#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব৭
#মৌমিতা_শবনাম
স্তব্দ হয়ে বসে আছে কবরস্থানে। তার সামনে চারটি কবর আর তার পাশে রিধি ছোট বাচ্চাটিকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মা ছাড়া বাচ্চাটা কান্না থামাচ্ছেই নাহ। রাদ উঠে রিধির কোল থেকে নিজের কোলে নেয় কাপা কাপা গলায় বলে, —” আমার মাটার কি হয়েছে কে বকা দিয়েছে? রিধি বকা দিয়েছে ও তো পচা। ওর সাথে আড়ি।”
তারপর কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ঝুকাতে থাকে। আরাম পেয়ে বাচ্চাটা ঘুমিয়ে যায়। রিধি অশ্রুভরা চোখ নিয়ে রাদের দিকে তাকায়। রাদ নয়নার কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, –” চিন্তা করো না মিষ্টি ভাবি আমি তোমার মেয়েকে খুব যত্নে রাখবো সবাই জানবে ও আমার মেয়ে। ”
রিধিও এসে বলে, –” তোমার মেয়েকে তোমাদের অভাব বুঝতে দিব না।”
রাদ কবর জিয়ারত করে রিধিকে নিয়ে চলে আসে বাসায়। রিধি আর রাদ সারাদিন কিছু খায় নি। রাদ সোফায় বসে আছে কোলে ছোট বাচ্চাটি রিধি তার পশে বসে আছে তার কাঁধে মাথা দিয়ে।
————
আজ দুই দিন হলো রাদ কলেজে আসছে না মনির ফোন তুলছে না। মনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে আছে। এভাবে কেউ রিলেশন এ থাকতে পারে। মনি ফোনটা বের করে আবার রাদকে কল দেয়। রাদ এবার কল উঠিয়ে বলে,–“হ্যা মনি বলো।”
মনি রাগী গলায় বলল, –” দেখা করো এসে এক্ষুনি কলেজে। ”
মনি কল কেটে দেয়। রাদ চিন্তায় পড়ে যায় কি করবে সে। রাইদাকে রিধির কাছে রেখে সে কলেজ চলে যায়।
কলেজে পুকুরের পাড়ে এসে পায় মনিকে রাদ। রাদ এসে দাঁড়ায় মনির পাশে। মনি রাদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,–” অবশেষে তোমার দেখা পেলাম।”
রাদ বলে,–” কিছু বলবে এতো আর্জেন্ট ডাকলে যে।”
মনি বলে,–” আমাকে এখন আর তোমার ভালো লাগছে নাহ তাই নাহ?”
রাদ অবাক হয়ে বলে,–” মানে?”
মনি রেগে বলে,–” তুমি আমার সাথে আর রিলেশনটা কন্টিনিউ করতে চাও নাহ?”
রাদ বলল,–” কি বলছো এসব?”
মনি বলল,–” হ্যা এখন কিছু বুঝতে পারবেই নাহ কালকে সারাটা দিন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। ”
রাদ বুঝতে পেরে বলল,–” সরি রাগ করো নাহ আমার সমস্যা হয়েছে অনেক আমি…..। ”
রাদকে পুরোটা বলতে না দিয়ে মনি বলে,–” ব্যস অনেক হয়েছে রাদ আর আমার পক্ষে সম্ভব না রাদ তোমার সাথে কন্টিনিউ করা ভালো থেকো। আর নিজের সো কোল্ড ফ্যামিলি নিয়ে সুখে থাকো।”
রাদ অস্থির হয়ে বলল,–” আরে শুনো আমর কথা।”
মনি আর কোনো কথা না শুনে রাদকে পিছনে রেখেই উল্টো ঘুরে চলে যায় সে। রাদ পিছনে অবাক চোখে মনির দিকে তাকিয়ে আছে। সব ধাক্কা একসাথে খেলো রাদের বেচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলছে। সেদিন রাদ রিধি আর রাইদার কথা চিন্তা করে নিজেকে বাচিয়ে রাখে।
——-
নিজের কেবিনে বসে এগুলো ভাবছিল রাদ তখনই দরজায় নক করে তন্নি। রাদ সোজা হয়ে বসে তন্নিকে ভিতরে আসতে বলে। তন্নি ভিতরে ঢুকে বলে,–” স্যার আমায় ডেকেছিলেন?”
রাদ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে কিছু ফাইল তার দিকে এগিয়ে বলে,–” এই ডিজাইন গুলো চেক করে আমাকে এনে দাও।”
তন্নি ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বলে,–” ওকে স্যার।”
তন্নি ফাইল গুলো নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আজকে রাদ একবারও তাকায়নি তন্নির দিকে। সে নিজের মনকে বুঝিয়ে নিয়েছে আর কাউকে সে এই মনে জায়গা দিবে না আর কোনো কষ্ট সে পেতে চায় না।
——————–
ফাইলগুলো চেক করে সে রাদের কেবিনে আসে। তখন রাদ আর রাইদা বসে খেলছিল। তন্নি নক নাহ করেই দরজা খুলে দেয়। বাবা-মেয়ের এক সুন্দর দৃশ্য দেখতে পায়। তন্নি আনমনে বলতে থাকে, –” এমন একটা দৃশ্য তোমার সাথে দেখতে চেয়েছিলাম নিরব যে আমাদের সন্তানের সাথে খেলবে আর আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবো। ”
তারপর সাথে সাথে নাড়িয়ে ভাবে কি ভাবছিল সে। আর ভাববে না সে ঐ বেইমানের কথা। তারপর আবার দরজায় নক করে তন্নি। রাদ দরজায় তাকিয়ে দেখে তন্নি। সে হালকা হেসে রাদের দিকে তাকিয়ে। রাদ গম্ভীর মুখ করে গিয়ে নিজের চেয়ার টেবিলে বসে। তন্নি এগিয়ে গিয়ে ফাইলটা সামনে রাখে। রাদ তন্নির দিকে ফাইলটা ঘুরিয়ে বলে,–” এক্সপ্লেইন মি কোথায় কোথায় ভুল পেয়েছেন। ”
তন্নি বলল,–” ওকে স্যার।”
তরপর তন্নি গিয়ে রাদকে বোঝাতে লাগলো কোথায় ভুল পেয়েছে আর সেটা কিরকম করেছে সে। রাদ তখনও তন্নির দিকে তাকায় না সে আর কোনো মেয়েতে আসক্ত হতে চায় না।
————–
অফিস শেষে বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে তন্নি। সন্ধ্যা ৭ টা বাজে চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে। আশে পাশে মেয়ে বলতে সে একা। তন্নির মনে মনে ভয় কাজ করলেও মুখে সে তা প্রকাশ করছে নাহ। তখন সেদিক দিয়ে কিছু বখাটে যাচ্ছিল। তন্নিকে দেখিয়ে বলে, –” আহা দোস্ত মাল পেয়ে গেছি।”
তন্নি ভয়ে কুচকে যায় আশে পাশে তাকায় কিন্তু কেউ নাই একটু দূরে কয়েকজন দাড়িয়ে আছে কিন্তু তারা কিছু বলছে নাহ। ছেলে গুলো তন্নির দিকে এগিয়ে যায়। তাদের মাঝে একটা ছেলে বলে,–” আজকে জমে যাবে বস।”
তন্নি সেখান থেকে চলে যেতে নেই একটা ছেলে তর হাত ধরে নেয়। তখনই সেখানে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে রাদ বেরিয়ে এসে ঐ ছেলেগুলোকে ইচ্ছা মতো মারতে থাকে।
ছেলেগুলো যখন অবস্থা খারাপ তন্নি গিয়ে রাদকে ফেরায়। রাদ রাগি গলায় বলে,–” আর কোনোদিন যদি কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করতে দেখেছি তো মেরে ফেলবো।”
ছেলে গুলো দাড়িয়ে উল্টো পথে দৌড়। রাদ তন্নির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, –” গাড়িতে উঠুন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি। ”
তন্নি কিছু বলে নাহ রাদের কথা মতো তার গাড়িতে উঠে পরে। এখানে দাড়িয়ে থাকার সাহস আর নেই তার। রাদও গাড়িতে উঠে সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে,–” সিট বেল্টটা লাগিয়ে নিন মিস তন্নি।”
তন্নি ভ্রু কুচকে সিট বেল্ট সামনে আনে কিন্তু লাগাতে পারছে না। রাদ বিরক্তির শ্বাস নিয়ে লাগিয়ে দেয়। তারপর গাড়ি চালাতে শুরু করে।
—————
রাতের অন্ধকারে ছাদে বসে আছে নিরব। এই কয়দিনে সে বুঝতে পেরেছে সে কি হারিয়েছে। কাচকে পেতে সে হিরা হারিয়েছে। ইদানিং সে বৃষ্টির আচরণে পরিবর্তন দেখছে সারাদিন ফোনে আসক্ত থাকে কে জানে কি করে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে নিরব।
তন্নিকে নিয়ে ভাবছিল নিরব তখন সেখানে বৃষ্টি আসে। বৃষ্টি এসে কাধে হাত রেখে বলে, –” কি করছো?”
নিরব তাকায় বৃষ্টির দিকে হালকা হেসে বলে, –” কিছু নাহ এমনি দাঁড়িয়ে আছি।”
বৃষ্টি নিরবের হাত ধরে বলে,–” এখানে থাকতে হবে না আর চলো রুমে যায়।”
নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও এখন তন্নি থাকলে তার মুখ দেখেই বলে দিতো নিরবের মন খারাপ। নিরব চলে যায় বৃষ্টির সাথে রুমে।
এদিকে রুনা নিজেকে অনেকটা ঘর বন্দি করে রাখেন। তার করা কাজের ভুলটা সে বুঝতে পারছেন। কিন্তু এখন বুঝে কি হবে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। রুনা নিজে নিজে বলতে থাকেন,–” ক্ষমা করে দিও তন্নি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চোখ তার দু এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তার হাতে সে নিজের ছেলের জীবনটাও নষ্ট করেছে। সে উষ্কানি দেওয়াতেই নিরব উৎসাহ পেয়েছে এই কাজ করতে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে তার। আশে পাশে তাকিয়ে একটা বড় ওড়না ফ্যানে ঝুলিয়ে গলায় লাগিয়ে নেন তিনি।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন। এখন থেকে রেগুলার গল্প দিতে চেষ্টা করবো