অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৮
Writer:Shakif Arefin
__অফিস থেকে আসার পর নীল দেখে তাসু মুখ টা কেমন কালো গাম্ভীর্য করে রেখেছে।চেহারা টা কেমন ফেকাসে দূর্বল হয়ে গেছে। তাসু কোন কথা বললো না।অন্য দিন তো অফিসের ব্যাগ টা হাত থেকে নেয় কিন্তু আজ ব্যাগ টাও হাতে নিলো না।তাসু চলে যায় নিজের রুমে।
__নীল কিছু টা অবাক হয়।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে নীল।অনেক্ষণ হয় নীল অফিস থেকে আসছে কিন্তু তাসু আজ কফিও এনে দিলো না।নীল এর কারণ টা খুঁজে পাচ্ছে না।রাতেও ঠিক মতো কথা বললো সকালেও ঠিক মতো নাস্তা খেতে দিলো।তাহলে হঠাৎ করে এমন আচরণ করছে কেন..??
__অনেক সময় হয়ে গেলো তাসুকে বাসার এদিক সেদিক কোথাও দেখছে না।তাই তাসু কি করছে সেটা দেখার জন্য নীল তাসুর রুমের দিকে যায়। নীল তাসুর রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে বেশ আশ্চর্য হয়।নীল দেখে তাসু খাটে উপুর হয়ে শুয়ে আছে।
__অন্য দিন তাসুর মন যত খারাপ_ই থাকুক নীল যখন অফিস থেকে বাসায় আসে তাসু তখন সাথে সাথে কফি নিয়ে আসতো।নীল ভাবে তাহলে কি হয়েছে তাসুর যার জন্য কফি নিয়ে আজ আমার রুমে আসলো না..??নীল প্রায় সময়ই দেখে তাসুর মন যত খারাপ_ই থাকে না কেন সে নীলের খেদমতের কোন ত্রুটি করে না।আজ এভাবে শুয়ে থাকার কারণ টা নীল উপলব্ধি করতে পারেনি।নিজের রুমে গিয়ে কাত হয়ে শুয়ে আরাম করতে থাকে নীল।
__তাসু শুয়া থেকে উঠে নীলের রুমে গিয়ে বলে__আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন..??নীল উঠে বলে__ না ঘুমায় নি।কেন কিছু বলবি..??তাসু বলে__ আমার জ্বরের কিছু ঔষধ লাগতো।সাথে মাথা টাও প্রচন্ড ব্যাথা করছে বিছানা থেকে তুলতে পারছি না।নীল এখন বুঝতে পারে তাসুর এভাবে শুয়ে থাকার কারণ টা কি।নীল বলে__আচ্ছা তুই রুমে গিয়ে শুয়ে থাক আমি এখনই নিয়ে আসছি । নীল বলে__ শুধু জ্বর আর মাথা ব্যাথার ঔষধ_ই তো…??তাসু বলে__ হুম।
__নীল আর এক মূহুর্তও দেরি করেনি সোজা নিচে গিয়ে কিছু দূর হেটে সামনের এক ফার্মেসি থেকে জ্বর আর মাথা ব্যাথার ঔষধ কিনে দ্রুত বাসায় চলে আসে। নীল ঔষধ নিয়ে সোজা তাসুর রুমে চলে যায়। তাসু তখন উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে আছে।নীল তাসু কে ডাক দিতেই তাসু ওড়না টা বুকের উপর রেখে নীলের দিকে তাকায়।
__নীল বলে__ এখানে জ্বর আর মাথা ব্যাথার সব ঔষধ আছে কিভাবে খেতে হবে তাও লেখা আছে। সব গুলাই খাওয়ার পর খেতে হবে। আর তুই এখন কিছু খেয়েছিস..??তাসু মাথা নাড়িয়ে বলে __ না এখনো কিছু খায়নি।নীল বলে__ আচ্ছা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। নীল কিচেনে গিয়ে প্লেটে করে তাসুর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসে।
নীল বলে __ এখানে খাবার রেখে গেলাম তুই এখনই খাবার শেষ করে ঔষধ খেয়ে নে।আর আমি আজ রাতে কিছু খাবো না।তোর শুয়া থেকে উঠে গিয়ে খাবার সাজিয়ে আমাকে ডাকতে হবে না।তোর কাছে বেশি খারাপ লাগলে বা কিছু লাগলে আমাকে ডাকিস।
__এটা বলে নীল তাসুর রুম থেকে বের হয়ে যায়। নীল বের হওয়ার পর তাসু খাবার প্লেট টা নিয়ে কিছু খেতে চেষ্টা করে কিন্তু তাসুর মুখে খাবার রুচি একেবারেই নাই। তারপরেও ঔষধ খাবে সেই চিন্তা করে কয়েক লোকমা খাবার খেয়ে ঔষধ গুলো খেয়ে নেয়।
__এই দিকে নীল রুমে এসে একটা কথাই ভাবতে থাকে __জ্বর কতোটা মারাত্মক হলে সহ্য করতে না পেরে তাসু আমার কাছে এসে ঔষধ চেয়েছে। তাসু তুমি এতো টা শান্ত আর ধৈর্য্যশীল স্বভাবের মেয়ে কেন..?? মুখ খুলে তো আমার কাছে সব সময় কিছু আবদার করতে পারো..??নিশ্চই এই গুণ গুলো সহ আরো কিছু ভালো গুণ তোমার মাঝে আমার বাবা দেখেছিল যার জন্য বাবা তোমাকে আমার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কিছু ভুল সিদ্ধান্তও সময়ের সাথে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তুমি আমার জীবনে আসার আগে মাহিরা নামক মেয়ে টা যে আমার জীবনে এসেছিল।তাকে যে আমি এখনো মন থেকে ভুলতে পারছি না।
__ল্যাপ্টপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে নীল রাত তখন প্রায় বারো টা ছুঁই ছুঁই করছে। ল্যাপ্টপ রেখে ঘুমাতে যাবে নীল। তখন তাসুর কথা মনে পরে গেলো।নীল গিয়ে তাসুর রুমের দরজা কিছু টা খুলে দেখে তাসু নড়াচড়া করছে। জ্বরে কাতরাচ্ছে জ্বর টা মনে হয় বেড়ে গেছে।দুই একদিন আগে জ্বর কিছু টা ছিল ঔষধ না খাওয়াতে হয়তো জ্বর বেশিই বেড়ে গেছে। নীল আসতে আসতে পায়ে তাসুর কাছে এগিয়ে যায়। নীল তাসুর কপালে হাত রাখে।কপালে হাত রাখতেই তাসু চোখ বড় করে তাকায়।
__নীল কে এতো রাতে এখানে দেখে তাসু অবাক হয়ে যায়। নীলের দিকে তাসু তাকিয়ে আছে কিছুই বলছে না। নীলও কপালে হাত রেখে তাকিয়ে আছে। নীল দেখে তাসুর কপাল প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। তাসু জ্বরে কাঁপছে।এসব দেখে নীলের খুব মায়া হচ্ছে। এই মূহুর্তে সে তাসুর জন্য কি করবে তার কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
__নীলের দিকে তাসু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।তখনো তাসুর চোখ দিয়ে পানি পরছে। নীল বলে__ বেশি খারাপ লাগছে..?? তাসু বলে__হুম।নীল বলে__তুমি একটু সহ্য করো আমি আসছি। নীল দ্রুত ওয়াসরুমে চলে যায় জলপট্টি আনার জন্য। পরক্ষণেই মনে পরে জ্বর টা তো বেশি উঠে গেছে জলপট্টি দিলে কাজ হবে না।তাই বালতি করে পানি নিয়ে তাসুর কাছে চলে যায়।
__নীল তার হাত দিয়ে তাসুকে ধরে বালতি বরাবর শুয়াতে গেলে তাসু বাধা দেয়। নীল বুঝতে পারে সে যেন তাসুর গায়ে হাত না দেয় সেজন্য বাধা দিচ্ছে। নীল জোর করে তাসু কে ধরে বালতি বরাবর মাথা রেখে পানি ঢালতে থাকে। অনেক্ষণ পানি ঢেলে দেওয়ার পর নীল ভিজে কাপড় দিয়ে তাসুর পুরো শরীর টা মুছে দেয়। যদিও তাসু বারবার নিষেধ করছিল কিন্তু এই মূহুর্তে নীল তাসুর কোন নিষেধ মানতে পারছে না।
__এভাবে অনেক্ষণ পানি ঢালার পর পুরো শরীর বারবার ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়ার পর,,নীল তাসুর কপালে ঘাড়ে হাত পায়ে ধরে দেখে জ্বর অনেক টা কমে গেছে। তাসুর কাঁপনিও থেমে গেছে। তাসু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।বিয়ের পর এই প্রথম নীল তাসুর এতো টা সেবা যত্ন করছে।তাসুর প্রতি নীলের এই সেবা টুকু করতে দেখে তাসুর কাছে কিছুটা হলেও ভালো লাগছে।
__নীল খুব সুন্দর হালকা করে তাসুকে বলে__ তাসু আমার কথা শুনছো..??তাসু চোখ বন্ধ রেখেই বলে__ হুম বলেন..? নীল বলে__এখন কিছু টা ভালো লাগছে..?? তাসু কোন কথা বলে নাই। নীল বলে__ আগের মতো কি খারাপ লাগছে..? কি হলো বলো না জ্বর কি কিছু টা কমেছে কি না..?? তাসু বলে__ হুম কমেছে।
__নীল বলে__ ঔষধ খেয়েছিলে…??তাসু বলে__হুম খেয়েছি। নীল বলে __ তোমার হাত পা টিপে দিবো..?? কিছু টা ভালো লাগবে।তাসু বলে__ লাগবে না।আর আমার জন্য তুই শব্দ টাই ঠিক আছে। বিয়ের পর এটা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তুমি শব্দ টা মনে হয় আমার জন্য মানাবে না।
__নীল কথা টা শুনে খুব কষ্ট পায়।নীল এটা ভাবে তাসু কতো টা কষ্ট পেলে আমাকে তুমি শব্দ টা বলতে নিষেধ করছে। নীল কথা টা শুনে চলে যেতে চাইলে তাসু নীলের হাত ধরে নিয়ে বলে __ শুনেন…?নীল তাসুর দিকে তাকিয়ে বলে__ কিছু বলবে আমাকে..??
__তাসু কেঁদে দিয়ে বলে~আমি যদি মরে যাই,, তাহলে কি আপনি মাহিরা আপু কে নিয়ে খুব ভালো থাকবেন..?? নীল কথা টা শুনে নিশ্চুপ নিরবতা পালন করছে।তাসু এমন একটা কথা বলতে তার জন্য হয়তো নীল কল্পনাতেও ভাবেনি।
__নীল কে চুপ থাকতে দেখে তাসু বলে__কি হলো বলেন না..?? আমি যদি মরে যাই তাহলে আপুকে নিয়ে ভালো থাকতে পারবেন তো..?বিশ্বাস করেন আপনার এতো অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না।সত্যি আমার খুব কষ্ট হয় জানেন..?? আমার মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আসার সময় আমি মরে গেলেই ভালো হতো।তাহলে আপনার এতো অবহেলা আর কষ্ট সহ্য করতে হতো না।
__নীল অন্য দিকে তাকিয়ে আছে তাসুর কথা গুলো শুনে নীলের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাসুর কথা গুলো কলিজায় গিয়ে আঘাত করতেছে।তাসু বলে__ শুনেন না..??আমি যদি মরে যাই তাহলে আমার লাশ টা কষ্ট করে আমার বাবা মার পাশেই দাফন করে দিয়েন।যেন আমার অবহেলিত জীবনের গল্প টা তাদের কাছে বলতে পারি। আচ্ছা আমি যদি মরে যাই তাহলে কি আপনি আমাকে কখনো স্বরণ করবেন..??
__এক শ্বাসে কথা গুলো বলে তাসু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। কথা গুলো শুনে হঠাৎ করেই নীলের চোখ দিয়ে কয়েক ফুটা পানি বেরিয়ে ফ্লোরে পরে যায়। নীল বুঝতেই পারে নাই কখন তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। নীল আর সেখানে এক মূহুর্তও দাড়াতে পারছে না।হয়তো আর একটু দাঁড়ালেই পা কেঁপে পরে যাবে।
__সোজা তাসুর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আর তাসু সেই দিকে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। নীলের চোখে মোটেও ঘুম আসছে না।তাসুর কথা গুলো বারবার স্বরণ হচ্ছে। তাসুর কথা নীল কে খুব ভাবাচ্ছে এবং কাঁদাচ্ছে।
চলবে…..
কেমন হচ্ছে আশা করি সবাই কমেন্ট করে জানাবেন।আর বাজে কমেন্ট থেকে কয়েক মাইল দূরে থাকবেন প্লিজ ??