#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব_৮
__আমাকে ডেকেছো দাদিমা?
__ভেতরে এসো দাদুভাই। আজকে তোমাদের বৌভাতের অনুষ্ঠানে সবাই আসবে।ও বাড়ি থেকে ও লোকজন আসবে। আমি চাইনা তাদের সামনে কোনো রকম উল্টাপাল্টা কিছু হোক। তুমি বুঝতে পারছো দাদুভাই?
__জ্বী দাদিমা।
__মির্জা যাই বলুক দাদুভাই আজকের দিনটা এই দাদিমার মুখের দিকে তাকিয়ে মানিয়ে নিও। সৈয়দ বাড়িতে কোনো অঘটন আমি আর চাইনা দাদুভাই।
__তোমার কথা মেনে চলবো দাদিমা। আমি নিজেকে সামলে রাখবো। আমার জন্য কারো মান সম্মান নষ্ট হবে না।আসছি আমি দাদিমা।
__দাদুভাই?
স্পন্দন না ফিরেই দাঁড়িয়ে পড়লো।ওর দাদিমা আবার বললেন,
__আমি জানি তোমার হৃদয়ে যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। কিন্তু তোমার দাদিমাও নিরুপায় ছিলো দাদুভাই।তার সামনে এই একটা রাস্তা ছিলো যেদিকে তোমাকে যেতে বাধ্য করেছি। আমি জানি আমার ব্যবহার এখন তোমার বা চন্দ্র দিভাই কারোই ভালো লাগবে না। কিন্তু এটা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না দাদুভাই।
__আমাকে এর থেকে বড় শাস্তি দিতে দাদিমা। আমি সব সহ্য করে নিতাম।ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে এই খেলায় কেনো আনলে?
__আমি নিরুপায় ছিলাম দাদুভাই।
__চন্দ্রের ভবিষ্যতে কি হবে ভেবে দেখেছো দাদিমা?সামনে ওর পুরো জীবনটাই পড়ে রয়েছে।শুরুই হয়নি ওর জীবনের কোনো কিছুই তার মধ্যে তুমি আমার সাথে ওকে জড়িয়ে ওর জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছো দাদিমা। চন্দ্র ছোট মানুষ।এই সিমাহীন যন্ত্রণা ও সয়ে বেড়াবে কিভাবে দাদিমা?
__এভাবে বলো না দাদুভাই। তুমি আছো।ওকে আগলে রাখবে তুমি সকল বিপদ থেকে।
__আমার জীবনের নিরাপত্তা কি দাদিমা?আমি কখন মা’রা যাবো তার ঠিক নেই।শত্রুরা হায়েনার মতো আমার পেছনে ওৎ পেতে আছে। চন্দ্র?ওর কি হবে দাদিমা? আমার কিছু হলে ঐ মেয়েটার কি হবে দাদিমা?
__কিছু হবেনা তোমার দাদুভাই। আমি থাকতে তোমার কিছুই হতে দিবে না তোমার দাদিমা।আর চন্দ্র দিভাই?ওর সব কিছু তুমি দেখবে।
__অনেক সহজেই কথা গুলো বলে দিলে দাদিমা। বাস্তবতা কতটা কঠিন তুমি ভাবতেও পারছো না।এই সৈয়দ বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে চন্দ্রের উপরে যে কোনো বিপদ আসতে পারে।বিয়ের পরদিন থেকে আমি চন্দ্রকে লুকাতে ছুটে বেড়াচ্ছি দাদিমা। আমার জীবনের কোনো মূল্যে নেই আমার কাছে। কিন্তু আমার জন্য ঐ নিষ্পাপ মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবোনা দাদিমা।
__চিন্তা করো না দাদুভাই।সব ঠিক হয়ে যাবে।যাও রেডি হয়ে নাও।
স্পন্দনের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন ধরেই কথা বলতে বলতে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো বাইরে। চন্দ্র কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে আর ওরা সবাই মিলে সাজিয়ে দিচ্ছে। চন্দ্র বললো,
__মিতু আপু?
__কি লাগবে চন্দ্র?
__বলছিলাম কি এই বড় বড় গয়না গুলোর ওজন আমার ওজন থেকে বেশি বলে মনে হচ্ছে না তোমার?
__তা যা বলেছিস চন্দ্র।
সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে চন্দ্রের কথায়। সিঁথি বলে উঠলো,
__চন্দ্র আপু? আমি তো ভয়ে আছি।এই ভেবে যে ভাইয়া যেভাবে তোমাকে হু’মকি ধমকি দিতে থাকে।কবে যেনো তাতেই উড়ে যাও।
এবার সবাই দ্বিগুণ জোরে হাসতে লাগলো। এমন সময় দরজায় নক পড়লো।খুলে দেখে স্পন্দন দুটো মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিরাকে ডেকে বললো,
__নিরা?
__জ্বী ভাইয়া।
__এনাদের ভেতরে নিয়ে যা। চন্দ্রকে মেকআপ করাতে এসেছেন।
__আচ্ছা ভাইয়া।
খুব সুন্দর করে সাজানো হলো চন্দ্রকে। এরপর ঐ মেয়ে দুটো সহ চন্দ্রকে বাইরে স্টেজে এনে বসানো হলো। চন্দ্রর খুব অস্বস্তি হচ্ছে।এতো ভারি শাড়ি গয়না পড়ে এভাবে বসে থাকতে। বারবার এপাশ ওপাশ করছে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে স্পন্দন কোথাও নেই।মনে মনে ভাবতে লাগলো চন্দ্র,
__বেডা গোমড়া মুখো পেঁচা কোথায় বসে আছে। আমাকে একা একা এভাবে পুতুলের মতো বসিয়ে রেখেছে সবাই। ইশ্ একটু নাচবো গাইবো তা না। আমার পোড়া কপাল একটা।
__চন্দ্র?
__এতক্ষণে এসেছো মিতু আপু?
__ভেতরে নিয়ে যেতে বলেছে তোকে মামানি।
__আচ্চা চলো।
__ডেকেছো বড় আম্মু?
চন্দ্র সামনে তাকিয়ে দেখে বড় আম্মু আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে।তা দেখে চন্দ্র বললো,
__কি হয়েছে বড় আম্মু? কাঁদছো কেনো তুমি?কেউ কিছু বলেছে?বলো আমাকে।
__কেউ কিছু বলেনি চন্দ্র। আমার ছোট্ট চন্দ্র মা’কে দেখে একদমই বউ বউ লাগছে।একটু নয়ন ভরে দেখি আগে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।
__দেখো ভালো করে দেখো বড় আম্মু।
__চন্দ্র মা একটা কথা বলার ছিলো।
__বলো না বড় আম্মু।
__ও বাড়ি থেকে যেই আসুক না কেনো কারো সাথে মন খারাপ করে কথা বলবি না চন্দ্র। কথা দে বড় আম্মুকে।আর আব্বু আম্মুর উপরে কোনো রাগ রাখিস না চন্দ্র।
__কারো উপরে আমার কোনো রাগ নেই বড় আম্মু। তুমি চিন্তা করো না আমি নিজে শেষ হয়ে গেলেও তোমাদের কাউকে আমার জন্য মাথা নুইয়ে থাকতে হবেনা। চন্দ্র এটুকু খুব ভালো করে করবে বড় আম্মু।
বড় আম্মু চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
__আমাকে ভুল বুঝিস না চন্দ্র। আমি চাইনা তুই কারো কাছে ছোট হয়ে থাক। আমার মতো জীবন যেনো তোর না হয় চন্দ্র।
__দিভাই?দেখো কে আসছে।
আব্বু আম্মুকে দেখে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে চন্দ্রর। কিন্তু ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিলো না চন্দ্র। কারণ সবার উপরে রেগে আছে চন্দ্র। শুধু কাছে গিয়ে সালাম করেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।দাদিমা বড় আম্মু ডাকলেও পেছনে ফিরে তাকালো না চন্দ্র। দ্রুত দৌড়ে বের হয়ে কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে শক্ত বন্ধনে কেউ ধরে নিলো চন্দ্রকে। চন্দ্র তাকিয়ে দেখে স্পন্দন ধরে আছে।স্পন্দন একটা ঘোরের দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে চন্দ্রের দিকে। এরপর বললো,
__চন্দ্র তোর এই যে হুটহাট করে আমার উপর এসে পড়া ঘটনা কিরে?
__আমি দেখতে পাইনি আপনাকে।
__তাতেই এভাবে বুকের উপর এসে পড়েছিস চন্দ্র।আরো যদি দেখতে পেতি তাহলে নিশ্চয়ই হৃদয় ফুটো করে ঢুকে যেতি চন্দ্র।
__ছিঃ কি সব বলেন আপনি? লজ্জা করে না এসব বলতে?
__অন্যের বউকে নয় বরং নিজের বিয়ে করা বউকেই বলছি।
চন্দ্র চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে স্পন্দনের দিকে।তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্য এই তিনদিনে অন্তত হাজার বার বলেছে।আর সেই মানুষটি তাকে বউ বলছে যে কিনা চন্দ্রকে বিয়ের পর থেকে বলে আসছে যে চন্দ্র তোকে আমি বউ বলে মানি না।স্পন্দন চন্দ্রের এসব ভাবনা চিন্তার মধ্যে ওর হাতটা ধরে স্টেজে নিয়ে গেলো। হঠাৎ করেই মিউজিক বেজে উঠলো।স্পন্দন চন্দ্রকে নিয়ে নাচছে।আর চন্দ্র এখনো চোখ কপালে উঠিয়ে রেখেছে। আজকে যেনো সবকিছুই সিমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে স্পন্দনের।যেটা চন্দ্র হজম করতে পারছেনা।স্পন্দন চন্দ্রের কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট ছোট করে বললো,
__এখনো অনেক কিছুই দেখা বাকি তোর চন্দ্র। শুধু শুধু এসব ভেবে ভেবে মাথাটা নষ্ট না করে চুপচাপ ইনজয় করে নে চন্দ্র।
সারাদিনের ধকল শেষ হয়েছে।ও বাড়ির সবাইকে সালাম দিলেও কারো সাথে মন খুলে কথা বলেনি চন্দ্র। বিশেষ করে ওর আব্বু আম্মুর সাথে। অনেক অনুনয় বিনয় করেও চন্দ্রকে রাজি করানো যায়নি ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য।নিরাশ হয়ে সবাই কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেছে। এরপর ও চন্দ্র নিরুত্তাপ হয়ে আছে। বেলকনিতে গিয়ে সারাদিনে স্পন্দনের করা ব্যবহার মনে করতে করতেই চন্দ্র ঘুমিয়ে গেছে। এদিকে সারা বাড়িতে চন্দ্র কে খুঁজে না পেয়ে স্পন্দনের চোখে মুখে চিন্তর ছাপ ভর করেছে। মাথায় হাত দিয়ে রুমে বসে যেখানে যেখানে ফোন দেওয়া যায় সবখানেই দিলো। কিন্তু কোনো হদিস নেই চন্দ্রের। চন্দ্রকে সিকিউরিটি দিতে সারাদিন দুজন মহিলা সিকিউরিটি ওর সাথে রেখেছে।এমনকি পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখাতে চন্দ্রর সাথে পর্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে থেকেছে সারাদিন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। চন্দ্র এখন নিখোঁজ। ভাবতেই বুকটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে স্পন্দনের। মেয়েটার সত্যিই বড় কোনো বিপদ হলো না তো।ভাবতে ভাবতেই স্পন্দন উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। এমন সময় বেলকনি থেকে চুড়ির শব্দ আসতে লাগলো স্পন্দনের কানে। দৌড়ে গিয়ে দেখে এলোমেলো করে শুয়ে ঘুমিয়ে আছ চন্দ্র।স্পন্দন কোনো কিছুর পরোয়া না করেই গিয়ে চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরলো । চন্দ্রের কপালে কান্নার জল গড়িয়ে পড়তেই উঠলো চন্দ্র।দেখে স্পন্দন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। চন্দ্র কি বলবে বুঝতে না পেরে স্পন্দনের পিঠে হাত রেখে বললো,
__শুনছেন?কি হয়েছে আপনার? কাঁদছেন কেনো? শরীর খারাপ লাগছে আপনার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?
স্পন্দন বন্ধন আরেকটু শক্ত করে বললো,
__কোথায় গেছিলি চন্দ্র আমাকে ফেলে? আমি খুঁজে পাইনি বলে কতজনকে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছি জানিস?একটু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল আমার হার্টটা যেনো বন্ধ হয়ে গেছিলো।কেনো গেছিলি চন্দ্র? আমাকে ফেলে কেনো গেছিলি তুই চন্দ্র।
#চলবে,,,,,,,
গল্প দিতে চেষ্টা করছি যথাসময়েই। আপনাদের লেখিকার খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষা শুরু হবে।যদি একটু সময় এলোমেলো হয়ে যায় মন খারাপ করবেন না।যথা সময়ে দেওয়ার খুব চেষ্টা করবো।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।