসায় থাকেন না আমার রুমের পাশে ঘুর ঘুর করে,আমি ছাদে গেলে আমার পিছন পিছন সেখানে চলে যায় ,কথা বলতে চাইলে কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,মনে হয় যেন ও আমাকে কিছু বলতে চায়।
.
রাতে টেবিলে খাবার সাজাঁচ্ছি খুব গরম লাগছে শাড়ী পরে আছি তার উপর চুল গুলো ছাড়া,
উনার আবার নির্দেশ আছে রুমে বাইরে আসলে চুল খোপা করা যাবে না,খুব গরম লাগছে চুল গুলো কাজে বাঁধা দিচ্ছে বার বার সামনে চলে আসছে,
চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম এখান আপাতত কেউ নেই তাই চুল গুলোকে খোপা করে নিয়ে কাজ করতে লাগলাম,
হঠাৎ করে কেউ চুলগুলোতে একটা টান দিয়ে খোপাটা খুলে দিল,
ভয় পেয়ে পিছন ফিরে দেখি উনি রক্তচুক্ষু নিয়ে দাড়িয়ে আছেন,
উনাকে এভাবে দেখে আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম,
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়,একটুর জন্য চুলটা খোপা করেছি সেটাও উনি এসে দেখে ফেললেন,এতো রেগে যাওয়ার কি হল এখানে তো কেউ নেই,কারো সামনে তো আর করিনি,কিভাবে তাকিয়ে আছেন দেখে মনে হচ্ছে আমাকে গিলে খাবেন,
আমি ভয়ার্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম উনি কিছু না বলে রেগে মেগে আমার এক হাত ধরে টেনে রুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন ,ভয়ের কারনে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না,যাওয়ার সময় দেখলাম নিলয় ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে আছে ,নিলয়কে দেখে আমি বেশ অবাক হলাম,
ও কখন এখানে এলো ,আমি তো এখানে কেউ ছিল না দেখে চখোপা করেছিলাম,ও কখন এলো টেরই তো পেলাম না,এর জন্যই কি উনি এতো রেগে গেলেন।
যদি সেটাই হয় তাহলে আমার কপালে বিরাট দু:খ আছে আছে।
ভয়ে আমার ঘাম ঝরতে লাগল।রুমে এসেই উনি দরজাটা বন্ধ করে দিলেন,আর আমি অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
#চলবে???