#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব___২৪
__চন্দ্র? কোথায় ছিলে তুমি?
__এই তো এখানেই ছিলাম স্পন্দন।কখন উঠেছেন?
__একটু আগেই।মা বললো তুমি নাকি নিজের দিকে একটুও খেয়াল রাখছো না শুধু আমাকে নিয়ে ভাবছো।
__এসব কথা বাদ দেন স্পন্দন। আমি অসুস্থ থাকলে আপনি আমার জন্য এর থেকে বেশি করেন। আমি তো সেটুকু করতে পারি না। যেটুকু আমার পক্ষে করা সম্ভব সেটুকুই করছি স্পন্দন।এসব নিয়ে আর ভাববেন না। আগে আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন।পরে দেখা যাবে সব।
__তোমার ডাক্তার দেখানো বেশি জরুরী ছিলো চন্দ্র। আমার এক্সিডেন্টের জন্য তোমাকে নিয়ে যেতেই পারলাম না। তোমার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো?কতটা দূর্বল লাগছে তোমাকে।
__আমি ঠিক আছি স্পন্দন।উঠে বসুন একটু। আমি খাইয়ে দেই।
স্পন্দন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রের দিকে। চন্দ্রের ছেলেমানুষী আর চোখে পড়ছে না ওর। কেমন একটা দায়িত্ব দায়িত্ব বুদ্ধি এসেছে বলে মনে হচ্ছে স্পন্দনের।স্পন্দনকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে চন্দ্র বললো,
__কি দেখছেন স্পন্দন?
__আমার চন্দ্রকে দেখছি। অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে এই কয়েক দিনে।
__আপনার কথা ও যেমন।হা করুন। খেয়ে নিন।
চন্দ্র স্পন্দনকে খাইয়ে দিয়ে সব গুছিয়ে রাখতে গেলেই স্পন্দন ব্যান্ডেজ করা হাতটা দিয়ে ওর হাতটা ধরে বললো,
__তুমি খাবে না?
__আমি একটু পরে খাবো স্পন্দন। আপনি এবার চোখ বন্ধ করে ভালো ছেলেদের মতো ঘুমাবেন।
__তুমি কিন্তু আমার পাশে থাকবে চন্দ্র।
__থাকবো। আপনি ঘুমান।
স্পন্দনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চন্দ্র ভাবতে লাগলো,
__আমার যে অনেক কাজ আছে স্পন্দন। আপনার উপরে কার এতো রাগ সেটা আমাকে বের করতে হবে। আমাকে যে জানতে হবে ঐ মেয়েটি কে? তোমার এক্সিডেন্টে তার কোনো হাত আছে কিনা?আবরার চৌধুরী কে শাস্তি দিতে হবে।বড় আব্বুর সাথে দেখা করতে হবে। এখন এসব কিছুই আপনাকে বলতে পারবো না। আপনি সুস্থ হলেই সব বলবো স্পন্দন।
স্পন্দন ঘুমিয়ে গেলেই চন্দ্র উঠে পড়লো।বাইরে গাড়ি নিয়ে মিশাল অপেক্ষা করছে।ওর সাথে দেখা করতে হবে গোপনে।সব ইনফরমেশন দিতে হবে ওকে। চন্দ্রকে দেখেই সবাই খেতে বললো। চন্দ্র বললো,
__আমি খেয়েছি আম্মু। আমি একটু মেডিসিন আনতে যাচ্ছি।আধ ঘন্টা লাগবে। আব্বু তুমি বাইরে থাকো।বড় আম্মু তুমি স্পন্দনের কাছে থাকবে।আর মনে রেখো নার্স এলেও আমাকে না জানিয়ে ঢুকতে দিবে না।
সবাইকে বলেই বেরিয়ে গেলো চন্দ্র।দূর থেকে আরেকটি গাড়িতে বসে কেউ দেখছে চন্দ্র গাড়িতে উঠছে।সে কাউকে ফোন করে বললো,
__ম্যাম মাঠ পুরো ফাঁকা।মিসেস্ মির্জা হাসপাতাল থেকে মাত্র বেরিয়ে গেছে।
__অপেক্ষা করো আমি আসছি।
__ওকে ম্যাম।
চন্দ্র মিশালকে বললো,
__ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে বলুন কি ইনফরমেশন পেয়েছেন। আমি নিশ্চিত এই মুহূর্তে আমি হাসপাতালে নেই খবরটা ওদের কাছে চলে গেছে। আপনি পুলিশকে এলার্ট করে দেন।
মিশাল পুলিশকে ফোন করে বলে চন্দ্রকে বললো,
__ম্যাম ঐ দিন যে ট্রাকটা স্যারকে এট্যাক করেছিলো সেখানে আবরার চৌধুরীর ডান হাত মিজান ছিলো। আমি পুলিশকে জানিয়েছি।সিসি টিভি ফুটেজ সহ।
__আবরার চৌধুরীর সাথে কি জেলে কেউ দেখা করতে গেছিলো মিশাল ভাইয়া?
__গিয়েছিলো।তবে পরিবারের বা দলের কেউই নয়।ওর উকিল গেছিলেন।
__সে কি মহিলা?
__হ্যাঁ ম্যাম। কিন্তু আপনি কি করে,,,,,
__আমার ধারণা ভুল নয় মিশাল ভাইয়া। আমি যেটা ভাবছি সেটাই যদি হয় তাহলে ঐ মেয়ে উকিল সেজে দেখা করতে গেছে।আসলে সে আবরার চৌধুরীর বোন হৃদি।
__কিন্তু ম্যাম হৃদি নামের মেয়েটি তো দুই বছর আগে সু’ইসাইড করেছে।স্যারকে তো এই জন্যই জেলে যেতে হয়েছিল।
__মিশাল ভাইয়া অনেক সময় আমরা চোখে যেটা দেখি সেটাও ভুল হতে পারে।আর এখানে তো শুধু শোনা গেছিলো হৃদি আর নেই। আমাদের কারো কাছে কোনো প্রকার প্রমাণ ও নেই এই বিষয়ে।
__না তা নেই ম্যাম। কিন্তু উনি তো স্যারকে ভালোবাসতেন।
__যে স্পন্দনকে পাওয়ার জন্য বাবা ভাইয়ের ষড়যন্ত্রের সাথে হাত মেলায় সে এখন ভাইকে বাঁচাতে স্পন্দনকে শেষ করে দিতে দুইবার ভাববে না ভাইয়া।
__আপনি এখানে বসে বসে এতো কিছু কিভাবে জানলেন না মানে,,,,
__আমি শুধু পুরো বিষয়টি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত চিন্তা করে দেখলাম ভাইয়া।আর আপনার দেওয়া ইনফরমেশনের সাথে মিলিয়ে নিলাম।আর এখন পুরো ব্যপারটা আপনার সামনে ভাইয়া।
__মানতেই হবে ম্যাম।স্যারের মাথাও এতো দ্রুত চলে না যতটা আপনার চলে।
__ভাইয়া এখন আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে জেলে কে যাচ্ছে না যাচ্ছে তার হিসাব রাখা।খতিয়ে দেখা সেগুলো।আর দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে হাসপাতালে সর্বক্ষণিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।কে আসছে কে বের হচ্ছে কার আচরণ সন্দেহজনক এসব দেখবেন। আমি এখন আসি ভাইয়া। ওদিকে যদি কেউ এসে থাকে তাহলে আজকে তাকে ধরা পড়তেই হবে।
চন্দ্র দ্রুত হাসপাতালের পেছনের দিক থেকে ভেতরে চলে গেলো।লিফট পাঁচ তলায় দেখে সিঁড়ি বেয়ে ছুটতে লাগলো।মন বলছে কেউ এসেছে।
এদিকে পুলিশের সাদা পোশাকের লোকের জন্য নার্স ও ভেতরে যেতে পারছেনা।এর মধ্যেই একজন মহিলা ডাক্তার এসে বললো,
__পেসেন্টের কোনো ক্ষতি হলে সে দায় কে নিবে?তার এখন চেকাপ করার সময়।মেডিসিন দেওয়ার সময়।আপনারা কারা যে এসব কাজে বাঁধা দিচ্ছেন।
__ওনারা পেসেন্টের বাড়ির লোক মিস্ হৃদি চৌধুরী।
চন্দ্র পেছন থেকে কথাটা বলে উঠলো। মহিলা ডাক্তার থমকে গেলেন হয়তো নাম শুনে নয়তো চন্দ্রকে দেখে। তবুও বললেন,
__আমি এই পেসেন্টের ডিউটি ডাক্তার মিস্টার সাহেলের এসিস্ট্যান্ট মিস্ আয়ানা। কিন্তু আপনি হৃদি চৌধুরী বললেন কেনো?
__সিরিয়াসলি মিস্ হৃদি চৌধুরী? আপনি আয়ানা?
__হ্ হ্যাঁ তাই তো বললাম।
__আপনি ঘামছেন কেনো ডাক্তার? আপনার স্যার ডাক্তার সাহেল কোথায়?
__উনি পার্সোনাল কাজে বাইরে গেছেন। কিন্তু আপনি আমাকে জেরা করে বড্ড ভুল করছেন মিসেস্ স্পন্দন।
__আসুন ডাক্তার সাহেল। আপনি তো নাকি পার্সোনাল কাজে বাইরে গেছেন।
__মিসেস্ স্পন্দন আমি আমার কেবিনেই ছিলাম।আর কাউকে আমি স্পন্দনকে দেখতে পারমিশন দেই নি।
চন্দ্র হাত তালি দিতে দিতে বললো,
__আসল পরিচয়ে আসুন মিস্ হৃদি চৌধুরী।তা আপনি নিজেই নিজের পরিচয় দিবেন না আমি দিবো?
মাথা নিচু করে রাগে ফুঁসছে হৃদি। এবার হু’ঙ্কার ছেড়ে বললো,
__করেছি বেশ করেছি।ঐ স্পন্দন আমাকে ভালোবাসার নামে আমার সাথে খেলেছে।বাবার ভয়ে শেষে আমাকে বিয়ে পর্যন্ত করেনি। এরপর ওর বাবা আমার বাবাকে মিথ্যা বলে ডেকে নিয়ে খু’ন করেছে। আমার ভাইকে জেলে পাঠিয়েছে।বেশ করেছি করেছে।
চন্দ্র পেছনে তাকিয়ে দেখে বড় আম্মু স্পন্দনকে একটা হুইল চেয়ারে বসিয়ে বাইরে নিয়ে এসেছে। আসলেই স্পন্দনের মনের ভুল ধারণা গুলো এবার ভাঙার সময় এসেছে।যাকে পাগলের মতো ভালোবেসে নিজের জীবন কে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিলো তার আসল রূপ এবার নিজের চোখেই দেখে নিক। চন্দ্র বললো,
__আমার নির্দোষ স্পন্দনকে জেলে থাকতে হয়েছে হৃদি, দিনের পর দিন মত খেয়ে নিজেকে পাগল করে রেখেছে শুধু আপনার জন্য। আপনাকে ভালোবাসে বলে।আর আপনি?
__আমি ঘৃণা করি।এই সৈয়দ বংশের সবাইকেই ঘৃণা করি। ভালোবাসা তো দূরের কথা।
স্পন্দন বললো,
__আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার উপযুক্ত প্রতিদান দিয়েছেন আপনি মিস্ হৃদি চৌধুরী। বিশ্বাস করুন আপনার প্রতি আমার ঘৃণা নয় বরং করুনা হচ্ছে ভীষণ।
চন্দ্র মিশালকে ফোন দিয়ে বললো,
__ওদের ধরতে পেরেছেন ভাইয়া?
__জ্বী ম্যাম।
__এনাকে এখন নিয়ে যেতে পারেন স্যার।নিচে এর দলের সবাইকে ধরে রেখেছে মিশাল ভাইয়া। আপনি থানায় পৌঁছানোর আগেই সমস্ত প্রমাণ আপনার কাছে পৌঁছে যাবে স্যার।
সবাইকে ধরে নিয়ে চলে গেলো পুলিশ। চন্দ্র ডাক্তার সাহেলের কাছে এসে বললো,
__আপনার জন্য আজকে এতো বড় বিপদ থেকে আমার পরিবার রক্ষা পেলো ডাক্তার বাবু। আপনি সময় মতো আমাকে ফোন মেসেজ না দিলে আমি পৌঁছাতে পারতাম না। আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ ডাক্তার বাবু।
স্পন্দনের আবার টেস্ট করানো শেষে বাসায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলো।তবে স্পন্দনের শরীরের ব্যাপারে শুধু চন্দ্র ই জানে।স্পন্দন এখন ভালো আছে। সুস্থ আছে। শুধু চন্দ্র ইদানিং একটু বেশি দূর্বল হয়ে গেছে।
#চলবে,,,,,,,,
গল্পটি শেষের পথে। বুঝতেই পারছেন। আশাকরি শেষটায় ও সাথে থাকবেন।হ্যাপি রিডিং।