#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৪)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
সোহান আর তনুর সম্পর্কের বিষয় নিয়ে তনু বলেছে সব কিছুই তাঁদের সাজানো নাটক ছিল। কিন্তু এখন সোহান বলছে এমন কোনো প্ল্যান এই তারা করেনি। তনুর সাথে সোহানের কথার কোনো মিল এই নেই। তার মানে তনু তাকে যা বলেছে সব কিছুই মিথ্যা। তনুর সাথে হয়তো সত্যিই সোহানের কোনো সম্পর্ক ছিল বা এখনো আছে। এবং সেই সঙ্গে তনু তাকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে। তনুকে নিয়ে খটকা লাগতে শুরু করে আকাশের। মনের ভিতরে কৌতূহল জাগে বিষয়টা নিয়ে। তনু কি সত্যিই তাঁকে ঠকাচ্ছে। কৌতূহল মেটাতে সোহানকে প্রশ্ন করে,
–‘আচ্ছা তার মানে আপনারা আমাকে বোকা বানাবেন এমন কোনো প্ল্যান করেন নি?’
–‘না এমন কোনো প্ল্যান আমরা করিনি। আর এমন প্ল্যান করবোই বা কেন? তনু আর আমি সত্যিকারত্বে বয়ফ্রেন্ড- গার্লফ্রেন্ড। তাহলে আমরা আপনাকে বোকা বানানোর জন্য প্ল্যান করতে যাবোই বা কেন? কি লাভ এতে আমাদের?’
সোহানের কথা শুনে আকাশের সন্দেহ সত্যি হয়। তনু তাকে যা বলছে তাহলে সব কিছুই মিথ্যা ছিল।
দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে৷ কিন্তু আকাশের এবার আরেকটা ব্যাপার নিয়ে খটকা লাগে। সোহান বলছে সে আর তনু সত্যিকারত্বে প্রেমিক-প্রেমিকা। তাহলে সেদিন যখন তনু তাকে ফোন করেছিল তখন সোহান তনুকে দোস্ত বলে কেন সম্মোধন করছিল। নাহ এখানে হয়তো কোনো গন্ডগোল আছে। আর এই গন্ডগোলের সমাধান পাওয়া যাবে তনু আর সোহান মুখোমুখি হলে। কারণ দুই পক্ষ যেহেতু দু’রকমের কথাবার্তা বলছে তাহলে অবশ্যই যে কোনো একজন কথার গড়মিল করছে। হয় সেটা সোহান না হয় তনু। ব্যক্তিগত ভাবে আর প্রশ্ন না করে আকাশ চালাকি করে সোহানের সামনে থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ায়। আকাশ সরে যাওয়ায় সোহান কেবিনের দরজা খুলে অনুমতি নিয়ে তনুর কেবিনে প্রবেশ করে। সোহান তনুর কেবিনে প্রবেশ করার কয়েক সেকেন্ড পর বিনা অনুমতিতে আকাশ সোজা তনুর কেবিনের ভিতরে ঢুকে পড়ে। সোহান আর তনু দু’জনেই চমকে উঠে আকাশকে হুট করে কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে। আকাশের চোখে-মুখে রাগ। আকাশের ইচ্ছে করছে পুরো কেবিন টাকে মাথায় তুলে নিতে। কিন্তু কোনো ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশের হাবভাব বুঝতে না পেরে তনু আকাশকে প্রশ্ন করে,
–‘এই তুমি হুট করে কোনো কথাবার্তা ছাড়া এভাবে কেবিনে ঢুকে পড়লে যে?’
–‘ইচ্ছে হয়েছে তাই ঢুকেছি। কেন অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করে ভুল করে ফেলেছি নাকি?’
–‘না ভুল করো নি৷ তোমার অধিকার আছে কেবিনে ঢুকার। কিন্তু হুট করে আসলে তো তাই জিজ্ঞাস করলাম।’
–‘ভুল না করলেই হলো। এবার আমার কথার উত্তর দাও। তুমি সেদিন আমায় বলেছো তুমি আর সোহান ভাই মিলে যা করেছো সব কিছুই তোমাদের সাজানো নাটক ছিল। কিন্তু একটু আগে আমি সোহান ভাইকে ঐ বিষয়ে জিজ্ঞাস করায় সোহান ভাই সোজা অস্বীকার করলো। তোমাদের মধ্যে নাকি এমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি। আর সোহান ভাই নাকি তোমার সত্যিকারত্বে বয়ফ্রেন্ড। কাহিনী কি তনু আমায় সত্যি করে বলো। আমার কিন্তু মাথায় রক্ত চোটে যাচ্ছে। কখন কেবিনের পরিবেশ পাল্টে যায় তার কিন্তু কোনো ঠিক নাই বলে দিলাম।’
–‘আরে আকাশ তুমি অযথা রাগ করছো। তুমি আগে চেয়ারে বসো। তারপর আমি তোমায় বলছি।’
–‘আমি এখানে বসতে আসিনি। যা বলার এখুনি বলো। আমার উত্তর চাই।’
–‘আচ্ছা ঠিক আছে বলছি। আকাশ যা বলেছি সব কিছুই সত্যি। আমি তোমায় কোনো মিথ্যা বলিনি। সব কিছুই আমাদের প্ল্যান ছিল।’
–‘তাহলে সোহান ভাই কেন আমায় বললো তোমরা এমন কোনো প্ল্যান করোনি? আর উনি তোমার সত্যিকারত্বে বয়ফ্রেন্ড। কাহিনী কি? যদি তোমার কথা আসলেই সত্যি হয়, তাহলে কেন আমায় সোহান ভাই ঐরকমটা বলছে?’
–‘আকাশ কাহিনী কিছুই না। আর সোহান সত্যিই আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড না। এই সোহান তুই প্লিজ ওকে সত্যিটা বলে দে। না হয় আমার উপরে ঘূর্ণিঝড় আসবে। আমি আকাশকে সত্যিটা বহু আগেই বলে দিয়েছি।’
–‘ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। তুই তাহলে নিজেই আকাশ সাহেবকে সব সত্যি বলে দিয়েছিস। আমিও তো বলি উনি এই ব্যাপারে জানলো কোথা থেকে! আকাশ সাহেব শুনুন তনু যা বলেছে সব কিছুই সত্যি। আমরা প্ল্যান করেই আপনার সাথে ঐরকমটা করেছি। আর একটু আগে আমি আপনাকে মিথ্যা বলেছি। কারণ আমি জানতাম না তনু আগেই আপনাকে সব সত্যি বলে দিয়েছে। যার কারণে একটু আগে আমি সত্যিটা স্বীকার করিনি।’
সোহানের কথা শুনে আকাশের স্বস্তি ফিরে আসে। তবে রাগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। কারণ আকাশ এই সম্পর্কের মধ্যে কোনো প্রকার ঝামেলা চায়না। সে চায় সম্পর্কে লয়্যাল থাকার পাশাপাশি পরিপাটি ভাবে সম্পর্কটা নিজেও নিভাবে। এবং তনুর থেকেও সে একই জিনিস আশা করে। কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে কান্ড ঘটায় আকাশের রাগের মাত্রা বেড়ে গেছে। চোখ বড় বড় করে তনুর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
–‘এই তুমি এখনো কেন রেগে আছো? সোহান তো তোমাকে সমস্ত সত্যি বলেই দিয়েছে। তাও অযথা কেন রাগ করে আছো বলো তো?’
–‘রাগ করে আছি কেন সেটা তোর জানতে হবে না। তুই উনাকে এখন এখান থেকে চলে যেতে বল। আমার সত্যিই বেশ রাগ উঠছে। আর কিছু সময় গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করা আমার জন্য কিন্তু দুষ্কর হয়ে যাবে।’
আকাশের হাবভাব দেখে এবং আকাশের কথা শুনে তনু নিজেও বুঝতে পারে আকাশের সত্যিই প্রচন্ডভাবে রাগ উঠে আছে। সোহানের এখন এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো। না হয় কখন কি হয় তার কোনো ঠিক নেই। পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। পরিস্থিতিকে অনুকূলে রাখার জন্য তনু সোহানকে বলে,
–‘সোহান তুই এখন চলে যা। আমি কোনো সমস্যা হোক সেটা চাচ্ছি না। এমনিতেই আকাশ রেগে আছে। তার উপরে ওর কথা না শুনলে আমার উপরে যে কোনো সময় বিপদ আসতে পারে। তুই প্লিজ এখন চলে যা।’
–‘ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।’
সোহান চলে যায়। আকাশের ভিতরে এখনো রাগ কাজ করছে। সোহান চলে গেছে কিন্তু আকাশ নিজের রাগ এখনো কমাতে পারেনি। সেই আগের ন্যায় রাগ রয়ে গেছে আকাশের মধ্যে। সোহান চলে যাওয়ার পরেও তনু আকাশকে রেগে থাকতে দেখে চেয়ার থেকে উঠে এসে আকাশের গালে হাত রেখে বলে,
–‘সোহান চলে গেছে। এবার তো রাগটা কমাও। আর কতো রাগ করে থাকবে?’
আকাশ কোনো উত্তর দেয় না। তনু আকাশকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করাতে উল্টো আরো বিস্ফোরণ ঘটে আকাশের ভিতরে। আকাশের ইচ্ছে করছে তনুকে কঠিন একটা শিক্ষা দিতে। কিন্তু সেটা করা উচিত হবে কিনা আকাশ ভাবছে। তখনি আকাশের মনে হয় নিজের মনকে কিছু সময় প্রাধান্য দেওয়া উচিত। না হয় সব সময় মনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলে মনের সাথেই নিজের একটা দ্বন্দ্ব শুরু হবে। আকাশ নিজের মনকে প্রশ্রয় দিয়ে সোজা তনুর গলা চে’পে ধরে তনুকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে বলে,
–‘মোবাইল ফোন ছুঁড়ে মে’রে কপাল ফাটিয়েছিস, কিন্তু আমি কিছু বলিনি। গরম চা ছুঁড়ে মে’রে পেটে ফোস্কা ফেলেছিস, কিন্তু আমি কিছু বলিনি। অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে সামান্য একটা ভুলের কারণে আমায় যেভাবে ইচ্ছে হয়েছে লজ্জিত করেছিস, কিন্তু আমি তাও কিছু বলিনি। তবে আগামীতে যদি তোকে আমি সোহানের সাথে বিনা প্রয়োজনে মিশতে দেখি, তাহলে তখন কিন্তু আর চুপ করে থাকবো না। আজকের পর সোহানের সাথে তোর সমস্ত বন্ধু পিরীতি বন্ধ। অযথা কোনো কারণে না ফোনে কথাবার্তা বলবি না সামনা-সামনি। এক কথায় ওর সাথে কোনো কারণ ছাড়া কথাবার্তা বলবি না। মনে থাকবে আমার কথা?’
তনু কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। আকাশ সব কিছু ফেলে সোহানের পিছনে কেন পড়েছে সেটা তনু বুঝে উঠতে পারছে না। চুপ করে আকশের দিকে তাকিয়ে আছে তনু। কথার উত্তর না পেয়ে আকাশ তনুকে প্রশ্ন করে,
–‘কি হয়েছে কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? আমার কথা কি তোর কানে যায়নি?’
–‘হ্যাঁ গিয়েছে।’
–‘তাহলে উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছিস কেন? উত্তর দে।’
–‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর সোহানের সাথে কোনো দরকার ছাড়া কথাবার্তা বলবো না।’
–‘মনে থাকে যেনো।’
–‘হুম থাকবে।’
আকাশ তনুর জবানবন্দি পেয়ে তনুর গলা ছেড়ে দিয়ে বলে,
–‘নে এবার ছেড়ে দিলাম। আগামীতে বিনা প্রয়োজন সোহানের সাথে কোনো কথাবার্তা বলতে দেখলে তোর শ্বাসনালী সজোড়ে চে’পে ধরবো। এবারের মতন বেঁচে গেছিস। পরেরবার গলা চে’পে ধরলে কিন্তু সোজা উপরে চলে যাবি বলে দিলাম।’
–‘না আমি আর কোনো কারণ ছাড়া সোহানের সাথে কথাবার্তা বলবো না। কারণ আমি চাই না ওর কারণে আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক।’
–‘হুম আমিও এই কারণে বিনা প্রয়োজনে কথা বলতে না করেছি।’
–‘হুম।’
–‘সরি তনু।’
–‘ওমাহ সরি কেন?’
–‘তুইতোকারি করার জন্য এবং রেগে গিয়ে গলা চে’পে ধরার জন্য।’
–‘আরেহ সমস্যা নেই। আমি বুঝতেই পেরেছিলাম তোমার অনেক রাগ উঠেছে।’
–‘ধন্যবাদ বুঝার জন্য। আচ্ছা এবার আমি গেলাম।’
–‘না এখন আর যেতে হবে না। আর অল্প সময় বাকি আছে লাঞ্চ টাইম হওয়ার৷ একেবারে লাঞ্চ করে তারপর যেও।’
–‘আচ্ছা ঠিক আছে লাঞ্চ করে যাবো। তবে এখন গিয়ে খাবার নিয়ে আসি।’
–‘আজব! তুমি খাবার আনবে মানে?’
–‘ওমাহ কেন কি হয়েছে? আমি তোমার এ্যাসিস্ট্যান্ট। আমি খাবার আনলে সমস্যা কোথায়?’
–‘অনেক সমস্যা আছে। তুমি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেটা ঠিক আছে। তবে তুমি আমার হাজবেন্ড ও। আগে না হয় বুঝিনি দেখে তাই তোমাই ফরমাইশ করেছি এটা ওটা করতে। তবে বর্তমানে বুঝার পর একই ভুল আবার করবো সেটা হতে পারে না। আমি নিজে বসে থেকে তোমাকে খাবার আনতে পাঠাবো সেটা তুমি ভাবলে কি করে? তুমি বসো। আমি কেন্টিনে ফোন দিলেই তারা খাবার পাঠিয়ে দিব। তোমার অযথা কষ্ট করে যেতে হবে না।’
–‘আচ্ছা।’
তনু কেন্টিনে ফোন দিয়ে দু’টো খাবার পার্সেল করতে বলে। তনুর কথা মতন কিছু সময় পর কেন্টিন থেকে একটা ছেলে দুইটা খাবারের পার্সেল তনুর কেবিনে দিয়ে যায়। হাত ধুয়ে আকাশ আর তনু খেতে আরম্ভ করে। খাওয়ার এক পর্যায়ে তনু মোহাব্বত করে এক লোকমা খাবার নিজের হাতে আকাশকে খাইয়ে দেয়। আকাশ ও তনুর দেখাদেখি একই কাজ করে। এক লোকমা খাবার নিয়ে সেও তনুকে খাইয়ে দেয়। দু’জন দু’জনকে মোহাব্বত দেখানোতে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের কোনো আইডিয়াই নেই তাঁদের সামনে যে একটা বাঁধা আসতে চলেছে। আকাশের কথায় তনু সোহানকে চলে যেতে বলায় সোহান তাঁদের সামনে কোনো রিয়াকশন না করলেও ভিতরে ভিতরে বেশ অপমানবোধ করে বিষয়টা নিয়ে। সোহানের অনেকটা গায়ে লেগেছে দু’জনের আচরণ। বেশি গায়ে লেগেছে আকাশের টা। কারণ তনু নিজ থেকে এমনটা করেনি। আকাশের কথাতেই সে এমনটা করেছে। সোহান প্রতিশোধ নিবে বলে একটা ফন্দি করতে করতে বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে খেতে বসে। খাওয়ার মাঝামাঝি অবস্থায় সোহানের মা রোকেয়া বেগম সোহানকে বিয়ের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাস করে সে বিয়ের বিষয় নিয়ে কিছু ভেবেছে কিনা। সোহান নিজের মা’কে জানায় সে বিয়ে করতে রাজি। এবং সেই সঙ্গে ফোন থেকে তনুর ছবি বের করে নিজের মা’কে দেখিয়ে বলে তনুকে সে বিয়ে করতে চায়….
চলবে….
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।)