#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৬)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
সোহানের ভাড়া করা ছেলে গুলো সোহানের কথা মতন আকাশকে মা’রতে আরম্ভ করে। কিন্তু কিছু সময় পর বিকট একটা আওয়াজ হয়। আর সেই সঙ্গে সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা’রা বাদ দিয়ে পিছাতে শুরু করে। সবাই ভূত দেখার মতন চমকে আছে। কারোর সাহসে আর কুলাচ্ছে না আকাশের গায়ে হাত দেওয়ার। সবার সাহস মুহূর্তের মধ্যেই রাস্তা বদল করে পালিয়েছে। আকাশ মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। ছেলে গুলো আকাশকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল মা’রার সময়। আকাশের হাতে মানুষ টপকে দেওয়ার যন্ত্র। মানে হলো আকাশের হাতে পিস্তল। আর একটু আগে যেই আওয়াজটা হয়েছে সেটা আকাশের পিস্তলের আওয়াজ ছিল। আকাশের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আকাশ পিস্তলটা কোমর থেকে বের করে হাওয়ায় চালিয়েছে। আর সেটা দেখেই সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা’রা বাদ দিয়ে দূরে সরে গিয়েছে। সবাই হতবাক আকাশের হাতে পিস্তল দেখে। বিশেষ করে সোহান আর তনু। আকাশ পিস্তলটা হাতে নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে সোহানের ভাড়া করা ছেলে গুলোর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
–‘দম ফুরিয়ে গেছে তোদের? মা’রবি না আমায় আর? আয় মা’র এখন আমাকে। তোরা আট থেকে দশজন। আর আমি একা। তোরা সকলে মিলে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লে আমার অস্তিত্ব সহ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নে শুরু হয়ে যা এবার।’
সবাই চুপ করে থাকে। আকাশের কথার প্রত্যুত্তরে কেউ কোনো কথা বলবে সেই সাহস টা পাচ্ছে না। আকাশের হাতের পিস্তলটা যেনো সকলের মুখের বুলি বন্ধ করে দিয়েছে। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে সকলেই বুঝে গেছে তারা ভুল মানুষের খপ্পরে পড়েছে। সকলে মিলে একসাথে আকাশের যেই ক্ষতি টা করবে, আকাশ সেকেন্ডের মধ্যেই চাইলে উল্টো তাঁদের আরো বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। সকলেই নিশ্চুপ। সাড়া শব্দ নেই কারোর। আকাশ বুঝে যায় সোহানের ভাড়া করা লোকজনের সাহস কতোটা। অযথা আর সময় নষ্ট না করে সোহানের কাছে চলে যায় আকাশ। কারণ ভাড়া করা লোকজনের সাথে কথা বলে আর কোনো ফায়দা নেই। সব কিছুর ভূমিকায় যে আছে তার সাথেই কথা বলা উচিত। সময় নষ্ট না করে বুদ্ধিমানের মতন সোহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আকাশ। সোহানের চোখ কপালে উঠে আছে। শায়েস্তা করতে এসে উল্টো সোহান নিজেই যেনো শায়েস্তা হয়ে গেলো। চেহারার ধরণ পাল্টে গেছে সোহানের। শুরুতে যেমন তেজ নিয়ে কথাবার্তা বলছিল বর্তমানে তার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই সোহানের মধ্যে। সোহানের পরিবর্তন দেখে আকাশের প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। তাও কোনো মতে হাসি থামিয়ে সোহানকে বলে,
–‘আমার বারোটা বাজাতে এসে উল্টো তোর নিজের উল্টো বারোটা বেজে যাচ্ছে। জানিস কোমরে পিস্তল গুঁজে রাখা শৌখিন মানুষ আমি। তুই আমাকে সাধারণ ভাবে নিয়ে অনেক বড় ভুল করেছিস। না হয়তো আজ তোর এতোটা অবাক হতে হতো না আমায় দেখে। অবশ্য তুই শুধু একা নয়। আমি নিজেও অবাক। কারণ কেন জানিস? গত পাঁচ বছর আগে যখন আমার বাবার অঢেল সম্পত্তি ছিল, তখন আমি আমার বাবার টাকা নষ্ট করে শখের বসে এই জিনিসটা কিনেছিলাম। কিন্তু কখনোই আমি এই জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিয়ে বের হই নি। আর না এই জিনিসটা আমার কখনো কাজে লেগেছে। তবে আজ অফিসে আসার সময় কেন জানি ইচ্ছে হলো জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিতে। তাই অফিসের আসার পূর্বে জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিয়েছি। কিন্তু এখন দ্যাখ আজ জিনিসটা সঙ্গে নিয়ে বের হওয়ায় আমার ফায়দা হয়েছে। তার জন্য নিজের ও অবাক লাগছে। এবার বল জিনিসটা কি সত্যিই কাজে লাগাবো?’
আকাশের কথা শুনে সোহান তনুকে সামনে এগিয়ে ধরে বাঁচার জন্য। আর সোহান তনুর পিছনে লুকিয়ে পড়ে। সোহানের কান্ড দেখে আকাশ আর নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারে না। শব্দ করো হেঁসে দিয়ে সোহানকে বলে,
–‘তনুকে সামনে এগিয়ে দিলে কোনো কাজ হবে না। তাই নিজের ভালো চাস তো তনুকে ছেড়ে দে। না হয় যতোই তাল-বাহানা করিস না কেন, নিশানা কিন্তু ঠিকই আমি তোর কপালে লাগাবো।’
সোহান ভয় পেয়ে তনুকে ছেড়ে দেয়। সোহানের থেকে ছাড়া পেয়ে তনু দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। আকাশ তনুকে শান্ত করতে তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–‘তনু একদম কান্না করো না। আমার হাতে যেই যন্ত্রটা আছে সেটার কারণে আমাদের সমস্ত বিপদ কেটে গেছে। তনু আমি বাকি আট-দশটা মানুষের মতন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তোমার জন্য সাধারণ থেকে গুন্ডা-মাস্তানে পরিণত হতে আমি এক সেকেন্ড ও ভাববো না।’
–‘আকাশ আমি ভাবতেই পারিনি সোহান এমন। আমি তাঁকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম। কিন্তু সে আমার জীবনের সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। আকাশ তুমি সোহানকে একটা চরম শিক্ষা দাও। যাতে করে আগামীতে সে তোমার আর মাঝে কখনো ঝামেলা করার সাহস না পায়।’
–‘তনু এমনিতেও সে আর আগামীতে আমাদের মাঝে ঝামেলা করার দুঃসাহস করবে না। কারণ এমনিতেই তার শিক্ষা হয়ে গেছে। আগামীতে মনে হয় না আর সে কিছু করার সাহস করবে। তবে যদি সাহস করেও থাকে, তাহলে সে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা’রবে। আর সোহান ভাই আমার শোন। আমাদের দু’জনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা দু’জন স্বামী-স্ত্রী। তাই তুই অযথা কাবাব মে হাড্ডি হতে আসিস না। মানুষ জীবনে বড় ধরনের বিপদ থেকে ভাগ্যক্রমে একবার বেঁচে যায়। তবে প্রতিবার যে বেঁচে যাবে তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরেরবার তুই কিছু করতে আসলে তোর জন্য আমাকে সাধারণ মানুষ থেকে দাগী আসামি হতে হবে। যেটা তোর জন্য কখনোই মঙ্গলকর হবে না। তাই এবার একটা সুযোগ দিলাম সেটা কাজে লাগিয়ে ভালো হ। আর আমার সমস্ত কথা মাথায় ভিতরে ঢুকিয়ে নে। এবার চললাম আমরা। এই তনু চলো।’
পিস্তলটা কোমরে রেখে আকাশ তনুকে নিয়ে গাড়িতে এসে বসে। তনুর চোখ দিয়ে এখনো পানি পড়ছে। আকাশ গাড়িতে উঠে তনুর চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে তনুকে বুকে আগলে নিয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে। তনুও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশের বুকে মাথা রাখার খানিক পরেই তনু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্বাভাবিক হওয়ার পর আকাশের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তনু আকাশের ঠোঁটে নিজের দখল বসায়। আকাশ ও কম কিসে। সেও তনুর আচরণ সাড়া দিতে ব্যস্ত। দু’জনের মধ্যে আবারো কিছুটা রোমান্টিক কাজ কারবার ঘটে। দু’জনে আবারো কিছু সময়ের জন্য ঘনিষ্ট হয়। মিনিট পাঁচেক একে অপরের সাথে মিশে থাকে। এরপর একজন আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে দু’জন দুই সিটে বসে। তনু গাড়ি স্টার্ট করে ড্রাইভ করতে শুরু করে। আর আকাশ চুপ করে তনুর পাশে বসে আছে। তনু গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আকাশকে বলে,
–‘আকাশ আজকে সোহান চরম বড় শিক্ষা পেয়েছে। আমি তো ভাবতেও পারিনি তুমি নিজের রূপ মুহূর্তের মধ্যে এভাবে পাল্টে ফেলবে। জানো আমি না আজকে বেশ অবাক হয়েছি তোমার নতুন রূপ দেখে।’
–‘কি করবো বলো? সোহান যে এমনটা করবে সেটাও তো আমরা জানতাম না! আজ কেন জানি পিস্তলটা নিয়ে আসতে ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে এটার যে আজ প্রয়োজন পড়বে সেটা আমারো জানা ছিল না।’
–‘যাক ভালোই হয়েছে। তবে আকাশ জানো সোহান যে এমনটা করবে সেটা আমি কখনো কল্পনা করিনি। এছাড়া গতকাল সোহানের মা আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল সোহানের জন্য। আমি বিষয়টা নিয়ে অবাক হলেও সেটা নিয়ে বেশি একটা মাথা ঘামাইনি। কারণ মা সোহানের মা’কে আমাদের বিয়ের বিষয়ে বলেছে। আমি ভেবেছিলাম সোহান আমাদের বিয়ের বিষয়ে শুনলে সে আর আমাকে বিয়ে করার চিন্তা করবে না। কিন্তু ওমা আজ দেখি সে ছেলে-পেলে নিয়ে হাজির আমাদের ক্ষতি করার জন্য।’
–‘আমারো সেদিন সন্দেহ হয়েছিল সোহানের কথাবার্তায়। যার কারণে আমি তোমাকে বলেছিলাম সোহানকে চলে যেতে বলতে। আর আজকে সোহান আমার সন্দেহ টাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে।’
–‘আচ্ছা থাক বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
আমাদের দু’জনের ভালোবাসা এতোটা সস্তা না যে, যে কেউ এসে সেটা ভেঙ্গে ফেলবে। আকাশ তুমি আমায় কতোটুকু ভালোবাসো সেটা সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। আর তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য চাই।’
–‘তনু আমিও তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি।
তুমি হয়তো এখনো পুরোপুরি ভাবে অনুমান করতে পারোনি আমার ভালোবাসার পরিমাণ কতটুকু। তবে সত্যি বলতে তোমায় আমি এতোটা ভালোবাসি, যে তোমায় না পেলে জীবনটা মরা লাশের মতন হয়ে যাবে। তোমায় না পেলে আমি বেঁচে থেকেও ম’রে যাবো। এক কথায় জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো। আমার মধ্যে কোনো শোক তাপ থাকবে না। ভিতরটা পাথরে পরিণত হয়ে যাবে। অনুভূতি শূন্য হয়ে যাবো আমি।’
–‘এই পাগল কি সব বাজে কথা বলছো? আমায় পাবে না কেন তুমি? আর আমি কোথায় যাবো তোমায় রেখে? আমি তোমার আছি তোমার এই থাকবো। একদম স্বার্থপরের মতন কথা বলবে না বলে দিলাম। তোমাকে না পেলে আমিও কি ভালো থাকবো নাকি? তুমিই আমার সমস্ত ভালো থাকার কারণ। সেখানে তোমার কাছ থেকে আমি হারাবো কোন দুঃখে?’
–‘তা আমি জানি না! আমি শুধু নিজের কি পরিণতি হবে সেটাই তোমাকে জানালাম।’
–‘জানো না কেন? জানতে হবে। আর না জেনে উল্টো-পাল্টা কথা কেন বলো? তোমার পিস্তল দিয়েই তোমার খুলি একদম ফুটো করে দিব আর একবার বাজে কথা বললে।’
–‘আচ্ছা আর বলবো না।’
–‘মনে থাকে যেনো।’
–‘হুম থাকবে।’
–‘আচ্ছা শুনো আমরা একটা কাজ করি চলো। তাহলে তোমার মুখ দিয়ে আর উল্টো-পাল্টা কথা বের হবে না।’
–“কি কাজ?’
–‘আসছে বৃহস্পতিবারে অফিসে একটা ছোটখাটো খাবারের আয়োজন করে সবাইকে দু’জনের বিষয়ে জানিয়ে দিব আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর তার পরেরদিন শুক্রবারে দু’জন দুজনের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে আবারো বিয়ে করবো সারাজীবনেটর জন্য। কারণ আমার এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। সাধারণ ভাবেই আমরা দুই পরিবারকে নিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যাসেজ করবো। আর অফিসের মানুষদেরকে যেহেতু জানাতে হবে, তাই আগের দিন ওদেরকে একটা খাবারের আয়োজন করে জানিয়ে দিব। না হয়তো এটা সেটা বলবে যে আমি কৃপণ। আমার এতো টাকা পয়সা থাকা সত্বেও বিয়ের অনুষ্ঠান করিনি। আর তাঁদেরকে খাওয়াইনি।’
–‘কিহহহ! তুমি সত্যিই আগামী শুক্রবারে আমাকে সারাজীবনের জন্য বিয়ে করবে?’
–‘হুম করবো। কেন তোমার কি কোনো ডাউট আছে?’
–‘নাহ সব কিছু কেমন যেনো কল্পনা লাগছে আমার কাছে।’
–‘কল্পনা নাকি বাস্তব সেটা বৃহস্পতিবার আসলেই বুঝতে পারবে যখন আমি তোমাকে সকলের সামনে নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিব। এবার গাড়ি থেকে নেমে বাসায় যাও। তোমার বাসার সামনে চলে এসেছি।’
আকাশ তনুর কথা শুনে খুশি মনে গাড়ি থেকে নেমে ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে যায়। আসছে শুক্রবারে তনু সারাজীবনের জন্য আকাশের হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সকলের সামনে সৃকৃতি পাবে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি ভাবে বেখবর সোহান শুধরে যাওয়ার বদলে আরো বড় ধরনের কিছু প্ল্যান করছে….
চলবে….
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।)