#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব___১৮
চন্দ্র কলেজ গেইট এর কাছে পৌঁছানোর আগেই একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো। চন্দ্রকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে গাড়িতে উঠাতেই পেছন থেকে দেখে নিলো স্পন্দনের লোক। কিন্তু কিছু করার আগেই গাড়িটা সীমানার বাইরে চলে গেছে।মিশাল সাথে সাথে ফোন করলো স্পন্দনকে।বললো,
__স্যার এদিকে বিপদ হয়ে গেছে।
__কি হয়েছে মিশাল?
__ম্যামকে তুলে নিয়ে গেছে।গাড়ির নম্বর তুলে রেখেছি ফোনে। আমি পেছনেই আছি।
__মুখ দেখতে পেয়েছো?
__এতো দ্রুত কাজ করেছে যে আমার মাথা কাজ করছিল না।সরি স্যার। আমি থাকতে এমনটা হবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।
__ঠিকানা মেসেজ করে দাও। আমি আসছি।
__জ্বী স্যার।
মিশালের মেসেজ পেয়ে লোকেশন অন করে স্পন্দন গাড়ি নিয়ে ছুটলো।
চন্দ্রকে অজ্ঞান করে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে।একটু পরেই ভারী বুটের ধপধপ শব্দ শুনে লোকগুলো রুমের দরজা খুলে দিলো। লোকটি এসে থমথমে গলায় বললো,
__জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করো।
চন্দ্রের চোখেমুখে পানি দিতেই চন্দ্র চোখ পিটপিট করে তাকালো। মুখের সামনে একটা ভয়ংকর চেহারার মানুষকে ঝুঁকে থাকতে দেখে চন্দ্র ভয়ে আঁতকে উঠলো। লোকটি গমগমে কন্ঠে বললো,
__হ্যালো মিসেস্ স্পন্দন। আপনার মতো সুন্দরীকে এভাবে বেঁধে রাখার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মিসেস্ স্পন্দন।
__ক্ কে আপনি?
লোকটি হা হা করে হাসতে লাগলো।বললো,
__আপনি তো আবার চেনেন না আমাকে মিসেস স্পন্দন। আমি আবরার চৌধুরী।হৃদির একমাত্র ভাই। মাহতাব চৌধুরীর ছেলে।
__আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?
__আরে আপনাদের বিয়েতে তো আমাকে দাওয়াত দেয়নি স্পন্দন মির্জা।তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ের উপহার দিতে এখানে নিয়ে আসা।
চন্দ্র হাত পায়ের বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করছে।তা দেখে আবরার চৌধুরী বললো,
__আহ্ মিসেস স্পন্দন মির্জা । এভাবে ছটফট করলে যে আপনার কষ্ট হবে। আর আপনার কষ্ট দেখে যে আমার বুকটা ফেটে যাবে।
__কেনো এনেছেন এখানে?
__আবরার চৌধুরীর সাথে কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না মিসেস স্পন্দন।সো আওয়াজ নিচে।
__আপনি জানেন না আমাকে এখানে তুলে এনে নিজের কত বড় বিপদ ডেকে এনেছেন।
__হু’মকি?তাও আবরার চৌধুরীকে? সাহসের তারিফ করতে হবে আপনার মিসেস স্পন্দন। আপনার স্বামীর কুকীর্তি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে না?
__স্পন্দন কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না।এসব বলে আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই আবরার চৌধুরী।
__আরে খুব ভালোবাসেন বুঝি স্বামীকে?
__হ্যাঁ খুব ভালোবাসি। কিন্তু সেই কইফিয়েত আমি আপনার মত লোকের কাছে দিবো না।
রাগে আবরার চৌধুরীর মুখ লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে চন্দ্রকে গিলে ফেলবে এখনি। চন্দ্র এখনো বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করতে লাগলো।
__আপনি কার হয়ে সাফাই গাইছেন?যে আমার বোনের খু’নী? কতটুকু চেনেন আপনি স্পন্দন মির্জাকে?
__আমার স্পন্দন কখনো কাউকে খু’ন করতে পারে না। আপনি মিথ্যা বলছেন আবরার চৌধুরী।
__ওহ্ রিয়েলি মিসেস স্পন্দন? আপনি জানেন আপনার স্পন্দন আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ বোনটাকে খু’ন করেছে?
__আমি বিশ্বাস করি না।স্পন্দন এমন কাজ কখনোই করতে পারে না।
আবরার চৌধুরী তেড়ে এসে চন্দ্রর মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলো।বললো,
__আমার একটা মাত্র বোন ছিলো হৃদি।তাকে নির্মমভাবে ঠকিয়েছে আপনার স্বামী। আমি আপনার অনেক বকবক সহ্য করেছি এতো সময়। কিন্তু আর নয়।আপনাকে মে’রে এখানেই পুঁ’তে রেখে দেবো মিসেস স্পন্দন।
চন্দ্র চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা।মুখটা শক্ত করে চেপে রেখেছে আবরার চৌধুরী।ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো চন্দ্র।তা দেখে আবরার চৌধুরী আরেকটা কুৎসিত হাসি হেসে বললো,
__আরো আরো ছটফট করেন মিসেস স্পন্দন। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে আপনাকে এভাবে ছটফট করতে দেখে তা বলে বোঝাতে পারবো না মিসেস স্পন্দন। ঠিক এভাবেই ছটফট করতো আমার ছোট্ট বোনটা। আমার বারণ করা সত্তেও ঐ স্পন্দনের সাথে কথা বলতো।তার সাথে দেখা করতো। আমি বন্ধ করেছিলাম বলে আমাকে সহ্য করতে পারতো না।অথচ যে বোন আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো সেই বোন ঐ স্পন্দনের জন্য আমার সাথে এতো কিছু করেছে। কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট।যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি তার দ্বিগুণ কষ্ট আমি স্পনদনকে কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিবো।এটা আমার নিজের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতি।
চন্দ্রের মুখটা ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো আবরার চৌধুরী। চন্দ্রের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।এতো জোরে চেপে ধরেছিলো আবরার চৌধুরী যনো মুখের হার ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে।ব্যথা যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে চন্দ্রের। তবুও সাহস করে বলে উঠলো,
__আপনি কি চান আবরার চৌধুরী?
__আমি চাই স্পন্দনের ধ্বংস। আমি চাই সৈয়দ মির্জা আমার পায়ে পড়ে ছেলের প্রাণ ভিক্ষার জন্য কান্নাকাটি করুক।ছটফট করতে থাকুক ।আর বুঝুক প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেলে তাদের আপনজনের ঠিক কতটা কষ্ট হয়।
__আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে স্পন্দন আপনার বোনকে ভালোবাসতো।তার কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ স্পন্দন কোনোদিন করবে না। এগুলো আপনার মনের ভুল।
__মনের ভুল?কোনটা মনের ভুল? আমার বাবাকে যখন নির্মম ভাবে অপমান অপদস্থ করেছিলো ঐ সৈয়দ মির্জা সেটা ?সেটা মনে রাখা আমার মনের ভুল?বলুন?
__বড় আব্বু কেনো এমন করেছিলেন তা আমি জানি না। কিন্তু তার জন্য আপনি স্পন্দনকে কেনো কষ্ট দিবেন?
__কেনো দেবো না? আমি আজ অনাথ।। আমার হাসিখুশি পরিবারের সবাই আমাকে একা ফেলে চলে গেছে ঐ সৈয়দ মির্জা আর তার ছেলের জন্য। আমি জীবনেও তাদের ক্ষমা করবো না। আমার প্রতিশোধ চাই। আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।
__কি নিয়ে প্রতিশোধ নিবি আবরার চৌধুরী?
__স্পন্দন তুই? তুই এখানে আসলি কি করে?
__কি ভেবেছিলি আবরার? আমার চন্দ্রকে তুই তুলে নিয়ে আসবি আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?
__এসেই যখন পড়েছিস তখন নিজের চোখেই দেখে নে তোর ভালোবাসার চন্দ্রকে কিভাবে একটু একটু করে যন্ত্রণা দিতে দিতে শেষ করে দেই।
__আবরার?মুখে লাগাম টেনে কথা বল। না হলে স্পন্দন তোর এমন অবস্থা করবে যা তুই ভাবতেও পারবি না।
আবরার চৌধুরী এবার চন্দ্রের গলায় একটা চা’কু চেপে ধরে বললো,
__আর একপা এগোলেই তোর বউকে এখানেই শেষ করে দিবো স্পন্দন।
স্পন্দন মুচকি মুচকি হাসছে আর এগোতে এগোতে বললো,
__আমার চন্দ্রের গায়ে যদি একটা আঁচড় পড়ে তবে ভুলে যাবো তুই হৃদির ভাই। সেদিন হৃদির জন্য তুই বেঁচে গেছিস। আজকে আর তা পারবি না আবরার।
__তোকে কিন্তু এগোতে মানা করেছি স্পন্দন।পিছিয়ে যা। পিছিয়ে যা বলছি।
__চন্দ্রকে ছেড়ে দে আবরার।
__না।
__আমি শেষ বারের মতো বলছি আবরার চন্দ্রকে ছেড়ে দে। বাঁচতে চাস তো চন্দ্রকে ছেড়ে দে বলছি।
আবরার কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশের গুলি এসে লাগলো আবরারের হাতে।হাত থেকে ছু’ড়িও পড়ে গেলো। চন্দ্র ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। পুলিশের লোক এসে আবরার চৌধুরীর সবাইকে ধরে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো।স্পন্দন ছুটে এসে চন্দ্রর হাত পায়ের বাঁধন খুলে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।মিশাল এগিয়ে এসে বললো,
__স্যার ওদেরকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়েছে।ম্যামকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলেছি।আর কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই। আপনি ম্যামকে নিয়ে আসুন।
স্পন্দন চন্দ্রের হাত ধরে বসে আছে হাসপাতালে।বাড়ির সবাই এসেছে খবর পেয়ে।স্পন্দন এ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি কারো সাথে।একটু পরেই চন্দ্রের জ্ঞান ফিরলো।স্পন্দনকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।স্পন্দন ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
__এই তো আমি চন্দ্র।আর কোনো ভয় নেই। তোমার স্পন্দন এসে গেছে তো। এবার শান্ত হও চন্দ্র।
__ঐ ঐ লোকটা,,,,
__কিছু হবে না চন্দ্র। আমি আছি তো। একদমই ঠিক আছি।একটু শান্ত হয়ে থাকো প্লিজ। তোমার শরীর খারাপ করেছে। উত্তেজিত হলে আরো খারাপ করবে।
ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলেন।আপাতত এতেই শান্ত থাকবে চন্দ্র। অতিরিক্ত শকে এমন হয়েছে।স্পন্দন বাইরে এসে বললো,
__চন্দ্র ঠিক আছে। ঘুমাচ্ছে এখন।
__ঠিক কি হয়েছিল ওর সাথে স্পন্দন?
__ছোট আব্বু আসলে চন্দ্রকে আবরার চৌধুরী তুলে নিয়ে যায় আপনার অফিস থেকে বের হবার পর।
__আমি জানতাম তোমাদের এই শত্রুতার জন্যে আমার মেয়েটাকেই কষ্ট পেতে হবে।তাইতো চাইছি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতে।এখনো বলবে তোমার কাছে ও ভালো থাকবে? নিরাপদ থাকবে?
স্পন্দন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রের বাবার দিকে এরপর বললো,
__চন্দ্র যদি কোথাও থাকে তাহলে স্পন্দনের সাথেই থাকবে।স্পন্দন বেঁচে থাকতে চন্দ্রের কিছুই হতে দেবে না।
__হতে দেবে না?পেরেছো আটকাতে?
__আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করুন ছোট আব্বু।সে চাইলে না আজকে চন্দ্রের এতো বড় বিপদ হতো না আমার চরিত্রের উপর দাগ পড়তো।তাই এসব বাদ দিয়ে এটা শুনে রাখুন স্পন্দনকে ভালো রাখতে চন্দ্রকে চাই।আর চন্দ্রকে ভালোবেসে আগলে রাখবে যে সেটাও এই স্পন্দন।তাই ভবিষ্যতে এসব কথা আমার সামনে দ্বিতীয় বার বলবেন না।
#চলবে,,,,,,,
লেখায় ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। গল্প পড়ে ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করবেন।