#অবাধ্য_প্রেম( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব_৩
#নন্দিনী_নীলা
সাদিয়ারা সকাল থেকেই মন মেজাজ খারাপ ওর বড় বোন শশুর বাড়ি থেকে আজ এসেছে। সাথে আছে ওর এক মাত্র ভাগিনা। প্রচুর দুষ্ট অর ভাগিনা রনি। আসার পরে সাদিয়ার মেকআপ বক্স ভেঙে ফেলেছে তারপরে থেকে বকাঝকা করেই যাচ্ছে সুযোগ পেলেই রনিকে চিমটি কাটছে। আর রনিও খালার চিমটি খেয়ে নানু ও মার কাছে গিয়ে বিচার দিচ্ছে। এবার রাগ করে সাদিয়া নিজের রুমে তালা দিয়ে বাসার থেকে বেরিয়ে গেল। বিচ্ছুটা ওর পেছনে এসে হাত ধরল।
রাগে ফুসফুস করে বলল,” ওই তুই কই যাস?”
” তোমার সাথে যাইতাছি।চলো যাই দুজনে বেরিয়ে আসি!”
“তোর জ্বালায় আমি বাড়ি ছাড়লাম তুই আমার পিছন ধরলি কেন? যা বাড়ি যা!”
ধমকে ওরে বাড়ি পাঠাতে পারল না। বিরক্তে নাক মুখ কুঁচকে এগিয়ে যেতে লাগল। কিছু দূরে যেতেই দেখা হলো তন্ময় এর সাথে। তন্ময় কে দেখেই সাদিয়া লজ্জা পেয়ে পেছনে হাঁটা ধরল। সাথে রনি আছে ওর সামনে কথা বলা যাবে না বাড়ি গিয়ে বলে দেবে। তন্ময় সাদিয়ার এলাকার ছেলে। তার আরেকটা পরিচয় সে সাদিয়ার বয়ফ্রেন্ড। দীর্ঘ নয়মাস বছর ধরে দুজনের সম্পর্ক চলছে। সাদিয়া কে দেখেই তন্ময় ছুটে এসে কাছাকাছি এসে বলল,
” কি রে আমারে দেখে পালিয়ে এলি কেন?”
রনির হাত শক্ত করে ধরে নিচু কন্ঠে সাদিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগে রনি চিৎকার করে উঠে চকলেট বলে। তন্ময়ের হাতে একটা চকলেট ছিল সেই চকলেট টা দেখে রনি চিৎকার করে উঠছে। সাদিয়া চমকে উঠে তন্ময় দিকে তাকায়। তন্ময় নিঃশব্দে চকলেট টা রনির হাতে দেয়।
“তুমি এখন দয়া করে যাও এখান থেকে। রনি কিন্তু খুব পাজি বাড়িতে গিয়ে সব বলে দেব। চকলেট দিতে গেলে কেন এই চকলেট নিয়ে আবার না দশ রকম কথা শুনতে হয়। কে দিছে কেন দিছে কৈফিয়ত দিয়ে আমারে পাগল করব।”
“ওই দেখ চকলেট নিয়ে চলে গেছে। এখন তোর সাথে শান্তিতে কথা বলতে পারব। ওকে চকলেটের কথা বলে তো চুপ রাখতে পারবি। এত ভয় পাস কেন ভীতুর ডিম।”
“ও যে কি পরিমাণ বান্দর ছেলে তুমি তা এইটুকু সময় বুঝতে পারবা না।”
“আচ্ছা ওর ব্যাপারটা না হয় নাই বুঝলাম! তুই কেমন আছিস সেটা বল!”
“ভালোই আছি। তুমি ভাল আছো?”
তন্ময় একটু কাছাকাছি এসে বলল,” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে লাল পোশাক এ।”
সাদিয়া লজ্জা পেয়ে বলল,” এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আর থেকো না। কেউ সন্দেহ করতে পারে।”
তন্ময় একটা ফুল পকেট থেকে বের করে সাদিয়ার কানে গুঁজে দিয়ে নিঃশব্দে চলে গেল। সাদিয়া কানে গোঁজা ফুলে স্পর্শ করে হতভম্ব ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল।
_____________________________
আজ অনেকদিন পর সব ফ্রেন্ডরা একসাথে হয়েছে প্রায় কত দিন হয়ে যায় সব ফ্রেন্ডরা একসাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। সবাই মিলে কথাটা বলছে। সবার সাথে সবার যোগাযোগ আর আড্ডা দেওয়া হলেও নিবিড়ের সাথে দেওয়া হয় না। নিবিড়কে অনেক তোষামোত করে রাজি করানো হয়েছে। সবাই একটা রেস্টুরেন্টে মিট করেছে নিবিড় ও তাড়াতাড়ি চলে এসেছে বাকি আছে দুইজন। নিবিড় কে পেয়ে সবাই হামলে পড়লো ওর উপর। নিবিড় হাসিমুখ করে ওদের সাথে বস
পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,”দেবদাস হয়ে তো তুই আমাদের সবাইকে ভুলে গেছিস। নিবিড় তুই যে এমন মেয়ে পাগল হবি আমরা কখনো ভাবি নাই।”
আরেকজন বলে উঠলো,”নিবিড় তোরে এত করে বলার পরও চুল দাড়ি কাটলি না। মেয়েদের মত চুল তো এখন পেছনে বাঁধতে পারবি। জঙ্গল হয়ে গেছিস জঙ্গলের মাঝেও কিন্তু তোকে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম লাগছে। অনেকটা তামিল নায়কের মত ছোঁয়া ফিরে আসলে তোকে চিনতে পারবেনা চেহারায় পাল্টে গেছে।”
নিবিড় চুপচাপ বন্ধুদের সব কথা শুনছে। কথার প্রেক্ষিতে কোন কথা বলছে না। এসব কথা বলে ও নিজের মেজাজটা নষ্ট করতে চায়না বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চায় মনটা ফ্রেশ করতে চায়।
আরেকজন বলে উঠল,”এসব কথা বাদ দে তো। এতদিন পর সব ফ্রেন্ডরা একসাথে হয়েছি। আজকে একটু আড্ডা মাস্তি করি এসব কথা বলে কারো মন নষ্ট করিস না।”
সবাই থেমে যায়। নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে দেখে নিবিড় নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। সবাই টপিক চেঞ্জ করে। অন্য সব কথা বলতে লাগে।
সবার শেষে আসে আফিয়া। আফিয়া এসে নিবিড়ের পাশে বসা তৌহিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে বসে পড়ে নিবিড়ের গা ঘেঁষে। নিবিড় বিরক্তিকর চাহনি দেয় আফিয়া দিকে আফিয়া সেসব পাত্তা দেয় না।
কথায় কথায় হঠাৎ ইভা মেয়েটা বলে উঠল,”অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না বাড়িতে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে যাচ্ছে রে। চল না আমরা সবাই ট্রিপে যাই। নিবিড় তুই প্লিজ রাজি হয়ে যা। এভাবে মনমরা হয়ে ঘরের ভেতর বসে থেকে কি হবে বল। কোথাও ঘুরে আসি মনটাও ফ্রেশ হয়ে ভালো হবে। ছোঁয়া কে খোঁজার ও একটা কাজ হবে।”
তৌহিদ বলল,”ইভা এবার একটা কাজের কথা বলছিস। আসলে আমি চাইছিলাম এমন একটা কিছু আজকে যেহেতু সবাই আছি। আজকে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় কোথায় যাওয়া যায়।”
একে কি সবাই রাজি হয়ে গেল সবার এবার নিবিড় কে রাজি করানোর পালা, নিবিড় আজকে ভেবে এসেছিল বন্ধুদের সাথে ভালো করে কথা বলবে সব কথা শুনবে।আর ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে ওর ও ভালো লাগছে অনেকদিন ধরে আসলে কোথাও যাওয়া হয় না। কোথাও গেলে ভালো লাগবে এজন্য বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যায়। নিবিড় রাজি হওয়ায় ত সবাই খুশিতে চিৎকার করে ওঠে।
আফিয়া তো চিৎকার করে নিবিড় কে জড়িয়ে ধরতে চায়। কিন্তু নিবিড়ের রক্তবর্ণ চক্ষু দেখে পিছিয়ে যায়।
অনেকটা সময় বন্ধুদের সাথে কাটিয়ে বের হয়। গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ইভা বলে উঠে, ” দোস্ত সামনে মাসে তো ঘুরতে যাব তার আগে একটু নিজেকে ফেসটেস করবি নাকি এইভাবে জঙ্গল সেজে যাবে।”
নিবিড় বলে,”পাহারেই তো যাচ্ছি জঙ্গল সেজে যেতে সমস্যা কি?”
“তোরে জাস্ট কিছু বলার নাই। চুলগুলো যাও সুন্দর লাগছে দয়া করে একটু দাড়ি কমাইস তাহলে একদম তামিল নায়কই দেখা যাবে। দেবদাস না হয় হইছিস তা লোক সমাজেও প্রকাশ করতে হবে!”
নিবিড় কিছু বলতে যাবে তখনই একটা মেয়ের আওয়াজ শুনে সবার নজর সামনে পড়ে। দেখে স্কুল পড়ুয়া চারটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে! মেয়েগুলো মধ্যে একজন চটপটে পা ফেলে সবাইকে ক্রস করে নিবিড়ের সামনে এসে দাঁড়ালো সবাই কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখে হাসি হালকা লজ্জা। মেয়েটা হঠাৎ নিবিড়ের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ল আর একটা ফুল আরেকটা চিঠি নিবিড়ের দিকে এগিয়ে আই লাভ ইউ বলে উঠল।
মেয়েটার পেছন পেছন তার বাকি তিন বান্ধবী এসে দাঁড়ালো তাদের মুখে মিটিমিটি হাসি। আফিয়া তৌহিদ সহ সবাই হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। নিবিড় এতক্ষণ মেয়েটার দিকে না তাকালেও এবার মেয়েটার দিকে তাকালো মেয়েটার পানে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল।ও চমকে উঠেছে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এর আগে অনেক প্রপোজ পেয়েছে কিন্তু এই অবস্থা ওর হয়নি। এমনিতে একজনের জন্য দেবদাস হয়ে আছে। এখন এই প্রপোজটা মেনে নিতে পারছে না। আগে হলে এক ধমক দিত। এখন মেয়েটার দিকে তাকি ধমক ও দিতে মন চাচ্ছে না। বাচ্চা একটা মেয়। উফফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে আছে নিবিড়।
মেয়েটার পেছনে তিন বান্ধবীর মধ্যে একজন নিচু হয়ে মেয়েটার কানে কানে বলল,” সুমু উঠ তোর ক্রাশ তো পাথর হয়ে গেছে। ফুল আর নিবে কি সে তো কথা বলার ভাষায় মনে হয় হারিয়ে ফেলছে। ওঠে জোর করে হাতে ফুল আর চিঠিটা দে। উনি হতভম্ব কাটালে কিন্তু তুই একটা ধমক খাবি চল তাড়াতাড়ি পালাই।
আফিয়া তো রক্তবর্ণ হয়ে তাকিয়ে আছে যেই মেয়েটা কাছে এসে মেয়েটাকে একটা ধমক দেবে তার আগে মেয়েটা উঠে নিবিড়ের হাতে ফুল আর চিরকুট দিয়ে ভোঁ দৌড়। আফিয়া ননস্টপ বকাবাজি করতে করতে মেয়েদের পেছনে যেতে চাইলো । তারপরে এগিয়ে এসে নিবিড়ের হাত থেকে চিরকুট আর ফুল নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে পা দিয়ে লাথি মারল।
রাগে ফুস ফুস করে বলল,”কত বড় বেয়াদব দেখছিস! নিবিড়কে প্রপোজ করে ফুল দিয়ে কত সাহস মেয়েটার। একটা চর দিতে পারলে শান্তি লাগতো আবার পালিয়েছে!’
আফিয়াকে রাগ ঝাড়তে লাগলো। আর বাকিরা হুহু করে হেসে উঠলো মেয়েটার কাণ্ডকারখানা দেখে। নিবিড় নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে গাড়িতে উঠে বসল।
#চলবে …
( রেসপন্স ও কমেন্ট করবেন সবাই। যথার্থ মন্তব্য না পেলে প্রতিদিন গল্প দেব না ধন্যবাদ আপনারা ঠিকমত রেসপন্স করলে প্রতিদিন গল্প পাবেন।)