#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৮ (প্রথমাংশ)
“কি হলো তাবাসসুম? তোমার প্রাক্তনকে ডেভিল রূপে দেখে চমকে গেলে হুম? কি মনে করে ছিলে আমার বিবিজান এর সাথে পাঙ্গা নিয়ে আমারই পিঠ-পিছে কলকাঠি নাড়বে আর এর খবর আমি পাবো না?
মাই ডেয়ার স্টেফ শ্যালিকা, ভাবলে কেমনে আমি শোধ না নিয়ে ছেড়ে দেবো। উহ একটা কথা মনে পড়ে গেল, নাজীবার সৎ ফুপাতো বোন রাইট? যার নানা ছন্দবেশ নিয়ে আমার বিবিজান-এর পিছে পড়ে আছে। তুমি তারই আপন নাতনী। যার র’ক্ত শুরুতে গলদ,তার আবার কিসের আপনত্ব। তুমি তো বোন নামেই কলঙ্ক।”
কথার মাঝে আয়েশে চেয়ারে বসল আফরাজ। তার পাশে আকবর মুখ ভেটকাল তাবাসসুম কে। মেয়েটার শরীর মড়মড়ে গিয়েছে। এত’টা চ’ড় সে তার জীবনে খায়নি। আফরাজ এর লেডি গার্ড একের পর এক মে’রে গিয়েছে। আফরাজ থামতে বলায় থেমেছে। লেডি গার্ড কে ইশারা করে বলে,
“আসামি কে এক গ্লাস পানি খেতে দাও। তারপর ইনভেস্টিগেশন শুরু করব।”
‘ইয়েস স্যার’ বলে লেডি গার্ড তাবাসসুম কে পানি খেতে দেয়। বেচারী একচটে পানির গ্লাস শেষ করে দেয়। নাক-মুখে পানি উঠে যাওয়ায় কাশতে লাগে। লেডি গার্ড পিঠ মালিশ করে শান্ত করল তাবাসসুম-কে। আফরাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“সত্যি করে বলো তোমার নানা কি কারণে ভার্সিটির লেকচারার পদে যোগ দিয়েছেন? তোমার বাবা-মা যে এই কাজে জড়িত তা ভালোই জানা আছে আমার। বলে দাও নাহলে জীবন মা’রা খাবে।”
তাবাসসুম আতংকে ঢোক গিলছে। কেননা তার মুখ এদিকে না খুললে চ’ড় খাবে, ঐদিকে মুখ খুলার জন্য সরাসরি খু’ন হতে হবে। তার ভাবান্তরে আফরাজ নির্লিপ্ত গলায় বলে,
“তুমি যদি আমাদের হেল্প করো! তবে আমি তোমাকে আর তোমার মা-কে ঝামেলামুক্ত করে দেবো।”
ঠোঁট চেপে আফরাজ এর মুখশ্রীর দিকে চেয়ে রইল তাবাসসুম। জানের ভয়ে সে নিশ্চুপ রইল। তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে পড়ে আফরাজ। বন্ধুর দিকে চেয়ে বলে,
“শ্যালিকার মুখে কসটেপ মে’রে দেহ্। তার মুখে কসটেপ বড্ড মানানসই। শেষে রুমটা অন্ধকার করে চলে আয় সবাই।”
গার্ডস নিয়ে বেরিয়ে যায় আফরাজ। আকবর তার কথামত কাজ করে গাড়িতে গিয়ে বসে। দু’জন একে অপরের দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে একসাথে ক্লাপ করল। আকবর ফোন বের করে বলে,
“জানিস আজকে ডেঞ্জারাস পা’দ মারলাম। ঐ শাকচুন্নী-রে লিফটে বেহুঁশ করার জন্যে যে, ট্রিকটা ইউজ করলাম না! উফফফ মারডালা রে দোস্ত। বাই দ্যা ওয়ে আমার পা’দের ক্রিয়াকলাপ সিসিটিভির মধ্যে ক্যাপচর হয়ছে। সেগুলো তো ক্রপ করে ফেলতে হবে রাইট?”
“তোর কি মনে হয় ইজ্জতের ফালুদা করার জন্য সেই ফুটেজ রেখে দেবে এই আফরাজ ফাহিম? হাহ্ আমি কোনো কাঁচা কাজ করি না। করার আগেই সব রেডি করে রাখি।”
“মানে?”
“শোন, তাহলে তোকে আজ লাঞ্চে দু’প্লেট ভাত খাওয়ার সুযোগ কেনো দিয়ে ছিলাম জানিস? কারণ তরকারির মধ্যে মুলা ছিল তোর ফেভারিট ডিস। মুলা থাকলে তুই আর দুনিয়ার মায়াজালে আঁটকে থাকিস না। বুদ্ধি করে মুলার তরকারির অর্ধেক বাটি তোকে দিয়ে শেষ করিয়ে নিলাম। তারপর তোকে নিয়ে অফিসে চলে এলাম। তুই লিফটে ঢুকতে চাইছিলি না। সোজা ওয়াশরুমে যেয়ে পা’দ ছাড়ার ফন্দি আটকে ছিলি। কিন্তু মনেমন আমি ফন্দি আঁটি যে, তোর মুলার পা’দের গন্ধে তাবাসসুম কে অজ্ঞান করাবো। উইড আউট এনি ক্লোরোফর্ম। একেই তো অনেক বাঁশ পা’দ দিস। তার উপর এতটা গুলুমুলু লাড্ডু একখান ছেলে। ভাগ্যও দেখ আমাদের সঙ্গ দিল। তাবাসসুম ব্যতীত অন্য কেউই লিফটের ভেতর আসেনি। কিন্তু মেয়ের সেখানেও ছ্যাচড়ামি শুরু। হাত দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিল। যতবার ইগনোর করার চেষ্টা করছিলাম। ততবার সে আমার পিঠে হাত লাগানোর দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছিল। আমিও কম কিসে মুখের মধ্যে মাস্ক পরে নিলাম। তোর এসবে খেয়াল নাই। তোর মন ‘ওয়াশরুম ওয়াশরুম’ করছিল। না পারতে তুই তাবাসসুম এর উম্মুক্ত নাক ডেকে দেওয়ার প্রচেষ্টায় মাস্ক এগিয়ে দিলি। কিন্তু ন্যাকারাণী তো কারো কাছে থেকে টাকা ছাড়া অন্য জিনিস নেই না। নচেৎ তুই ভালো মানব দেখে মাস্ক দিতে চেয়ে ছিলি। সে নেইনি তার দোষ। তুইও মাস্ক পরে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করিসনি। পুত*****করে লিফটের ভেতরটা পা’দের হাওয়ায় ভরে দিলি। বেচারী বুঝতে পারেনী তোর মাস্ক দেওয়ার কদর। তড়িৎ গতিতে লিফটের পাশ ঘেঁষে পা’দের গন্ধে শ্বাস হারিয়ে নেতিয়ে পড়ে সে। তারপর তোকে রাখালের গরু বানিয়ে তাবাসসুম-কে কিডনাপ করালাম। তুই তারে নিয়ে গেলি আর আমি সেই ফাঁকে ফুটেজের টান টানা টান করে দিলাম।”
“গ্রেট ব্রাদার। আজ নিজের পা’দের উপর গর্ব হচ্ছে। কি বাঁশ পা’দটাই না দিলাম। এক বারে মেয়ের সেন্স হারিয়ে গেল হাহাহা।”
আকবরের হাসি দেখে আফরাজও হাসল। তাদের অর্ধ-কাজ যে প্রায় সফল সেই কারণে। হাসার ছলে সদ্য এক প্রশ্ন করে উঠল আফরাজ-কে।
“তার মানে তুই নাজীবা ভাবীর সঙ্গে হওয়া ঘটনা এসবের ব্যাপারেও জানিস?”
নিরুত্তর আফরাজ মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। বন্ধুর কথার জবাব এড়িয়ে ড্রাইভার-কে বলে, ‘অফিসের দিকে চলো।’
আকবর দ্বিরুক্তি করল না। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা অফিসে চলে এলো। আফরাজ কেবিনে ঢুকে সর্বপ্রথম বাসার সিসিটিভি ফুটেজ অন করে। সর্বক্ষণ ঠিক আছে দেখার পর তাদের বেডরুমের ফুটেজ চেক করে। নাজীবা-কে দেখা গেল ল্যাপটপ হাতে নিয়ে বসে আছে। সেখানে জুম করল আফরাজ। ল্যাপটপে আইসিটির কোডিং ল্যাবের কাজ করছে নাজীবা। যেহেতু সে সিএসসির স্টুডেন্ট, সেহেতু কোডিং নিয়ে নানান প্রজেক্টের কাজ দক্ষতার সহিতে সম্পন্ন করতে দেওয়া হয়। নাজীবার মুখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফাইল চেকিং এ দৃষ্টি দিল আফরাজ। হঠাৎ নাজীবার ফোনে কল আসল। আড়চোখে সিসিটিভির দিকে তাকায়। কল আসায় নাজীবা বিরক্তবোধ করে। তবুও আফরাজ কল করছে ভেবে ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেল। স্ক্রিনে আননোন নাম্বার শো হচ্ছে। সে ধরবে কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেল। কল’টা বারংবার আসছে। জরুরী কল ভেবে কল’টি রিসিভ করতে গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে আফরাজ এর কলও স্ক্রিনের মধ্যে ভেসে উঠল। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে আননোন নাম্বারের কল কেটে আফরাজ এর কল রিসিভ করে। সালাম বিনিময় শেষে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“কল কেন দিয়েছেন?”
“বিবিজান আমার, নাম্বার আমার, ফোনের সিমও আমার নামে রেজিস্ট্রার্ড। সো আমি যখন ইচ্ছে তখন কল দিতে পারি।”
নাজীবা ভেংচি কাটে। মুখ ভেটকিয়ে বলে,
“তাতে আমাকে ফোন কে দিতে বলছিল? আমি তো ফোন টোন ছাড়াই বিন্দাস ঘুরছিলাম। আপনার থেকে এনা মিসিং চুটানোর জন্য ফোন কিনে দিতে হলো।”
নাজীবার ঢংমার্কা চেহারা দেখে মুখ টিপে হাসল আফরাজ। তবুও কলের মধ্যে গাম্ভীর্য ভরা গলায় বলে,
“বেশি বে’য়া’দপ হয়ে গেছো দেখছি। গালের থেকে দাগ মুছে গেল মনে হচ্ছে। আবারো দাগ বসিয়ে দিতে হবে।”
“এবার দিয়ে দেখেন। ছেড়ে না অনেক দূরেই চলে যাবো। নিজেতো ভুলেও গেছিল এবারো ভুলে যাইয়েন আমাকে হুহ্।”
কল কেটে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলল সে। ফোনটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মে’রে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আফরাজ ফুটেজে নাজীবা-কে অনুসরণ করছে। মেয়েটি অভিমানে গাল ফুলিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে। মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হেসে নাজীবার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলেন। জনাব ইসমাইল এসময় গ্রামের জমির দেখভালের জন্য গ্রামে যান। তাই নাজীবার সংকোচ হলো না শ্বাশুড়ির রুমের ভেতর ঢুকে পড়তে। আফরাজ একপলক মা আর বিবিজান এর দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নেয়। বাসার মধ্যে সাভেন্টের ছন্দবেশে থাকা তার সিক্রেট পিএ রাফিন-কে কল দেয়। রাফিন এর দায়িত্ব হলো সর্বদা বসের রুমের আশপাশ জুড়ে কাজ করা। এতে সহজে সে ফোন রিসিভ করে ‘ইয়েস স্যার’ বলল। ‘হুম’ শব্দ করে আফরাজ রাফিন-কে বলে,
“আমার রুমে ঢুকে তোর ম্যাডামের ফোনটা নিয়ে অফিসে আয়।”
ফোন রেখে সামনে তাকিয়ে আকবর-কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। সে ভ্রু নাচিয়ে ভেতরে আসতে ইশারা করে। আকবর এর মাথায় সব জটিল প্রশ্ন ঘুরছে। যতক্ষণ এসবের উত্তর পাবে না ততক্ষণ সে শান্তিতে বসতে পারবে না। বন্ধুর উপর চেঁচিয়ে বলে,
“দেখ দোস্ত আজ তুই পুরো কাহিনী আমাকে বলবি না হয় আমি.. আমি।”
“হ্যা বল তুই কি? কি করবি?”
“আমি আমি আইসক্রিম খেয়ে হার্টে বরফ জমিয়ে হার্টবিট নষ্ট করে ফেলব বলে দিলাম।”
“এতটুকু ব্যাপার। কোনো সমস্যা নেই বরফটা নাহয় আমি গিলিয়ে দেয় কি বলিস? আমিই তো তোর পরম বন্ধু।”
“এই দেখ পেটে কিন্তু এখনো মুলার বেগ শেষ হয় নাই। যদি ত্যাড়ামার্কা জবাব দিস। তাহলে তোর কেবিনেও আমার সুন্দর পা’দ মে’রে দেবো তখন…।”
সে তার কথা শেষ করতে পারল না। উল্টো ঢোক গিলে মুখের কথা পাল্টে বলে,
“আরে তোর যখন ইচ্ছে তখন বললেও হবে নো প্রবলেম ম্যান।”
“কি-রে তুই কেন ভয় পাচ্ছিস? গার্নটা ফর সেফটির জন্য রাখছি। কে যেনো বিরাট বড় পা’দ দেওয়ার কথা বলছিল। তারই পা’দ দেওয়ার জায়গায় বু’লে’টের ন্যায় ফুটো করে দেবো আরকি। টেক ইট ইজি ম্যান।”
ফোকলা দাঁতের হাসি দেয় আফরাজ। গা’র্ন দেখেই তার বন্ধুর মুখের রং পাল্টে গিয়ে ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)বিধেয় মুখ ভেটকাল সে। দরজায় নক করার শব্দে আফরাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়। রাফিন এসে মোবাইলটি এগিয়ে দিয়ে পুনরায় তার কর্মস্থলে চলে গেল। আকবর নাজীবা ভাবীর ফোন দেখে কিছু বলতে নিলেই কল চলে আসে ফোনে। আফরাজ বাঁকা হেসে নাজীবার ফোনের কল রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে অস্থির গলায় দাহাব এহসান বলে উঠে।
“নাজীবা তুমি কোথায় থাকো? এতদিন স্টুডেন্ট-টিচার হিসেবে কথা বলছি। তাই বলে এতটা ইগনোর করবা? দেখো আমি জানি তুমি অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট আর আমি অন্য ডিপার্টমেন্টের টিচার। বাট ইট’স ড্যাজেন্ট ম্যাটার। আই উইল ম্যানেজ। আর দেখতে গেলে আমার তোমাকে ভীষণ পছন্দ নাজীবা। আমিও কয়েকদিনে বিয়ে করতে চাইছি। তাই বলছিলাম কি একসাথে কফি ডেইটে গেলে….।”
“রং ইউ মিস্টার দাহাব এহসান। নাজীবা ইজ অলরেডি ম্যারেড এন্ড সি ইজ দ্যা ওয়াইফ অফ আফরাজ ফাহিম। আই থিংক আপনি ইংরেজি বুঝতে পেরেছেন দাদা….জান। ওপস ভুলে ইয়াংম্যান-কে অল্ডম্যান ডেকে ফেললাম। যতই যুবক বনে যান,আপনার আসল রূপের রহস্য এই আফরাজ ফাহিম এর অজানা নয়।”
একনাগাড়ে কথার মাঝেই হঠাৎ করে থেমে যান দাহাব এহসান। তিনি ভাবতেও পারেননি তার কাজ পুনরায় অসফল হবে। ফোনটা রেখে রেগে ফুঁসে উঠলেন। তার মেয়ের জামাই-কে ডাক দিলেন। জনাব লিয়াকত গম্ভীর মুখোভঙ্গি নিয়ে শ্বশুরের রুমে এলেন। তিনি আফরাজ এর ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য বের করে রেখেছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কেননা নাজীবার ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেয়ে ছিলেন সেদিন। সেখানে মোবারক আলীর সঙ্গে স্পষ্ট পজিটিভ ম্যাচড দেখানো হয়েছে। রিপোর্ট দেখে তিনি আর সময় ব্যয় করেননি। তৎক্ষণাৎ লোক লাগিয়ে নাজীবার স্বামী আফরাজ এর ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করেন। তাবাসসুম এর কথার জোড়ে বুঝতে পেরে ছিলেন আফরাজ আর নাজীবার সম্পর্ক গভীরে পৌঁছে গেছে। তবুও তিনি নাজীবা-কে চান। সম্পত্তির ভোগ আর লালসা মানুষ কে নিম্নে পৌঁছায়। যার পূর্ণরূপে প্রমাণ হলো দাহাব এহসান। তিনি ক্ষোভে আফরাজ এর ছবি আর ঠিকানা মেয়ের জামাইকে দিয়ে বলেন,
“এই ছেলের লা’শ দেখতে চাই। যত শীঘ্রই পারিস এর লা’শ সামনে হাজির করবি। নাহলে তোকে আবারো গুপ্ত রুমের মধ্যে বন্দি করে রেখে দেবো। মনে রাখিস মোবারক আলীকে মা’রার কাজে তুইও কিন্তু সামিল ছিলি। এই ছেলে বেঁচে থাকলে কোনো না কোনো একদিন আমাদের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে ছাড়বে। যাহ্ এখান থেকে কাজে লেগে পড়।”
জনাব লিয়াকত মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়। কারণ তার জীবন তার কাছে প্রিয়।
অন্যথায়, আকবর তালি বাজিয়ে আফরাজ-কে শাবাশী দিয়ে বলে,
“ভাই এবার তো বলে ফেল কাহিনী কি?”
কষ্টময় শ্বাস ফেলে আফরাজ বলতে লাগল।
“তোর তো নাজীবার বলা কথাগুলো মনে আছে। কিন্তু তাকে প্রশ্ন করার আগে তার প্রতি প্রথম কবে আমার কৌতুহল জেগেছিল জানিস? বিয়ের সাতদিন পরে, তখনো আমি আর নাজীবা এক রুমে থাকতাম না। আলাদা রুমে থেকে সামনাসামনি দেখা হতো। কাজ থেকে রাতে ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছি ছিলাম। নাজীবার রুম পেড়িয়ে যেতে গেলে তার রুম থেকে গুঙানোর শব্দ শুনে ঘাবড়ে ছিলাম। কারণ মেয়েটা একলা রুমে থাকছিল। সেই হিসেবে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছে কিনা চেক করতে ভেতরে ঢুকে পড়ি। সে কম্বল জড়িয়ে রেখে ভয়ে কাঁপছিল। তার কণ্ঠস্বরও অল্প করে শোনা যাচ্ছিল। স্পষ্ট শোনতে পাচ্ছিলাম মেয়েটা গুঙিয়ে বলছিল,’দাদু প্লিজ ছেড়ে দাও না আর খেয়ো না আম্মুকে। আম্মুর শরীরে আর র’ক্ত নেই দাদু।’ হঠাৎ মেয়েটা নিজের থেকে কেঁপে,কেঁপে উঠে তার নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে কেমন একটা আচরণ প্রদর্শন করছিল। দেখতে মনে হচ্ছিল নিজের শরীর থেকে কারো থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করছিল। আমার মনোভাব সত্যও হলো। নাজীবা ঘুমের ঘোরে কেঁদে বলছিল,’দাদু আমার কামিজ ছেড়ে দাও প্লিজ। আহ্ দাদু প্লাজু ছেড়ে দাও না দাদু। নিচে হাত কেনো দিচ্ছো দাদু প্লিজ।’ মেয়েটার কান্নায় বুক ভেঙে আসছিল আমার। নিজের কাছে অসহায় লাগছিল। যদি তাকে বুকে না চেপে ধরতাম তখন তার আবারো ড্রাক নিতে হতো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ ক্রিয়ায় আমার চোখে তার অপ্রকৃত আচরণের কারণও চলে এলো। তার ঘুমের ঘোরে করা আচরণে স্পষ্ট অনুভব করলাম মেয়েটা জঘন্য অতীত কে ভুলতে পারেনি। রাতের আঁধারে পাখির বাচ্চার মত আমার বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল বিবিজান। এসব দেখে রাফিন-কে কাজে লাগিয়ে দিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফেনীতে হানিমুন ট্যুর দিয়ে কাজের সমাপ্তি ঘটানোর। তবে……।”
চলবে…..
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৯ (রহস্যের সমাপ্তি দ্বিতীয়াংশ)
“তবে কুসুমা ভাবীর গর্ভ অবস্থায় যাওয়া রিস্কি মনে হলো আমার। তাও আমি আড়ালে রাফিন-কে দিয়ে খবর নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। রাফিন প্রথমে সেই হাসপাতালে খোঁজ নেয়। যেখানে বিবিজান এডমিট ছিল। সেখানে থেকে যে খবরটা পেলাম। তার প্রতিফলিত রুপ দেখবি?”
আফরাজ আকবরের দিকে তাকিয়ে বলে। সে মাথা নেড়ে সায় দেয়। আফরাজ লেপটপ কাছে টেনে তার মত টাইপিং করল। টাইপিং শেষ করে লেপটপের স্ক্রিন আকবরের মুখোমুখি করে দেয়। সে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
“এই কে বুড়ো ব্যাটা?”
“নাজীবার আপন মামা। হি ইজ এ্যা ড্রাগ ডিলার এন্ড ড্রাগ সেলার। আজ তিনমাস যাবত তাকে আমি আহত অবস্থায় বেঁধে রেখেছি।”
“কি বলিস মামা ভাবীর প্রেমে ভূত হয়ে একদম রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়ছিলি বুঝি?”
“হুম বলতে গেলে এমন কিছু। তার মামারে মা’রধর করে জানতে পারলাম। বিবিজানকে তার সৎ দাদা অর্থাৎ দাহাব এহসান তার মামার কাছে শুধু একমাস রাখার জন্য পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু এই বুড়া বেইমানি করে। আপন ভাগ্নির শরীরের প্রতি লোভ জাগে তার। এজন্য রাতের আঁধারে বিবিজান কে নিয়ে ফেনীর অন্য শহরে চলে গেলো। এখন দাহাব এহসান এর সে-সবের খবর অব্দি নেই। সে তো মশগুল ছিল সম্পত্তির ভাগ-ভাটুয়ারা নিয়ে। বলতে গেলে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কে মৃত্যুর কবলে ফেলে তাদের মৃত্যু-কে সাময়িক দূঘর্টনা বলে চালিয়ে দেয় তাবাসসুম এর বাবা জনাব লিয়াকত। এই তাবাসসুম হলো নাজীবার সৎ ফুপির মেয়ে। নাজীবার আপন দাদী দু’বার বিয়ে করে ছিল। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর দাদীর এক সন্তান ছিল যার নাম মোবারক আলী আমার শ্বশুর। দাদী একলা হাতে ছেলের লালন-পালনে হিমশিম খাওয়ায় দাদীর পরিবার আরেকবার দাদী-কে বিয়ের পিঁড়িতে বসায়। তখন তার বর হয়ে ছিল দাহাব এহসান। তার পক্ষের সন্তান হলো মিস হিয়া এহসান। যে তাবাসসুম এর বর্তমান জননী আর লিয়াকত সাহেবের স্ত্রী। অথচ এই মহিলা নাজীবার অসুস্থতার দিনে নিজেকে দাহাব এহসান এর মা বলে পরিচয় দিয়ে ছিল। আর দাহাব এহসান তো আরো সিয়ানা। নিজের যৌবন রূপ ধরে রাখতে সার্জারি করে নিজের সর্বনাশ অলরেডি করে রেখেছে। সে কি ভেবে ছিল আমি ছোট বাচ্চা আমাকে যা বুঝাবে, আমি তাই বুঝব? হাহ্ এই বাজপাখির নজর দাহাব এহসান এর চেহারার আদলে ছিল। আমার নজরকে এড়াতে পারল না সে। তার ভুল ছিল স্বেচ্ছায় আমার সঙ্গে কথা বলা। এর কারণেই তো দাহাব এহসান এর মুখের চামড়ায় ছিপছিপে ছিঁড়ে যাওয়া রেশ দেখে ছিলাম। তখন ফরেনসিক ল্যাবে পরিচিত এক ডক্টর-কে বলে তার সমাধান চাই। তিনি সমাধানে এটাই বলেছিল যে, দাহাব এহসান এর বয়স বর্তমানে ষাট্টের কাছাকাছি। তার চুল,শরীর প্রায় বেঁটে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে নিজের মনে নাজীবা-কে ভোগ করার পূর্ণ আশা জমিয়ে রেখে ছিল। যার আশানুরূপ সে নিজের যৌবনের রূপের জন্য র’ক্ত পান করতো,মেডিসিন, ইনজেকশন নানান ভাবে গ্রহণ করতো। এসবে সাহায্য করতো মিসেস হিয়া একজন কেমিস্ট ল্যাব লেকচারার। তার মাথায় কোন কেমিক্যাল কেমনে ব্যবহার করতে তার ধারণা আছে। নিজ মেয়ে-কে কাজে লাগিয়ে প্রতিবার কেমিক্যাল সলিউশন বানিয়ে রাখে সে। এখানেও একটা হাসির ব্যাপার কি জানিস? দাহাব এহসান এতটা সম্পত্তি লোভী ছিল। যার ফলে সে তার মেয়ের ঢাসামার্কা জামাই-কেও সহ্য করেনি। তাকে গুপ্ত রুমে বন্দিদশায় ফেলে রেখেছিল প্রায় একবছর হতে চলেছে। রেহাই দিল কিনা জানা নেই। যদি দিয়েও থাকে ধরতে সমস্যা হবে না আই হোপ। এভাবে সে নিজের রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কার করে ফেলে। সে ভেবে উকিলের সাথে দেখা করে দলিল বানায়। হাস্যকর দলিলটা কাজেও আসল না। কেননা নাজীবার দাদী দাহাব এহসান এর সত্য পরিচয় জানার পর এমন শক্ত দলিল বানিয়ে রেখেছিল যেটা ভেদ করা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল তার। সেটা হচ্ছে সম্পত্তির মালিক এখন স্বয়ং নাজীবা নিজে। তাকে যে বিয়ে করবে এবং তাদের পরবর্তী বংশধরায় যার জন্ম হবে, তার ১৮ বছর বয়স হলেই সম্পত্তির পুনরায় ভাগ-ভাটুয়ারা করা যাবে। পরন্তু কোনো কারণে সেই সন্তানের মৃত্যু হলে সব সম্পত্তি এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হবে। অন্যথায় সম্ভব হবে না বলে সুস্পষ্ট দলিলে লিখে দিয়ে ছিল মৃতসম দাদীজান। নাজীবা যে তার বাবা-মায়ের গড়া সংসারের একমাত্র উত্তরাধিকারী, এসবের খবর অব্দি নেই তার মাঝে। কেমনেও বা থাকবে? তার জীবনে যতগুলো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে অন্য কারো জীবনে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দাহাব এহসান এর মাথায় তখন এক চিন্তা ভর করে। সে যেকোনো ভাবে হোক নাজীবা-কে বিয়ে করে বংশের উত্তরাধিকারী নেবে। তার ঘৃণ্য কাজে সায় দেয় তাবাসসুম এর মা মিসেস হিয়া। মোটামুটি তান্ত্রিক বিদ্যা জানতো। আড়ালে জ্বীন ডেকে কাজ সাধন করার চেষ্টা করতো। আমার স্মৃতিও ততদিনে মনে পড়ে গিয়ে ছিল। আমার স্মৃতি লোপ পেয়েছিল ছাদের উপর থেকে পড়ার কারণে যা সত্য। কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ছিল মিসেস হিয়ার ভাড়াটে জ্বীন। তার শর্ত ছিল আমার জীবন। কিন্তু আল্লাহর মহিমায় আমি বেঁচে যায়। এতে জ্বীন তার কাজে অসফল হওয়ায় মিসেস হিয়ার বাম হাত কেড়ে নেয়। যেহেতু তিনি জ্বীনের সর্দার সেহেতু তার পক্ষে সর্দারের জীবন নেয়া সহজলভ্য নয়। তাই সে বাম হাত কেড়ে নেই। একই কাজ আবারও করে নাজীবার উপর মন্ত্র পাঠ করে জ্বীন-কে পাঠায়। জানতো না যে, আমার বাসা পরিপূর্ণ পবিত্রতায় ঘেরা। আমার দাদীর অশেষ কষ্টে প্রতি রুমে থাকা ফুলের টবগুলো বিশেষ ক্ষমতা বহন করতো। সেগুলো জ্বীন-কে কুপোকাত বানিয়ে ছাড়ে। কিন্তু জ্বীনের শক্তিও কম ছিল না। সে কারণে এক ফুলের মৃত্যু হয়ে যায়। যার প্রতিরুপে বেলকনিতে র’ক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে ছিল নাজীবা। আমি বিষয়টা ধামাচাপা দিতে সাভেন্ট’স ডেকে বেলকনি পরিষ্কার করিয়েনি। সেই সাথে নাজীবার শরীরে মেডিসিনের ডোজ লাগিয়ে দেয়। তার সুটকেস খুলে ড্রাগের ইনজেকশন সরিয়ে লিকুইড মেডিসিনাল ইনজেকশন রাখি। এতে নাজীবা তার অজান্তে ওষুধ সেবন করে ড্রাগ এডাকশন থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে আলহামদুলিল্লাহ কার্যকরও হচ্ছে। এতেও চুপ করে বসে থাকিনি। ড্রাগটা কেমনে তার শরীরে এলো তারও তথ্য খুঁজতে তৎপরতায় লেগে গেলাম। পেয়েও গেলাম এই ছবির বুড়ো। ভাগ্নির শরীরের চেয়ে টাকা বেশি চিনতো। তাই ভাগ্নিকে নানান ভাবে খাবারে ড্রাগ মিশিয়ে খাওয়ে দিতো। কিন্তু ড্রাগের প্রতিক্রিয়ায় নাজীবার ব্রেন বাচ্চা টাইপ হতে থাকে। সে প্রতিনিয়ত চিৎকার চেঁচামেচি করে বিরক্ত করতো মামা-রে। তার বিরক্তির সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় মামা তাকে সাইকোপ্যাথিক হাসপাতালে এটমিট করিয়ে দেয়। সেখানের ডক্টর,নার্স অন্য পাগলদের বেলায় যতটা কঠোর হয়ে থাকত না কেনো, নাজীবার মায়াভরা চেহারা দেখে তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে লাগল তাকে সুস্থ করার জন্য। সেখানেও বাম হাত ঢুকালো দাহাব এহসান। মামার খবর না পেয়ে নাজীবার মুখ থেকে কৌশলে কথা বের করে। তার মস্তিষ্ক সচল থাকলে জীবনেও বলতো না কিন্তু অচল মস্তিষ্ক নিয়ে সব উগলে দেয়। তাকে পুরোপুরি পাগল বানাতে দাহাব এহসান অন্য এক ডক্টর-কে পাঠায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) যে কিনা র’ক্ত জোগাড় করে দিতো দাহাব এহসান কে। তার র’ক্তপান নেশা স্বাভাবিক। কেন জানিস? কারণ সে যে, এককালীন বাদুড় সেবক ছিল। তাও যেমন তেমন নয়। যে বাদুড়-কে র’ক্তচোষক বলে,সে বাদুড়ের সেবক ছিল। বিয়ের পর থেকে টাকা হাতিয়ে গোপনে বাদুড়ের জোগাড় করে ব্যবসা করত। তাদের সেবার কাজে তাকে হাজারে দু’তিনেক টাকা দেওয়া হতো। একদিন সেই বাদুড়ের দাঁত দাহাব এর ঘাড়ে লাগে ছিরে যায়। তাদের দাঁতের মধ্যে ছোঁয়াচে রোগ বিদ্যমান। সেই রোগের কবলে পড়ল স্বয়ং দাহাব এহসান। রোগটা হচ্ছে Clinical vampirism। এর মানে হলো এক ধরনের ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা, যা সাধারণত Renfield’s syndrome নামে পরিচিত। এর তিনটা পর্যায় আছে। তার মধ্যে দাহাব এহসান এর দুটার প্রতি জোঁক বেশি। প্রথমত, মানুষের রক্ত গ্রহণের দিকে ধাবিত হওয়া। রোগী হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত চুরি করে অথবা জীবিত ব্যক্তির রক্তপান করে। এই পর্যায়ে আসার পর ‘রেনফিল্ড সিনড্রোম’ এ আক্রান্ত কিছু লোক হত্যার মতো সহিংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, পর্যায় যাকে ‘Zoophagia’ বলা হয়। এ পর্যায়ে রোগীরা জীবন্ত প্রাণী ভক্ষণ কিংবা তাদের রক্ত পান করে। এই পর্যায়ে অনেকেই রক্ত পানের জন্য কসাইখানা থেকেও রক্ত সংগ্রহ করে। সে রোগের কারণে নাজীবার বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়। তার বাবা-মায়ের মৃত্যু কান্ড ঘটে ছিল খুব ভয়াবহে। নাজীবার মা মেহজাবিন সিরাত কে রেপ করে শরীরের র’ক্ত পান করে ছেড়ে দেয় দাহাব এহসান। তখন মোবারক আলী কাজ থেকে বাসায় ফিরে এমন দৃশ্য দেখে তৎক্ষণাৎ ছেলে নাদিম-কে সরিয়ে ফেলে। তার হাতে প্রমাণস্বরুপ ভিডিও ক্লিপ ছিল। তিনি নাদিম-কে বাহিরে পাঠাতে সক্ষম হলেও নাজীবা-কে পাঠাতে পারল না। তার আগেই নাজীবার চোখের সামনে তার সৎ দাদা বাবার শরীরের র’ক্ত চোষে নেয়। মোবারক আলী অন্য কিছু করতে না পারলেও দাহাব এহসান এর বুকের মধ্যে ছু’ড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে তার তান্ত্রিকতা নষ্ট হয়ে যায়। এ বিদ্যায় পরিপূর্ণ অভিজ্ঞ হওয়ার আগেই তাকে উ’প্রে ফেলে আমার শ্বশুরে।
তবুও কৈ মাছের প্রাণ বেঁচে গেল। নিজের তান্ত্রিকতা সমাপ্ত বলে মেয়ে-কে কাজে লাগায়। অথচ মেয়ে তো আন্ডামার্কা আরো। হাহাহা।
তন্মধ্যে ছোট প্রাণ হাতে নিয়ে যেন অবশ হয়ে গিয়ে ছিল ছোট নাজীবা। একে তো রুমে থেকে চিৎকার করে ছিল মায়ের অসহনীয় মৃত্যু দেখে , তার পর বাবার মৃত্যু দুটোই তার মস্তিষ্কে বিরুপ প্রভাব ফেলে। তাদের মৃত্যুর ক্লিপ একটা আননোন নাম্বার থেকে আমার কাছে আসে। কে বা কেনো দিছে তাঁর নাম্বার ট্রাকিং করেও পায়নি। পরন্তু তার সেই ভিডিওর জোড়েই দাহাবের এহসান এর ব্যাপারে তথ্য খোঁজে বের করতে পেরেছিলাম। মূলত ঐসময় নাজীবার বাবা-মা-কে খু’ন করে ছিল বলে নাজীবা-কে ছাড় দেয়। তাকে তার মামার কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে হাসপাতালে পৌঁছে। হাসপাতালে নাজীবার জন্য বরাদ্দকৃত ডক্টর কে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করে ডক্টর সিফাত কে আনা হয়। সেই ডক্টরের হাবভাব অশ্লীল ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাজীবার সেবায় নিয়োজিত নার্স তাকে সহায়তা করে। তাকে নিয়ে পালিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এই পালানোর খবর তার মামা শুনতে পেলে নিজেকে আড়াল করে নেয়। কারণ দাহাব এহসান এর হাতে পড়লে তার মৃত্যু নির্ধারিত ছিল। যেমন মৃত্যু ঘটেছিল তার চামচা ডক্টর সিফাত এর। কিন্তু মামা পড়ছে আমার হাতে এখন বন্দীদশা ভুগ করছে। তার শরীরের পচন দেখার অপেক্ষায় আছি আমি। নানান ড্রাগ যে তার শরীরে ভরে দিয়েছি। নিদারুণ কষ্ট দেবো। যে কষ্ট ভোগের অধিকারী নাহয়েও ভোগতে হয়ে ছিল আমার বিবিজান-কে। এবার পাল্লা হবে মিসেস হিয়া ,তার স্বামী আর সন্তানের সঙ্গে। যদি স্বেচ্ছায় না ছাড়ে তবে জীবন মাঝপথে থেমে যাবে তাদের। সর্বশেষে হবে দাহাব এহসান এর জীবনের খেলা। তবুও কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়। সেসময় নাদিম পালালেও বর্তমানে কোথায় আছে তা এখনো বের করতে পারিনি।”
“ভাই তুই একলা এসব জোগাড় করলি। মাশাআল্লাহ ভালোবাসায় পাগলামী হোক তোর মত। সর্বদিক যাচাই করার ক্ষমতা রাখিস তুই। তোর কথার মধ্যে তো এটাও বোঝা যায়। এতদিন যে, তাবাসসুম ছলেবলে অফিসে নাজীবা-কে টিজ করে ছিল?”
“অফকোর্স ইয়ার। বিবিজান এর আপাতমস্তক এ আমার বাজপাখির ন্যায় নজর। সেখানে ত্রুটি থাকলে তাকেই রেহাই দেয় না। সেখানে তাবাসসুম তো তুচ্ছ বিষয় মাত্র। সেদিন ফুটেজে সব দেখেও অদেখা করে ছিলাম। ইচ্ছেকৃত, কারণ তাবাসসুম এর পরিচয় সম্পর্কে যা জেনে ছিলাম তা সত্য কিনা সিউর হতে! বোকা মেয়েটা সত্য প্রমাণ করে ছাড়ল। একে তো আমার সাথে প্রেমের ছল করে তার কোন বেহায়া ক্লাইন্টের সাথে রাত কাটিয়ে নিজের যোগ্যতার সাথে নাজীবার তুলনা করছিল। মন চাচ্ছিল খু’ন করে দেয়। সে তো আমার বিবিজান এর নখের যোগ্যও নয়। কিন্তু তখনো সত্যি জানতাম না। জানছি যখন সে ক্লাবে নেশার বুঁদ হয়ে দাহাব এহসান এর সাথে প্ল্যানিং করছিল। তখন রাফিন-কে তাদের পিছে পাঠিয়ে দেয়। সত্যি জানার জন্যে মূলত তাবাসসুমকে পিএ পদে রাখা। এই দাহাব এহসান কে তো অভিনয় জগতের সেরা অভিনেতার পদক দেওয়া উচিৎ। যৌবনের বেশভূষায় থেকে আপন নাতনী-র সঙ্গেও মাখন খেলা খেলতে দ্বিধাবোধ করেনি। যার মধ্যে কোনো ধরনের নীতি চিন্তা নেই তার আবার কিসের দ্বিধা? মিসেস হিয়া তো জানেন না তার সন্তান অনেক আগেই তার বাবার সঙ্গে রাত কাটিয়ে ফেলেছে। বেহুদা কারণে শুধু শুধু দূরে রেখে কি লাভ?
সব তথ্য জানতে পেরেও মনেমন নিজেকে দমিয়ে রেখে ছিলাম। কারণ রাগ করলেন তো হেরে গেলেন কথা স্মরণে রেখেই নিজের রাগ পোষিয়ে রাখার স্বভাব কৈশোরগত।”
“মানুষ বলে জন্মগত তুই বললি কৈশোরগত। কোন গ্রহের প্রাণী-রে তুই?”
“মানুষ জম্মগত বলে তার অর্থ কি আজও ঠিক তুই বল? তুই যে এত পা’দ মারিস সেটা কি তুই জন্মের পর পরই জানতে পেরেছিলি? পারিসনী কেন? কারণ তুই নিজেই একদিনের বাচ্চা তুই কেমনে জানতে পারবি তুই পা’দ মারিস। এগুলো তো বড় হলেই পরিবার পরিজন বুঝে আন্দাজে বলে দেয় যে, তোর জম্মগত স্বভাব। আমি একথায় অমত বলেই বলি যে, স্বভাব আমরা বুঝি কৈশোর থেকেই। তখন স্বভাব সম্পর্কে জেনে বোঝা যায় আমি কেমন ছিলাম।”
আকবর মাথা নেড়ে দু’কাপ কফি অর্ডার দেয়। আফরাজ পানির মগ নিয়ে পানি খেয়ে শুকনো গলা ভিজিয়ে নেয়। সিসিটিভির দিকে চেয়ে মা আর বিবিজান-কে একসাথে ঘুমাতে দেখে শান্তি পেল মনে। তবুও রাতে আদর দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে রাখল গোপনে। কেননা বিবিজান অভিমানে মুখ ফুলিয়েছে। আদর ছাড়া তো আর মজে না মনটা। ঠুং করে ফোনের শব্দে আফরাজ এর ধ্যান ফিরে। আকবর তার সামনের চেয়ারে বসে কুসুমার সঙ্গে বার্তালাপ করছিল। আফরাজ একপলক চেয়ে ফোন কল রিসিভ করে নেয়।
“স্যার দাহাব হয়ত জানতে পেরেছে ম্যাডামই নাজীবা। কারণ ফুটেজ চেক করে দেখলাম। আপনার রুমে অচেনা এক মেয়ে ঢুকে ম্যাডামের চুলগুচ্ছ নিয়ে পালিয়ে ছিল। এখন কি তাকে খোঁজে ধরব?”
“তার দরকার নেই রাফিন। এ ব্যাপারে আমি আগেই অবগত। ইচ্ছেকৃত মেয়েটাকে ধরিনী আমি। যেনো দাহাব বুঝতে পারে আমি তার প্ল্যান বুঝিনি। তুমি খেয়াল রেখো সর্বখানে ওকে?”
“ইয়েস স্যার।”
ফোন কাটতে আকবর বন্ধুকে বলে,
“ইয়ার তুই না একঘণ্টা আগে দাহাবের সঙ্গে কথা বললি। তাহলে বুড়ো জেনে গেছে এবার তোর ক্ষতি করতে চাইবে।”
বুকের মধ্যে হাত গুজে আয়েশে চেয়ারে হেলান দিল আফরাজ। বাঁকা হেসে বলে,
“আই অলসো ওয়ান্ট হিজ রিভেঞ্জ। সে যদি রিভেঞ্জ না নেয়,তবে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-র মৃত্যুর খবর-কে ফেইক এক্সিডেন্ট নামে চালিয়ে যাওয়া বুড়ো-কে তো ধরতে পারব না। আর রইল তাবাসসুম কে কিডআপ করার কথা। সে যে পিঠপিছে নাজীবা-কে অপমান অপদস্থ করে ছেড়েছে। তার জন্যে আগামী সাতদিন পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া হীন তাকে বাঁচতে হবে। এতে মরে গেলে ডোন্ট কেয়ার। রাফিন বিষয়টা সামলে নেবে। আরত্ত এই মেয়ে স্বচক্ষে দাহাবের বুড়ো রুপও দেখেছে। অতঃপর বেচারী ফেঁসে যাবে সে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছে না। তন্মধ্যে সত্যি ফাঁস করলে দাহাবের হাতে খু’ন হবে আর না করলে আমাদের হাতে মা’ই’র খেয়ে খেয়ে বাঁচবে।।”
আকবর নিজের মাথায় বার’কয়েক বা’রি মে’রে’ বলে,
“ভাই তোর প্ল্যান সেরা সুর্পাপ ভাই। পরন্তু আমার দারুণ পা’দ মা’রার মত সেরা নয় হাহ্।”
নিজের শার্টের কলার টান টান করে ভাব নিল আকবর। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ চোখ ঘুরিয়ে ফাইল’স দেখার ভান ধরল। ভেংচি কেটে টিটকারী মার্কা হাসি দিয়ে বলে,
“পা’দ শব্দ বেশি স্মরণে রাখিস বলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়াশরুমে বসে কাটিয়ে দিস।”
“কি আমি এতক্ষণ বসে থাকি? ওহ তাতে কি আমি ওয়াশরুম সিঙ্গারও বুঝতে হবে।”
আফরাজ-কে চোখ মে’রে ভাব দ্বিগুণ বাড়িয়ে ভ্রু নাড়ল আকবর। বন্ধুর জবাবে গা’র্নটা ধরতে নিলে আকবর কেবিন থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। তার যাওয়া দেখে মুচকি হাসল আফরাজ। ফোন হাতে নিয়ে ফুটেজে ঘুমন্ত বিবিজান-কে জ্বালানোর ফন্দি আঁটে মনে মনে। রাফিন-কে কল করে বলে,
“শোন তোর ম্যাডামের কাছে লেডি সাভেন্ট পাঠিয়ে বলতে বলো আমার ফোন রিসিভ করতে।”
রাফিন ‘ওকে স্যার’ বলে বসের কথামত কাজ করে। আফরাজ সবটা দূরবীনের ন্যায় দেখছিল। লেডি সাভেন্ট গিয়ে ফোনটা নাজীবার হাতে দেয়। নাজীবা দেখে চোখ কুচলে উঠে বসে। পাশে ঘুমন্ত শ্বাশুড়ি-কে দেখে কপালে চুমু দিয়ে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিজস্ব স্বামী-স্ত্রীর বেডরুমে এসে কল দেয় স্বামী-কে। আফরাজ সদ্য জাগ্রত রমণীর ওষ্ঠজোড়ার দিকে নেশাময় দৃষ্টিতে চেয়ে ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ফোন রিসিভ করে বলে,
“বিবিজান আপনার কাছ থেকে চুমু থেরাপি নিতে আসছি। গেট রেডি টু কিস ইউর হাজবেন্ড বিবিজান।”
চলবে…..
(বিঃদ্রঃ- এবার আশা করি কারো মাঝে কোনো ধরনের রহস্য নিয়ে ঘাপলা থাকবে না। কারণ আজকের পর্বে রহস্যের অন্তিম মধ্যম টেনেছি।)