অবশেষে বৃষ্টি পর্ব ২৯+৩০

0
518

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ২৯
#নীলাভ্র_নেহাল
.
পৃথা চলে যাওয়ার পর পুরো কেবিনে পিনপতন নীরবতা চলে এলো। সায়ান মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। জীবনে সবসময় একটা না একটা ঝামেলা লেগে থাকতেই হবে নয়তো সেটা জীবনই নয়। ইচ্ছে করছে এই অসুস্থ শরীরেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে।

সাইমু এতক্ষণ চুপ করে ছিলো। সায়ানের দিকে দেখে ওর বড় মায়া লাগলো। বলল, কাজটা ঠিক করলে না মা। একটা মেয়েকে এভাবে কষ্ট দিলে কেন?
– কষ্ট কি ও আমাদের দেয়নি?
– ও তো বিষয়টা ব্যাখা করেই দিলো। ওর জায়গায় থাকলে আমিও মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউকে বিয়ে করতাম না।
সায়ান বললো, মা। পৃথাই ঠিক ছিলো। আসলে ওই সময়ে আমি একাই ওকে ভালোবাসতাম। আমার প্রতি ওর বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা ছিলো না। যেটা ছিলো সেটা কেবলই সামান্য মায়া। ও সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলো। আমি পারিনি বলেই বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম।
মা কিছু বললেন না। সাইমু বলল, ওকে আমার খুব ভালো লেগেছে আম্মু।
– একদিন দেখেই ভালো লেগে গেলো?
– মা, মাঝেমাঝে কারো সামান্য একটা আচরণের জন্যও তাকে অনেকদিন মনে রাখা সম্ভব। পৃথা আমার মন জয় করে নিয়েছে। তুমি ওর সাথে মিশে দেখো, তুমিও ওর প্রেমে পড়বেই।
মা এবারও কিছু বললেন না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। সায়ান ‘ধুর ভালো লাগে না’ বলে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
.
পৃথা খালার বাসায় ফিরে গোসল সেরে খাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়লো। মাথায় বড় ধরণের জেদ চেপেছে। কিছু একটা করতেই হবে ওকে। সারাদিন শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াল, চিন্তা ভাবনা করলো কি শুরু করা যায়। চাকরি করে অন্যের স্বপ্ন পূরণের চেয়ে নিজে কিছু করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করাটাই হবে শ্রেয়। বিভিন্ন দোকানে ঘুরেঘুরে আইডিয়া খোঁজার চেষ্টা করলো। পরিচিত কয়েকজনকে ফোন দিয়ে আলাপ আলোচনা করলো। পথ হাঁটতে হাঁটতে ভাবল অনেক বিষয় নিয়ে। গুগলে ঘেঁটে ঘেঁটে দেখতে লাগলো কি করা উপযুক্ত হবে।

রাত্রিবেলা বাড়িতে বাবাকে ফোন দিলো। ও সবসময় মাকেই কল দেয়। মায়ের ফোন থেকেই বাবার সাথে কথা হয়। এবার বাবাকে ফোন দেয়ায় বাবাও বেশ অবাক হলেন। উনি রিসিভ করে বললেন, হ্যাঁ পৃথা মা, বল।
– তোমাকে একটা জরুরি কথা বলবো আব্বু।
– বল।
বাবা ভাবলেন বিয়ের ব্যাপারে বলবেন। পৃথা সময় নিচ্ছিল। মনেমনে গুছিয়ে নিচ্ছিলো কি বলবে। বাবা ভাবলেন মেয়ে লজ্জার কারণে বলতে সংকোচ করছে। উনি নিজে থেকেই বললেন, তুই কি বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিস মা? লজ্জার কিছু নেই। যা মনে আছে বলে ফ্যাল। আমি ছাড়া তোর আর আপন কে আছে বল?

পৃথা বলল, না আব্বু। বিয়ের ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে চাই না। আমি তোমাকে যেটা বলতে চাই সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
– বিয়ের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ?
– আপাতত আমার কাছে তাই। কারণ আগে এই স্বপ্ন পূরণ করবো তারপর অন্যকিছু। বিয়ে নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না।
– তুই খুব দ্রুত নিজেকে মোটিভেট করতে পারিস। এটা ভীষণ ভালো লাগে আমার। তা বল কি গুরুত্বপূর্ণ কথা? আমি প্রস্তুত শোনার জন্য।
পৃথা বললো, আব্বু। আমার বেশ কয়েক লাখ টাকার দরকার।
– বেশ কয়েক লাখ?
– হ্যাঁ। তুমি ম্যানেজ করে দিতে পারবে? যেমন ধরো লোনের ব্যবস্থা করে বা অন্য কোনোভাবে। আমি একটা বিজনেস শুরু করতে চাই।
– খুবই ভালো উদ্যোগ। কিসের বিজনেস মা?
– একটা ক্যাফেটেরিয়া দিতে চাই আব্বু। পাশাপাশি স্পাইসি ফুডস থাকবে।
– হুমম বুঝলাম। কোথায় দিতে চাও?
– শহরেই। আমার বান্ধবীর বাবার দোকান থেকে দোকান ভাড়া নিতে পারবো। ডেকোরেশন আমি নিজে করবো। তুমি বলো সেটা কেমন হবে?
– খুব ভালো হবে। প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
– এখন টাকার ব্যবস্থা করতে হবে আব্বু। ইনশাআল্লাহ একদিন খুব বড় বিজনেস হবে আমার। বড় একটা রেস্টুরেন্ট হবে।
– সবকিছু থাকতে হঠাৎ ক্যাফেটেরিয়ার চিন্তা আসলো কেন?
– আমার খুব ইচ্ছে করে মাঝেমাঝে। একটা কফিশপ দেয়ার।

বাবা পৃথাকে ভরসা দিয়ে ফোন রাখলেন। আর পৃথা ল্যাপটপ নিয়ে বসল। কফিশপের ডেকোরেশন কেমন হবে সেটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। খাতা কলম নিয়ে ডিজাইন করতে গিয়ে হঠাৎ আনমনা হয়ে পড়লো। উপুর হয়ে শুয়ে গুগলে ডিজাইন আইডিয়া দেখতে দেখতে খাতায় আনমনে কিসব লিখছিল। হঠাৎ খেয়াল করে দেখলো সেখানে শুধুই সায়ানের নাম। পৃথার বুকটা ফাঁকা হয়ে গেলো। সায়ান সায়ান সায়ান। আমি তোমাকে ভালোবাসি সায়ান। তুমি কখন আসবে? আমার কাছে আসো। আসো আসো আসো।

এরকম অসংখ্য শব্দ লিখে ফেলেছে খাতায়। চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো ওর। বুকের ভেতর উথাল পাথাল ঝড় শুরু হয়ে গেলো। সায়ানকে ছাড়া থাকার কথা যেন ভাবতেই পারে না ও। কি ভীষণ কষ্ট হতে থাকে! মানুষটা অস্তিত্বের সাথে মিশে গিয়েছে। ওকে নিয়ে বারবার স্বপ্ন আসে চোখে। অজান্তেই ওর কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হয়, একি আমি ওকে নিয়ে কেন ভাবছি! মন বড় অদ্ভুত।

রাতটা আর ঘুমাতে পারলো না পৃথা। ক্যাফেটেরিয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের যন্ত্রণাকে নিয়ে সময় কাটাতে লাগল। রাতগুলো এমনই। দিনের বেলা যে মানুষটা সবচেয়ে কঠিন, রাত্রিবেলা সে মানুষ টাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে একাকী ও নরম। সমস্ত বেদনারা এসে বুকে জমাট বাঁধে। ভালোবাসার শূন্য খাঁচাটা ডানা ঝাপটাতে থাকে। কারো ভালোবাসা পাবার তীব্র ব্যকুলতা জাগে। ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে বড্ড ইচ্ছে হয়। কখনো কখনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে কোনো অজানায়। কিন্তু বাস্তবতায় ফিরে এলে সবকিছু শূন্য, ফ্যাকাশে হয়ে ধরা দেয়। তখন বুকটা ফাটতে থাকে। কাউকে কাছে পাবার আকুলতাটা আরো নাড়া দিতে থাকে।

পরদিন ঘুম ভাংলো বেশ দেরিতে। দুপুর হয়ে গেছে। পৃথা আড়মোড়া ভেঙে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অনেকগুলো কল এসেছে। নাম্বারটা অচেনা। রাতে মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই বুঝতে পারে নি। কিছুক্ষণ পর সেই নাম্বারে কল দিতেই একটা মেয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো। – হ্যালো কে বলছেন?

পৃথা বলল- এ নাম্বারে থেকে অনেকগুলো কল এসেছিল। আমি পৃথা।
– ও পৃথা! আমি সাইমু। সায়ানের বোন।
– জ্বি আপু। বলুন
– সায়ান রাতে খুব পাগলামি করেছে বুঝলে? অনেক চেষ্টা করে তোমার নাম্বার যোগাড় করে ফোন দিয়েছি। সায়ান ওষুধ খাচ্ছে না। বাচ্চাদের মত অভিমান করে বসে আছে। তুমি কি একবার আসবে?
– কিন্তু আপু..
– কি?
– আন্টি তো আমাকে..
– মা কিছু বলবে না। তুমি আসো প্লিজ। আমার ভাইটা আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তুমি এসে ওকে খাওয়াতে পারো কি না দেখো।
– আচ্ছা আপু আমি আসছি।

পৃথা রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো খালা মাছের কালিয়া আর সাদা ভাত রান্না করেছে। ভাজিও আছে। দ্রুত বাটিতে তুলে নিয়ে রুমে এসে জামাকাপড় বদলে নিলো। তারপর হঠাৎ মনে হল সায়ানের দেয়া চুড়ি ও গাজরার কথা। কি ভেবে যেন আজকে পৃথা শাড়ি পরলো। হালকা সাজগোছ করে খোপায় গাজরা ও হাতে সায়ানের দেয়া চুড়িগুলো পড়লো। চুল আচড়ে বেণী করে সামনে এনে ঝুলিয়ে রাখলো। এভাবে একবার পৃথাকে দেখলেই সায়ানের সব পাগলামি ছুটে যাবে পৃথার মনে এই বিশ্বাস।

হাসপাতালের দরজায় শব্দ করলে দরজা খুলে দিলো সাইমু আপু। পৃথাকে দেখে বলল, একেবারে বউ সেজে এসেছো!
সায়ান ঘুমাচ্ছিল। পৃথা কাছে এসে ওর পাশে দাঁড়ালো। সাইমু আপু বলল, সায়ান দ্যাখ কে এসেছে? ওঠ।

সায়ান চোখ মেলে হা করে তাকিয়ে রইলো। বড়বড় হয়ে গেলো ওর চোখ দুটো। পৃথা এসেছে! নাকি এটা নিছক স্বপ্ন?

পৃথা হাসির চেষ্টা করে বলল, কি দেখছেন?
– তুমি এসেছে?
– হ্যাঁ। উঠুন, ভাত খাবেন।
– তুমি শাড়ি পরেছো কেন?
– কি অদ্ভুত প্রশ্ন! শাড়ি পরলে মন ভালো থাকে তাই পরলাম। আমার মন আজ খুব খারাপ ছিল।
– কেন?
– আপনি অসুস্থ তাই। এবার সুস্থ হয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।

সায়ানের মা এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পৃথাকে দেখতে সুন্দর লাগছে এটা স্বীকার করতেই হয়। উনি না চাইলেও তাকিয়ে আছেন। পৃথা কি ভেবে হঠাৎ ওনার দিকে তাকিয়ে বলল, আন্টি আপনি খেয়েছেন? আসুন খেয়ে নিন। আমি গরম ভাত আর মাছের কালিয়া এনেছি। সাথে ডিম ভুনা আর ভাজি।
আন্টি কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। তবে পৃথা এটা বুদ্ধি করেই বলেছে। কারণ ছেলে অসুস্থ, তার উপর কিছু খায়নি। এমতাবস্থায় কোনো মা ই খেতে পারবেন না। পৃথা আন্টির কাছে গিয়ে ওনার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। বেডের উপর বসিয়ে বাটি থেকে ভাত নিয়ে প্লেটে তুলে এগিয়ে দিলো। পানির বোতল আর একটা প্লেট দিয়ে বলল নিন হাত ধুয়ে নিন।

আন্টি শুধু অবাক হয়ে দেখছেন। কিছু বলতে পারছেন না। পৃথা মনেমনে হাসছে। আর ওর মনটা কোনো অদ্ভুত কারণে ভালো হয়ে গেছে। মন ভালো না থাকলে ও শাড়ি পরতো না। হয়তো বা ফ্রেশ ঘুমের পর যখন কেউ শুনবে একটা ছেলে তার জন্য পাগলামি করে না খেয়ে আছে, স্বাভাবিক ভাবেই তার মন ভালো হয়ে যাওয়ারই কথা। পৃথা বলল, আজ অবশ্য আমি রান্না করিনি। খালা করেছে। তবে খালাও ভালো রান্না করেন। খেয়ে নিন। আমার উপর যত রাগ থাকুক আর যা ই থাকুক। খেতে তো অসুবিধা নেই।

সায়ান বলল, আমাকে খাইয়ে দাও আম্মু।

আন্টি সায়ানকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেলেন। পৃথা চেয়ারে গিয়ে বসল। সায়ান বলল, মা পৃথাকেও খাইয়ে দাও।

মা একবার পৃথার দিকে তাকালেন আর একবার সাইমুর দিকে। পৃথা উঠে এসে কাছে দাঁড়িয়ে বলল, হ্যাঁ খাইয়ে দিন। আমিও কিছু খাইনি তাই বেশি করে ভাত এনেছি।

মা কি করবেন বুঝতে পারলেন না। একটা মেয়ে সামনে হা করে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার আনা ভাত তিনি নিজে খাচ্ছেন অথচ সেই মেয়েটার মুখে দেবেন না, তা কি করে হয়! ব্যাপারটা বাজে হয়ে যাবে। উনি পৃথার মুখে খাবার তুলে দিলেন। সায়ান মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। এত সুন্দর দৃশ্য বোধহয় আগে দেখেনি। ইস! মা যদি সবসময় পৃথাকে এভাবে তুলে খাওয়াতো! তাহলে কত ভালোই না হতো।

সাইমু বলল, আমারও তো খেতে ইচ্ছে করতেছে আম্মু।
– আয় তুইও খা।
মায়ের মুখে হালকা হাসির আভাস। সায়ানের দৃঢ় বিশ্বাস মায়ের মনটা আস্তে আস্তে গলছে। নিশ্চয়ই তিনি পৃথাকে আপন করে নেবেন। পৃথার সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে। মাকে কিভাবে পটানো যায়। অবশ্য পৃথা এমনিতেই সেটা আদায় করে নেবে।

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে পৃথা সায়ানকে বলল, আমি একটা ক্যাফে দিতে চাচ্ছি কোন এরিয়ায় হলে ভালো হয়?
– ক্যাফে?
– হ্যাঁ।
– হঠাৎ এই ভাবনা? তুমি তো জব করবে বলেছিলে?
– অনেক ভেবে এই ডিসিশনে এলাম। আমি ক্যাফে দিয়ে শুরু করতে চাই। পরে রেস্টুরেন্ট।
– আমি কি তোমার সাথে থাকবো না?
– কো অপারেশন করতেই পারেন। তবে আমি একার চেষ্টায় এগোতে চাই।
– এটা খুব ভালো ডিসিশান। তোমার যেটা মনে হবে যে এটা ভালো করতে পারবে তুমি সেটাই শুরু করো।

পৃথা দোকানের লোকেশন জানালো সায়ানকে। সায়ান কিছুক্ষণ ভেবে বলল ওটা ক্যাফের জন্য ভালো জায়গা। আশেপাশে কোনো ক্যাফে নেই। ওরকম জায়গায় একটা শপ হলে ভালোই হবে। পৃথা কয়েকটা ডিজাইনও দেখালো মোবাইল থেকে ওকে। কিভাবে ডেকোরেশন করতে চায়, কিভাবে শুরু করতে চায় সবই বললো। সব শুনে সায়ান মুগ্ধ। একটা মেয়ের মাথাতেও এরকম ঝুঁকির আইডিয়া আসতে পারে এটা বিশাল কিছু। পৃথা সেটা বুদ্ধিমত্তার সাথে বেশ ভালোভাবেই পারবে। সায়ানও ওকে আইডিয়া দিতে লাগলো।

এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলেন সায়ানের মা। ওনারও মনে ধরেছে পৃথার চমকপ্রদ আইডিয়া গুলি। মেয়েটা অনেক ট্যালেন্ট। কাজের প্রতি ভালোবাসা আছে মনে হচ্ছে। একাগ্রতা আছে। কিন্তু পুরনো ক্ষোভটা এখনো ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না। সেটা সম্ভব হবে কি না উনি তাও জানেন না। আজকে পৃথাকে শাড়ি পরে আসতে দেখে ওনার সত্যিই রাগ হয়েছিল। কিন্তু দেখতে ভালোও লাগছিল। মনের ভেতর কি যে চলছে নিজেও বুঝতে পারছেন না। একদিকে অসহ্য লাগছে, আবার একদিকে ভালোও লাগতে শুরু করেছে। এই অনুভূতি মা ধরতে না পারলেও সায়ান ঠিকই ধরতে পারছে। এখন ভালো লাগাটা ক্ষোভটাকে বিদায় করে দিয়ে জায়গা দখল করে নিতে পারবে তো?

চলবে..

#অবশেষে_বৃষ্টি
পর্ব ৩০
#নীলাভ্র_নেহাল
.
পৃথা একটানা অনেক্ষণ ধরে কথা বলে যাচ্ছে। একইসাথে নাড়াচ্ছে হাত। সায়ান মুগ্ধ হয়ে দেখছে সেটা। সায়ানের মা বারবার না চাইতেও পৃথার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। মেয়েটা বোধহয় ম্যাজিক জানে। কিভাবে ধীরেধীরে মনের ভেতর জায়গা করে নিতে শুরু করেছে।

সায়ান বললো, আমি আজকেই রিলিজ পেয়ে যাবো পৃথা। আমার শরীর মোটামুটি সুস্থ। আশাকরি আর সমস্যা হবে না। তুমি বাসায় চলে যাও।
– আর কিছুক্ষণ থাকি? আপনি চলে যাওয়ার সময় নাহয় আমিও বের হবো।
– তোমার রেস্ট দরকার।
সায়ানের মা হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলেন, ও কি সারা রাত এখানে ছিল?
সাইমু বলল, মা। তুমিও যে হুটহাট কি সব প্রশ্ন করে বসো! আমি তো জেগেই ছিলাম প্রায় রাতটা। পৃথা, তুমি কিছু মনে কোরো না আপু। তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট করো।

পৃথা সায়ানের দিকে তাকালে সায়ানও বললো যাও বাসায় যাও।

পৃথা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সায়ানের মায়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। মাথা নিচু করে তারপর আবার মায়ের মুখের দিকে তাকালো। বললো, যে কারণেই হোক না কেন, আপনাদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি অন্যায় না করলেও একটা ভুল করেছিলাম । যে ভুলের কারণে আপনাদের ছেলেকেও কষ্ট পেতে হয়েছে। আর আপনারাও ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন আন্টি। ভেতরে ব্যথা পুষে রেখে কি হবে? এতে কষ্টই বাড়বে। তারচেয়ে যদি আমরা ব্যথাটাকে সরিয়ে মানুষটাকে আপন করে নিতে পারি, তাতে তো উভয় দিকেই ভালো। আসছি আন্টি। আমার জন্য দোয়া করবেন।

পৃথা দরজা ঠেলে বেরিয়ে যেতে যেতে সায়ানের থেকে ইশারায় বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এখন ওর মনে কোনো কষ্ট নেই। আন্টির কাছে ক্ষমা চেয়ে বেশ হালকা লাগছে। যদিও তাতে নিজের দোষ সামান্যই ছিল। তবুও যে মানুষের সাথে সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, সে তো আপনজন ই। আপনজনের কাছে ক্ষমা চাইলে সম্মান কমে না, বরং সম্পর্কটা মজবুত হয়।

বাসায় গিয়ে আবারও নিজের ব্যবসার চিন্তায় ডুবে গেলো পৃথা। সায়ানের দেয়া একটা বই নিয়ে গভীরভাবে পড়ায় মনোযোগ দিলো। আজ পড়তে বড় ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেছে। খুব ফুরফুরে লাগছে।
.
সায়ান বাসায় ফিরলো বিকেলে। দীর্ঘদিন পর নিজের ঘরে এসে কি যে শান্তি লাগছে! সাইমু আপুর ফোন নিয়ে এসে পৃথাকে টেক্সট পাঠালো,
লক্ষীটি কি এখন কথা বলতে পারবে?

পৃথা মেসেজ দেখে মুচকি হেসে কল দিলো। সায়ান রিসিভ করে বললো, আমার মেসেজের অপেক্ষাতেই ছিলে?
– না। কিংবা হ্যাঁ।
পৃথা শব্দ করে হাসলো। সায়ান বললো, মা কিছুটা গলেছে বুঝেছো। আশাকরি বাকিটাও কাজ হয়ে যাবে।
– মা কি বরফ যে গলবে?
– হা হা হা। মজা নিচ্ছো?
– না। আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবেন আমায়?
– কি বলো তো?
– আমি যখন আপনাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, আপনার কেমন কষ্ট হয়েছিল?
সায়ান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আজ হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– আমি শুনতে চাই। বলুন প্লিজ। আপনার কি খুব কষ্ট হয়েছিলো?
– সেই কষ্টের স্বাদ কি তুমিও পেতে চাইছো?
– শুধু অনুভব করতে চাই। প্লিজ বলুন না।

সায়ানের সেই অতীতের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। পৃথাদের বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা ফুটপাতের এক দোকানে চলে আসে ও। তারপর এমন একটা কাজ করে যেটা কখনো করে নি। জীবনে প্রথমবার সেদিন সিগারেট খাওয়া শুরু করে ও। রাগের মাথায় সিগারেট ফুঁকতে গিয়ে বুঝতেই পারেনি প্রথমবার টানছে। কোনো অনুভূতি নেই। একটার পর একটা সিগারেট নিচ্ছে আর ফুঁকছে। চোখ দিয়ে ঠিকড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে আগুন। কপালে পড়েছিল কতগুলো ভাঁজ। হৃদয়ে হচ্ছিল ক্রমাগত রক্তক্ষরণ। ইচ্ছে করছিলো নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। অনেক কষ্টে নিজেকে সেদিন সংযত করে নিয়েছিলো। তবুও পারে নি। রাত্রিবেলা যখন ঘুমাতে গিয়েছে, তখন সম্প্রতি দেখা স্বপ্নগুলো মগজে বারবার কিলবিল করছিলো। প্রতিদিন, প্রতিটা মুহুর্ত পৃথার কথা ভেবে ভেবে কত সহস্র স্বপ্ন সাজিয়েছিলো ও। সব এক নিমেষে চুরমার হয়ে গেছে। একেকটা রাত কেটেছে দুঃস্বপ্নের মত। অনেক চেষ্টা করেও স্বাভাবিক হতে পারে নি। তখনই বুঝতে পেরেছিল পৃথার প্রতি একটা অদ্ভুত ভালোবাসা জন্মেছিলো ওর। তার উপর বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। তারা কথায় কথায় সায়ানের উপর রেগে যেতেন। সহ্য করতে না পারলে সায়ানও উত্তর দিয়ে তাদের সাথে একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলতেন। ফলশ্রুতিতে বাড়িতে জীবনটা কঠিন দুঃসহ হয়ে উঠেছিলো ওর। নিজের ই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হয়েছিলো। একটা মানুষ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অন্য একটা মানুষের ভেতরের স্বপ্ন, আশা, ইচ্ছে সবকিছু কেড়ে নিয়ে চলে যায়। সেটা তখন অনুভব করেছিল সায়ান। খুব সময় লেগেছিলো স্বাভাবিক হতে।

পৃথা সব কথা শোনার পর অনেক্ষণ নিশ্চুপ রইলো। তারপর বললো, আমাকে আপনি এতটা ভালোবাসতেন?
– হ্যাঁ পৃথা। তোমার জায়গাটা আমি কাউকে দিতে পারিনি। তোমাকে মন থেকে সরাতেও পারিনি। হয়তো অবচেতন মনে সবসময় তোমাকেই চাইতাম ,তোমাকেই ভালোবাসতাম। তাই তো আবারো তোমার সাথে দেখা হলো, পরিণয় হলো। জানো তো, আমি এখন মরে গেলেও আমার কষ্ট নেই।
– এসব কি বলছেন?
– হ্যাঁ। ভালোবাসাকে পেয়েছি তো। ঘরের বউ নাই বা হলো, আপন তো হয়েছো।
– আপনার কষ্টটা আমি ফিল করতে পারছি। আমার উপর আপনার কোনো রাগ নেই তো?
– না নেই। রাগ থাকলে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতাম বলো?

পৃথা মুচকি হাসল। বড্ড সুখানুভূতি হচ্ছে ওর। অনেক্ষণ চুপ থেকে দুজন দুজনকে অনুভব করলো। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো একসময়।
.
নাস্তার টেবিলে সায়ানের বাবা সায়ানকে বললেন, তুমি নাকি ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছো?
– ঠিকই শুনেছো আব্বু।
– আমি ওই মেয়েকে পছন্দ করি না।
– ওই মেয়ে আবার কেমন শব্দ আব্বু? ওর নাম পৃথা।
– যাই হোক না কেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
– আব্বু, ও খুব ভালো মেয়ে। তোমরা শুধুমাত্র জিদের কারণে ওকে খারাপ বলতে পারো না।
– আমরা খারাপ বলিনি। প্রত্যেকের পছন্দ আলাদা। সেখানে আমার মান সম্মান জড়িয়ে আছে ওর সাথে। ওকে মেনে নিলে আমার সম্মানহানি হবে।
– সম্মানহানি হবে? এটা কি বললে আব্বু?
– নিজের কাছে নিজেই ছোট হবো।
– এটাকে বলে ইগো। ইগোর জন্য আমার লাইফটা নষ্ট করে দিও না আব্বু।
– আমি তোমার লাইফ নষ্ট করে দিচ্ছি? নষ্ট করার জন্য এতগুলো বছর বুকে আগলে রেখে মানুষ করেছি তোমাকে? খুব ভালো হতো যদি তোমার এক্সিডেন্ট না হয়ে আমার হতো। ওপারে চলে গেলে বুঝতে বাবা মাথার উপর থাকা মানে কি?

সায়ান চুপ করে গেলো। আব্বু ভীষণ রেগে গেছে। এই মুহুর্তে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না। আব্বুকে এখন ছেড়ে দেয়াই উত্তম। ও বলল, আমি যদি পৃথাকে বিয়ে না করি তাহলে তুমি খুশি হবে তো?
– হ্যাঁ। আমি সেটাই চাই।
– ওকে। তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক। আমি ওকে বিয়ে করবো না, এ বাড়িতে আনবো ও না। শুধু আমাদের সম্পর্কটা থাকুক।
– এটা কেমন কথা? সম্পর্ক গড়ালে আরো বিপদ হবে। লোকজন নানান কথা বলবে। তাছাড়া বিয়ে না করে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে থাকলে তার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বোঝো তো?
– হ্যাঁ বুঝি। আর বুঝি বলেই আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম ।তুমি যখন চাও না আমি বিয়ে করি, তাহলে প্রেম করি। প্রেম করতেই থাকবো। কখনো বিয়ে করবো না, এতেও সমস্যা?
– সায়ান..

বাবা রেগে গেলেন। সায়ান হেসে ফেললো, আব্বু। আসলে তুমি চাওনা আমি পৃথার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ রাখি। তাই তো বিয়ে না করে প্রেম করলেও সমস্যা। কারণ তোমার ইগো। তুমি চাওনা তোমার অপছন্দের মেয়ের সাথে তোমার ছেলে ঘোরাফেরা পর্যন্ত করুক।
– মুখে বাঁধছে না বাবার সাথে তর্ক করতে?
– তর্কটা যদি ন্যায়ের জন্য হয় তাতে বাঁধবে না আব্বু। পৃথার কোনো দোষ নেই। পৃথা আমাকে আগে ভালোই বাসতো না। তাই আমার বিয়ের প্রস্তাবে ও রাজি হয়নি। এটা আমার সমস্যা, পৃথার নয়।

সায়ান আর খেতে পারছে না। খাবার ছেড়ে উঠতেও পারছে না। সেটা চরম বেয়াদবি হয়ে যাবে। ও মাথা নিচু করে বসে রইলো। মা বললেন, এখন এসব বিষয় থাকুক না। আমরা খাবারটা অন্তত ভালোমতো খাই?

এরপর কেউ আর কোনো কথা বললো না। যে যার মত খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেলো।
.
পৃথার দাদা পৃথাকে বেশ কিছু জমি দিয়ে গেছেন। সেসব বিক্রি করে মেয়েকে ব্যবসা করতে দেবেন বলে ঠিক করলেন বাবা। মেয়ের একটা স্বপ্ন, তাতে সহায়তা করা তো বাবা মায়ের কর্তব্য। পৃথা কথাটা শুনে প্রথমে চমকে গেলো। মেনে নিতে খারাপ লাগলেও বাবার ত্যাগ স্বীকার করার বিষয়টা ওকে খুবই অনুপ্রাণিত করলো। মনে মনে বললো, সবসময় বাবা তোমাকে হাসিখুশি রাখবো আমি। কক্ষনো বিন্দু পরিমাণ আঘাত দেবো না।

সায়ান পৃথাকে বাসার সমস্যার কথা কিছুই জানায় নি। পৃথার সাথে ও স্বাভাবিক ভাবেই কথা চালিয়ে গেলো। কম্পিউটার থেকে ফেসবুকে চ্যাট করে, আর মাঝেমাঝে আপুর ফোন থেকে কল দিয়ে কয়েক মিনিট করে কথা বলে। এরই মাঝে সায়ান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলো।
পৃথা বাসায় বসে ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত। এমন সময় বাসায় কলিং বেল বেজে উঠে। দরজা খুলে দিয়ে সায়ানকে দেখে ও রীতিমতো অবাক। হেসে ফেললো, আরেহ! আপনি তো দেখি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন! হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন।
– একা একা বিজনেস করছো, আমার কি উচিৎ না পাশে থাকা?
– খুব ভালো করেছেন। আসুন, আমাকে আইডিয়া দিয়ে উপকৃত করুন।
দুজন মিলে পরিকল্পনা করে আরো দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে আনা সম্ভব হলো। লাইসেন্স এর ব্যাপারেও সায়ান সহায়তা করবে জানালো।

ক্যাফের ডেকোরেশন হয়েছে নয়নাভিরাম। পৃথা নিজের আইডিয়ায়, সায়ানের সহযোগীতায় মনের মাধুরী মিশিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই সাজালো ওর স্বপ্নের ক্যাফেটেরিয়া।

উদ্বোধনের আগের দিন সবকিছু গুছিয়ে রাখতে বেশ রাত হয়ে গেলো। সায়ান পৃথাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে। সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে সায়ান পৃথার সামনে ধরে বলল, আসো।
পৃথা কাছে চলে এলে টর্চের আলোয় দুজনের চোখাচোখি হলো। একটা আকস্মিক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো ভেতরটা। পৃথা হাসলো। সায়ান হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, আসো মহারাণী।

পৃথার বাসার সামনে এসে সায়ান গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে বলল, কাল আবার দেখা হবে।
– সাবধানে যাবেন।
– একটা কথা বলবো?
– শিওর।
– অন্ধকারে টর্চের আলোয় তোমাকে দারুণ লাগে। সব আলো কেবল তোমাকেই ফোকাস করে থাকে।

পৃথা হেসে বলল, থ্যাংকস। আমার পাশে থাকার জন্য। আজ সবকিছু রেডি করার পর খুব শান্তি শান্তি লাগছে। আপনি পাশে না থাকলে এটা এত দ্রুত হয়তো করতে পারতাম না। আর একা একা অনেক কঠিন বিষয় ছিলো।
– আমি সবসময় তোমার পাশে থাকতেই চাই প্রিয়। এতেই আমি ধন্য।
– আমার আব্বু চলে এসেছে। আমার জন্য বসে আছে সেই সন্ধ্যা থেকে। এখন যাই?
– যাও। কাল তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো।
– এখনই বলুন?
– না। কালকে বলবো।
– ধেৎ, এটার জন্য এখন উশখুশ লাগবে।

পৃথা গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে আসতে গিয়ে আচমকা সায়ানের কাছে গিয়ে একটা চুম্বন করলো ওকে। তারপর দ্রুত দৌড়ে উপরে চলে গেলো।
.
উদ্বোধন কার্য খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর সায়ান পৃথার কাছে এসে বললো, এখন কথাটা বলি?
– হুম অবশ্যই। আজকে আমার মনটা ভীষণ ভালো। যা চাইবেন তাই পাবেন।
– সত্যি তো?
– হুম সত্যি।
সায়ান পৃথার হাত দুটোর উপরে হাত রেখে কাছে এসে চোখ চোখ রেখে বললো, তোমার স্বপ্ন তো পূর্ণের পথে। এবার আমার দিকটা ভাবো। আমার বাসায় তোমার বাবাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও। আমি বাবাকে বললে উনি রেগে যান। তাই আমাদের পক্ষে তো কোনোভাবেই সম্ভব না তোমার বাসায় পাঠানো। তোমার বাবাকে বুঝিয়ে বলে আমার বাসায় পাঠাও। এতে করে আব্বু আম্মুর রাগ কমে যেতেও পারে। যেহেতু তোমার বাবা মায়ের সাথে তাদের পরিচয় হয়েছিল। আশাকরি প্রস্তাব টা মুখের উপর ফেলতে পারবেন না।

পৃথা গম্ভীর হয়ে গেলো। বাবা ওর সব কথা সবসময় মেনে নিয়েছেন। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে দিয়েছেন। পৃথা প্রতিজ্ঞা করেছে কখনো বাবাকে বিন্দুমাত্র আঘাত দেবে না। যদি সায়ানের বাবা ওনাকে ফিরিয়ে দেন? তাহলে বাবা অপমানে শেষ হয়ে যাবে। যদি মুখের উপর কড়া কথা বলেন? নিশ্চয় পৃথার রাগটা ওনার উপর ঝাড়বেন। আর পৃথার বাবা সব সহ্য করলেও অন্য কেউ তার মেয়েকে নিয়ে কথা বললে সহ্য করতে পারবেন না। পৃথা কি করে বাবাকে বলবে এ কথা? না, এ পৃথা করতে পারবে না। বাবাকে পাঠাতে পারবে না ও।

সায়ান বলল, কি ভাবছো?
সরি সায়ান। আমি পারবো না।
– মানে? তুমি আমাকে চাও না? যদি আমরা কিছু একটা না করি তাহলে কোনোভাবেই আমাদের এক হওয়া সম্ভব না। প্লিজ লক্ষিটি।
– আমি পারবো না। আব্বুকে যদি কিছু শুনতে হয়, এরচেয়ে খারাপ আমার কপালে আর কিছু হবে না। আমি আব্বুকে কষ্ট দিতে পারবো না
– আব্বু আম্মু আমাদেরকে কথা শোনান। তাই বলে তোমার বাবাকেও শোনাবেন?
– শোনাতে কতক্ষণ? তোমার মা আমাকে কত কিছু বলেছেন সব তো জানোই। আমি পারবো না। সরি।

সায়ান পৃথার হাত ছেড়ে দিলো। মুখটা কালো হয়ে গেছে ওর। পৃথা এত কষ্ট দেয়ার পরও বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ওকেই বেছে নিয়েছে যে মানুষটা, তার একটা আবদার সে রাখবে না। সায়ানকে বিয়ে করার ইচ্ছে কি ওর আদৌ আছে? এই কথাটা ভাবতে ভাবতে অভিমানে, কষ্টে চোখে পানি চলে এলো সায়ানের। ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেলো ও। পৃথা নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। আজ শপের উদ্বোধন, আর আজই সায়ান মন খারাপ করে চলে গেলো। কিন্তু কিইবা করার আছে পৃথার! পৃথা মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলো।

সারাদিন সায়ানের কোনো ফোন নেই। অভিমান করে আছে ও। পৃথা বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারলো না। রাত দুটো, দুটো থেকে তিনটা এভাবে ভোর হয়ে গেলো। তবুও সায়ানের ফোন নেই। একটা মানুষ কতটা ব্যথা পেলে এমন অভিমান করে! পৃথা বুঝতে পারছে না ওর কি করা উচিৎ?

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here