অবাধ্য প্রেম(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৫

0
500

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_৫
#নন্দিনী_নীলা
(প্রথম অংশ)

আজ অনেকদিন পর নিবিড় বাসার সবার সাথে খেতে বসেছে। নিবিড় কে আগে থেকে একটু প্রানোচ্ছল দেখে সবার ভালো লাগছে। নিবিড়ের মা নিলাশা বেগম ছেলেকে খাবার টেবিলে দেখেই তো খুশিতে খাবার বেড়ে দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু নিবিড় এমনভাবে তাকিয়েছিল তিনি ভয় আর কাছে আসে নাই। সে আবার যদি রাগ করে খাওয়া ছেড়ে চলে যায়। তিনি দূরেই ছিলেন। নিবিড় যতবারই তার দিকে চেয়ে ধমক দেয় ততবার তিনি ছোঁয়া কে অভিশাপ বকাবকি করে। মেয়েটা চলে গিয়েও আমাকে শান্তি দিল না ছেলেটা কতদিন হয় আমাকে মম বলে ডাকে না। ওনার চোখ ভিজে উঠে।

তাহমিনা এগিয়ে এসে তাচ্ছিল্য স্বরে বলল,”নিজের পায়ে নিজেই তো কুড়াল মেরেছেন। এখন আবার চোখের জল ফেলছেন কেন?”

নিলাশা বেগম তাহমিনার দিকে তাকালেন রেগে। তাহমিনা কিছু বলতে যাবে তখনই তিনি বলে উঠে,”বেশি চ্যাটাং চ্যাটাং করো না। না হলে তোমার কীর্তি কাহিনী কিন্তু ফাঁস করে দেবো রাফসান দেবরের কাছে।”

“পারেন শুধু হুমকি দিতে! আমার কথা বললে আমি আবার আপনাকে ছেড়ে দেবো নাকি?”

“আমি খারাপ সেটা সবাই জানেই।”

তাহমিনা নিলাশা বেগমের একদম নিকট এসে ফিসফিস করে বলে,”আপনি কি শুধুই খারাপ? আপনি তার থেকেও ভয়ংকর একজন মহিলা! আমাকে ফাঁসালে আমি আপনাকেও ফাঁসিয়ে দেবো। তাই নিজের মুখটাও চুপ রাখুন। আমিও চুপ থাকবো। না হলে আমি একা বাসা থেকে বের হব না। আপনাকে সাথে নিয়ে বের হব।”

নিলাশা বেগম কটমট চোখে তাকিয়ে র‌ইল। তাহমিনা তার সামনে থেকে চলে এলো। হাতে ডিমের বাটি খাবার টেবিলে এনে সবার প্লেটে তুলে দিল‌। রাফসান নিবিড়ের প্লেটে মুরগীর রান তুলে দিল‌। নিবিড় রানের পিস পছন্দ করে। নিবিড় একটু হাসল তার দিকে তাকিয়ে। আবির সব সময় নিবিড়ের সাথে ঝগড়া করে খেতে বসলে কিন্তু আজ করল না। ভাইয়ের প্লেট থেকে মাছ গোস্ত নিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে ওর কিন্তু আজকে তেমন কিছুই হলো না উল্টে ভাইয়ের প্লেট দিতে লাগল।

নিবিড় তা দেখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,”কিরে আমি কি এখন নিজের বাসার মেহমান হয়ে গেলাম নাকি! নতুন জামাইয়ের মত বিহেভ করছিস সবাই।”
নিবিড় কথাটা বলতে বলতে সবার দিকেই তাকাল।

আবির বলল,” ভাই তোমার আজকে স্বাভাবিক ব্যবহার দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে ইমোশনাল হয়ে গেছি। এজন্য খাতির যত্ন করতেছি যাতে আর ওমন না কর! এই আদর ভালোবাসার জন্য হলেও আমাদের সাথে খাও।”

নিবিড় ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,” ড্যাড আগামীকাল আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে ট্যুরে যাচ্ছি বান্দরবান।”

নিবিড়ের বাবা ছেলের দিকে তাকালেন খাওয়া থামিয়ে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কিছু একটা ভেবে বললেন,”আচ্ছা যাও।”
থেমে আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,”তুমি যে মুড অন করছো এটা দেখি খুবই ভালো লাগছে। বেস্ট অফ লাক মাই সান। আমি টাকা পাঠিয়ে দেবো তোমার একাউন্টে। ইচ্ছে মতো ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরে এসো। আমার সেই আগের নিবিড় কে চায়।”

নিবিড় হাসল। সবাই নিবিড়ের হাসি দেখে হাসল। রাফসান কাকা জিজ্ঞেস করল, ” টিকিট কাটছিস? না কেটে থাকলে আমি কেটে দেয়।”

” না কাকু। আমরা ট্রেন করে যাব।”

” ট্রেনে কেন? আমি ফ্ল্যাট বুক করে দেই।”

“আমার সব ফ্রেন্ডের পরিবার এতটা সচ্ছল নয়। সবার পক্ষে ফ্লাইটে যাওয়া সম্ভব নয়। ”

“যাওয়া আসার খরচ না হয় কাকা দিলো নিতে সমস্যা কি?”

“এটা বললে ওরা নিজেকে ছোট মনে করবে সবাই মিলে ট্রেনে ভ্রমণ করায় ভালো হবে। আমি আমার ফ্রেন্ডের খুব ভালোবাসি। আমরা সবাই মিলে এক ভাবেই থাকতে চাই।”

আর কথা বাড়াল না কেউ। খাওয়া শেষ করে যে যার মত চলে গেল‌। নিবিড় নিজের রুমে চলে এলো।মাহি দরজার দাড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে ভেতরে যাওয়ার সাহস নাই। ইদানিং নিবিড় ব্রো যে পরিমাণ রেগে থাকে তাই তার কাছে ঘেঁষে না। বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে ও এসেছে গিফট চাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। নিবিড় ওকে দেখে ফেলল আর ভেতর থেকে ডেকে উঠলো। এবার ও মাথা নিচু করে ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালো।

” কিছু বলবি?”

” ব্রো তুমি বেড়াতে যাচ্ছ?”

” হুম কেন?”

” আমার জন্য গিফট আনিও!”

নিবিড় হেসে উঠে বলল,” এ‌কথা বলতে এতো ভয়। ব্রো কে এতো ভয় পাস ব্রো কি তোকে মারছে কখনো?”

মাহি আমতা আমতা করে বলল,” তুমি তো খুব রেগে থাকো। এর জন্য ভয় পাই। ভাঙচুর করো। মাম্মা বলেছে এই রুমে না আসতে তুমি ধমক দিবে মারতেও পারো।”

নিবিড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মাহি চলে গেল।
___________________________

সাদিয়ার মা সাদিয়ার বাবার সাথে তর্ক বিতর্ক করছে‌।
” তুমি মাইয়াটারে ওমন ক‌ইরা না বললেও পারতা। মাইয়াটা খারাপ না। আহিলের কথা শুইনা মাইয়াটারে যা নয় তাই বললা। দুঃখ পাইছে।”

” সত্যতা পেয়েই আমি বলেছি। বাইরের মেয়ের জন্য আমি নিজের বাড়ির দুর্নাম করতে পারব না। আমার ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে আছে। তার কথাটা ভাবতে হবে।”

” আমি খারাপ কাউরে বাড়ি আনিনাই তুমি এই ভাবে আমারে অফমান করতে পারো না।”

” দেখো তোমার লগে এই নিয়ে আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। এই মেয়ে চলে গেলে বাঁচা যাবে। আমি নিজ চোখে তারে রাজিবের দোকানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখছি। আর রাজিব নিজে কয়দিন আগে বিয়ে কথা বলছিল আমি তখন বলে দিছি বিবাহিত। রাজিব কি কয় জানো?”

থেমে আবার শুরু করল, ” রাজিব কয়, সে নাকি বিশ্বাস করে না বিবাহিত। আর বিবাহিত হলে ও নাকি বিয়ে করব ছোঁয়া নাকি বলছে ডিবোর্স দিবে তার স্বামীরে। তাদের মধ্যে নাকি প্রেম জনিত সম্পর্ক আছে। আমি বিশ্বাস করি নাই কিন্তু আজ সন্ধ্যায় ওর দোকানে দেখে আমি বিশ্বাস করলাম। আহিল না বললে তো এই সব ঘটনা আমাদের চোখের আড়ালে থাকত। পড়ে মাইয়া আকাম কুকাম করে দিত ওর শশুর বাড়ির লোক আইসা আমাদের সাথে ঝামেলা করত। আমি এতো ঝামেলা ঘাড়ে নিতে পালমু না।”

সাদিয়ার মা আর কিছু বলার সাহস করলেন না। কিন্তু মনে মনে স্বামীর উপর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে রইলেন। কিন্তু তার আর কিছুই করার নাই স্বামী অমতে ছোঁয়াকে বাসায় রাখা যাবে না মনটা খারাপ হয়ে বসে রইলেন।

রাত কোন ভাবে কাটিয়ে ভোরে বের হয়ে এলো বাসা থেকে ছোঁয়া। সাদিয়ার মা অনেক ভোরে উঠেন। তিন ছোঁয়া কে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে আসতে দেখে সাদিয়াকে ডেকে আনলেন। দুজনে থাকার মত কোন কথাই বলতে পারল না। তাদের থেকে সে আশা করল না ছোঁয়া।

কিন্তু কৃতজ্ঞতা চোখে সাদিয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,” আমি আপনাদের ভুল বুঝিনি আমার সময় এতখানিই ছিল আপনাদের এখানে থেকে। সত্যি আমি খুবই নিশ্চিন্ত ছিলাম ভরসা মানুষ পেয়েছিলাম। আপনার মত একজন মানুষ আমার উপর ছায়ার মত ছিল। আপনাদের জন্য আমি এতদিন নিশ্চিন্তে থাকতে পেরেছি। বাকিটা পথ যেন আমি সহিসালামত কাটিয়ে নিতে পারি। দোয়া করবেন আমার জন্য আর নিজেরাও ভালো থাকবেন।”

সাদিয়ার মা জড়িয়ে ধরল। তার খুব মায়া লাগছে। মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো ভেবেছে মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছে। মেয়েটা এভাবে মনে কষ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছে তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করার নাই।

সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আমি একটু হাসলাম সাদিয়া কেঁদে ওঠে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

“আপু তোমাকে খুব মিস করব!”

আমি তাকালাম কলিদের দরজার দিকে। কলির কথা খুব মনে পড়ছে। যতক্ষণ বাসা থাকতাম কলি আমার সাথে থাকত। মেয়েটাকে শেষবারের মতো দেখতে পারলাম না। বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠলো এই বাড়ি বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে খুব মিস করবো। কিন্তু কিছুই করার নাই একদিন না একদিন চলে যেতে হতো। সেইটা না হয় আগেই হবে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমি এগিয়ে গেলাম। কিছু দূর আমাকে এগিয়ে দিল সাদিয়ার মা ও সাদিয়া। আমার সাথে হেঁটে এলো কিছু দূর তারপর আমি তাদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজেই হাঁটতে লাগলাম। আলো ফুটে উঠেছে এখন চারপাশ আলোকিত হচ্ছে। আমি খেয়াল করে দেখতে পেলাম দুজনেই খুব অসহায় মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাদের কষ্টটা আমি ধরতে পারলাম। সাদিয়ার মা আমাকে অনেকবার খাবারের কথা বলেছে। আমি খাইনি আসলে কালকের ওইসব শোনার পরে এই বাসায় একটা খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না। সেটা তো আর বলতে পারি না আমি শুধু খিদে নেই বলে চলে এসেছি। পেটে চাপা ব্যথার অনুভব করলাম কাল দুপুরের পর থেকে খাওয়া হয়নি রাতেও ঘুম হয়নি। চোখটা ব্যথা করছে। সামনে দোকান পেলে খেয়ে নেব কিছু।
এখান থেকে ২০ মিনিটের মতো রাস্তায় হেঁটে এরপরে পাকা সড়ক পাওয়া যাবে। সেখান থেকে একটা অটো নিয়ে শহরে পৌঁছাতে হবে তারপর টিকেট কেটে ট্রেন ধরতে হবে কিন্তু যাব কোথায়? মস্তিষ্ক কাজ করল না। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে লাগলো ওর মনে হলো ওকে কেউ ফলো করছে। বার কয়েক সন্দেহীন চোখে পিছনে তাকিয়েছে কিন্তু আশানুরূপ ফল পায়নি। বরাবরই ব্যর্থ হয়ে সামনে তাকাতে হয়েছে। কিন্তু বারবার কেন মনে হচ্ছে ওকে কেউ নজরে রাখছে ফলো করছে। হাত-পা ঘামতে লাগলো ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠল।

পাকা সড়কে আসতে আর পাঁচ মিনিটের রাস্তা তখন একটা দোকান দেখতে পেলাম। ছোটখাটো একটা দোকান কলা ও পাউরুটি পাওয়া গেল। সেখান থেকে আমি একটা কলা আর একটা রুটি কিনে খেলাম দোকান থেকেই পানি খেয়ে বেরিয়ে এলাম। অতঃপর এসে পৌছালাম শহরে ভাড়া মিটিয়ে ঘুরতেই আমার চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। মুহূর্তে রাগটা মাথা নাড়া দিয়ে উঠল। আমার সামনে দু হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছে রাজিব তাকে দেখে গতকালে সব কথা মনে পড়ে গেল। রাগে আমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পরলাম। ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসলাম রাজিবের গালে।
এই লোকটার জন্য এতগুলো মানুষের সামনে আমি চরিত্রহীনা উপাধি পেয়েছি। আমাকে নোংরা চরিত্রের মেয়ে বলেছে। সবগুলো মানুষের চোখে আমি এটা খারাপ জঘন্যতম খারাপ হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। শুধুমাত্র এই লোকটার জন্য।
রাজিব বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে ও বিশ্বাস করতে পারছে না ছোঁয়ার মত ঠান্ডা মেজাজে মেয়েটা ওকে থাপ্পড় মেরেছে। অথচ রাজিব তো জানেন যে ছোঁয়া কেমন জানি ধানিলঙ্কা ও কখনই অন্যায় অপমান সহ্য করেনা নিজে শিক্ষা দিয়ে ছাড়ে। নতুন পরিবেশে এসে নিজের সেই রাগি চঞ্চল রূপটা লুকিয়ে রেখেছিল। শান্ত স্বভাবের নরম মনের মেয়ে হয়ে গেছিল। তাই বলে অপমান সহ্য করার মতো মেয়ে তো ও না। নিজের উপর অন্যায় কখনোই সহ্য করে না সেখানেই রাজিবের অপমানও কিভাবে সহ্য করবে?

“তুমি আমাকে মারলে? ওই বাসার লোক তোমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে বলে সে রাগ তুমি আমার উপর দেখাচ্ছে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার সাথে ফিরে চলো। আমি আজকে তোমাকে বিয়ে করব।”

“তুই আমার পিছে নিয়েছিস? এতক্ষণ তাহলে তুই আমাকে ফলো করতে ছিলি? অনেক সহ্য করেছি তোকে আর না। তোর জন্য অপমানিত হয়ে আমাকে বাসা থেকে বের হতে হয়েছে। এখন এসেছে আমার সাথে ভাব জমাতে? থাপরে তোর বিয়ে করার শখ যদি না মিটিয়েছি তো আমার নাম ছোঁয়া না।”

#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_৫
#নন্দিনী_নীলা
(বধিতাংশ)

রাজিব ছোঁয়ার কথা কানে নিল না। ওর মারধর বকাঝকা সবকিছুই হজম করল ঠান্ডা মাথায়। ওর মাথায় অন্য পরিকল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে। ছোঁয়াকে যেভাবে হোক এখান থেকে বুঝিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামনে কাজী অফিস একবারে বিয়ে করেই গ্রামে প্রবেশ করবে। এমনটাই ওর পরিকল্পনা। রাজি করানোর জন্যও সর্বস্ব চেষ্টা করবে।

রাজিব হঠাৎ আমার হাত ধরে ফেলল। আমি চমকে উঠে ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে রাগে ফুসফুস করতে লাগলাম।

রাজিব আমার হাত ছেড়েই বলে উঠল,”ছোঁয়া তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। আমাকে ছেড়ে যেও না। তুমি আমাকে বিয়ে করব। তোমার যা লাগে সব দিব। টাকা পয়সা সুখ শান্তি সাম্রাজ্য সবকিছু পাবে। আমি তোমার গোলাম হয়ে যাব। তুমি উঠতে বললে উঠবো বসতে বললে বসবো। তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হ‌ও। আমাকে গ্রহণ করে নাও। আজকে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ে করে আমার বউ করে নিয়ে যাব।”

রাজিবের সাহস দেখে আমি হতবাক। এখনো আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে। রাজিব কে ক্রস করে আমি কাউন্টারের দিকে যেতে লাগলাম টিকেট কাটার জন্য। রাজিব আবার আমার হাত ধরে আটকে দিল। রাগে আমি দ্বিতীয়বারের মতো আরেকটা চড় মারলাম। লোকটা কি পরিমাণ বেহায়া চর খেয়েও আমার হাতটা ছাড়লো না। রাগ আমার শরীর কেঁপে উঠলো। এবার হাতটা এত জোরে ধরেছে যে আমি ছাড়াতে ও পারছি না।

” আমার সাথে লুচ্চামি করতে আসছেন? হাত ছাড়ুন। না হলেই আমি কিন্তু চিৎকার চেঁচামেচি করব। সকাল বলে এখানে কিন্তু মানুষের অভাব পড়বে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন কত মানুষ আমার একটা চিৎকারে কিন্তু আপনি রাস্তায় গণধোলাই খাবেন।”

রাজিব আশেপাশে তাকিয়ে হতচকিত গেল। মানুষের অভাব নাই। থাকবে কি করে? সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে টিকিট কাটা হয়। কাউন্টারে ভিড় তবুও ট্রেনের টিকিট ঠিক সময় পাওয়া যায় না‌। তাই এখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। রাজিব হাত ছেড়ে দিল। কিন্তু আকুতি মিনতি করা গেল না।

এবার রাজিব দাঁতের দাঁত চেপে বলল,, ” তোর এত দেমাক কেন বিয়ে করতে চাইছি ভালো লাগছে না। যদি বিয়ে ছাড়া বিছানায় নেওয়ার কথা বলতাম তাহলে ঠিকই যাইতি। তোদের মতো মেয়েকে আমি ভালো করে চিনি। একেক সমস একেক জায়গায় গিয়ে তো এসব করেই বেরাস। না হলে আত্মীয় পরিজন সবাইকে ছেড়ে এখানে পড়ে থাকবি কেন? তার উপর অন্যের বাড়িতে থাকিস‌। লেখিকা নন্দিনী নীলা যে বাড়িতে একটা যুবক পোলা আছে। আহিল কি এমনিতেই তোর জন্য পাগল হ‌ইছে। বিছানায় কয়বার গিয়েছিস? এখন আমার সাথে নাটক করিস। আমার সাথে এত ভাব দেখাস কেন তুই খুব রূপসীও ত না। তোরে আমি রাজিব বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি এটা তোর সাত কপালের ভাগ্য!”

রাজিব একের পর এক খারাপ আর জঘন্য কথা বলেই যাচ্ছে সে সব শুনে আমার শরীর ঘিনঘিন করে উঠল। তীব্র ঘৃনায় আমি থুতু মেরে দিলাম রাজিবের মুখে এবার রাজিব চেতে গেল। আমার চুলের মুঠি ধরে বলল,” বে* মাইয়া আমার মুখে থুতু দিলি‌। তোরে বিয়ে করবার চাইছিলাম। তা আর করুম না তোরে আমি বিয়া ছাড়া ভোগ করমু। শ* তোর লগে অনেক ভালো কথা ক‌ইছি আর না। চল আমার লগে।”

রাজিবের এমন ভয়ঙ্কর রুপ দেখে আমি থমকে গেলাম। এই লোকটা ত আমার ভাবনার থেকেও খারাপ। আমি চিৎকার করে উঠলাম সাথে সাথে কয়জন এগিয়ে এলো। রাজিব চুল ছেড়ে আমার হাত মুঠো করে ধরেছে। আমি গড়গড়িয়ে সব বলতে লাগলাম। লোকগুলোর থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায়। কিন্তু আমার পোড়া কপাল রাজিব সব ভেস্তে দিল।

রাজিবকে একজন বলল,” কি মিয়া মাইয়া মানুষের লগে জরাজরি দাঁড়াও তোমার ব্যবস্থা করতাছি।”

সবাই এগিয়ে আসতে ছিল রাজিব তখন হাসিমুখে ঠান্ডা মাথায় বলে ওঠে,”আরে কি যে কন না চাচা মিয়া! এই এত মানুষের মধ্যে আমি মাইয়া মাইনষের লগে অসভ্যতামি করতে আসমু। আমার কি ভয় ডর বলে কিছু নাই। এইডা তো আমার বউ রাগ কইরা বাপের বাড়ি যাইতাছে তাই রাগ ভাঙ্গাইতেছি।”

আমি হা করে তাকালাম রাজিবের দিকে কি সুন্দর অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে।

“বিশ্বাস করবেন না চাচা এই লোকটা আমার স্বামী না। মিথ্যা কথা বলছে। আমার সাথে খারাপ আচরণ করছে আমি চিনি না উনাকে। আমাকে বাঁচান এই লোকটার হাত থেকে।”

রাজিব আমার হাত মুচরে ধরে হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,” ব‌উ রাগ ক‌ইরো না তো। আর কত কইবা। বুঝছি তো যাও তোমারে শহর থেকে শাড়ি চুরি আইনে দিমু। তাও রাগ কইরা যেও না। অন্য মানুষের সামনে আমারে আর না চেনার ভান ধইরো না।”

কথাগুলো বলে আবার লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,”আর কইয়েন না চাচা বউ রাগ করলেই এমন করে চইলা যাইবার চাই। আর আমারে চিনে না এসব কয়। একটু পরে রাগ ভেঙ্গে যাইবো তখন ঠিক হয়ে যাবে আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইতেছি। আমার অবুঝ বউ এর কান্ড কারখানা জন্য।”

লোক গুলো হাসা হাসি করে চইলা গেল আমি চিৎকার করে তাদের ডাকতাছি তারা উল্টা আমারে বলল,,”রাগ করো না। যাও স্বামীর লগে। রাগ থাইকো না। এসব তো ভালো না। এহন তো আমরা তোমার জামাইরে মারতাম পরে তো আমাগো তুমি ব‌ইকা দিতা।”

রাজিব যে এমন একটা প্ল্যান করে সবকিছু ভেস্তে দেবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। রাজিব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”কান্দো কেন বউ চোখের পানি দিয়া তো অবস্থা কাহিল। চলো যাই।”

তখনি একটা অটো এসে থামলে আমাকে টেনে হেচড়ে অটোতে উঠিয়ে উল্টো পথে রওনা হলো। আমি চিৎকার চেঁচামেচি করছি। অজানা ভয়ে আমার বুক কাঁপছে। এই শয়তান টার হাত থেকে আমি বাঁচতে পারব তো আল্লাহ!!
____________________________

ট্রেনে যাওয়ার নাম শুনেই নাক কুঁচকে ছিল আফিয়া। কিন্তু সবার সামনে না আর করতে পারেনি। এখান থেকে অর্ধেক রাস্তা ট্রেনে যাবে তারপর জিপ‌। পাহাড়ি রাস্তায় জিপে করে যাওয়াটাই সুবিধাজনক‌। সবাই যার যার সিটে বসে পড়েছে নিবিড়ের সাথে বসেছে আফিয়া। ব্যাপারটা নিয়ে নিবিড় অসন্তুষ্ট হলে মুখে প্রকাশ করল না। ট্রেন ছেরেছে সন্ধ্যা সাত টায়। পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে যাবে। রাতে ট্রেন ভ্রমণ করার মজাই আলাদা। সারা রাত ট্রেনে কাটিয়ে ভোরের জিপে করে একদম বান্দরবান ঠিক করা হোটেলে পৌঁছে যাবে। লেখিকা নন্দিনী নীলা ওপাশে পাহাড়ী রাস্তায় সন্ধ্যার পর চলাফেরা করা রিক্স এজন্য ওরা ভোরে যাতে বান্দরবান পৌঁছাতে পারে সেই ব্যবস্থা করে কেটেছে। রাতে ভালো ঘুম হয় নাই। সারাদিনও ঘুমাতে পারিনি নিবিড়। বাসার সবার সাথে আজ ভালো ভাবে কাটিয়েছে। ঘরে পড়ে থাকে নি।আর ইদানিং ঘুম যে না চোখে ধরাই দেয় না। এজন্য ঘুমায় ও নি। কিন্তু ট্রেন এ আসার পরে চোখ ভর্তি ঘুম ওর নেমে এলো।। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। এসেই কার সাথে কোন কথা বলল না নিবিড়। চোখ বন্ধ করে মাথায় এলিয়ে দিয়ে রইল। সবাই আড্ডা মাস্তি করছে নিবিড় একায় চোখ বন্ধ করে আছে ওকে দুই তিনবার খোঁচা দেওয়া হয়েছে।

ও ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে শুধু বলেছে,”ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!”

ওর চোখ মুখ দেখেই সবাই বুঝতে পেরেছে এজন্য আর কেউ ডাকেনি ঘুমাতে দিয়েছে। কিন্তু একজন বলে উঠলো,” সারাদিন ঘুমিয়ে তো আসবি এখন সবাই একটু মজা করব আর তুই এখানে পড়ে পড়ে ঘুমাবি।”

নিবির কি আর উত্তর দেওয়ার পরিস্থিতি আছে ও ত চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। কিন্তু বেশি সময় ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না। কারণ বসে আর কতক্ষণ ঘুমানো যায়। কাধ গলা ব্যথা হয়ে আসছে। ঘুমের মাঝে কয়েকবার আফিয়া ওর মাথা টেনে কাঁধে নিতে চেয়েছে কিন্তু ও ধমক দিয়েছে। এজন্য আর সাহস করেনি ও আফিয়া ধমক খেয়ে ওর পাশে থেকে উঠে ইভার পাশে গিয়ে বসেছে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামতে সবাই নেমে হালকা-পাতলা খাওয়া-দাওয়া জিনিস কিনতে লাগল। কেউ কেউ হোটেল থেকে খেয়ে আসল। নিবিড় বাইরে গেল না ও ওয়াশ রুমে থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে এলো। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছতে মুছতে এগিয়ে আসছিল তখনই কারো সাথে ধাক্কা খায়। বিরক্তিকর মুখে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here