#অভিমান
#পর্বঃ১৪
……………
.
উনার এমন এক্সপ্রেশন দেখে ভয়ে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল,আজ যে আমার কপালে কি পরিমান দু:খ আছে সেটা একমাএ আল্লাহ ভালো জানেন
উনার দিক থেকে চোঁখ সরিয়ে নিলাম,
এখানে আসা আগন্তুক ব্যাক্তিটি হচ্ছে আমার কলেজ লাইফের বন্ধু নিলয় ,
আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু,ও দেখতে শুনতে খুবই হ্যান্ডসাম একটি ছেলে,
কলেজের অনেক মেয়ের ক্রাস ছিল,কিন্তু আমি ওকে সবসময় বন্ধুর নজরে দেখেছি ওর জন্য আমার মনে বন্ধুর থেকে বেশী আলাদা কোনো ফিলিংস নেই ,এ যে আমাকে ধরেছে তো ধরেছেই ছাড়ার কোনো নামই নেই,কাব্য ভাইয়ার চোখ মুখের ভয়ংকর অবস্তা দেখে,
আমি দ্রুত ওকে বলতে লাগলাম,
এই নিলয় কি করছিস ছাড় আমাকে ,এভাবে জরিয়ে ধরে দম বন্ধ করে মেরে ফেলবি নাকি,তারপর বিরবির করে বলতে লাগলাম ,এখানে কে উপস্থিত আছে তুই তো জানিস না ,তুই নিজে মরবি সাথে আমাকেও মারবি।আমি আবার বললাম,কি হল ছাড় না রে ভাই,
আমার কথা শুনে নিলয় আমাকে ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক স্বরে এক্সসাইটেড হয়ে বলে উঠল,
‘ও মাই গড সুহা !!!তুই এখানে ???আমি তো ভাবতেই পারছি না তোকে এখানে এভাবে পেয়ে যাবো,,
আমি ওর চেয়ে দ্বিগুন অবাক হয়ে বলে উঠলাম,
‘তুই এখানে কিভাবে???আর তুই কবে ইংলেন্ড থেকে দেশে ফিরেছিস ????
‘আরে এটা তো আমার ফুফির বাসা ,এক সপ্তাহ হলো আমি দেশে এসেছি,কিন্তু তুই এখানে কি করছিস???নিলয় বলল অবাক হয়ে,
আমাদের কথোপকথন শুনে আপু আর কাব্য ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন,তারা হয়তো এখানে কি ঘটছে সেটাই বুঝার চেষ্টা করছেন,
কাব্য ভাইয়ার চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়,
আপু আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন ,
‘সুহা তুই উনাকে কি ভাবে চিনিস,
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম,আপু ও আমার কলেজ লাইফের খুব ভালো একজন বন্ধু ,আমরা একি সাথে কলেজ লাইফ শেষ করেছি,ভার্সিটিতে উঠার পর ও ইংল্যান্ড চলে যায়,
আপুকে দেখে নিলয় বলে উঠল,
তুমি তো স্নিগ্ধ ভাইয়ার ওয়াইফ ,হায় ডিয়ার সুইট ভাবি ,
আপু নিলয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
তোমার কথা স্নিগ্ধ আর মায়ের মুখে অনেক শুনেছি ,তোমার ফটোও ও দেখিয়েছে কিন্তু তুমি আমাকে কিভাবে চিনলে,
‘তোমাদের বিয়ের ফটো দেখেছি ,তাই চিনতে অসুবিধা হয় নি,আপুর কথায় হেসে জবাব দিল নিলয়,
কাব্য ভাইয়া যে এখানে উপস্থিত আছেন সেটা ও লক্ষ্যই করলো না ,
সে আমাদের সাথেই কথা বলায় ব্যাস্ত রইল,
ও আবার আমাকে প্রশ্ন করল ,সুহা তুই উনাদের কিভাবে চিনিস,আর তুই তো আগের থেকে আরো বেশী সুন্দর হয়ে গেছিস,শাড়ী পরে আছিস কেন ?তোকে দেখতে একদম বৌ বৌ লাগছে ,
নিলয়ের কথায় আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম ,কার সামনে কি বলছে বোকাটা বুঝতেও পারছেনা,উনার দিকে যদি ও একবার তাকাতো তাহলে কথাগুলো গলায়ই আটকে যেত আর বাইরে বের হতো না,আমি একবার আড় চোঁখে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বিব্রতভাবে হেসে নিলয়কে বলে উঠলাম,
এটা আমার বোনের শশুড় বাড়ি ,আপুকে চোঁখ দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে বললাম,উনি আমার বড় বোন।
আমার এই কথাটা বলা মাএ কাব্য ভাইয়া রাগে ফোঁসফোঁস করে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন,উনাকে এভাবে আসতে দেখে আমি ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,
কাব্য ভাইয়াকে দেখে নিলয় একটা চাপা চিৎকার দিয়ে কাব্য ভাইয়াইকে জরিয়ে ধরে বলে উঠল,
ব্রো !! কেমন আছো??কতদিন পর তোমার সাথে দেখা,
কাব্য ভাইয়া নিলয়কে উনার থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলতে লাগলেন ,
এতোক্ষনে ভাইয়ের কথা মনে পরলো ,কলেজের বন্ধুকে পেয়ে এতো এক্সাইটেড হয়ে পরলি এখানে আর কারো উপস্থিতিই লক্ষ্য করলি না,সবার সামনে একেবারে জরাজরি শুরু করে দিয়েছিস,
‘আসলে ব্রো দেশে আসার পর একটা প্রয়োজনে সুহাকে খুঁজছি ,ভার্সিটিতে গিয়ে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি তাই এখানে এসে হঠাৎ ওকে পেয়ে একটু বেশী এক্সাইটেড হয়ে পরেছি ,মাথা চুলকে একটু লজ্জিত হাসি হেসে উনাকে কথা গুলো বলল নিলয়,
আমাকে ও এতো খুঁজছে কিন্তু কেন,কথা গুলো ভেবে আমি কপাল কুচকে তাকালাম নিলয়ের দিকে,
নিলয় আমার দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠল,
‘এটা তোর বোনের শশুড় বাড়ি ,তুই ভাবির ছোট বোন ওয়াউ গ্রেট!!!!
ওর কথা গুলো শুনে কাব্য ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে হেসে বলে উঠলেন,
এটা সুহার বোনের শশুড় বাড়ি শুনে এতো খুশি হয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছিস এর পরের খবরটা শুনলে তো খুশিতে দাঁত গুলো খুলে পরবে,
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে নিলয় অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠল,
‘কি বললে বুঝতে পারলাম না ব্রো !!
‘এটা শুধু সুহার বোনের শশুড় বাড়ী নয় এটা সুহার ও শশুড় বাড়ী।।
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে আমি বিব্রত ভাবে নিলয়ের দিকে তাকালাম,নিলয়ের মুখটা কেমন যেন দেখালো,ওর মুখটা পাংশুবর্ন হয়ে গেল ও অবিশ্বাস্য সুরে বলে উঠল,
মানে!!!!
ওর কথায় কাব্য ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলেন,ওর সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেই
ও হচ্ছে মিসেস কাব্য মেহরাব আর তোর ছোট ভাবি,
তাই ওকে নাম ধরে না ডেকে ভাবি বলে ডাকলে আর তুইতুকারি না করে তুমি করে বললে বিষয়টা ভালো দেখায়,,,
উনার বলা কথাটা আমার কানের মাঝে কয়েক বার প্রতিধ্বনী হলো,মিসেস কাব্য মেহরাব ,আমি মিস থেকে মিসেস হয়ে গেছি,গতকাল সকাল পর্যন্ত আমি মিস সুহা ইসলাম ছিলাম এবং দুপুরে কবুল বলার পর থেকে আমি মিসেস সুহা কাব্য মেহরাব হয়ে গেলাম,একদিনের ভিতরে আমার সম্পূর্ন জীবন বদলে গেল,আমার জীবনের সঙ্গে অন্য একটা জীবন জরিয়ে গেল,বিষয়টা আমার নিজের কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে,
নিলয় একবার আমার দিকে তাকাল,তারপর আবার উনার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠল,
ব্রো তুমি বিয়ে করেছো আর আমরা কিছু জানি না, মা ও তো আমায় কিছু বললেন না তুমি নিশ্চই মজা করছো আমার সাথে তাই না?নাইস জোকস ব্রো।
‘আমি একদম মজা করছি না নিলয়,আমরা ভালেবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছি আর পালিয়ে বিয়ে করলে নিশ্চই কারো জানার কথা না,বিয়ে করেছি মাএ একদিন হয়েছে এতো অল্প সময়ের মধ্যে কাউকেই জানানো হয় নি,কাব্য ভাইয়া কথা গুলো বলে উঠলেন দ্বিদাহীন ভাবে,
সব শুনে নিলয় কেমন অদ্ভুত নয়নে তাকল আমার দিকে তারপর থমথমে গলায় বলে উঠল,
‘সুহা তুমি ব্রোকে ভালবাসো আর তুমি কি সত্যি বিয়ে করে ফেলেছো,তুই তো এসব বিষয়ে ভয় পেতি সব সময় এই বিষয়গুলি এড়িয়ে চলতি,আর সেই তুই কিনা পালিয়ে বিয়ে করেছিস??আমি তোর মুখ থেকে আরো একবার সব শুনতে চাই,
আমি কিছু না বলে চুপ করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ,ওর একটা প্রশ্নের উওর আমার কাছে আছে কিন্তু অপর একটা প্রশ্নের উওর আমার জানা নেই,
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আপু আমাদের পাশে এসে বলে উঠলেন,হ্যা নিলয় ভাইয়া ওরা কালই কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।
কথাটা শুনে ওর চেহারা যে পরিবর্তন হয়ে গেছে সেটা আমার চোঁখ এড়ালো না,আমার বিয়ে কথা শুনে ওর মুখটা এমন হয়ে গেল কেন কে জানে,
কাব্য ভাইয়া নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
আমার বিয়ে সম্পর্কে আর কোনো কনফিউশন থাকলে মায়ের কাছ থেকে জেনে নিস ,আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি না কি উপরে মায়ের কাছে যা তোকে দেখলে মা খুব খুশি হবেন,ভাবি ওকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও,বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
সুহা আমার সঙ্গে একটু আসো তো,
উনার ডাকটা শুনে আমার অন্তর আত্মা কাঁপে উঠল,
উনার কন্ঠটা অন্য রকম শুনালো,উনার কি হলো এতো রেগে আছেন কেন,আমি না শুনার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলাম,
উনি আবার একি কন্ঠে বলে উঠলেন,
সুহা তোমাকে আমি কিছু বলছি ,এক্ষুনি আমার সঙ্গে রুমে আসো না হলে কিন্তু,
উনাকে এভাবে রেগে যেতে দেখে ভয়ে আমি দ্রুত রুমের দিকে যেতে লাগলাম ,অপ্রস্তুত ভাবে হাঁটায় শাড়ী পায়ে জারিয়ে পরে যাচ্ছিলাম,আমি মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলাম,
কাব্য ভাইয়া আর নিলয় দুজনই দৌড়ে এলো আমাকে ধরার জন্য কিন্তু উনি এসে আমায় ধরে নিলয়কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
আমার বৌকে সামলানোর জন্য আমি আছি ,আমি যতদিন বেঁচে আছি ওকে রক্ষা করার জন্য কারো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই ,বলেই উনি আমাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে লাগলেন ,আমি অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,উনি নির্বিকার ভাবে হাঁটতে লাগলেন,
অন্য দিকে ভাংচুর হৃদয় নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেউ একজন তাকিয়ে রইল ওদের যাওয়ার দিকে।(চলবে )