#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব___২২
চন্দ্রের মনটা হঠাৎ করেই কেমন আনচান করছে।বড় আম্মুর কাছে গিয়ে বললো,
__তোমার ফোন থেকে স্পন্দনকে একটা ফোন দাও তো বড় আম্মু।
__এই নে ফোন। তুই দে।
চন্দ্র পরপর দুবার ফোন করলো । কিন্তু কেউ ধরলো না। তৃতীয় বারের মতো ফোন করতেই একজন অপরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো। চন্দ্র বললো,
__স্পন্দন?
__আমি স্পন্দন না।ফোনটা ওনার পকেটে ছিলো যার এক্সিডেন্ট হয়েছে কিছু সময় আগে।
চন্দ্র চেষ্টা করেও কিছু বলতে পারছেনা। অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর।কোনো রকম ঢোক গিলে বললো,
__স্পন্দন কোথায়?
__হাসপাতালেই আছে। আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। আপনি ওনার ফ্যামিলিকে একটু খবরটা দিয়ে দিবেন।
চন্দ্র ফোন রেখে হাঁটু গেড়ে বসে কেঁদে উঠলো।বড় আম্মু দৌড়ে এসে বললো,
__কি হয়েছে চন্দ্র?স্পন্দন কোথায়? কাঁদছিস কেনো? চন্দ্র?
__তোমার ছেলে হাসপাতালে বড় আম্মু। একজন বললো ও নাকি এক্সিডেন্ট করেছে।বড় আম্মু তোমার ছেলের কাছে নিয়ে চলো আমাকে এখনি। আমি ওকে দেখবো বড় আম্মু।
স্পন্দনের মা ও কাঁদছে। চন্দ্র পাগলের মতো কান্নাকাটি করছে।তাই উনি ওকে সামলাতে সামলাতেই বললো,
__নিয়ে যাবো চন্দ্র মা। আগে কোন হাসপাতালে আছে বল। আমি বললাম তো নিয়ে যাবো।
হাসপাতালের রিসেপশনে চন্দ্র আর স্পন্দনের খোঁজ করছে।তারা বললেন হ্যাঁ এসেছে একটা এক্সিডেন্ট এর রুগি। চতুর্থ তলায় ইমার্জেন্সি তে ভর্তি আছে।তার অবস্থা খুব ভালো নয়।শুনেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো দুজনের। তবুও ছুটতে ছুটতে চতুর্থ তলায় পৌঁছে দেখে অনেক গুলো অপরিচিত লোক এক জায়গায় বসে এক্সিডেন্ট নিয়ে কিছু আলোচনা করছে। চন্দ্র ছুটে গেলো তাদের দিকে।বললো,
__যে এক্সিডেন্ট করেছে সে কোথায়? আমি ফোন করেছিলাম।
একজন এগিয়ে এসে ফোনটা চন্দ্রকে দিয়ে বললো,
__আইসিউতে আছে ম্যাম। খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে। অনেক কষ্ট করে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় এখানে এনেছিলাম। অনেক ব্লাড বেরিয়ে গেছে।সেন্স ছিলো না।
চন্দ্র এবার ধপ করে বসে পড়লো।আর চিৎকার চেঁচামেচি করছেনা ও। কেমন যেনো পাথরের মতো বসে আছে।কারো দিকে তাকিয়ে দেখছে পর্যন্ত না।স্পন্দনের মা এগিয়ে গিয়ে একবার গ্লাস দিয়ে স্পন্দনকে দেখলো।কান্নায় বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। চন্দ্রের পাশে বসে চন্দ্রর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
__তোর উপর অনেক দায়িত্ব চন্দ্র। আমার স্পন্দনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে তোকে। আমি মা।আর মা হয়ে তোকে বলছি একটুও ভেঙে পড়বি না।তোর শুধু একটাই কথা মনে রাখতে হবে স্পন্দনের কিছু হবে না।ওকে যেভাবে হোক ভালো করে তুলতে হবে। আমাকে কথা দে চন্দ্র। আমার ছেলেটাকে তুই ভালো রাখবি। কথা দে চন্দ্র।
চন্দ্র ওর বড় আম্মুর অশ্রুশিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলে বললো,
__তোমাকে কথা দিলাম বড় আম্মু। আমি থাকতে স্পন্দনের কিছু হবে না। তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম বড় আম্মু।
বড় আম্মু চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,
__আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে থাকবে চন্দ্র।
আজ দু’দিন হয়ে গেছে।স্পন্দনকে এখনো আইসিইউতে রাখা হয়েছে।আর বারো ঘন্টা টাইম দিয়েছে ডাক্তার।এর মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে কোমায় চলে যেতে পারে স্পন্দন। চন্দ্রের কাছে এসে মিশাল বললো,
__ম্যাম?
__বলো মিশাল।
__স্যারের গাড়ির ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে।
চন্দ্র বিস্মিত হয়ে বললো,
__খোঁজ নাও মিশাল কাজটা কে করেছে।
__জ্বী ম্যাম। আমি আমার লোকজন লাগিয়ে দিয়েছি। একবার যদি শুধু তার নাম জানতে পারি তবে আমি যে কি করবো তার সাথে তা ভাবতেও পারছিনা।
__খুব সাবধানে মিশাল।আর এখানে কড়া নিরাপত্তা রাখবে। তোমার স্যারকে বাঁচাতেই হবে কথাটা মাথায় রেখো।
__জ্বী ম্যাম। আপনি চিন্তা করবেন না আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।
__তুমি এখন এসো মিশাল।
মিশাল চলে যেতেই চন্দ্র মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে,
__আমার জন্য। শুধুমাত্র আমার জন্যেই আজ এতো বড় বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্পন্দনকে। আজকে যদি আমার অসুস্থতার খবরে ও বিচলিত হয়ে বাইরে না যেতো তাহলে এতো বড় বিপদ হতো না।
__চন্দ্র?
__হ্যাঁ বড় আম্মু বলো।
__দুই দিন ধরে এভাবে আছিস চন্দ্র।বাড়ির সবাই তো আছে। তুই বরং বাড়িতে গিয়ে একটু রেস্ট নে মা।
__আমার স্পন্দন আমার নাম ধরে ডাকবে বড় আম্মু।আর যদি তাই না ডাকে তাহলে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে বড় আম্মু।
__স্পন্দনের কিছুই হবেনা মা। আমি বললাম তো।ভয় পাস না চন্দ্র।
__আমিও জানি স্পন্দনের কিছুই হবে না। তবুও ওকে আজ আমাকে ডাকতেই হবে বড় আম্মু। না হলে আমি কোথাও যাবো না এখান থেকে।
স্পন্দনের মা জানে একবার যখন চন্দ্র যাবেনা বলেছে তখন কেউই ওকে নিতে পারবে না। চন্দ্র এক দৃষ্টিতে আইসিইউ রুমের গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে আছে স্পন্দনের দিকে। চন্দ্রের বাবা চন্দ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
__চিন্তা করিস না চন্দ্র।স্পন্দন ঠিক হয়ে যাবে।
__ঠিক বলেছো আব্বু। আমার স্পন্দনের কিছুই হবে না আব্বু। আমার স্পন্দন আমাকে রেখে কোথাও যেতে পারে না আব্বু।
__হ্যাঁ মা।তোকে ছেড়ে তো ছেলেটা থাকতেই পারে না।দেখিস না আমাদের বাড়িতে পর্যন্ত তোকে একা যেতে দেয়নি।
__আব্বু? আমার স্পন্দনকে কেউ মে’রে ফেলতে চেয়েছিল।
__কি বলছিস তুই চন্দ্র?
__হ্যাঁ আব্বু।এক্সিডেন্টটা ইচ্ছা কৃত ভাবেই করা হয়েছে। আমি যদি একবার জানতে পারি যে কেনো আর কি কারণে এমন কে করেছে।তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না আব্বু।
__চিন্তা করিস না মা।সব ঠিক হয়ে যাবে।
স্পন্দনের একটু একটু জ্ঞান ফিরতে শুরু করেছে।তা দেখে নার্স ছুটে ডাক্তারকে ডেকে আনলো।ডাক্তার চেকাপ করে বললেন,
__পেসেন্টের বাড়ির লোকজনকে খবর দেন সিস্টার।
নার্স বাইরে এসে খবর দিতেই চন্দ্র ভেতরে গেলো। চন্দ্রের সাথে ওর আব্বু ও এলো।ডাক্তার বললেন,
__আপনার পেসেন্ট চিকিৎসার রেসপন্স করছে। অবস্থা ডেভেলপড করছে।একটু পরেই তাকে বেডে শিফট করে দেওয়া হবে। ভাগ্য ভালো আপনাদের। এমন রুগি স্টে খুব কম করে।
চন্দ্র চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বললো,
__আমি কি স্পন্দনকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?
__হ্যাঁ অবশ্যই পারেন।
__ধন্যবাদ ডাক্তার। আব্বু তুমি বাইরে গিয়ে সবাইকে বলো স্পন্দন ভালো আছে। কেউ যেনো টেনশন না করে।
__আচ্ছা চন্দ্র মা।
সবাই বাইরে যাওয়ার পর স্পন্দনের হাতটা ধরে বললো,
__কখন উঠবেন স্পন্দন?কখন আমাকে চন্দ্র বলে ডাকবেন?আমি যে তোমার অপেক্ষায় আছি আপনি বুঝেন না কেনো স্পন্দন?
__ম্যাম?উনাকে বেডে শিফট করবো। আপনি বাইরে আসুন।
নার্সের কথায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো চন্দ্র।বাইরে আসতেই বড় আম্মু এসে বললো,
__স্পন্দন ঠিক আছে তো চন্দ্র?
__জ্বী বড় আম্মু।স্পন্দন ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না।
__স্পন্দনের অফিস থেকে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে।
চন্দ্র কৌতুহল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়ে দেখে একটা অপরিচিত মেয়ে দাঁড়িয়ে। চন্দ্র চিনতে না পেরে বললো,
__জ্বী বলুন কি জন্য এসেছেন?
__স্যার কেমন আছেন ম্যাম?
__আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। আপনি কে?
__আমাকে চিনতে পারবেন না ম্যাম। আপনি আপনার স্বামীকে খুব ভালো বাসেন?
__হুম ভালোবাসি তাকে। ভীষণ অল্প হলেও তাকেই আমি ভালোবাসি।
__আপনার স্বামী?
__সেও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
__সত্যি তো?
__আপনি কে?আর আপনাকে আমি সত্যি মিথ্যে কইফিয়ত দিতে যাবো কেনো?
__সেও ঠিক বলেছেন।তবে আমি যতদূর জানি আপনার স্বামী আপনাকে ভালো বাসে না।
__মুখটা সামলে রাখুন মিস্। আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বামী সম্পর্কে কথা বলছেন। ভবিষ্যতে এমন কিছু বললে আমি আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না।
__এতো ক্ষমতা?
__আমি মনে করি ভালোবাসার ক্ষমতা অনেক বেশি।যার কাছে আপনার মতো এমন কিছু লোকের ঠুনকো আঘাত কিছুই নয়।
__তবে দেখা হচ্ছে ম্যাম!
চন্দ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটার দিকে। কেমন অদ্ভুত লাগছিল দেখতে মেয়েটাকে।
#চলবে,,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং।