অন্তর দহন পর্ব ১৬

0
442

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___১৬

বেশ চিন্তিত হয়ে কাউকে ফোন করলেন সৈয়দ মির্জা। বললেন,

__চন্দ্র তোমাকে দেখে ফেলেছে?

__কোথায় না তো।

__সত্যি করে বলো।ও আজকে আমার চোখে চোখ রেখে কথা শুনিয়েছে।শাসিয়েছে ও।

__কিন্তু আমাকে তো দেখার কথা নয় স্যার।

__দশ মিনিটের মধ্যে আমার অফিসে এসে দেখা করো। আমি আসছি।

__ওকে স্যার।

চন্দ্র সারা বিকেল মাথা ধরেছে বলে রুমেই ছিলো।বড় আম্মু ডাকলেও নিচে যায়নি।স্পন্দন এখনো ফিরেনি। সন্ধ্যা হয়ে আসলে চন্দ্র ছাদে গিয়ে পায়চারি করতে লাগলো।একটু পরে ছাদের কর্নিশে দাঁড়িয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,

__আমি করেছি তোমায় আমার স্বত্তাসঙ্গিনী
রেখেছি হৃদয় মাঝে অতি সঙ্গোপনে।
তোমাকে ছুঁয়ে দিয়ে শিখেছি ভালোবাসার অর্থ
নিজেকে রাঙিয়েছি সাত রং এর রংধনুর রং এ।
আজীবন হৃদয়ে রাখিয়া করে রেখো আমায় তুমি
তোমার ভালোবাসার বন্দনী।
আমি তোমার রংহীন জীবনে চটে যাওয়া সবটুকু রং হয়ে
নতুন করে রাঙিয়ে দিবো তোমার জীবন খানি।

হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে চন্দ্রকে। চন্দ্র জানে এটা স্পন্দন।স্পন্দনের প্রতিটি স্পর্শ তার কাছে স্পষ্ট।তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগিয়ে দেয় প্রতিবার নতুন করে।তাই চন্দ্র নড়াচড়া না করে চুপ করে আছে।স্পন্দন চন্দ্রের কাঁধে বিস্তৃত চুলের মধ্যে মুখ গুঁজে দিয়ে আড়ষ্ট গলায় বললো,

__এতোক্ষণে মনে হচ্ছে বুকটা শান্ত হয়ে এলো।

__শরীর খারাপ লাগছে স্পন্দন?

__উহু মনটা ছটফট করছিলো।

__কেনো?কি হয়েছে স্পন্দন?

__কিচ্ছু হয়নি চন্দ্র। তুই থাকতে স্পন্দনের কিছু হতেই পারে না যে। শুধু চন্দ্রকে এতো সময় বুকে নিতে না পেরে বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।

__আমি তো সব সময়ই আপনার সাথে থাকি স্পন্দন। আমার কথা যখন মনে পড়বে তখনই বুকে হাত দিয়ে দেখবেন আমাকে অনুভব করতে পারবেন।

__তা থাকিস চন্দ্র।তবে তোকে ছাড়া যে একটা মুহূর্ত ও থাকতে পারে না স্পন্দন। চন্দ্র তোর চুলের ঘ্রাণে যে মাদকতা অনুভব হয় তা আমার সমস্ত ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় এক নিমিষেই।

__থাক হয়েছে।এতো বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে হবে না। নিচে চলেন। কফি এনে দেই । ভালো লাগবে আপনার।

__উহু।চুমু খেলে ভালো লাগবে চন্দ্র।

__দিনদিন আপনার মুখে কিছুই আটকাচ্ছে না স্পন্দন। কিভাবে মিনিটে মিনিটে চন্দ্রকে লজ্জায় ফেলবেন সেটাই ভাবতে থাকেন।

চন্দ্র যেই না ছাদ থেকে নামতে ঘুরে দাঁড়ালো তখনই স্পন্দন বললো,

__মাথাটা ভীষণ ধরেছে চন্দ্র।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দে। আমি ঘুমাবো।

চন্দ্র বুঝতে পারলো সারাদিন অফিসের এতো ঝামেলা শেষ করে আবার এতো টেনশন মাথায় নিয়ে স্পন্দনের এই অবস্থা হয়েছে।তাই আর বেশি কিছু না বলে স্পন্দনকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।আধ ঘন্টা হতে চললো স্পন্দন ঘুমাচ্ছে। চন্দ্র পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় স্পন্দনের ফোনে একটা মেসেজ আসাতে ভাইব্রেশন করে উঠলো। চন্দ্র সেদিকে তাকিয়ে কি মনে করে ফোনটা ধরলো। কিন্তু খুলতে পারলো না লক করা।তাই উপর দিয়ে টেনে দেখতে লাগলো। শুধু একটা লাইন পড়তে পারলো।যেখানে লেখা ছিলো___আপনার সন্দেহ সঠিক স্যার। এরপর আমি আপনার কথা মতো,,,,,,,

চন্দ্রের বুকটা কেঁপে উঠলো। তাহলে কি স্পন্দনের উপর কোনো বিপদ আসছে।আর ভাবতে পারলো না চন্দ্র।ফোনটা জায়গায় রেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। নিঃশব্দে ঘরের বাইরে চলে গেলো।মাথায় একটাই কথা ঘুরছে কি নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল স্পন্দনের।আর এরপরে ঠিক কি লেখা ছিলো!

__বড় আম্মু?

__কিছু বলবি চন্দ্র?মাথা ব্যথা কমেছে তোর?

__আমি ঠিক আছি বড় আম্মু। তোমার ফোনটা একটু দিবে?

__রুমেই আছে। গিয়ে নিয়ে নে।

চন্দ্র রুমেই ঢুকতে যাবে মনে হলো কেউ গলাটা চেপে চেপে ফোনে কথা বলছে। চন্দ্র আর রুমে না ঢুকে বাইরে থেকে কান পেতে শুনতে লাগলো।

__আবরার চৌধুরী তুমি এতো দিন ধরে যা করেছো করেছো। এবার আর তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে দিলাম।

উল্টো দিকের কি কথা এলো সেটা চন্দ্র বুঝতে পারলো না। আবার এদিকের চাপা হু’ঙ্কার শুনতে পেলো চন্দ্র।

__তুমি তোমার লিমিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকো। আমার বা আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করতে এলে তোমাকে ছেড়ে দিবো না আগের বারের মতো।সে বার স্পন্দনের জন্য বেঁচে গেছো। এবার আর বাঁচতে পারবেনা।

__বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো চন্দ্র?

বড় আম্মুর কথায় থতমত খেয়ে গেলো চন্দ্র।আমতা আমতা করে বললো,

__এখন আর ফোন লাগবেনা বড় আম্মু। আমার খুব খিদে পেয়েছে।খেতে দাও।

__আচ্ছা যা স্পন্দনকে ডেকে নিয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।

চন্দ্র ভেবেছিলো ওর আব্বু কে ফোন করবে। কিন্তু বড় আব্বুর কথার পর সেটা আর করতে আগ্রহী হলো না।তাই খিদে পেয়েছে বলে বাহানা দেখিয়ে চলে এসেছে। কিন্তু এই আবরার চৌধুরী আবার কে? এদের সাথে বড় আব্বু বা স্পন্দনের ই বা কি শত্রুতা।এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে এসে দেখে স্পন্দন নেই। বেলকনিতে এগিয়ে যেতেই শুধু কানে এলো,

__আমি তোমাকে পরে ফোন করছি। ওদের ঠিকানা লাগিয়ে দাও।

পেছনে ঘুরে চন্দ্রকে দেখেই এক গাল হেসে স্পন্দন বললো,

__দেখেছিস চন্দ্র। তুই মাথায় হাত দিতেই আমার মাথা ব্যথা উবে গেছে।

__আপনি কিছু লুকাচ্ছেন স্পন্দন?

স্পন্দন একটু থেমে গেলো।পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো,

__হ্যাঁ লুকাচ্ছি।

__কি লুকাচ্ছেন স্পন্দন?

চন্দ্রকে কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে কপালে কপাল লাগিয়ে বললো,

__এই যে চন্দ্র আমাকে এতটা ভালোবাসে আর আমি একটুখানি ভালোবাসি।

__বড় আম্মু খেতে ডাকছে স্পন্দন।

__আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।

রাত প্রায় বারোটা। দুজনে এখনো বেলকনিতে বসে আছে। খেয়ে আসার পর থেকেই এখানে বসে আছে।স্পন্দন হঠাৎ বললো,

__কাল কলেজ যেতে হবে না চন্দ্র।

__কেনো?

__কাল দুপুরের পর তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।

__কোথায় স্পন্দন?

__সেটা তো সারপ্রাইজ মাই ওয়াইফি।

চন্দ্র মুখ ফুলানোর ভঙ্গিতে বললো,

__ঘুম পাচ্ছে স্পন্দন।

__আচ্ছা চল।

পরদিন চন্দ্র আর কলেজে যায়নি। সারাদিন বড় আম্মুর সাথে অনেক বকবক করে সময় কাটিয়েছে। দুপুরের পর বড় আম্মু চন্দ্রকে নিজের ঘরে ডাকলেন। বললেন,

__আজকে আমি আমার চন্দ্রকে সাজিয়ে দিবো। একদমই স্পন্দনের মনের মতো করে।

চন্দ্র কোনো আপত্তি করলো না।বড় আম্মু আলমারি খুলে একটা সুন্দর নীল রঙের শাড়ি বের করলেন। চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন,

__ছোটবেলা থেকেই স্পন্দনের খুব পছন্দ ছিল এই শাড়িটা। খুব আবদার করে বলতো, মা এই শাড়িটা পড়বে আজকে। আমি চাই আজকে ঠিক সেই শাড়িটাই আমার চন্দ্রকে পড়িয়ে দিতে।স্পন্দনের পছন্দের শাড়িতে তার বউকে দেখতে কেমন লাগে সেটাও পরীক্ষা করবো আজকে।

চন্দ্র লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিলো।মুখে কিছু বললো না।বড় আম্মু খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।কপালে টিপ চোখে কাজল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। বাইরে থেকে গাড়ির হর্ন বাজতে লাগলো। চন্দ্রের বুঝতে বাকি নেই যে স্পন্দন এসেছে।বড় আম্মুকে সালাম দিয়ে চন্দ্র বাইরে গেলো।চুল গুলো ছাড়া। হাঁটার সময় তা দুলতে লাগলো। চন্দ্র কানের পাশে গুঁজে নিতে নিতে গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।স্পন্দন যেনো থমকে গেছে।ওর হার্টবিট দ্রুত চলছে।গলায় কথা আটকে আসছে চন্দ্রকে শাড়িতে দেখে। এভাবে স্পন্দনকে তাকাতে দেখে চন্দ্র আরও লজ্জা পেয়ে গেছে। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসতেই স্পন্দন বললো,

__আজকে তো তোর ভয়ং’কর প্লান আছে মনে হচ্ছে চন্দ্র।

চন্দ্র মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,

__আমি আবার কি করলাম স্পন্দন?

__এতো কিছু করার পরেও বলছিস আমি কি করলাম। চন্দ্র তুই কিন্তু আজকে আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছিস। এরপর আমি যদি উল্টাপাল্টা কিছু করি তখন কিন্তু আমার কোনও দোষ নেই।

__কি করবেন আপনি?

__আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না চন্দ্র। আমার মনে হচ্ছে আমার নিজের মধ্যে আমি আজকে আর নেই রে। তুই কিন্তু শাড়ি পরে এসে ভয়ানক অপরাধ করেছিস চন্দ্র।

__স্পন্দন আপনি কিন্তু আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন। কেঁদে ফেলবো কিন্তু।

স্পন্দন মুচকি হেসে আর কিছু বললো না। বুঝতেই পারছে চন্দ্র এমনিতেই লজ্জা পেয়ে আছে।তার উপর ভয় দেখালে সত্যি কেঁদে ফেলবে।তাই চুপচাপ করে গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে ছুটলো।

#চলবে,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়‌। পরীক্ষা চলছে তার মধ্যে ও গল্প দিতে চেষ্টা করছি।যদি ছোট বা এলোমেলো মনে হয় তবে খুব খুব দুঃখিত লেখিকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here