#অবশেষে_সন্ধি_হলো
#পর্ব:১১
#লেখিকা:ইনায়া আমরিন
“আপনাদের মেয়েটাকে আমরা আমাদের ঘরের মেয়ে করে নিয়ে যেতে চাই আশফাক সাহেব।”
কোনো ভ’নিতা ছাড়াই হাসিমুখে সহজ স্বাভাবিক প্রস্তাব রাখলেন দিদার ইমতিয়াজ।
উনার কথায় আশফাক সাহেব কিছুটা বি’স্মিত হলেন। সেভাবেই স্ত্রীর পানে চাইলেন। রাবেয়াও যে অবা’ক হয় নি তা নয়,তবে মুখের ভঙ্গিমা সহজ রাখলো।
বাড়িওয়ালা আর বাড়িওয়ালি একসাথে তাদের বাসায় কখনো আসে নি।আজ প্রথম দুজনে একসাথে এসছে সাথে তাদের ছেলেও আছে।এভাবে পরিবার সহ আসাটা অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো আর এখন যখন উনি কথাটা বলেই ফেললেন তখন আর কিছু বোঝার বাকি থাকে না।
দিদার সাহেবের কথা আহনাফের কো’চকানো ভ্রুদ্বয় মিলিয়ে গেলো।যা আন্দাজ করেছে তাই হলো।উর্মির হাত চাইতে এসেছে আর সেটা যে দীপ্তের জন্য তাও বুঝতে পেরেছে আহনাফ।কারন দীপ্ত উনাদের একমাত্র সন্তান। তারমানে দীপ্ত উর্মিকে পছন্দ করে?
এয়ারপোর্টে উর্মির দিকে দীপ্তের তাকানোতে একবার সন্দেহ হয়েছিলো আহনাফের।কিন্তু তেমন গুরুত্ব দেয় নি।এখন মনে হচ্ছে তার সন্দেহই ঠিক,দীপ্ত পছন্দ করে উর্মিকে।
আহনাফ তার মায়ের দিকে তাকায়।সে জানে যেটা উর্মির জন্য ভালো হবে তার মা সেটাই করবে। মায়ের যদি মনে হয় দীপ্ত উর্মির জন্য সঠিক মানুষ তাহলে হয়তো খুব দ্রুত সে শ্যালক হয়ে যেতে পারে।তার নিজেরও অবশ্য আপ’ত্তি নেই।শুরু থেকেই দীপ্তকে তার যথেষ্ট মার্যিত ভদ্র ছেলেই মনে হয়।একটা ছেলেকে ভালো বলার জন্য যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন তা দীপ্তের মধ্যে আছে।এক কথায় উর্মির জন্য সুপাত্র।তবে সব কিছুর উর্ধ্বে হচ্ছে উর্মি কী চায়?তার বোনের চাওয়াটাই বড়ো বিষয়।অন্যসব পরের ব্যাপার।
রাবেয়া স্বামীর দিকে তাকিয়ে তারপর মুখোমুখি সোফায় বসা মাহমুদা দিদার সাহেব এবং দীপ্তের দিকে এক নজর তাকিয়ে মুখে হালকা হাসি টেনে বলে_
“যদি একটু খুলে বলতেন?”
অমায়িক হেসে মাহমুদা রাবেয়ার কথার উত্তরে বলে_
“আসলে হয়েছে কী আপা,আমার ছেলের আপনাদের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।আর সত্যি বলতে আমারও ব্যক্তিগতভাবে উর্মি মাকে অনেক আগেই মনে ধরেছিলো। এখন যখন দেখলাম ছেলেরও তাই,তখন মনে হলো শুভ কাজে দেরি কেনো করবো?চলে এলাম।”
মাহমুদা একটু থেমে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আবার রাবেয়া আর আশফাক সাহেব পানে চেয়ে ইত’স্তত করে বলে_
“আপনাদের কোনো আ’পত্তি না থাকলে আমরা আপনাদের মেয়ে উর্মিকে আমাদের ছেলের বউ করে নিতে চাই।”
দীপ্তের মনটা অশা’ন্ত হয়ে আছে।উপর থেকে নিজেকে স্বাভাবিক দেখালেও ভেতরে অস্থি’রতা ক্রমশ গ্রা’স করছে তাকে।বার বার উর্মির বাবা মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।উনারদের ভাব ভঙ্গিমা লক্ষ্য করছে। উর্মির উত্তর তো সে জানে।তাই উর্মিকে নিয়ে তার চিন্তা নেই। চিন্তা ওর বাবা মাকে নিয়ে। ওনারা যদি না করে?
মনে মনে দোয়া চায় যেনো আজকে এখান থেকে ইতিবাচক উত্তর নিয়েই বাসায় ফিরতে পারে। উর্মিকে নিজের করার জন্য যেই আবেদন নিয়ে এসেছে তা যাতে আন্টি আঙ্কেল মঞ্জুর করে।তার তো এতো অপেক্ষা আর ভালো লাগে না। ধৈর্যবান ছেলেটাও প্রিয় নারীকে পাওয়ার জন্য আজ অধৈ’র্য হয়ে যাচ্ছে, ছট’পট করছে।
ফুলের মতো একটা মেয়ে উর্মি যাকে এক পলক দেখে দীপ্তের চোখের তৃষ্ণা মিটে না।বরং আরো দেখতে ইচ্ছে করে, সারাদিন দেখতে চায় সে। মেয়েটাকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায় নিজের অর্ধাঙ্গীনী রূপে।ফুলটাকে নিজের বুকে পুরে রাখতে চায়। সারাজীবনের জন্য নিজের নামে করে নিতে চায় দীপ্ত।
মাহমুদার কথার প্রেক্ষিতে তাৎ’ক্ষণিক কোনো প্র’ক্রিয়া দেখালো না রাবেয়া।মনে মনে হয়তো অনেক কিছু ভাবছে।
ঘরে বিবাহযোগ্য উপযুক্ত মেয়ে থাকলে প্রস্তাব আসা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। উর্মির জন্য আরো আগে থেকে অনেক প্রস্তাব এসেছিলো। কিন্তু কাউকে মনে ধরে নি রাবেয়ার।আর বড়ো কথা হলো তখন মেয়ে বিয়ে দেওয়ার কোনো চিন্তা ভাবনাও করে নি।তাছাড়া আশফাক সাহেবও দেশে ছিলেন না।
রাবেয়া সবসময় মানুষের বাহ্যিক দিক থেকে অভ্যন্তর দিকটাকে গুরুত্ব দেয় বেশি।এই বেলাতেও তাই।যতোগুলো প্রস্তাব এসেছিলো,তারা শুধু তাদের টাকা পয়সা,বাড়ি গাড়ি, বিলাসীতা দেখাতে ব্যস্ত।সাথে তাদের ছেলের গুনগান গাওয়া তো আছেই।
কিন্তু রাবেয়া এসব চাইতো না।সবসময় চাইতো এমন ছেলে যে ভালো মন মানসিকতার অধিকারী।যে তার মেয়েকে সুখে নয় শান্তিতে রাখবে।বিলাসীতা করে সুখী হওয়ার চেয়ে কম খেয়ে কম পরে শান্তিতে থাকা ঢের ভালো।তাই মনে করে রাবেয়া। দীপ্তের পরিবার যথেষ্ট সচ্ছল।তবে সেইদিকে কোনো আগ্রহ নেই রাবেয়ার। তার আগ্রহ তাদের আচার আচরণ আর মন মানসিকতায়।আর তার জানা মতে মাহমুদা নরম মনে মানুষ,দিদার সাহেবও তাই। তাদের মনে এ্যা’চ প্যা’চ নেই।এতো বড়ো বাড়ির মালিক হয়েও কখনো অহংবোধ দেখে নি রাবেয়া। যতোবার কথাবার্তা বলেছে বিনয়ের সঙ্গে আন্তরিকভাবে বলেছে।তাছাড়াও রহিমা খালার কাছেও দীপ্তদের প্রশংসা শুনেছে।মা বাবা এমন ভালো মনের হলে তাদের ছেলেও তেমন ধাঁ’চের হওয়ার কথা।আর দীপ্তকে দেখেও রাবেয়ার তেমনই মনে হয়। কিন্তু তার চাওয়ার চেয়েও বড়ো কথা উর্মি কী চায়?
আশফাক সাহেব স্ত্রীর দিকে চেয়ে আছেন।তিনি এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না,পুরোটাই রাবেয়ার উপর ছেড়ে দিবেন। উর্মিকে ছোট থেকে সেই মানুষ করেছে।তাই এই ক্ষেত্রে তিনি মনে করেন মতামত দেওয়ার বেশি অধিকার রাবেয়াই রাখে।সে যা সিদ্ধান্ত নেবে উনি সেটাকেই সমর্থন করবেন।তবে দীপ্তকে উনার ভালোই লাগে। যতোটুকু উনি দেখেছে নাকোচ করার মতো ছেলে নয় দীপ্ত।
মৌনতা ভে’ঙে রাবেয়া সামনে তাকায়।মুখে স্বাভাবিক হাসি বজায় রেখে বলে_
“দেখেন আপা,দীপ্ত নিঃ’সন্দেহে সুপাত্র।ওর মতো ছেলেকে মেয়ের জামাই করতে কেউ না করবে না।তবে আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি। কোনো ভ’নিতা ছাড়াই বলছি_
আমাদের কাছে সবার আগে আমাদের মেয়ে।ওর ইচ্ছাই আমাদের ইচ্ছা।এ নিয়ে ওর মতামতটাই আমাদের মতামত। যেহেতু জীবনটা ওর।ওর জীবনের এতো বড়ো সিদ্ধান্ত আমি ওর উপরই ছেড়ে দিতে চাই।”
কথাগুলো বলার ফাঁকে রাবেয়া স্বামীর দিকে তাকায়। আশফাক সাহেব চোখে হেসে তার কথাগুলোর সম্মতি দেয়।তা দেখে আবার বলে_
“আমাদের মেয়ে যদি রাজি থাকে তাহলে এই প্রস্তাবে আমাদেরও কোনো আ’পত্তি থাকবে না।আপনি কি বলেন?”
শে’ষের কথাটা আশফাক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে রাবেয়া। আশফাক সাহেব মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে_
“একদম তাই। আমার মেয়ে যদি রাজি থাকে তাহলে আমরাও রাজি।”
দীপ্তের মনে হলো তার মাথা থেকে কয়েক টন বোঝা নেমে গেছে। উর্মির বাবা মায়ের এই উত্তরে মনে শান্তির ঢেউ বহে গেল।চোখ ব’ন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে সবার অগোচরে ক্ষীণ হাসির মাধ্যমে মনের প্রশান্তি প্রকাশ করে। এবার শুধু তার প্রিয়তমাকে সামাজিকভাবে,ধর্মীয়ভাবে নিজের নামে করার পালা।
রাবেয়া আর আশফাক সাহেবের কথায় সন্তষ্টজনক হাসলেন দীপ্তের বাবা মা।দিদার সাহেব বলেন_
“তা ঠিক বলেছেন ভাইসাহেব। ছেলে মেয়ের চাওয়াটাই মুখ্য বিষয়। তাদের মনের বিরুদ্ধে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া একদম ঠিক নয়।আর বিয়ের মতো একটা বিষয় তো আরো আগে নয়। আমার ছেলে যখন নিজের মনের কথাটা আমাকে এসে বলেছে তখন আমি রাজি হয়ে গেছি কারন আমি দেখেছি ছেলে নিজের জন্য উত্তম জীবন সঙ্গীই বেছে নিয়েছে।এখন উর্মি মায়ের উত্তরের অপেক্ষা।”
রাবেয়া উনাদেরকে রেখে নাস্তার ব্যবস্থা করতে গিয়েছে রান্নাঘরে।ড্রয়িংরুমে আহনাফ আশফাক সাহেব, দীপ্ত আর তার বাবা মা কথা বলছে।
উর্মি প্রায়সময় কিছু ফুড আইটেম ফ্রোজেন করে করে রেখে দেয়।যাতে হ’ঠাৎ মেহমান আসলে সেগুলোর সাথে আরো কিছু এড করে আপ্পায়ন করা যায়। এজন্য রাবেয়ার তেমন সম’স্যায় পড়তে হয় নি। টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করে বেশ ভালোভাবেই আপ্পায়ন করে।
তারপর চুলায় চা বসিয়ে উর্মির রুমে যায়।
.
মায়ের কাছে সব শুনেছে উর্মি।সে তো জানতোই এমন কিছু হবে।মা যখন তাকে সব বলছে তখন সেও সেইদিন ক্যাফেতে ঘটা ঘটনাটাও বলেছে।সবকথা নয়,যতোটুকু প্রয়োজন ততটুকুই।এবং সে দীপ্তকে কী উত্তর দিয়েছে তাও জানায় মাকে।
দীপ্ত আর পাঁচটা ছেলের মতো উর্মির পেছনে হেঁটে হেঁটে সময় ন’ষ্ট না করে সোজাসুজি নিজের মনে কথা প্রকাশ করেছে। উর্মির উত্তর যেনে বাবা মাকে জানিয়েছে। রাজি করিয়ে পরিবার নিয়ে তাদের কাছে প্রস্তাব এনেছে। এখন তাদের মতামত নিয়ে উর্মিকে বিয়ে করতে চায়।এমন ব্যবহার তো ভালো ভদ্র ঘরের ছেলেমেয়ের কাছেই আশা করা যায়।
দীপ্তের এই সুন্দর পদক্ষেপ গুলো রাবেয়াকে মুগ্ধ করলো।
“দীপ্তকে কেমন লাগে তোমার?”
মায়ের হ’ঠাৎ করা প্রশ্নে ভ’ড়কায় উর্মি।এমন কথার কী জবাব দেবে। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ এপাশ ওপাশ ঘোরায়। কিছু বলে না।
কিছুক্ষণ মৌণ থেকে তারপর হাল্কা স্বরে বলে_
“মানুষ হিসেবে ভালো।”
চোখে হাসে রাবেয়া। তারপর আবার বলে_
“ওরা তোমাকে দীপ্তের বউ করে নিতে চায়।সেই প্রস্তাব নিয়েই আজ এসেছে।এই ব্যাপারে তোমার কী ইচ্ছে?”
হ’ঠাৎই কেমন ল’জ্জা লাগছে উর্মির।আগেও অনেক প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু মা কখনো এভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করে নি।নিজেই সব মিটমাট করেছে।এবার তার মতামত চাচ্ছে তার মানে কী দাড়ায়?মা রাজী?
এসব ভেবে উর্মির আরো ল’জ্জা লাগে।মাথা নুয়ে ফেলে।আজকে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে না কিছুতেই।
রাবেয়া আবার প্রশ্ন করে। উর্মি কোনো কিছু না ভেবে বলে_
“তোমরা যা ভালো বোঝো।”
দুদিকে মাথা নাড়ায় রাবেয়া।মেয়ে উত্তরে সন্তষ্ট হলো না।বলে_
“বিয়েটা আমরা করবো না উর্মি।সংসারটাও আমরা করবো না,তুমি করবে।এটা তোমার সারাজীবনের ব্যাপার।তাই তোমার মতামতটাই আমাদের সবার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
উর্মি কিছু বলছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাবেয়া মেয়ের মুখে দিকে তাকিয়ে বলে_
“দীপ্তকে পছন্দ করো?”
উর্মির চিবুক আরেকটু হলে বুকে এসে ঠেকবে।তার কাছে এই সহজ প্রশ্নগুলো খুব কঠিন লাগছে।মুখ থেকে কোনো কথাই বের হতে চায় না। ল’জ্জায় নুয়ে পড়ে মেয়েটা।
মৌনতা সম্মতির লক্ষণ
উর্মিকে রাবেয়া খুব ভালো করে জানে। কোনো কিছু তার অপ’ছন্দ হলে অন্তত মায়ের কাছে লুকোয় না, সরাসরি বলে। দীপ্তকেও অপ’ছন্দ হলে শুরুতেই নাকোচ করতো,সেটা করে নি।মেয়ের মৌনতাই যে তার উত্তর।তা বুঝতে পেরেছে মা রাবেয়া।
হাত দিয়ে মেয়ের ল’জ্জারাঙা মুখটা তুলে হেসে ফেলে।বলে_
“চুলোয় চা বসিয়েছি,সুন্দর করে চা টা বানিয়ে ফেলো।ড্রয়িং রুমে সবাই অপেক্ষা করছে। মাথায় কাপড় দিয়ে সবার জন্য চা নিয়ে এসো।”
.
বড়োরা সবাই কথা বলছে। উর্মির দিক থেকে কোনো নেতি’বাচক উত্তর আসে নি তাই জানিয়েছে রাবেয়া।সবাই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আনন্দ প্রকাশ করে।তারপরেও মাহমুদা নিজে একবার জিজ্ঞাসা করে নেবে বলে মনে মনে ভেবে রাখে।
খুব আয়েস করে সোফায় বসে আছে দীপ্ত।সে তো জানতোই উর্মি কী বলবে।মনে যে তার কতো শান্তি তা চোখে মুখে প্রকাশ পাচ্ছে।মুখে সেই চেনা পরিচিত হাসি। এতোক্ষণ আহনাফের সাথে বসে কথা বলেছে।তার অফিসের ফোন আসায় সে রুমে গেছে।
দীপ্ত আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে তাকাচ্ছে। একবার, দুবার,বার বার।সবুজ কামিজ পরিহিতা মাথায় ওড়না দেওয়া এক অপ্সরীকে দেখছে।তার অপ্সরী।
চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে উর্মি। না’র্ভাসনেসে বুক ধড়’ফড় করছে কিন্তু বুঝতে দিচ্ছে না।সবার সামনে গিয়ে মুখে হাসি নিয়েই সালাম দেয়। কিন্তু দীপ্তের দিকে তাকায় না।না তাকিয়েও ভালো করেই বুঝতে পারছে দীপ্ত তার দিকে তাকিয়ে আছে।তাতে ভেতরে ভেতরে আরো নুয়ে যাচ্ছে উর্মি।
সবাইকে চা দেয়। মাহমুদা উর্মির হাত টেনে নিজের পাশে বসায়। শুরু করে দেয় খোশগল্প।সবাই মিলে অনেক্ষন কথা বলে।
শেষে মাহমুদা উর্মির মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বলে_
“মায়ের থেকে নিশ্চই শুনছো সব। এবার বলোতো আমার ছেলেকে বিয়ে করতে কোনো আপ’ত্তি নেই তো মা?”
সবার চোখ উর্মির দিকে।সবাই জানে তাও উর্মির মুখ থেকে একবার শুনতে চায়। ঠোঁটের কাছে হাত রেখে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দীপ্ত।সে নিজেও দেখতে চায় উর্মি কী বলে।
সবার এমন তাকনোতে উর্মি ঠিক থাকতে পারছে না।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।বাবা মা ভাইয়ে সামনে কীভাবে বলবে? তারপর ভাবলো,দীপ্ত তো নিজের কথা রেখেছে। পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাকে নিজের বউ করতে চাইছে।এখন সে যদি চুপ করে থাকে সেটা তো ঠিক না। দীপ্ত তার কথা রেখেছে তারও উচিত নিজের কথা রাখা।
সব লাজ লজ্জা এক কোণে রেখে মাথা নাড়ায় উর্মি যার অর্থ তার কোনো আপত্তি নেই।
উর্মির ছোট একটা সম্মতি যা দীপ্তের মনে হাজার হাজার ভালোবাসার প্রজাপতি মেলে দিতে সক্ষম।
.
অবশেষে বিয়ে ঠিক হলো দীপ্ত এবং উর্মির।আজ থেকে ঠিক একসপ্তাহ পর, শুক্রবার।তবে দীপ্ত তার একটা ইচ্ছের কথা সবাইকে জানিয়েছে। বিয়ের পুরো খরচ সে একা বহন করবে। উর্মিকে ছাড়া তার পরিবার থেকে একটা কণাও নিতে রাজি নয় সে।তারা যেনো কোনো বাড়তি খরচ না করে। দীপ্তের এই কথায় একমত হয় তার বাবা মাও।
রাবেয়া এবং আশফাক সাহেবের একমাত্র মেয়ে।তার বিয়েতে তারা খরচ করবে না?এ কেমন কথা।
তখন মাহমুদা জানায়,তারা যদি খুশি হয়ে মেয়েকে কিছু দিতে চায় তবে উনাদের কোনো আ’পত্তি নেই।বাবা মা হিসেবে তারা দিতেই পারে।কিন্তু বিয়ের খরচ পুরোটাই দীপ্তের ওপর।
উনারদের কথায় উপর আর কিছু বলে না রাবেয়া আর আশফাক সাহেব। বিয়ের নিয়ে অনেকক্ষণ আলাপ আলোচনা হওয়ার পর দীপ্তরা চলে যায় বাসায়।যাওয়ার আগে দীপ্ত উর্মির দিকে তাকায়।উর্মিও তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।দীপ্তকে তাকাতে দেখে উর্মি ল’জ্জা পায়।চলে যায় নিজের রুমে। হেসে ফেলে দীপ্ত।আর এক সপ্তাহ শুধু তারপর এই মেয়েটাকে রানী বানীয়ে নিয়ে যাবে নিজের রাজ্যে।
.
আশফাক সাহেবের চোখে মুখে কেমন বেদ’নার ছাপ। অনেকগুলো বছর বিদেশে থেকেছে।ছেলে মেয়েকে তেমন কাছে পান নি।এখন দেশে এসেছে,ভেবেছিলেন ছেলে মেয়ের আর স্ত্রীর সাথে বাকি জীবনটা সুন্দর ভাবে কা’টাবেন। কিন্তু মেয়ে বড়ো হয়ে গেলে কী তাকে আর ঘরে রাখা যায়?
এইতো এখন মেয়ের বিয়ে দিতে হচ্ছে। ওনার মেয়েটা অন্য ঘরের বউ হয়ে চলে যাবে।
“কি হয়েছে আপনার?”
রাবেয়ার কথায় ফিরে তাকায় আশফাক সাহেব। দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে বলে_
“আচ্ছা,এমনটা করা যায় না?উর্মির অনার্স শেষ হলে উঠিয়ে দেওয়া যাবে।এখন না হয় বিয়ে পড়িয়ে রাখা হোক।”
স্বামীর কথার অর্থ বুঝতে পারে রাবেয়া।মেয়েটাকে আরো কয়েক বছর নিজের কাছে রাখার ছোট একটা চাওয়া। আশফাক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে_
“শুনুন,আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। একদিন না একদিন উর্মিকে শশুড় বাড়ী যেতেই হবে।আমরা সারাজীবন মেয়েকে আমাদের কাছে রাখতে পারবো না।বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,এখন এই কথা বলার কোনো মানে হয় না।আর আমি চাই না বিয়ের পরও দীপ্ত উর্মি আলাদা থাকুক।আমি চাই একসাথে থাকুক।একসাথে থেকে দুজন দুজনকে চিনুক,বুঝুক।এতে ওদের জন্যও সংসারটা সহজ হবে।বুঝতে পেরেছেন আমার কথা?”
মাথা নাড়ায় আশফাক সাহেব। কথাগুলো সত্যি কিন্তু মন কী তা মানতে চায়?মন তো চায় মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখে দিতে।
.
টেবিলে মাথা রেখে চেয়ারে বসে আছে অথৈ। তার মাথার নিচে খোলা বই।বইয়ের পাতা চোখের পানিতে ভিজে আবার শুকিয়ে গেছে। চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে।ফর্সা মুখটা লাল আভায় ফ্যা’কাশে হয়ে আছে। অতিরিক্ত কান্নার দরুন চোখগুলো ব্যা’থা করছে।হাতে ফোন।গ্যালারি ঘেঁ’টে আহনাফে সবগুলো ছবি দেখছে।এই মানুষটাকে সে ভালোবাসে।খুব ভালোবাসে।যাকে ভালোবাসে,যাকে মন দিয়েছে তাকে ছেড়ে কী করে থাকবে?যখন এই কথাটা মাথা আসে তখন ডুকরে কেঁদে ওঠে মেয়েটা।
কিন্তু না, মায়ের কথাগুলো ভুললে তো চলবে না। তাকে স্ট্রং থাকতে হবে। ভালোবাসলে পেতে হবে এমন কোনো মানে নেই।সে আর জ্বা’লাবে না এই লোক টাকে।থাকুক শান্তিতে।এক তরফা ভালোবাসা নিয়েই দিব্বি দিন কা’টিয়ে দিবে।
চোখের পানিগুলো মুছে ফোন হাতে নিয়ে এক এক করে আহনাফের সব ছবি ডি’লেট করে দেয়। ফেসবুক লগইন করে, আহনাফকে আনফ্রেন্ড করে দেয়।সব জায়গা থেকে ব্ল’ক করে দেয়। ফোন হাত থেকে ছুঁ’ড়ে ফেলে।
চোখ মুখ শ’ক্ত করে বইয়ের পাতা উল্টে পড়ায় মন দেয়।সামনে পরীক্ষা,ভালো রেজাল্ট করতে হবে।যে তাকে চায় না,তাকে নিয়ে ভেবে নিজের জীবন এলো’মেলো করা বোকামো। নিজেকে ব্যস্ত রাখবে সে।তাহলে আর এইসব কথা মনে পড়বে না।মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করে অথৈ। কিন্তু চোখের পানি অনবরত পড়ছেই।তারা তো বাদ মানে না।
দরজার বাহিরে দাড়িয়ে সব খেয়াল করেছে অথৈয়ের মা হোসনে আরা।মেয়ের ক’ষ্টের কারনটা খুব ভালো করেই জানেন তিনি। কিন্তু তাকে তো দেখতে হবে আসলেই এই ভালোবাসাটা কী এক পাক্ষিক?
চলবে…
(রি-চেক করিনি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।❤️)