অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব ১৫

0
132

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৫ (রহস্যের খোলাসা-০২)

“আফরাজ এই মেয়েটার সঙ্গে কালো ছায়া আছে। এই অপয়া মেয়ে-রে তালাক দিয়ে দেহ্। এর চেয়েও সুন্দরী মেয়ে আমি তোর সামনে এনে হাজির করবো। বাবা-রে তুই আমার একমাত্র নাড়ি-ছেঁড়া ধন। তোকে হারিয়ে পাগলই হয়ে যাবো আমি।”

‘তালাক’ শব্দটি যেন নাজীবার পুরো শরীরে মাত্রাতিরিক্ত আগুন ধরিয়ে দেয়। তার ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। শ্বাশুড়ির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিরবিরিয়ে বলে,’আফরাজ শ…শুধু আমার আর কারো নয়। আমি উনাকে ভীষণ ভালোবাসি।’
আপনমনে সে নিজের সাথে কথা বলতে লাগে। বিবিজান এর মানসিক অবস্থার অবনতি দেখে তৎক্ষণাৎ নাজীবা-কে আগলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আম্মু যে শব্দটা আপনি মুখ থেকে বের করলেন। সে শব্দটা মন থেকেও মুছে নেন। কারণ মেয়েটা শুধু আমার বউ নয়, আমার শরীরে অর্ধেক অংশ বহনকারী নারী। যে শব্দটা উচ্চারণ করেছেন তা দিয়ে কিন্তু আপনি আমাদের বিবাহ বন্ধনকে অপমানিত করছেন আম্মু। আপনি নাহয় কথাগুলো তাকে বললেন। এর রেশ আমার শরীরেও বাঁধল। মাফ করবেন আম্মু আপনার কথা আমি রাখতে পারছি না। অন্যথায়, আপনি অসুস্থ দেখেই আপনার বউমা আপনার চিন্তায় আমাদের হানিমুন ট্যুর পিছিয়েছে। নাহলে এই মুহূর্তে আমরা এয়ারপোর্টে থাকতাম।”

চোখের জল মুছে নাজীবা স্বামীর বাহু চেপে ধরল। চুপ হয়ে যায় আফরাজ। তার কণ্ঠস্বর শান্ত শুনালেও হৃদয়ের তেজ স্পন্দন বলে দিচ্ছে, সে সইতে পারছে না তার বিবিজানের অপমান। আকবর আর কুসুমা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস ফেরদৌসী ছেলের শান্তবাণী শুনেও না শুনার ভান ধরে নিজের স্বামীকে বলেন,

“ছেলে নিজেকে বেশি লায়েক বানিয়ে ফেলেছে, অথচ সে যে এক নাম্বারের ঢেড়স সেটা সে বুঝতে চাইছে না। আরে আপনি হলেও একটু বোঝান না। এই মেয়েটা কালো ছায়া। এই বাড়িতে থাকলে পুরো বাড়ি কালো ছায়ায় ভরপুর করে দেবে।”

আফরাজ মায়ের কথায় নিজের নামে ‘ঢেড়স’ উপাধি শুনে বাকি সদস্যদের দিকে তাকায়। তারা সকলে আফরাজ এর চেহারার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত মুহূর্তেও হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। জনাব ইসমাইল বউয়ের কথায় বিরক্তে মুখ ভেটকিয়ে বলেন,

“তুমি একটু চুপ করলেই সব কালো ছায়া দূর হয়ে যাবে। নাহলে কালো ছায়া না জ্বীন-ভূত সবগুলো এসে হামলে পড়বে।”

স্বামীর কথায় অগ্নি দৃষ্টিতে তাকান মিসেস ফেরদৌসী। জনাব ইসমাইল হকচক খেয়ে বলেন,

“আফরাজ তোমার মা আসলেই ঠিক বলছে,এ মেয়ে রূপবতী,গুণবতী। তোর জন্য পার্ফেক্ট। এর সাথে আবারো আমাদের সামনে বিয়ে করা উচিৎ। তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের স্বপ্নও পূর্ণ করতে হবে তো?”

মিসেস ফেরদৌসীর মুখ হা হয়ে যায়। তিনি ভাবতে লাগলেন, সে কখন এসব বললো। স্বামীর কথার ইতি টানতে চাইলে জনাব ইসমাইল বউকে একহাতে আগলে নেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
যেন তিনি মোটেও কথা বলতে না পারেন। বউ-কে ফাঁদে ফেলতে বলেন,

“বউমা তুমি তো মাশাআল্লাহ সুস্বাদু চা বানাতে পারো দেখছি। তোমার শ্বাশুড়ির মসলা চা কিন্তু অনেক পছন্দের। জানো? কখনো কখনো তোমার শ্বাশুড়ি কাজু বাদামের চায়ের জন্য ছটফট করে। মাঝরাত হলেও আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে কাজু বাদামের চায়ের আবদার করতো। এই নালায়েক যখন তোমার শ্বাশুড়ির পেটে ছিল, তখন কত যে কাজু বাদাম খেয়েছিল। ভাবছিলাম আমার ছেলেটা সেরা গুণে গুণান্বিত হবে। কিন্তু আম্মার থেকে কাহিনী শুনার পর বুঝছি কাজু বাদাম খেয়েও ঢেড়স পয়দা হলো একটা। কি আর করার? এই ঢেড়সটা-রে একটু দেখে রেখো।”

আকবর না পারতে ‘হাহা’ করে হেসে ফেলে। নাজীবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথায় নিজেকে হাসা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল। কিন্তু আকবর ভাইয়ের হাসি দেখে সেও তাল মিলিয়ে হেসে ফেলে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) আফরাজ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের বাবার দিকে চেয়ে বলে,

“হয়েছে আপনাদের? এবার আমি বউ কে নিয়ে রুমে যেতে পারি?”

জনাব ইসমাইল আগুন-কে আর গোলা করতে চাইলেন না। গলা ঝেড়ে সবাইকে যাওয়ার অনুমতি দেন। খাদিজা বেগম বউমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর কথায় মন না দিলেও তার বুকের ভেতর কেমন বিষাক্ত অনুভূতি হচ্ছে। বউমা-র অশ্রু মাখা দৃষ্টিতে তিনি যে, ঘায়েল নয় তেমনটা মোটেও নয়। বরঞ্চ তিনি নিজেও মেয়েটার চোখের অশ্রু সহ্য করতে পারছেন না। মুখে তিনি যতই সুন্দরী মেয়ে হাজির করার কথা বলুক না কেনো? নাজীবার মত গুণাবলী অন্য মেয়েদের মাঝে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। তিনি আর না ঘেঁটে চুপটি করে শুয়ে রইলেন। নাজীবা-কে ছাড়াই আফরাজ চলে গেল রুমে। সে স্পষ্ট খেয়াল করেছে স্বামীর মুখে রাগের ছাপ। হয়ত তার বাবা সাময়িক হাসিঠাট্টা করেছে। কিন্তু তার মায়ের বলা কথাগুলো সে ভাবনা থেকে সরিয়ে নেয়নি। স্বামীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে শ্বশুরের দিকে তাকায় নাজীবা। তিনি মৃদু হেসে পরিস্থিতি সামাল দিতে আফরাজ এর যাওয়ার দিকে ইশারা করেন। নাজীবাও সময় ব্যয় করল না। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের দিকে গেল। মিসেস ফেরদৌসী নাজীবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। পাশে বসা স্বামী-কে ধরে আনমনে বলেন,

“মেয়েটা অবিকল তার মায়ের মতই রুপ,গুণ আর বুদ্ধি পেয়েছে। কোনো পরিবর্তন নেই মেহজাবিন আর তার মেয়ের মধ্যে।”

বউয়ের কথায় জনাব ইসমাইল ভ্রু কুঁচকে ‘মানে’ বলেন। খাদিজা বেগমও ছেলের প্রশ্নের সুরে বউমার দিকে তাকান। দু’জনের এরূপ চোখের দৃষ্টি দেখে থতমত খেয়ে যান। আমতা আমতা করে বলেন,

“অপয়া মেয়ে কিসের গুণ হে? গুণ শুধু কুসুমার মধ্যেই আছে। ঐ মেয়েটা অযোগ্য মানে অযোগ্য।”

জনাব ইসমাইলও ব্যঙ্গ করার মত ভান ধরে বলেন,

“ঐ মেয়েটা যোগ্য মানে যোগ্য।”

স্বামীর সাথে দ্বিরুক্তি করতে নিলে জনাব ইসমাইল কাজের বাহানায় একপ্রকারে পালিয়ে যায়। খাদিজা বেগম ছেলের বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বউমা-র হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে।

“বউমা দেখো আমার ছেলের থেকে কথা লুকিয়ে রাখতে পারো। কিন্তু এই মায়ের থেকে কিছু লুকিয়ে রেখো না। বলো নাতবু-র সাথে ওমন কটু আচরণ কেনো করলে? নাকি তুমি এখনকার ট্রিপিক্যাল শ্বাশুড়িদের মত আচরণ করতে চাও?”

কথাটি শুনে ছলছল চোখে শ্বাশুড়ির দিকে তাকায় মিসেস ফেরদৌসী। কান্নাময় সুরে বলেন,

“মা নাজীবা এমন একজনের মেয়ে যাকে দেখতেই তার মা-কে বলে ছিলাম। তার মেয়ে-কে আমি আমার ছেলের বউ করতে চাই। কিন্তু কখনো ভাবিনি ঐ ছোট একটা মেয়ের সঙ্গে বদ জ্বীনও চলাফেরা করতো।”

খাদিজা বেগম চমকে গেলেন। তিনি বলার জন্য তাগিদ দেন। মিসেস ফেরদৌসী মুখ খোলার পূর্বেই ‘আম্মু’ ডাক শুনে থমকানো দৃষ্টিতে সামনে তাকান। আফরাজ কে গম্ভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিললেন। নিবিড়ে দরজাটা লাগিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। খাদিজা বেগম চুপ করে রইলেন। আজ বহুদিন পর যদি মা-ছেলের অভিমানটা ভেঙ্গে যায় সেই আশায়। মিসেস ফেরদৌসী ছেলে-কে সন্নিকটে দেখে আবেগে কেঁদে ফেললেন। মা-কে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে আবারো আদুরীয় গলায় ‘আম্মু’ বলে ডাকল আফরাজ। মিসেস ফেরদৌসী জবাবে বলেন,

“হ্যা-রে বাবা আজ এতদিন পর যেয়ে তোর মায়ের বুকের শূন্যতা পূর্ণতায় ভরে গেল। এই বুড়ি মায়ের জন্য হলেও ছেড়ে যাস না কখনো। তোর সব কথা মানব আর কখনো কিছুটি বলব না।”

“আপনি আমার আম্মু আপনিই যদি শাসন না করেন তাহলে সঠিক পথ পাবো কেমনে? আম্মু আপনিও একটু বুঝেন। ঐ মেয়েটা-কে আপনি পছন্দ করেছেন সেটা আমি বুঝেছি। কেমনে? কারণ আপনার চোখে মেয়েটির প্রতি মমতাবোধ দেখতে পেয়েছি‌। এটাও কম কিসে? ঐ মেয়েটাই আপনার সুস্থতার জন্য আজ বিকালের ফ্লাইট ক্যান্সেল করেছে, এমনকি আপনার পছন্দনীয় খাবার নিজ হাতে তৈরি করেছে, আপনার কাছ থেকে সে মা-মা গন্ধ পাওয়ার লোভে আপনার অজ্ঞানরত অবস্থায় বার’কয়েক হাত-পা মালিশ করেছে। নিজের স্বামীকে সেবা করেই সে দ্রুত আপনার শিউরে এসে বসে ছিল। এমন মেয়েটিকে আপনি কি অর্থে অপয়া বলতে পারলেন? বলার পরও খেয়াল করে ছিলেন? সে আপনার কাছ থেকে সরেনি। আব্বু যেতে বলার পরই চলে গিয়ে ছিল।”

ছেলের কথায় মিসেস ফেরদৌসী ছেলের হাতের উপর হাত রেখে বলেন,

“বাবা-রে আমি ইচ্ছেকৃত এসব করেছি যাতে তোর জীবন রক্ষা পায়। তোর সে-সময়ের ক্ষতির কথা ভাবলেও আমার শরীর কেঁপে উঠে। আমার আর তোর বাবার একমাত্র সন্তান তুই।”

“আম্মু আমার উপর বিশ্বাস রাখো। আপনা-কে এখন যা বলব তা মন দিয়ে শুনিয়েন।”

আফরাজ নাজীবার অতীতের বলা প্রতিটা কথা তুলে ধরে। তারপর তীব্র বেদনার শ্বাস ফেলে বলে,

“আম্মু আমার কী আসলেই কিছু হয়ে ছিল? কেনো নাজীবা আমাকে নিয়ে এসব কথা বলল? আপনার কাছ থেকে অর্ধেক তথ্য পেয়ে গেলে ক্রিমিনাল কে ধরা কোনো বড় ব্যাপার না।”

ছেলের প্রতিটা কথা শুনে মিসেস ফেরদৌসী আফসোস বোধ করলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

“ঠিকাছে বাবা আমি মন থেকেই মানিয়ে নেবো। কিন্তু খেয়াল রাখিস মেয়েটা হিরের টুকরো। হারালে তুই হেরে যাবি। তোর করা প্রশ্নের সত্যতা আছে। বলতে গেলে স্বাভাবিক ভাবে এটাই সত্যি যে, নাজীবার বলা কথা মিথ্যে নয়। বরং তোর জীবনে মেয়েটা ছিল বলেই তুই চঞ্চল হতে শিখেছিলি। জানিস তোর তখন নয় বছর বয়স। তুই খেলার মাঠে একলা খেলতি। কারণ তোর স্বাস্থ্য একটু বেশিই ভালো ছিল। এখনের মত ফিটফাট ছিলি না। তাই খেলার মাঠে ছেলেরা তোকে মোটু বলে তাড়িত করতো। তুই সেই বেদনায় পুকুরপাড়ে গিয়ে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরতি। বাসায় আমি আর তোর বাবা চেষ্টা করতাম যেন তুই সবসময় হাসিখুশি থাকিস। কিন্তু সাময়িক হাসি তুই হাসলেও বাহিরের জগতে গেলে তোর চোখ-মুখে বেদনা স্পষ্ট বুঝতে পারতাম আমরা। কিন্তু একদিন তোকে দেখে আমরা দু’জনেই চমকে গেলাম। কেনো জানিস? কারণ প্রথমবার তুই বাসায় এসেছিল হাঁপাতে হাঁপাতে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)যেন তুই কারো সাথে দারুন ফুটবল খেলে ক্লান্ত হয়েছিস। তোর শার্টের অবস্থাও কাহিল ছিল। আর তোর মুখের সেই উপচে পড়া হাসি দেখে আমাদের মনে শান্তি বইছিল। এরপর থেকে তোকে হাসিখুশি থাকতে দেখে তোর বাবা বলেই ফেলছিলো। যে তোর চেহারায় হাসি ফুটানোর দায়িত্ব নিয়ে ছিল। তাকেই তোর বাবা তোর বউ বানিয়ে নিয়ে আসবেন। সেই কথার সূত্র ধরে তোকে কথার জালে ফেললাম। তুইও বোকার মত নাজীবার সব কথা বলতি। এই এমন,ওমন আমি শুনে মাঝে মাঝে হিংসাও করতাম। কারণ আমার ছেলে তো কখনো এত প্রশংসা আমার করল না। অথচ ছোট ঐ মেয়েটা কেমনে আমার ছেলে-কে পাগল করে দিল। তার কয়েকদিন পর খেয়াল করলাম তুই আবারো গম্ভীরমুখী হয়ে গেলি। তাও তুই ঐ মেয়ের কাছে যাওয়া থামাস নাই। দু’তিন ধরে কেন তোর মন খারাপ থাকছে? চিন্তে করে জানার জন্যে তোর পিছু নিলাম। তোর পিছে গিয়ে দেখলাম তুই একজনের বাসায় ঢুকছিস। আমিও সময় নষ্ট না করে ঢুকে পড়ি। তখন এক মহিলাকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম। এত সুন্দর মহিলাটি। আর ঐ মহিলাটি কে জানিস? তোর শ্বাশুড়ি মেহজাবিন সিরাত। তোর শ্বশুর কে তখনও জানতাম না। তোর শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে খবরাখবর নিলেন। তোর আসা-যাওয়ায় তিনি মোটেও মন্দ নজরে দেখতেন না। তাই তো আমাকে দেখা মাত্র আপ্যয়ন করায় ব্যস্ত হয়ে গিয়ে ছিলেন। তখন তোকে খেয়াল করলাম। তুই অসুস্থ নাজীবার কাছে বসে তার কপালে জলপট্টি দিচ্ছিস। নাজীবার মায়াময় চেহারার দিকে তাকিয়ে তুই মৃদু কাঁদছিলি। তারপর থেকে তোর সাথে আমিও নাজীবার বাসায় যেতাম। হঠাৎ এমন এক সত্যের মুখোমুখি হলাম যা আমার শরীরকেও কাঁপিয়ে দিয়ে ছিল।”

মায়ের শেষের কথায় আফরাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।

“কি এমন সত্য আম্মু? যার জন্য আমার স্মৃতি মুছে গেল, নাজীবার সঙ্গে কাটানো খুনসুটি ভুলে গেলাম।”

“তোর রুমের মধ্যে বালিশ এর নিচে কিছু কালো পাথর রাখা ছিল। কে রেখেছিল আমরা কেউ জানতাম না? ঐ পাথরগুলো হুজুর কে দিয়ে জানার চেষ্টা করলাম যে, পাথর কিসের আর কেনো ব্যবহার করা হয়? তখন হুজুর জানায়, তুই এমন কারো সঙ্গে মিশছিলি যে তোর জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। এই কথা শুনে ভয়ে আমি তোর বাবা কে খোঁজ নিতে বললাম। কিন্তু কোনো সন্ধান পায়নি। তোকে নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। ছলেবলে চেষ্টা করতাম তুই যেন নাজীবার সঙ্গে না মিশছিস। তবে তোকে থামানো যেতো না। এই ভাবে হঠাৎ তোর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনলাম। তোর বাবা-রে অজানা এক লোক কল দিয়ে বলে ছিল তোর কথা। তোর বাবা আর আমি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছায়। তোকে সেই লোকটাই বোধহয় হাসপাতালে এনে ছিল। যে তোর খবর দিয়ে ছিল। কিন্তু তাকে আমরা কোথাও পাইনি।সেই লোক তোর সাথে হওয়া ঘটনা আমাদের-কে কলেই বলে ছিল। নাজীবার সঙ্গে থাকা বদ জ্বীনে তোর উপর আক্রমণ করে ছিল। কোনো সাধারণ আক্রমণও নয়, বরঞ্চ তোকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ছিল। যার কারণে তুই মাথায় গভীর আঘাত পাস। ঐ আঘাতে তোর চারমাসের স্মৃতি হারিয়ে যায়। নাজীবার স্মৃতি তুই ভুলে যাওয়ায় আমরা খুশি হয়ে ছিলাম। কারণ মেয়েটা তোর জীবনে ঐ দূঘর্টনা ঘটিয়ে ছিল। এমনটাই মনে হতো আমাদের। ঘৃণা-ক্ষোভ জম্মেছিল তার প্রতি। তোর বাবাও চিন্তা করল এই অভিশপ্ত শহরে আর থাকবেন না। দেশের বাহিরে ব্যবসা করার সুবিধার্থে তোর দাদি-সহ আমরা বিদেশে চলে যায়। তুই তখন স্বাভাবিক আমাদের সাথে মিশে থাকতি। অতঃপর তোর মনে নাজীবার সাথে হওয়া ঘটনাও আর জানা হলো না। আমরাও চাইনি তার কথা তোর মনে পড়ুক। একটা কথা আছে না, ভালোবাসা সত্য হলে মুখোমুখি হতে হবে। তোদের সাথেও তেমনটা হলো। তোর দাদীর কাছ থেকে শুনার পর মনে হলো, হয়ত আল্লাহই চেয়েছেন বলে, তোরা এতবছর পর একে অপরের অটুট বন্ধনে বেঁধে গেলি। যেখানে জ্বীনের প্রবেশ করাও কঠিনতম। তারপর তোর দাদী বিদেশের কালচারে অনভ্যস্ত হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। দাদীর সঙ্গে আসতে তুইও কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলি। কিন্তু তোর বাবা তখন মানেনি। তাই তোর দাদী একলা দেশে এসে তোর বাবার ব‌্যবসা আর জমিজমার দেখভাল করতেন। অবশ্য তোর বাবাও সব ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিল। তাই তোর দাদীও নিশ্চিন্তে থেকে ছিলেন। তোর দাদীর সঙ্গে আকবর ও ছিল। কিন্তু তুই যখন বিশ বছরে পা দিলি, তখন তুই অদ্ভুত ভাবে দেশের জন্য টান অনুভব করতি। বার বার আমাকে দেশে যাওয়ার কথা বলতি। যা আমি বিপদ আশংকা ভেবে অশুনা করতাম। কে জানতো ঐ ভাবনার রেশ ধরায় ছেলে আমার অভিমান করে চুরিচুপে দেশে চলে আসবে। যাই হোক আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন।”

আফরাজ তার স্মৃতি সম্বন্ধে জানতে পেরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। তৎক্ষণাৎ মায়ের গালে চুমু দিয়ে বিবিজান এর কাছে ছুটে যায়।

চলবে…….
(আর এক-দুই পর্ব পরেই পুরোপুরি রহস্য সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দেওয়া হবে। আজ আফরাজ এর স্মৃতিচারণ সম্পর্কে দিলাম। আল্লাহ হাফেজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here