#অভিমান
#পর্বঃ০৫
……………
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া গাড়ীতে হেলান দিয়ে দুহাত পকেটে পুরে গম্ভির মুখ নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন।
উনার চোঁখ মুখ ফোলে রয়েছে ,চোঁখটা ও ভীষন লালচে হয়ে আছে দেখে বুঝা যাচ্ছে রাতে একটুও ঘুমাননি।
উনাকে দেখে আমার মাথা ভন ভন করে ঘুরছে ,কান দিয়ে মনে হচ্ছে গরম ধোয়া বের হচ্ছে।
ভয়ে আমার অসহনিয় গরম লাগছে ,শরীর থেকে ঘাম ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে।
নিজেকে প্রচন্ড শক্তিহীন অসহায় লাগছে।
পা দুটি ভয়ে জমে বরফ হয়ে গেছে,মন চাইছে এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যাই কিন্ত এক পা ও নড়তে পারছি না।
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
এক পা ও এগুতে পারলাম না।
আমি সব সময় যা ভাবি হয় তার উল্টোটা সেটার আবার প্রমান পেয়ে গেলাম।
ভেবেছিলাম কাব্য ভাইয়া উঠার আগেই এখান থেকে পালিয়ে যাবো কিন্তু পুরা কপাল আমার আমার আগেই উনি উঠে বসে আছেন।
এখন কিভাবে পালাবো সেটাই ভাবতে লাগলাম।
বিপদের সময় নিজের মাথাটাও শত্রু হয়ে যায় একদমই কাজ করে না।
.
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন ।
সেটা দেখে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ।
এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে তাকলে যে আমি ঘোর বিপদের মাঝে পরবো সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে।
নিজের মাঝে সাহস যুগিয়ে প্রাণ পণে দিলাম এক দৌড় কিন্তু বেশী দূর যেতে পারলাম না তার আগেই কাব্য ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে ফেললেন শক্ত করে।
হাত ধরায় আমি ঘুরে তাকাতেই উনি আমার হাতে একটা হেচকা টান দিলেন আর আমি গিয়ে পরলাম উনার বুকে।
আমার কপালটা উনার বুকে গিয়ে ঠেকল,
উনি উনার হাত দিয়ে আমার কোমরটা শক্ত করে ধরে রইলেন।
আমি মাথা তুলে তাকাল কাব্য ভাইয়ার দিকে ,
উনি কঠোর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি তাকতেই কাব্য ভাইয়া চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন,
‘আমি ভেবেছিলাম তুমি এমন কিছুই করবে ,তাই তো সেই ভোর বেলা থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তোমাকে ধরার জন্য।
আর তুমি কিনা আমাকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছো।
তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে পালাতে দেবো।
এই কাব্যর কাছ থেকে পালানো এতো সহজ নয়।
এক মাএ আল্লাহ আর মৃত্যু ছাড়া এই পৃথিবীতে কারো সাধ্য নেই তোমাকে আমার কাছ আলাদা করার।
এতদিন অনেক সহ্য করেছি তোমার এই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো কিন্তু আর নয়।
তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি ,ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে তুমি আমার সাথে সহজ হতে পারবে,কিন্তু এখন বুঝতে পারছি তুমি
ঠিক হওয়ার মানুষ নও।
কাব্য ভাইয়ার বলা কথা গুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গেল ,আমি তো উনার কথা কিছুই মন দিয়ে শুনছি না, আমি ব্যস্ত নিজেকে উনার হাত থেকে ছাড়াতে।
অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ ।কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না।অবশেষে পরাজিত মুখ নিয়ে,
কাব্য ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠালাম,
‘প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছাড়ো আমি বাসায় যাবো,
আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি আমার সাথে এমন করছো কেন?
আমার একথা শুনে কাব্য ভাইয়া তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠলেন,
‘তুমি তো আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে ফেলছো,
যা এত দিন কারো করার সাধ্য হয়নি ,
তুমি আমার এতো বড় একটা ক্ষতি করেছো যেটার জন্য এই কাব্য নিজেকে নিজের মাঝ থেকে হারিয়ে ফেলেছে।
তোমাকে আমি কিছু বলার জন্য অনেক বার তোমার কাছে গিয়েছি ,কিন্তু তুমি আমাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বার বার হয় এড়িয়ে গেছো নয় পালিয়ে গেছো,
এই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো খেলাটা আমি আর নিতে পারছি না।
আজ আমি এমন কিছু করবো যা তোমার পালিয়ে বেরোনোর সব রাস্তা বন্ধ করে দিবে।
ক্ষতি যখন করেছো ক্ষতি পূরণ তো তোমাকে দিতেই হবে।
বলেই উনি আমার কোমড় ছেড়ে আমার হাত ধরলেন শক্ত করে,তারপর টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন গাড়ীর দিকে।
আমি অনেক মিনতি করলাম যে আমি উনার সাথে যেতে চাই না কিন্তু উনি আমার কোনো কথাই শুনলেন না ,জোর করে আমাকে গাড়িতে তুলে দরজা লক করে দিলেন,
তারপর উনি এসে উঠে বসে গাড়ী স্টার্ট দিলেন।
সেটা দেখে আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
‘আমি তোমার সাথে যেতে চাই না আমি একাই বাসায় ফিরতে পারবো,
তোমার আমাকে পৌচ্ছে দিতে হবে না ,প্লিজ গাড়ি থামাও!!
কিন্তু উনি আমার কোনো কথার উওর দিলেন না নির্লিপ্ত ভঙিতে ড্রাইভ করতে লাগলেন ।
ড্রাইভ করতে করতে উনি কার সাথে ফোনে কি যেন কথা বলতে লাগলেন ,
আমি সেটা বুঝতে পারলাম না কারন আমি তখনও উনার দিকে তাকিয়ে একনাগারে বলে চলছি গাড়ী থামাতে ।
অনেকক্ষন একি কথা বলতে বলতে আমি হাপিয়ে উঠালাম কিন্তু কাব্য ভাইয়ার কোনো হেলদোল নেই উনি মুখে গাম্ভীর্যপূর্ন ভাব রেখে নিজের মতো গাড়ী চালাচ্ছেন আমার দিকে তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত।
বুঝতে পারলাম আমার আর কিছুই করার নেই,আমি শুধু শুধু নিজের এনার্জি লস করছি উনি তো আমার কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না।
বড় একটা নি:শ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকালাম ।
তাকিয়ে আমার চোখ ছানা বড়া হয়ে গেল।
এটা তো আমার বাসার রাস্তা নয় ,উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
রাস্তার দিকে তাকিয়ে আমি এক বিকট চিৎকার দিয়ে বলে উঠালাম,
‘ভাইয়া এটা আমার বাসার রাস্তা নয় তুমি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো,
আমার চিৎকার শুনে কাব্য ভাইয়া জোরে গাড়ী ব্রেক করলেন তারপর অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন,
উনার এভাবে তাকানো দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলেম,
একটা ঢোক গিলে তুতলাতে তুতলাতে বলে উঠলাম,
‘ তু তুমি ভুল রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো।
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া মৃদু গর্জে উঠে বললেন,
আমি অন্ধ নই কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি সেটা আমি স্পট দেখতে পাচ্ছি ।
যদি তুমি মুখ বন্ধ না করে বসো কি করে মুখ বন্ধ করতে হয়ে সেটা আমার ভালো ভাবে জানা আছে ।
রাতের কথা নিশ্চই ভুলে যাও নি সেই রকম কিছু যদি না চাও মুখ বন্ধ করে বসে থাকো।
উনার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম তবুও সাহস যুগিয়ে বলে উঠলাম,
‘ভাইয়া আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
আমার কথা শুনে উনি একটু দুর্বোধ্য হেসে বললেন,
‘কোথায় যাচ্ছি সেটা একটু পরই বুঝতে পারবে।
আর যদি কোনো প্রশ্ন করো তাহলে রাতের ঘটনাটা এখানে আবার ঘটবে ।
আমার কিন্তু কোনো প্রবলেম নেই,তোমার ঠোঁটের টেস্টটা কিন্তু অসাম।
নাউ চয়েজ ইজ ইউস!!!
বলেই উনি আবার গাড়ী ড্রাইভিং করতে লাগলেন।
উনার কথা শুনে আমি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে তাকিয়ে রইলাম,
আর একটি কথাও বলতে পারলাম না,
রাতের ঘটনা আবার ফেইস করার মতো সাহস আমার নেই ।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ,উনি চাইছেনটা কি,
অজানা ভয়ে আমার বুক ধুর ধুর করে কাঁপতে লাগল,
অনেক প্রশ্ন আমার মাথার মাঝে ঘুরা ফিরা করছে কিন্তু ভয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারছি না।
আমি এক মনে ভেবেই চলছি ,আমি উনার কি ক্ষতি করলাম ,আমার জানা মতে আমি তো উনার কোনো পাকা ধানে মই দেই নি,তাহলে উনি কিসের ক্ষতির কথা বলছেন।
নিজের অজান্তেই কি উনার কোনো বড়সড় ক্ষতি করে ফেললাম।আর সেটার শাস্তি দিতেই কি উনি আমাকে কোনো গোপন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে খুন করতে।
খুন কথা মনে হতেই ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠল,আমি ভয়ে ভয়ে চোরা চোঁখে একবার কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম ,উনার মুখের দিকে তাকালে কেউই বুঝতে পারবে না উনি এতো ভয়ংকর একজন মানুষ,
আজই কি তাহলে আমার শেষ দিন,
ভয়ে আমি এসি গাড়ীর মধ্যেও কুলকুল ঘামতে লাগলাম।
হঠাৎ গাড়ী থামার শব্দে আমার ভাবনার ঘোর কাটল।
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া গাড়ী থেকে নামছেন,
উনি নেমে আমার দিকের দরজা খুলে দিলেন ,আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি চোঁখ দিয়ে ইশারা করলেন নামতে,
আমি গাড়ী থেকে নেমে সামনের দিকে তাকলাম, তাকিয়েই আমার চোঁখ বিষ্ফোরিত এবং মুখ রক্ত শূণ্য হয়ে গেল।(চলবে)
বি:দ্র:(পার্ট ছোট হওয়ার জন্য দু:খিত)