#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৮
“ঐ শাকচুন্নী বয়ফ্রেন্ডের ছ্যাকায় শোকাহত ঢেড়স। শুনতে পাচ্ছেন না? আমার জামাইজান সুখে-আনন্দে চিল্লাচ্ছে। আপনার তো দেখছি সেন্স অফ টাইমিং নেই। জামাই-বউ দু’জনে ওয়াশরুমে চিল্লাচ্ছে আর আপনি কোথাকার কোন থার্ড পার্সন এসে সুখের দরজায় বারি মা’র’ছেন। এখনই চলে যান বলছি। নাহলে যতটা বারি মে’রে জামাই-বউ এর কোয়ালিটি টাইম ওয়েস্ট করছেন। তারই শোধ নেবো আপনাকে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে গট ইট?”
তাবাসসুম নিজেকে সামলে নেয়। দরজায় বারি দেওয়া বন্ধ করে গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মেইন গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে গেস্ট রুমের জানালার দিকে তাকায়। মনে মনে মেয়েটার প্রতি তাবাসসুম এর বেশ ক্ষোভ জম্মেছে। সে কোনো ভাবেও মেয়েটিকে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না। মনে মনে একরাশ রাগ নিয়ে বলে,
“আমার ভাগে হুট করে এসে ভাগ বসিয়েছিস তুই ফালতু মেয়ে। এবার দেখবি তোর জীবন নরকে পরিণত না করলে আমার নামও তাবাসসুম দেয়ান না।”
নিজের চুলজোড়া মুখের থেকে সরিয়ে তার গাড়িতে উঠে বসে। সে তো আজ ইচ্ছেকৃত অসহায় এর ভান ধরে এসেছিল আফরাজ এর কাছে। যেন তাকে আফরাজ নিজেই পিএ এর জবে রাখে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাছাড়া আফরাজ না হলেও অন্যজন তো ঠিকই আছে তার হাতভর্তি টাকায় ভরিয়ে দিতে। ভেবেই গাড়ির ড্রাইভার কে বলে,
“ভাইয়া গাড়ি লিংক এহসান ভিলায় নিয়ে যান।”
ড্রাইভার মাথা নেড়ে গাড়ি মোড়ের দিক দিয়ে মেইন রাস্তায় নামিয়ে যেতে লাগল। তাবাসসুম নিজের ফোন বের করে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে কল চাপে। কলটা রিসিভ হতেই সে ফিসফিসিয়ে বলে,
“মম তোমার কথামত আফরাজ এর বাসায় গিয়ে ছিলাম । কিন্তু কাজ হয় নাই। আফরাজ এর বউ এটা খুব চালু টাইপ। আমাকে দেখলেই ছ্যাত করে উঠে। যেনো আমি তার জামাই কে খেয়েই ফেলবো। যতসব থার্ড ক্লাস পিপল।”
“আহারে মা আমার। রাগ করলে তো যুদ্ধে হেরে যাবি। সো এখন না হয় একটু পিছিয়ে গেলি। বাট ইট’স এ্যা স্টেপ অফ উইনিং মাই বেবি। তুই এসবে ভাবিস না। তোর মা-তো আছেই। তোর থেকে শুধু আফরাজ এর অফিসে গিয়ে নাজীবা নামের কোনো মেয়ে আছে কিনা ভালোমত খোঁজ লাগাতে হবে ! বুঝছিস?”
“তা বুঝলাম মম। কিন্তু কিছু বিষয় আমি এখনো বুঝিনি মম। চাচ্চু্র কেনো নাজীবাকে দরকার? আর এই নাজীবাও বা কে? এই পাগল মেয়ে ফেনীর পাগলাগরাদ থেকে পালিয়ে আফরাজ এর অফিসে কেমনে গেল? কোথায় ফেনী আর কোথায় চট্টগ্রাম!”
“দেখ মা আমি যদি সব বলে দেয়। তবে আমার গর্দান যাবে। যা আমি কোনো ভাবেও হতে দিতে পারব না। তুইও এসবে না জড়িয়ে কাজ করতে থাক। টাকার ব্যবস্থা তোর চাচাই করে দেবে। আর শোন কখনো কারো সামনে আমার আর তোর চাচার নাম নিস না বুঝলি?”
“ওকে মম। ডোন্ট ওয়ারি ফর দিস। আমি হলাম আমার মম মিসেস হিয়া দেয়ান এর মেয়ে। তাই কোনো ধরনের ভুল আমার হতেই পারে না। বাট আই নিড এ ফেভোর ফরম ইউ মম।”
“হ্যা বল না মা?”
“আসলে আজকে যদি চাচ্চু আইমিন মিস্টার দাহাব এহসান ফ্রি থাকেন। তাহলে আমি নাইট আউট করতে আসতাম?”
লাজুক হেসে বলে তাবাসসুম। মিসেস হিয়া শুনে চুপ হয়ে গেলেন। মনে মনে ‘ব’দ’মাইশ’ ডাকলেন দাহাবকে। লোকটা তার মেয়ের মাথা খেয়ে শরীরটাও ভোগ করার পিছে পড়ে আছে। তার মন তো চাইছে, এক ধ্যানে জ্বীন দিয়ে তাবাসসুম এর চাচা নামক মানবকে খু’নই করে ফেলে। তাও সম্ভব না দাহাব নিজেই যে তান্ত্রিক। তার পক্ষে তো যে, কাউকে ফাঁদে ফেলা একসেকেন্ড এর ব্যাপার মাত্র। একরাশ ক্ষোভ জমিয়ে তিনি নিজেকে ধীরস্থির করলেন।
“হেই মম কোথায় হারালে? বলো না আমার হ্যান্ডসাম, বডি ফিট চাচ্চু ফ্রি থাকবে?”
মিসেস হিয়া বিরক্তের দৃষ্টিতে একপলক লোকটির রুমের দিকে তাকান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে করুণ গলায় বলেন,
“হ্যা সে তো ফ্রিই থাকে সবসময়।”
“ওকে মম বাই থ্যাংকিউ।”
কথা শেষ করে কল কেটে দেয় তাবাসসুম।
____
মিসেস হিয়া ফোন রেখে বিরবির করে বলেন,
“মা-রে তুই যাকে হ্যান্ডসাম,বডি ফিট চাচ্চু বলছিস , সে যে আসল রুপে কি-রকম দেখতে? তা যদি জানিস! তবে তোর গা গুলিয়ে বমি পেতো। আসলেই কি হ্যান্ডসাম নাকি কোথারকার সুগার ড্যাডি তখন ভালোই বুঝতি।”
মেয়ের রুমে প্রবেশ করে দাহাব এহসান। সবেই সে তার মেডিসিন ও ইনজেকশন নিয়েছে। মেয়ে অর্থাৎ মিসেস হিয়া তার বাবার পায়ের শব্দ শুনেও মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখে। মেয়ের নীরবতা দেখে হাত দিয়ে দরজাটা ভিড়িয়ে নেন। মেয়ের রুমে কালো জাদুর চক্ররেখা পড়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“কিরে তুই এভাবে বসে আছিস কেন? তোর আজকের ধ্যান করতে হবে না? মেয়েটা-কে এখনো খুঁজে পায়নি। আর তুই স্বাভাবিক ভাবে বসে আছিস। বলি একটু ধ্যানমগ্ন হয়ে জ্বীনদের ডাক। তারা শর্ত দিলে সেটা পূরণও তো করতে হবে?”
“দেখেন বাবা আপনার কথায় ধ্যান করেই যাচ্ছি। বাট প্লিজ আমার মেয়ের সামনে র’ক্তা’ক্ত শরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন না। সে র’ক্ত ভয় পায়। আর দেখুন এখনো আপনার শরীরে র’ক্ত লেগে আছে। এত মেডিসিন ইনজেকশন নিয়ে লাভ কি ? যদি আপনি নিজের ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণই করতে না পারেন?
তাই বলছি এগুলো জলদি পরিষ্কার করে নেন। আমার মেয়ের সামনে একটু চাচা টাইপ বিহেইভ করিয়েন। দুনিয়ার সামনে তো আমি মা আর আপনি আমার গণ্যমান্য ছেলের পরিচয় বহন করছেন। অথচ আমার মেয়ের সামনে আপনি তার চাচা। সো প্লিজ ক্লিন ইউর সেল্ফ কাইন্ডলি ড্যাড।”
দাহাব এহসান তার মেয়ের কথা শোনে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগল। মিসেস হিয়া চোখ ঘুরিয়ে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকান। লোকটি হাসা থামিয়ে তার হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসে এক চুমুক দেয়। মিসেস হিয়ার রুমে থাকা টি টেবিলের উপরে গ্লাসটি রেখে রকিং চেয়ারে আরাম করে বসে পড়েন। অন্য একটি গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে গ্লাসটি তার মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন,
“তুইও কোথায় আর বুড়ির মত লাগিস বল? তুইও তো কম র’ক্ত’পান করিসনি। আমার মেয়ে তো আমার মতই হবে তাই না? ব্যস তফাৎ একটাই। তুই পশুদের র’ক্ত খেতে ভালোবাসিস। কিন্তু আমি সুস্বাদু র’ক্তের ঘ্রাণ যার থেকেই পায়। তাকেই হরণ করে বক্ষণ করে ফেলি। হ্যা, এর জন্য কম কষ্ট করতে হয় না। পুরো চৌদ্দ ঘণ্টা শ’য়’তা’নের নামে জপ করার পর যেয়ে আমি সন্ধান পায়, এমন সব র’ক্তের যা আমার ক্ষুদা মেটাতে পারে। মাঝের থেকে নাজীবা পালিয়ে গিয়ে সব ধ্যান বিগড়ে দিল। মেয়েটা-রে ছোট থেকে যত্নে রাখতে তার মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। কি করব আমাদের বংশের আদরের দুলালি বলে কথা! এমনিই তো মে’রে ফেলতেই চাইছিলাম। কিন্তু তার র’ক্ত’পানে যে স্বাদের সাথে শক্তিও পাবো তা তো ভাবিনী। ব্যস তার বড় হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটা পাগলে পরিণত হলো কেমনে সেটাই তো বুঝতে পারলাম না। মা একটা কথা জানিস? নাজীবা যখন পাগল হলো আকস্মিক ভাবে তার মামার গুষ্টিও উধাও হয়ে গিয়ে ছিল। আমি আজও তাদের কারো সন্ধান পায় নাই। একবার শুধু একবার নাজীবা কে পেয়ে যায়। তখন হবে আমার জীবনের আসল গতিধারা হাহাহা।”
মিসেস হিয়া শুনে মৃদু হাসলেন। ভাবলেন তার বাবার শেষ পরিণতি কোনো না আবার মৃত্যু হয়। ‘হিয়া’ মহিলাটির নিজের নাম শুনে তার বাবার দিকে তাকায়। তিনি শ’য়’তানি দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“কি রে হিয়া মা দেওয়ালের দিকে কেন চেয়ে আছিস? ও তোর স্বামীকে খোঁজছিস নিশ্চয়?”
স্বামীর কথা শুনে হিয়ার শরীরে কাঁপন ধরে গেল। ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নেয়। দাহাব এহসান বাঁকা হেসে বলেন,
“মনে রাখিস বেশি ভালো সাজতে যাবি। তবে নিজের স্বামী-সন্তান দুটোই হারাবি। তাই বলছি , ভালো সন্তানের মত দুনিয়ার সামনে নিজেকে মিসেস হিয়া দেয়ান হিসেবেই পরিচয় দিস। আর আমি জনাব দাহাব এহসান হিসেবেই পরিচয় বহন করতে থাকব। কিন্তু সত্য পরিচয়ে আমি হয়ে থাকব তোর বাবা দাহাব এহসান আর তুই আমার মেয়ে হিয়া দেয়ান এহসান। ইনশর্ট এহসান নামটা লুকিয়ে থাকবে আরকি!
ওহ হ্যা তোর মেয়ের কাছে তো আমি আবার তার চাচা হয়। তার জন্যে তুই আমাকে দেবর বলেই ডাকতে পারবি। বাকি ক্ষেত্রে মা-ছেলে হয়ে পরিচয় দেবো মনে থাকে যেনো! আর হ্যাঁ তোর মেয়ে কে বলিস আমি আজ রাত ফ্রিই থাকব।”
দাঁত কেলিয়ে হাসতে থেকে বেরিয়ে যায় দাহাব। মিসেস হিয়া এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো সহ্য করছিলেন। সে আঁটকে পড়েছে তার স্বামী-সন্তানের কারণেই। নাহলে এই নরকযোগ্য বান্দাকে কবেই জাহান্নামের ভেতর পাঠিয়ে দিতেন। রাগে দাহাব এর আপ্যয়িত ওয়াইনের গ্লাসটা ছুঁ’ড়ে মা’রে টাইলার্সের উপর। গ্লাসটির ঠুংঠাং শব্দে দেওয়ালের থেকে গুনগুন শব্দ আসতে লাগল। মিসেস হিয়া দেওয়ালের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে করুণ গলায় বলেন,
“আমায় মাফ করে দিয়েন। আমি পারব না এ পথ থেকে বের হতে। তবুও আপনার আর তাবাসসুম এর কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না।”
দেওয়ালের হাত ছুঁয়ে দিয়ে সে পুনরায় তার লাল রঙা শাড়ি পরণে জড়িয়ে নেয়। তার রুমের ভেতরে দালান-কাঠি দিয়ে মোড়ানো জায়গার ভেতর সে বসে পড়ে। সামনে কুসুম পানি রাখা। এতে কাটাছেঁড়া একটি পুতুল পানির ভেতর ফেলে দেন। হঠাৎ করেই রুমের আসবাবপত্র নড়চড় হয়ে কাঁপতে লাগল। মিসেস হিয়া নিজের শাড়ি খামচে ধরে রাখল। পরক্ষণে কারো গরম আহাটে বুঝতে পারল, খারাপ জ্বীন রুমে হাজির হয়েছে। ঠোঁট চেপে চোখ বুজে তাকে অনুভব করার চেষ্টা করে।
“বলুন আপনি আমায় কেনো ডেকেছেন?”
মিসেস হিয়া বাচ্চা একটা মেয়ের ছবি জ্বীনটির সামনে ছুঁ’ড়ে দেয়। সে তার গভীর সাদা চোখের দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“এই মেয়ের খোঁজ করতে সময় লাগবে। কারণ মেয়েটার দৃষ্টিসীমার মাঝে আমি যেতে পারছি না। কারণ এ যে জায়গায় আছে সে জায়গার মানুষগণ ভীষণ পবিত্র মনের অধিকারী। তাদের সাথে টক্কর লাগলে আমার ক্ষতি হবে। এই কাজ যদি করে দেয় বিনিময়ে আমার লাভ কি বলুন?”
মিসেস হিয়া মুচকি হেসে বলেন,
“আপনাকে এক মেয়ের শরীর দান করা হবে।”
জ্বীনটি মাথা নেড়ে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। রুমের মধ্যে আর গরম আভাসটা নেই। সে তার ফোনে এক লোককে কল দেয়। লোকটি কল রিসিভ করতেই তিনি বলেন,
“মেয়েটা কি করছে?”
“আছে ম্যাম। আপনার কথামত জানে মা’রিনী।”
“খবরদার কিছু করার চিন্তাও করবি না। এখন শুন মেয়েটার খাবার-দাবার সব ঠিক রাখবি। একজনের কাছে বলিরপাঠা হিসেবে বিক্রি করতে হবে।”
“ঠিক আছে আপনি নিশ্চিত থাকুন।”
মিসেস হিয়া কল রেখে দেন। তিনি নিশ্চিত এবার নাজীবার খোঁজ পাওয়া গেলেই সে এই পথ থেকে তার স্বামী-সন্তান কে মুক্তি দিতে পারবে। কিন্তু তিনি এখন ভাবনায় পড়ে গেলেন কি করে আজ রাতে তার মেয়ে তাবাসসুম কে বাবার হাত থেকে রক্ষা করবেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
____
নাজীবা দরজা বন্ধ করে বসে আছে। লজ্জায় গাল হয়ে আছে তার। ‘ইশ্’ শব্দটা করে দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল সে। ওয়াশরুমে তর্ক-বিতর্কের পর নাজীবা আফরাজ কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে পালিয়ে যায়। আফরাজ নিজের আঙ্গুল চেক করে দেখে। তার আঙ্গুলটা লালচে দাগ হয়ে গিয়েছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে সেই আঙ্গুলের উপর চুমু দেয়। যা নাজীবা দরজার বাহিরে উঁকি দিয়ে খেয়াল করেছে। এ দৃশ্য যেন তার চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে। সে না চাইতেও লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। আফরাজ যে তাকে মনে মনে পছন্দ করা শুরু করেছে এরই আরেকটা প্রমাণ পেয়েছে।
আফরাজ গলা ঝেড়ে উচ্চ আওয়াজে আকবর কে ডাক দেয়। আকবর বউয়ের আঁচলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। জ’ল্লা’দ বন্ধু যদি তাকে খেয়ে ফেলে তখন আর বাচ্চার বাপ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না তার। কুসুমা স্বামীকে ভয় পেতে দেখে চোখ ঘুরিয়ে বলে,
“এই যে মহাশয় বাহিরে আপনার বন্ধু ডাকছে। ভয় না পেয়ে তাড়াতাড়ি যান।”
বউয়ের কথা শুনে আকবর নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। কুসুমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই আমি কবে ভয় পেলাম হাঁ? আ….আমার শীত লাগছিল। তাই তোমার আঁচলই গরমের জায়গা ভেবে লেপ্টে ছিলাম।”
নিজের ভাব বজায় রেখে সে দরজা খুলে আফরাজ এর সামনে গেল। আকরবকে দেখে সে বলে,
“আমি চিৎকার বের করতে পারি তাই না? আয় আজ দুজন মিলে একসাথে চিৎকার বের করতে মাঠে হা-ডু-ডু খেলবো কি বলিস?”
“দোস্ত গা’র্ন দিয়ে শু’ট কর, তাতেও রাজি কিন্তু তোর সাথে হা-ডু-ডু খেলে হাড্ডিসার হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই সো সরি। আই ক্যান্ট একসেপ্ট ইউর রিকোয়েস্ট।”
আকবরের পিঠে দুম করে এক বা’রি মা’র’ল সে।
‘উহহ উহহ মে’রে দিল রে’ বলে নিজেই পিঠে মালিশ করতে লাগল আকবর। পরক্ষণে দু’জন হেসে বেরিয়ে যায়। শুক্রবারে তাদের কাজ থাকে না। এদিনটায় তারা দুজনে বাইক রাইডিং করতে বের হয়। নাজীবা বেলকনি দিয়ে দৃশ্যটি দেখতে পেল। স্বামী আর দেবরের বের হওয়া দেখে মৃদু হাসল।
আকস্মিক সে নিজের শরীরে কাঁপন অনুভব করে। সে লুকিয়ে প্রতিদিন একটা করে ইনজেকশন নিয়ে থাকে। নাহয় সে ভাঙচুর করা আরম্ভ করবে। কাঁপা শরীরে বিছানার কিনারায় গিয়ে বসে পড়ে। বিছানার নিচ থেকে সুটকেস বের করে। তালা খুলতেই সামনে দৃশ্যমান হলো পাঁচ-ছ’য়েক ইনজেকশন। সেখান থেকে একটা নিয়েই নিজের কাঁধে পুশ করে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় সে এই ইনজেকশন নামক অস্ত্র কে ভয় পায়। ইনজেকশন নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শরীরের কাঁপন থেমে গেল। তথাপি ঘেমে জুবুথুবু হয়ে গেল। এখন গোসল না করলে তার শরীর ঘামে গিজগিজ করবে। সে উঠে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তার চলে যেতেই বেলকনিতে থাকা গাছের টবগুলো কাঁপতে লাগে। বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যায়। কোনো এক কারণে গাছের টবগুলোর মধ্যে এক টবে পচন ধরা শুরু করে।
একঘণ্টা পর নাজীবা গোসল সেরে আসরের নামাজ আদায় করে নেয়। চুলের থেকে তোয়ালে সরিয়ে হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকিয়ে, যখন সে তোয়ালটি বেলকনিতে মেলে দিতে গেল। তখনই পায়ে তরল জাতীয় কিছু অনুভব করে। সে চোখজোড়া সেদিকে নিতেই চিৎকার দিয়ে উঠল।
চলবে……
(বিঃদ্রঃ- ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের হয়ত গল্পটি ভালো লাগছে না। রেসপন্স খুব কম পাচ্ছি। তাই ভাবছি গল্পটা জলদিই শেষ করে দেব। হেপি রিডিং)