অবেলায়_তুমি পর্ব ১৭

0
364

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৭)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আসছে শুক্রবারে তনু সারাজীবনের জন্য আকাশের হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সকলের সামনে স্বীকৃত পাবে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি ভাবে বেখবর সোহান শুধরে যাওয়ার বদলে আরো বড় ধরনের কিছু প্ল্যান করছে। আকাশ খুশি মনে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আকাশের মা রহিমা বেগম ছেলের খুশমেজাজ দেখে ছেলেকে জিজ্ঞাস করে,

–‘আকাশ কি হয়েছে? অন্য দিনের তুলনায় আজ তোকে একটু খুশি খুশি দেখাচ্ছে। সাধারণত অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলে তোর চেহারায় ক্লান্তি থাকে। কিন্তু আজ আমি তোর চেহারায় কোনো প্রকার ক্লান্তি দেখতে পাচ্ছি না। কাহিনী কি আকাশ?’

–‘মা একটা সুসংবাদ আছে।’

–‘কি সুসংবাদ?’

–‘আগে আমি নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ ট্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আসি। আর তুমি চা বসাও চুলোয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে চা খেতে খেতে সুসংবাদ বা গুড নিউজটা দিব।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চুলোতে চা বসাচ্ছি। তুই জলদি করে ফ্রেশ হয়ে আয়।’

আকাশ নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বেরিয়ে মা’য়ের কাছে আসে। আকাশের মা রহিমা বেগম ছেলের জন্য চা করে এনে সবে কেবল টেবিলের উপর রেখেছে। আর আকাশ ও ইতিমধ্যে হাজির। ছেলের আগমনে রহিমা বেগম বলে,

–‘এই যেনতোর চা। আর এবার বল কি গুড নিউজ আছে।’

আকাশ টেবিলের উপর থেকে চায়ের কাপ উঠিয়ে নিয়ে দুইটা চেয়ার টেনে একটাতে নিজে বসে। আরেক টাতে নিজের মা’কে বসতে বলে। রহিমা বেগম চেয়ারে বসে পূনরায় ছেলেকে আবার বলে,

–‘এবার বল কি গুড নিউজ আছে।’

–‘মা আসছে বৃহস্পতিবার অফিসে ছোট খাটো একটা আয়োজন করে আমাদের বিয়ের বিষয়ে সবাইকে জানাবো। আর শুক্রবার আমাদের দুই পরিবারকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে আমরা সারাজীবনের জন্য আবারো বিয়ে করবো।’

–‘কিহহহ! সত্যি বলছিস তুই?’

–‘হ্যাঁ মা সত্যি বলছি। আজ তনুই আমাকে এসব বললো।’

–‘যাক খুশি হলাম কথাটা শুনে। কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে আমার।’

–‘কি প্রশ্ন মা?’

–‘তনুর তো টাকা পয়সার অভাব নেই। সে চাইলে একটা অনুষ্ঠান করে বিয়েটা করতে পারে। কিন্তু সে তা না করে কোর্ট ম্যারেজ কেন করবে? আর লোকে কি বলবে তার এই জিনিসটা নিয়ে?’

–‘মা তনুর নাকি ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। তাই সে কোর্ট ম্যারেজ করবে। আর লোকজন বলতে অফিসের লোকজন এই আছে। তাঁদের জন্য তো সে বৃহস্পতিবার একটা আয়োজন করছেই।’

–‘তাও বিষয়টা কেমন যেনো লাগছে আমার কাছে! কারণ তোর না হয় সেভাবে কোনো পরিচিত লোকজন নেই। কিন্তু তনুর তো অফিস ব্যতীত পরিচিত আরো লোকজন আছে। তারা পরবর্তীতে কি না কি বলবে। আর সে যেহেতু অফিসে অনুষ্ঠান করবেই, তাহলে সেই অনুষ্ঠানে অফিসের লোকজনের পাশাপশি তার পরিচিত লোকজন গুলোকে ইনভাইট করলে বিষয়টা আর জটিল হয় না। আর সে চাইলে কোর্টে বিয়ে না করে অফিসের অনুষ্ঠানের মধ্যেই কাজি ডেকে সবার সামনে তোকে বিয়ে করতে পারে। তাহলে একেবারেই সব হয়ে যায়। আলাদা করে বৃহস্পতিবারে অফিসে আয়োজন করবে। আবার শুক্রবারে কোর্ট ম্যারেজ করবে। এতো ঝামেলা করার তো আর দরকার পড়ে না।’

–‘মা তনুর ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই সেটা সে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। তাই হয়তো সে কোর্ট ম্যারেজ করবে। এছাড়া কেন সে শুধু অফিসের মানুষজনকে আয়োজন করে খাওয়াবে বাকি আরো মানুষজনকে রেখে, সেটা তনুই একমাত্র ভালো জানে! তবে আমার যতদূর মনে হয় তনু আমার কারণেই বাহিরের কাউকে দাওয়াত করবে না বা বাহিরের কারোর জন্য কোনো আয়োজন করবে না। কারণ আমার কোনো কিছু নেই এই জিনিসটা নিয়ে মানুষ এটা সেটা বলতে পারে, তাই হয়তো তনু এই বিষয়টা খেয়াল রেখে অফিসের লোকজন বাদে কারোর জন্য কোনো আয়োজন করছে না।’

–‘হ্যাঁ এমনটাও হতে পারে। তনু হয়তো তোর এই দিকটা খেয়াল করে নিজের মতন সব চিন্তা-ভাবনা করেছে। তবে যাই হোক আমি খুশি তুই আর তনুর মিলন হওয়ায়। কারণ মেয়েটাকে তুই কতোটা ভালোবাসিস সেটা আমার অজানা নয়। আমি শুকরিয়া আদায় করছি তোদের মিলন হওয়ায়।’

–‘মা দোয়া করো। আর আমি আগামীকাল গিয়ে খালার বাড়ি থেকে আফিয়াকে নিয়ে আসবো। তারপর তুমি আর আফিয়া দু’জনে শুক্রবারে রেডি হয়ে থাকবা কোর্টে ম্যারেজ করার জন্য আমার সাথে যেতে।’

–‘আচ্ছা বাবা।’

আকাশ চা খাওয়া শেষ করার পাশাপাশি মা’য়ের সাথে কথা বলে আবার নিজের রুমে চলে যায়। পরেরদিন যথারীতি অফিসে চলে যায়। ডেস্কে বসে বসে তনুর অপেক্ষা করছে সে। তনু এখনো অফিসে আসিনি। কিছুক্ষণ পর তনু অফিসে চলে আসে। তনু আসার পর আকাশ তনুর সঙ্গে তনুর কেবিনে গিয়ে তনুকে বলে,

–‘তনু আজ আমার ছুটি লাগবে। আমার একটা জায়গায় যেতে হবে।’

–‘কোথায় যাবে তুমি? আমি যে আজ আরো তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান করলাম।’

–‘দুপুরে পর ছোট বোন আফিয়াকে খালার বাড়ি থেকে আনতে যাবো। তাই ছুটির দরকার ছিল।’

–‘আরেহ ছুটি নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে আমি ভেবেছি আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তিনটা বা সাড়ে তিনটার নাগাদ অফিস ছুটির কিছু সময় আগে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো। কিন্তু তুমি তো আফিয়াকে আনতে গেলে আর অফিসে আসবে না। সোজা বাড়ি চলে যাবে। আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না? তুমি এখুনি চলে যাও আফিয়াকে খালার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য। দুপুরে না হয় অফিসে চলে এসো৷ তারপর রোদের উত্তাপ কমলে দু’জনে তিনটা সাড়ে তিনটা নাগাদ শপিং করতে যাবো।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তনুর কথা মতন দুপুরে না গিয়ে এখুনি খালার বাড়ি থেকে আফিয়াকে আনতে চলে যায় আকাশ।
খালার বাড়ি গিয়ে খালাকেও বিয়ের কথা জানায়৷ আকাশের খালা নাজিয়া বেগম আকাশের বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে আকাশের হাতে হাজার দশেক টাকা দিয়ে বলে,

–‘আকাশ এই টাকা গুলো নিজের বিয়ের প্রয়োজনে খরচ করিস৷ আমরা শুক্রবার বিকাল করে তোর বাড়ি যাবো। আর তোরা যেহেতু কোর্ট ম্যারেজ করবি, তাহলে আমাদের আগে গিয়ে কোনো কাজ নেই। ধীরেসুস্থে বিকাল করে সপরিবারে তোর বউকে দেখতে যাবো।’

–‘ঠিক আছে খালা। তবে খালা একটা আবদার ছিল।’

–‘কি আবদার আকাশ?’

–‘খালা আমি তো তনুকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। আর আমারো কিছু দায়দায়িত্ব আছে তনুর উপর। কিন্তু আমার হাতে তোমার দেওয়া হাজার দশেক টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নেই। আর আজকে তনু আমাকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে চাচ্ছে। আমার মনে হয় না শপিংয়ে গেলে অল্প টাকায় হবে। হ্যাঁ আমি জানি তনু নিজেই খরচ করবে টাকা পয়সা। কিন্তু তার পরেও আমারো তো কিছু কর্তব্য তার জন্য খরচ করা। খালা তোমার কাছে কি আর হাজার দশেক টাকা হবে? আমি মাসের শেষে বেতন পেলেই টাকাটা তোমায় দিয়ে দিব।’

–‘না রে বাবা আমার কাছে তো আর কোনো টাকা নেই রে। যা ছিল সব তোকে একমুঠ করে দিয়ে দিয়েছি। আর তুই তো জানিস তোর আঙ্কেল ঘরে বসা। কামাই রোজকার করতে পারে না। যা করি আমি নিজেই করি। তবে তুই চাইলে একটা কাজ করতে পারিস। আমার এক জোড়া স্বর্ণের দুল আছে, যেটা বর্তমানে আমার কোনো কাজে লাগছে না। তুই সেটা দোকানে দিলে হাজার দশেক টাকা নিতে পারবি। তুই সেটা দোকানে জমা দিয়ে হাজার দশেক টাকা নে। তারপর মাস শেষে বেতন পেলে না হয় সেটা তুই দোকান থেকে ফিরিয়ে এনে দিস পরে আমাকে।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে খালার কানের দুল জোড়া নিতে সম্মতি জানায় আকাশ। আকাশের খালার অবস্থাও বেশি একটা ভালো না। একটা সময় সব কিছু মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু আকাশের আঙ্কেল অসুস্থতার কারণে কাজকাম করতে না পাড়ায় সংসারে অভাব লেগেছে তাঁদের। সবার একই দশা। আকাশের খালা আর তার নিজের পরিবারের কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। সবার জীবনেই টানা পোড়া লেগেছে। অবশ্য আকাশের মা রহিমা বেগমের ভাগ্য কিছুটা ভালো ছিল। তাই তিনার আকাশের বাবার সাথে বিয়ে হয়েছে। আর বিয়েটা আকাশের বাবা নিজেই আকাশের মা রহিমা বেগমকে করেছে। আকাশের বাবা সেলিম সাহেব একদিন রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যাওয়ার সময় আকাশের মা রহিমা বেগমকে দেখে তিনার প্রেমে পড়ে যায়। সেই এক দেখাতেই সেলিম সাহেব প্রেমে পড়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আকাশের মা রহিমা বেগমকে নিজের ঘরের বউ বানিয়ে নেয়। সংসার জীবন সুন্দর চলছিল দু’জনের। কিন্তু কপালের দূর্গতি থাকলে সেটাকে আর কে খন্ডন করতে পারে। যাক গে প্রসঙ্গটা এখানেই সমাপ্তি করি। নাজিয়া বেগম কিছু সময়ের মধ্যেই আলমারি থেকে কানের দুল জোড়া এনে আকাশের কাছে দেয়। আকাশ কানের দুল জোড়া নাজিয়া বেগমের থেকে নিয়ে সাবধানে পকেটে রাখে। এরপর আফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে খালার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়ে। দুপুরের আজানের কিছু সময় পর আকাশ আফিয়াকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়িতে পৌঁছে আফিয়াকে রেখে সময় নষ্ট না করে আবারো সে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অফিসে যাওয়ার আগে খালার থেকে আনা স্বর্ণের দুল জোড়া একটা স্বর্ণকারের দোকানে দিয়ে দশ হাজার টাকা এবং রিসিট নিয়ে অফিসে রওয়ানা হয়। দুইটার কিছু সময় পর আকাশ অফিসে এসে পৌঁছায়। তনু না খেয়ে বসে আছে। আকাশ অফিসে পৌঁছাতেই তনু আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘নিয়ে এসেছো তোমার বোনকে?’

–‘হুম নিয়ে এসেছি।’

–‘খাবার খেয়েছো?’

–‘না খাইনি। তুমি খেয়েছো?’

–‘না আমিও খাইনি। এতো সময় তুমি আসার অপেক্ষায় বসে ছিলাম।’

–‘ওহহ।’

–‘আচ্ছা যাও এবার ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসো। আমি ফোন করে খাবারের দু’টো পার্সেল আনতে বলছি। তারপর দু’জনে মিলে একসাথে খেয়ে নিব।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

আকাশ কেবিনের ভিতরে তনুর পার্সোনাল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর তনু ফোন করে দু’জনের জন্য দু’টো খাবারের পার্সেল অর্ডার করে। কিছু সময় পর আকাশ ফ্রেশ হয়ে আসে। আর তার অল্প পরেই কেন্টিন থেকে খাবারের পার্সেল চলে আসে। দু’জনে মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। এরপর সাড়ে তিনটা নাগাদ দু’জনে মিলে বিয়ের শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে পড়ে….

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।)

“তাড়াহুড়ো করে লিখায় পর্বটা বেশি একটা সুন্দর করে লিখতে পারিনি। এজন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here