অবেলায়_তুমি পর্ব ১২

0
394

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১২)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

তনুর কাছে একটা ফোন আসে। তনু ফোনটা রিসিভ করে। অপরপাশের মানুষটা তনু ফোন রিসিভ করার পর যা বলে তা শুনে তনু পুরোদমে চমকে উঠে। তনু বুঝে উঠতে পারছে না ফোনের অপরপাশের মানুষ টাকে তার বিয়ের কথা কে বলেছে। এই বিয়ের বিষয়ে তো তেমন কেউ জানে না। সে এবং আকাশ আর ছাড়া বাহিরের একমাত্র খালি খালেক সাহেব জানেন। তনু আশ্চর্য হয়ে ফোনের অপরপাশের মানুষটাকে জিজ্ঞাস করে,

–‘আসাদ সাহেব আপনাকে আমার বিয়ের কথা বলেছে?’

–‘কে বলবে আর আপনার হাজবেন্ড আকাশ সাহেব বলেছেন। উনি গতকাল আমার কাছে এসেছিলেন। তিনিই আপনার আর তিনার কথা বলেছেন। এছাড়া পার্টির বিষয় নিয়ে নাকি আপনার মন ভিষণ খারাপ। দেখুন এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছুই নেই। তবে হ্যাঁ সেদিনের বিষয়টা নিয়ে আমরা অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ছিলাম। তবে গতকাল আকাশ সাহেব আমার কৌতূহল দূর করে দিয়েছেন। আপনি ঐ বিষয়টা নিয়ে একদম টেনশন করবেন না। আমরা সত্যিটা জেনে গেছি। আকাশ সাহেব আমাকে সত্যিটা জানিয়ে দিয়েছে।’

–‘কি সত্যি জেনেছেন আসাদ সাহেব? আর আকাশ আপনাকে কি বলেছে?’

–‘আরেহ ঐ আরকি। আপনাদের দু’জনের মধ্যে নাকি সেদিন একটু রাগারাগি হয়েছিল। তাই আকাশ সাহেব সেদিন নাকি রেগে গিয়ে উল্টো-পাল্টা বলেছিল।’

–‘হুম।’

–‘আচ্ছা শুনুন এবার আর মন খারাপ করে থাকবেন না। সেদিনের বিষয়টা নিয়ে আপনার অসম্মান হয়েছে ভেবে আকাশ সাহেবের ও ভিষণ মন খারাপ। উনি গতকাল যখন আমার সাথে কথা বলছিল, তখন উনার চেহারা একদম মলিন হয়ে ছিল। তাই অনুরোধ করবো মন খারাপ করে থাকবেন না।’

–‘আরেহ নাহ মন খারাপ করে নেই।’

–‘যাক তাহলে তো ভালো। তবে আপনার উপর কিন্তু একটা অভিযোগ আছে তনু ম্যাডাম, সরি মিসেস হবেন। কারণ এখন তো আকাশ সাহেবের বউ আপনি। তাই মিসেস বলেই ডাকবো এখন থেকে।’

–‘আমি আবার কি করেছি আসাদ সাহেব!’

–‘কি করেন নি সেটা বলেন। আপনি আর আকাশ সাহেব বিয়ে করে নিয়েছেন, অথচ আমরা সেই বিষয়ে কিছুই জানি না!’

–‘আসলে আসাদ সাহেব আমরা বিয়ের বিষয়টা গোপন রাখবো বলে ঠিক করেছিলাম। তাই কাউকেই জানানো হয়নি। ভেবেছিলাম সঠিক সময় আসলে সবাইকে জানিয়ে আবারো জাঁকজমক ভাবে বিয়ে করবো। তাই আরকি।’

–‘থাক হয়েছে। আপনারা যদিও বা চাননি কাউকে বিয়ের বিষয়ে জানাতে, কিন্তু তারপরেও আমরা এখন সকলেই জেনে গিয়েছি। এবার ভালো একটা দিনক্ষণ ঠিক করে বিয়ের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলুন। বহুদিন হলো ভালো কোনো বিয়ে খাচ্ছি না। এবার আপনাদের উছিলায় ভালো একটা খাওয়া হবে।’

–‘অবশ্যই আসাদ সাহেব। খুব জলদিই বিয়ের অনুষ্ঠানটা করবো।’

–‘হুম দোয়া রইলো আপনাদের জন্য। আর এবার তাহলে ফোনটা রাখছি। অফিসের বাহিরে যেতে হবে আমাকে একটু।’

–‘আচ্ছা।’

আসাদ সাহেব ফোন কেটে দেয়। আসাদ সাহেবের সাথে কথা শেষ করে তনু ফোন রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে জলদি পা চালিয়ে সোজা আকাশের কাছে চলে যায়। আকাশ তনুকে কেবিন থেকে বেরিয়ে চালু পায়ে হেঁটে তার কাছে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। চুপ করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। অপরদিকে তনু আকাশের কাছে এসে আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘আপনি গতকাল কোন সময় আসাদ সাহেবের কাছে গিয়ে আসাদ সাহেবের সাথে দেখা করেছেন?’

–‘অফিস ছুটির পর।’

–‘ওহ ভালো। তবে আপনি এই কথা কেন বলেছেন যে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে?’

–‘আসলে আমার জন্য তোমার সম্মান নষ্ট হয়েছে। তাই আসাদ সাহেবকে ঐ কথাটা বলেছি। যাতে করে উনারা তোমাকে ভুল না বুঝে।’

–‘ওহ আচ্ছা। কিন্তু আপনি ঐ দিনের কথাটা নিয়ে মিথ্যা কেন বলেছেন, যে আপনার সাথে আমার রাগারাগি হওয়ায় আপনি ওসব বলেছিলেন?’

–‘মিথ্যা বলি নাই। সেদিন তোমার সাথে আগে না হোক পরে ঠিকই রাগারাগি হয়েছে।’

–‘হুম আচ্ছা মানলাম এটা সত্যি। কিন্তু আমি তো আপনাকে বলিনি আমার সম্মান যেটা নষ্ট করেছেন সেটা ফিরিয়ে দিন। তাহলে আপনি কেন এতসব কিছু করতে গেলেন?’

–‘কারণ তোমার মুখে আমি সব সময় হাসি দেখতে চাই। তোমার মলিন চেহারা আমার একদম ভালো লাগে না। আমি গত পরশু দিনের ঘটনার পর থেকে দেখছি তোমার মনের অবস্থা ভালো নেই। আর সেটা একমাত্র হয়েছে খালি আমার কারণে। তাই আমি এতসব কিছু করেছি।’

–‘আকাশ সাহেব আপনি আমার মন খারাপ হয় মতন কাজ ও করবেন। আপনার সেই কাজের কারণে আমার মন খারাপ হলে আবার আপনার নিজের ও খারাপ লাগে। বাহ বেশ ইন্টারেস্টিং তো ব্যাপার টা।’

আকাশ চুপ করে থাকে। তনুর কথা শুনে কেমন যেনো লজ্জা কাজ করছে আকাশের ভিতরে। আকাশ লজ্জায় নজর সরিয়ে নেয় তনুর দিক থেকে৷ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তনু আকাশের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,

–‘হয়েছে জনাব আর লজ্জা পেতে হবে না। আমি আপনাকে লজ্জা দিতে কথাটা বলিনি। যাস্ট এমনিতেই বলেছি। তাই আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার চলেন আমার সাথে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।’

তনুর কথায় শুনে আকাশ তনুকে জিজ্ঞাস করে,

–‘কোথায় যাবো? আর কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তনু?’

–‘সেটা গেলেই দেখতে পাবেন। এবার চলেন।’

আকাশ এতো সময় চেয়ারে বসা ছিল। তনুর কথা মতন উঠে দাঁড়ায়। আকাশ উঠে দাঁড়াতেই তনু আকাশের হাত ধরে টানতে টানতে তাকে অফিসের সকল কর্মচারীদের সামনে নিয়ে যায়। কর্মচারী সবাই তনু আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে তনুর সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ও নাই। তনু আকাশকে সকলের সামনে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার দেখানোর দিন যেভাবে আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরেছিল সেভাবে আজকেও আকাশের হাত পেঁচিয়ে ধরে। সবাই তনুর কাজে রীতিমতো অবাক। তনু সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে বলে,

–‘কয়েক মিনিটের জন্য কাজ বন্ধ রেখে সবাই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমি সেদিন আকাশকে অহেতুক অপমান করেছিলাম। বেচারা এক দিনে সাতটা ফাইল কমপ্লিট করেছে। সেই সাতটা ফাইলের মধ্যে একটা ফাইল ছাড়া কোথাও কোনো ভুল হয়নি তার। আর যেই ফাইলে ভুল হয়েছে সেটাও একদম অতি সামান্য ছিল। কিন্তু সেদিন আমার মাথা কোনো একটা কারণে খারাপ ছিল। যার কারণে আমার সমস্ত রাগ আমি আকাশের উপরে ঝেড়েছি। তাই আপনারা আগামীতে আর কখনো কেউ আকাশের দিকে বাঁকা চোখে তাকাবেন না। তাহলে কিন্তু আমার চাইতে ভয়ানক কেউ হবে না বলে দিলাম। আর আরেকটা কথা। আপনারা আকাশের দিকে বাঁকা চোখে তো তাকাবেন এই না, সেই সঙ্গে আজ থেকে আকাশকে সবাই সম্মান দিয়ে কথা বলবেন। কারণ সে আমার অনেক,অনেক,অনেক কাছের একজন মানুষ। বলতে পারেন সে আমায় হৃদয়ে বসবাসকারী একজন লোক। তার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। তাই সকলকে যেটা বলেছি সেটা মাথায় রাখবেন। এবার সবাই কাজে মন দিন।’

তনু কর্মচারীদেরকে আকাশের বিষয়ে কিছু কথা বলে আকাশের হাত ধরে আকাশকে নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়। আকাশ অনেকটা আশ্চর্য হয়। তবে সে কিছুই বলে না। এদিকে কর্মচারীরা তনু চলে যাওয়ার পর একে অপরের সাথে কানাঘুষা শুরু করে দেয় আকাশ তনুর কি হয়। কেন তনু আকাশকে এতো প্রায়োরিটি দিলো। কেন তনু জোর গলায় সবাইকে বললো আকাশকে সম্মান দিতে। আর কেনোই বা তনু আকাশের হাত ঐ ভাবে ধরে ছিল। একেক জন অন্য জনের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে শুরু করে৷ কর্মচারীদের কানাঘুষা গুলো ম্যানেজার খালেক সাহেব শুনতে পায়। তাই খালেক সাহেব সবাইকে সতর্ক করে বলে,

–‘প্রতিটা নারীর জীবনে একজন খুব মূল্যবান মানুষ থাকে৷ ম্যাডামের জীবনের মূল্যবান মানুষটা হচ্ছে আকাশ মাহমুদ সাহেব। তাই ম্যাডাম উনাকে নিয়ে এতোকিছু বলেছে। আপনারা এবার কানাঘুষা বন্ধ করে যে যার কাজে মন দিন। না হয় আপনাদের নামে গিয়ে ম্যাডামের কাছে নালিশ করে আসবো।’

খালেক সাহেবের কথা শুনে সবাই কানাঘুষা বন্ধ করে কাজে মন দেয়। অপরদিকে তনু আকাশকে সঙ্গে করে নিয়ে নিজের কেবিনের ভিতর এসে থেকে দরজা আঁটকে দেয়। তারপর আকাশকে তনুর চেয়ারের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,

–‘আমার চেয়ার টাতে বসো।’

আকাশ পুরো থতমত খেয়ে যায় তনুর কথা শুনে। কারণ প্রথমত তনু তাকে ভিতরে নিয়ে এসে দজরা বন্ধ করে দিয়েছে। তার উপরে এখন আবার তুমি করে বলছে। আকাশ তনুর মতিগতি কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কি করতে চাইতে তনু। বেকুবের মতন চেহারা করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। পাশ থেকে তনু আকাশকে তার দিকে বেকুবের মতন তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই আকাশকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তারপর আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘কি হলো অবাক হচ্ছো যে?’

–‘অবাক করছো তাই অবাক হচ্ছি। শুরুতে কর্মচারীদের সামনে নিয়ে গিয়ে আমার নামে গুণগান করলে। সাথে আরো সকলকে বললে আমাকে সম্মান দিতে। এরপর এখন সঙ্গে করে কেবিনে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করার পাশাপাশি তুমি করে বলছো। এতোকিছু দেখে অবাক তো হবোই।’

–‘হুম অবাক তো হবাই। আচ্ছা আরেকটু অবাক করি তোমাকে?’

–‘মানে!’

–‘তুমি চোখ বন্ধ করো। তারপর মানেটা বুঝতে পারবে।’

–‘আজব তোমার মানে বুঝার জন্য চোখ কেন বন্ধ করবো?’

–‘আরেহ তোমাকে চোখ বন্ধ করতে বলেছি তুমি করো। আমি বললে তারপর চোখ খুলবে।’

আকাশ আর কথা না বাড়িয়ে তনুর কথা মেনে চোখ বন্ধ করে। আকাশ চোখ বন্ধ করতেই তনু ডেস্কের উপরে থাকা কলমদানির মধ্যে একটা ফল কাঁটার ছুরি ছিল যেটা হাতে তুলে নেয়। এরপর ছুরিটা আকাশের গলায় চেপে ধরে আকাশকে চোখ খুলতে বলে। আকাশ তনুর কথায় চোখ খুলে দেখে তনু তার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ধরে আছে। আকাশ চোখ বড় বড় করে আশ্চর্য হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর তনু আকাশের আশ্চর্য হয়ে তাকানো দেখে জোরে জোরে পৈচাশিক ভাবে হাসতে আরম্ভ করে। তনুর হাসি দেখে মনে হচ্ছে তনু এই দিনটার জন্য বহু সময় ধরে অপেক্ষা করে বসে ছিল….

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here