অন্তর দহন পর্ব ২০

0
404

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___২০

স্পন্দনের সামনে এসে সৈয়দ আশরাফ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।স্পন্দন হেসে বললো,

__ছোট আব্বু চন্দ্রকে এ বাড়িতে আমি নিজে নিয়ে আসবো। আপনি চিন্তা করবেন না।তবে আমি কিন্তু চন্দ্রকে শুধু বেড়াতে পাঠাবো। আজীবন থাকার জন্য নয়।

সৈয়দ আশরাফ কেঁদে ফেললেন।স্পন্দন এগিয়ে এসে বললো,

__কি হয়েছে ছোট আব্বু?

__আমাকে ক্ষমা করে দিও স্পন্দন। আমি জানতাম না আমার ভাই তোমার সাথে এতোকিছু করেছে।

__এভাবে বলতে নেই বড় আব্বু। আমি জানি তাতে ওনার কোনো দোষ নেই।হয়তো টাকা আর মান সম্মান ক্ষুন্ন হবে ভেবেই এসব করেছেন।

__কিন্তু তোমার উপর আমিও কম মানসিক চাপ দেইনি স্পন্দন। আমি বারবার তোমার দূর্বল জায়গায় আঘাত করেছি। চন্দ্রকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি।

__আপনি আঘাত করেছেন আপনার জায়গা থেকে। আপনি চন্দ্রের বাবা।মেয়ের জন্য চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।

__আমার তোমার প্রতি বিশ্বাস রাখার দরকার ছিলো স্পন্দন।

__হবার তো অনেক কিছুই ছিলো ছোট আব্বু। আবার অনেক কিছুই হবার ছিলো না।তাই এসব নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।

__মনে কিছু রেখো না স্পন্দন।

__আমি কিছুই মনে রাখিনি ছোট আব্বু।

সৈয়দ আশরাফ জড়িয়ে ধরলেন স্পন্দনকে। বললেন,

__আমার চন্দ্র যেমন আমার মেয়ে। তেমন তুমি ও আমার ছেলে স্পন্দন।বাবা মা যেমন সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়। তেমন সন্তানদের ও বাবা মায়ের করা ভুলকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নিতে হয় স্পন্দন।

__জ্বী ছোট আব্বু। আপনার কথা আমি রাখবো।

স্পন্দন ও বাড়ি থেকে এসে থেকেই দেখছে চন্দ্র মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। কথা বলতে গিয়ে ও কোনো লাভ হয়নি। চন্দ্র মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।উপায় না দেখে স্পন্দন মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

__চন্দ্র এমন ক্ষেপে আছে কেনো মা?

__সবাই মিলে ছুটিতে গ্রামে যেতে চাইছে।

__তো?

__তাই তোর বউ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

__কেনো?

__এই শরীর নিয়ে সে গ্রামে যেতে চায়।

__অসম্ভব মা। এখন ওর কোথাও যাওয়া চলবেনা। কয়েক দিন ধরে পড়াশোনা মাথায় উঠিয়ে বসে আছে চন্দ্র।

__আমাকে এসব না বলে নিজের বউকে গিয়ে বল। আমি না করেছি দেখে আমার সাথেও কথা বলছেনা।

__আচ্ছা দেখছি আমি কি করা যায়।

স্পন্দন রুমে এসে চন্দ্রের পাশে বসে বললো,

__কে খবরটা দিলো তোমাকে চন্দ্র?চুপ করে থাকবে না চন্দ্র। উত্তর দিতে বলেছি আমি।

__রোহান ভাইয়া বড় আম্মুর ফোনে ফোন দিয়েছিলো।বলেছে এবারের ছুটিটা সবাই মিলে গ্রামে গিয়ে থাকবে। পিকনিক করবে। মজা করবে সবাই মিলে ওখানে গিয়ে।

__তোমার যে শরীর খারাপ চন্দ্র। সেদিকে কি খেয়াল আছে তোমার?

চন্দ্র চুপ করে আছে দেখে স্পন্দন আবার বললো,

__ওদের সাথে যেতে ইচ্ছে করছে?

চন্দ্র উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।

__আচ্ছা তাহলে তুমি যাবে ওদের সাথে। কিন্তু আমি যাবো না। আমার অফিসের কাজে আমাকে ছুটোছুটি করতে হবে। তোমার জন্য তো কয়েক দিন ঠিকমতো কাজ করতেই পারিনি।

__আপনি না গেলে নাই। আমি যাবো।

__আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?

__সে আর এমন কি বড় ব্যাপার?

__আচ্ছা বেশ যেও তবে।তা কবে যাবে সবাই?

__কাল সকালে।

__আচ্ছা আমি রেহানাকে বলে দিবো ফোন করে। কিন্তু তুমি ঠিক করে বলছো তো তুমি থাকতে পারবে?

__পারবো।

__কান্নাকাটি করবে না তো?বলবে না তো স্পন্দন তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।এখন ই চলে আসো। তখন কিন্তু তুমি কেঁদে কেঁদে সাগর বানিয়ে ফেললেও আমি তোমার কাছে আসবো না।

__আচ্ছা বলবো না।

স্পন্দন উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।এই পাগলীকে বুঝিয়ে লাভ নেই।এ যে ঘাড়ত্যাড়া তাতে যেতে চেয়েছে মানে যাবেই।স্পন্দনের বলা কোনো কথাই যে এখন ওর কানে ঢুকছে না তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো স্পন্দন।

পরদিন সকাল বেলা,,,,,

সবাই হৈ হুল্লোড় করতে করতে গাড়িতে উঠলো। চন্দ্রের দিকে বারবার অসহায় হয়ে তাকাচ্ছে স্পন্দন। চন্দ্রকে একা যেতে দিতে মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। চন্দ্রের জেদের কাছে হার মেনে স্পন্দনকে যেতে দিতে হলো চন্দ্রকে।স্পন্দনকে রেখে গাড়ি যত দূরে যাচ্ছে চন্দ্রের নিঃশ্বাস তত ভারী হয়ে আসছে।ওর কেবল মনে হচ্ছে স্পন্দন অনেক দূরে চলে গেছে। চাইলেও আর ছুঁতে পারবে না এখন।সবার সাথে থেকেও নিজেকে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে চন্দ্রর।

__কি হয়েছে চন্দ্র?এমন ছটফট করছিস কেনো?

__কিছু হয়নি মিতু আপু। গাড়িতে এতো দূরে যাবো তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছে।

__স্পন্দন ভাইয়ার জন্য মন কেমন করছে?

চন্দ্র মুখ লুকিয়ে নিলো মিতুর বুকে।তা দেখে মিতু বললো,

__পাগলী মেয়ে একটা।জানিস যখন ওকে ছেড়ে থাকতে পারবি না তখন আসলি কনো?

__তখন তো ভেবেছিলাম তোমরা সবাই আমাকে রেখে কতো মজা করবে। আমি সবকিছু মিস্ করবো।তাই মেনে নিতে পারছিলাম না।উনিও তো আমার কথা ভাবেন নি। আমাকে একা পাঠিয়ে দিয়েছে।

__বাব্বাহ চন্দ্র এতো অভিমান?আগে তো জানতাম না আমার চন্দ্র এতো অভিমান করতে পারে।

__খেপাবে না আপু। আমার মন কেমন করছে।

__এর মানে কি জানিস চন্দ্র?

__কি?

__এটাই হলো ভালোবাসা।এই যে তোর এখন মনে চাইছে স্পন্দন আমার সামনে থাকলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতাম শক্ত করে।কি ঠিক না?

চন্দ্র লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিলো।বললো,

__জিজুর কাছে থেকে যে জবরদস্ত প্রেমের পিএইচডি করেছো এই কদিনে তা বেশ বুঝতে পারছি আপু।

মিতু চন্দ্রের কথায় কিছু না বলে বললো,

__রেহান? আমাদের আর পৌঁছাতে কত সময় লাগবে?

__আধ ঘন্টা পরে গ্রামের কাঁচা রাস্তায় ঢুকবো আপু।

__তাহলে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে গাড়িটা একটু থামা। এভাবে বসে থাকতে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে সবার।

পাঁচ মিনিট পরে রেহান গাড়ি থামিয়ে সবাইকে চা নাস্তা করে নিতে বললো।সবাই হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে চা নাস্তা খেতে আরম্ভ করলো। চন্দ্র হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে দৃষ্টি থামিয়ে দিলো।সেদিকে দৃষ্টি অনুসরণ করে মিতু বললো,

__ওভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি দেখছিস চন্দ্র?

__তোমরা একটু বসো। আমি এখনি আসছি।

মিতু পেছনে থেকে ডাকলেও চন্দ্র না থেমে ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলো। এদিকে ওদিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো। এরপর কাঙ্ক্ষিত মানুষের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ভেতরে এসে বসতেই মিতু আবার বললো,

__তোর কি হয়েছে রে চন্দ্র? এমন অদ্ভুত বিহ্যাভ করছিস কেনো?মনে হচ্ছে তুই শুধু এখানেই আছিস আর মন পড়ে আছে অন্য কোথাও।

__তেমন কিছু নয় আপু।মনে হলো স্পন্দনকে দেখলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে।তাই,,,,

__বুঝেছি।তোর মাথায় বসে স্পন্দন নেত্তো করছে।তাই এমন পাগলামী করছিস।

এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠল একসাথে।দিপ্ত বললো,

__যেমন অন্তু ভাবী আমাদের রেহান ভাইয়ের মাথায় উঠে নেত্তো করে। ঠিক তেমনি আজকাল আমাদের
চন্দ্র আপুর মাথায়ও স্পন্দন ভাইয়া নেত্তো করছে।

__দিপ্ত ভালো হবেনা বলছি কিন্তু। ছোট মানুষ হয়ে বড়দের সামনে এসব বলিস লজ্জা করে না?

সিঁথি বললো,

__কে ছোট?দিপ্ত?তোমরা কোন জগতে আছো হে মানব মানবী গনস্?কি জানো ঐ দিপ্ত সম্পর্কে?

__দেখ সিঁথি ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।

__কি করবি তুই আমার দিপ্ত?তোমরা জানো গত সপ্তাহে একটা লাভ লেটার পেয়েছি দিপ্তর। আমার বান্ধবী কে দিয়েছিল।

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে সিঁথির দিকে।রেহান বললো,

__ভাই দিপ্ত আমি আজ পর্যন্ত অন্তুকে ভালোবাসি বলতেই পারিনি।আর তুই চিঠি পর্যন্ত পৌঁছে গেছিস?

__ও বানিয়ে বানিয়ে বলছে ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি এমন করিনি।

সিঁথি এবার নিজের ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে দিপ্তর দিকে তাকিয়ে পড়া শুরু করলো,

__ওগো আমার স্বপ্নচারিনী প্রিয়া,
তোমাকে কতো ভালোবাসি জানে আমার হিয়া
যদি তুমি থাকো রাজি এ জীবন রাখবো বাজী।
তুমি যদি আসো কাছে, আমি বলে দিবো ভালোবাসি
তোমার বিরহে অন্তর কাঁদে, কাঁদে আমার চোখ।
তুমি কবে বলবে আমায়,ভালোবাসি শুধু তোমায়

ইতি,
তোমার প্রেমের পাগল দিপ্ত সোনা

চিঠি পড়ার পর সিঁথি আবার সেটা ভাঁজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে হা হয়ে আছে সকলের মুখ।আর দিপ্তর অবস্থা নাজেহাল।এতোক্ষণে সবাই আকাশ থেকে নেমে এসেছে।দিপ্তর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু নাচাতেই দিপ্ত এক দৌড়ে রেস্টুরেন্টের থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। মনে মনে শ খানেক গা’লি দিতে লাগলো প্রিয়াকে।মনে মনে ভাবলো,

__এতো সুন্দর করে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে কত কষ্ট করে রাত জেগে জেগে একটা চিঠি দিয়েছে।আর ছেমরি সেটা আবার সিঁথি কেই দিয়ে দিলো। আমার মান সম্মান তো গেছে এবার।এরা যে বাহিনী। আমাকে তো ছাড়বেই না বরং উঠতে বসতে কথা শোনাবে। মজা করবে। আমার বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি।

#চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here