#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_(৭)
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।
সায়ারা গভির ঘুমে আচ্ছন্ন আশে পাশে কি ঘটে যাচ্ছে তার খবর নাই। সায়ারার ঘুম অনেক গভির সে একবার ঘুমালে আর দিন দুনিয়ার খবর থাকে না। সায়ান আয়ানা কে মেসেজ করে জিজ্ঞেস করে সায়ারা ঘুমিয়েছে কি না, আয়ানা রিপ্লাই তে বলে সায়ারা অনেক আগেই ঘুমিয়েছে৷ তখন সায়ান আয়ানা কে বলে তাদের রুমে চলে যেতে সায়ান এখানে এসে থাকবে।
– ভাই এটা ঠিক হবে এতোরাতে তুমি আসলে মেয়েটা যদি খারাপ কিছু ভাবে।
– সে টা পড়ে ভাবা যাবে তুই আমার রুমে আইসা ঘুমিয়ে পড় আমি পড়ে তোকে ডেকে দিবো।
আয়ানা ভাইয়ের কথা শুনে আর দেড়ি করলো না খাট থেকে নেমে সোজা বেরিয়ে গেলো। সায়ান সায়ারার রুমে চলে আসে, সায়ারা ঘুমন্ত চেহারা দেখে সে সব সময় এভাবে কাটাতে পারবে। সায়ারা চুল উষ্কখুষ্ক দেখেই বোঝা যায় মেয়েটা তেল লাগায় না। সায়ান ড্রেসিংটেবিল থেকে তেল চিরুনি নিয়ে আসলো। খাটে গিয়ে সাইডে বসলো একজন ঘুমন্ত মানুষের মাথায় তেল দেওয়া অনেক কঠিন। সায়ান অনেক চেষ্টার পড়ে সায়ারার মাথায় তেল লাগিয়ে বেনি করে দিতে সফল হয়। সায়ারা এক হাত ধরে বসে আছে সায়ান।
– জানো পিচ্চি আমি তোমাকে কতোটা মিস করেছি, আমি জানতাম ফুপি তোমাকে খুহ ভালোবাসে। ফুপি তোমাকে খুব আদরে লালন পালন করবে আমি আর আম্মু আব্বু এটাই ভেবেছিলাম। যখন তোমাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছি তখন ফুপি অনেক রিয়েক্ট করে সে তোমকে দিবে না। এরপর ফোন নাম্বার পালটায় পুরান বাড়ি থেকেও চলে আসে। আমি অনেক খোঁজ করি কিন্তু বারবার ব্যার্থ হই। আমার ধারণা এর বাহিরে ছিলো যে আমার পিচ্চি পরী এতোটা কষ্টে ছিলো। কথার মাঝখানে দেখে ৩ টা বেজে গেছে। সায়ান আর কিছু না বলে সায়ারার কপালে একটা চুমু দিয়ে দ্রুত উঠে যায়৷
সকালে…
মামিমা রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছিলেন আর আমি ডাইনিংয়ের চেয়ারে বসে ছিলাম। তখন কলিং বেল বাজলো কলি গিয়ে দরজা খুলতেই একজন মেয়ে ঘরে ঢুকে আসলো। আমাকে উপর থেকে নিচ অব্দি একবার দেখে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো। আমি তো মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর দেখতে উনি মা শা আল্লাহ, যেমন সুন্দর দেখতে তেমন ই গায়ের রং। জিন্স আর টপ্স পড়ে আসছে দেখে তাকে আমার তার দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে কি সুন্দর। রান্নাঘরে তার আর মামিমা এর কথা শুনা যাচ্ছে।
– কেমন আছো খালামনি তোমরা বাংলাদেশ এসে আমাকে ভুলেই গেছো। আই মিসড ইউ সো মাচ।
– আরে না রে সোনা এখানে আসার পরে কাজের চাপ সব গুছানো এসব ঝামেলায় না আমার কিছু মনে নাই। সরি ডিয়ার।
– ইটস ও কে খালামনি কি করছো?
– নাস্তা বানাচ্ছি সায়ারা’র সাথে গিয়ে বস আয়ারা আর সায়ান আসলে একসাথে নাস্তা করিস।
– ওই মেয়েটা কে খালামনি?
– ও হলো আমার ননদের মেয়ে বুঝলি।
– ও
আপুটা এসে আমার ওপর সাইডের চেয়ারে বসলো এমন মুড নিয়ে কথা তাকালো তার আশেপাশে যে আমি আছি তা তিনি বুঝতে পারছেন না। আয়ানা আপু এসেবামার এক সাইডে বসলো মামা এসে বসলো অই আপুটার পাশে। ওনার নাম আমি এখোনো জানিনা কি তাই এভাবে বলছি। হঠাৎ সায়ান ভাইয়ের উপর চোখ পড়লো হায় আজকে সায়ান ভাই কে মারাত্তক সুন্দর লাগতেছে। কালো গেঞ্জি কালো ট্রাউজার পড়া, সায়ান ভাই কে দেখে আপুটা মুচকি হেসে বললো।
– সায়ান কাম সিট হেয়ার।
উনার পাশের সিট দেখিয়ে সায়ান ভাই কে বসতে বললেন। সায়ান ভাই করলো তার উলটো আমার পাশে বসে পড়লেন। আপুটা এটা দেখে মুখ কালো করে ফেললে। হয়তো উনি অপমানিত বোধ করছে।
– নো থ্যাংকস লামিসা, আমি আমার চেয়ারে বসতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি বেশি।
– ইটস ওকে তা আমার কল ধরার ও দেখি আজকাল সময় পাচ্ছো না।
– আমাকে প্রয়োজন ব্যাতিত কল করলে আমি কেনো ধরবো আমি আজাইরা বসে থাকিনা। আমার প্রফেশনে এতো সময় নাই আজাইরা প্যাচাল পারার। আমার অনেক পেসেন্ট আছে তাদের চিকিৎসা করার দরকার হয়। নেক্সট টাইম উইদাউট এনি এমারজেন্সি কল করে আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।
– তুমি আমার সাথে এতোটা রুডলি কেনো কথা বলছো সায়ান। তুমি কি কিছু বুঝতে পারোনা।
– এখানে এসেছো তোমার খালার বাড়ি চুপ চাপ নাস্ত করো সামনে আমার আব্বু বসে আছে বড়দের সামনে কি বলা উচিত আর কি বলা উচিত নয় এইসব জিনিস খেয়াল রেখে কথা বলবা তুমি।
– খালামনি তোমার বাড়িতে আসার পড় থেকে তোমার ছেলে আমাকে এভাবে ইন্সাল্ট করছে তুমি কিছু বলবানা।
– আমি কি বলবো তোদের ব্যাপার তোরা দেখে বাচ্চাদের মধ্যে বড়দের হহস্তক্ষেপ উচিৎ না।
আমি এতোক্ষন এসব দেখে যাচ্ছি একবার সায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে উনার কথা শুনি তো আরেকবার লামিসা আপুর দিকে তাকিয়ে উনার কথা শুনি। আসোলে জিনিসটা আমার অনেক ভাল্লাগসে আমি উপভোগ করছি। বলেনা বাঙ্গালিরা ফ্রিতে বিনোদন আর ঝগড়া দেখতে ভালো বাসে৷ আপুটা রাগ নিয়ে নাস্তা খাচ্ছে। এসব দেখার চক্করে খাবারের কথা ভুলে গেছি। আমি রুটি ছিড়ে কিভাবে খাবো এটা বুঝতে পারছি না। আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে মামা বললো।
– সায়ু আম্মু তুমি খাচ্ছোনা কেনো চুপ চাপ বসে আছো যে।
– আসোলে মামু আমার হাত।
– কি হইছে তোমার হাতে আম্মু?
মামা কে এখোনো এসব ব্যাপারে কেউ কিছু বলে নাই তাই মামা কিছু জানে না।
– আমার হাত তো পুড়ে গেছে ব্যান্ডেজ করা আমি কিভাবে খাবো?
– কিভাবে পুড়লো আম্নু আমাকে জানাও নাই কেন?
– কি শুর্য করলা চুপচাপ খাও পড়ে সব শুইনো। আর সায়ান তোর কান্ডজ্ঞান নাই পাশে বসে আছোস মেয়েটার রুটি গুলো ছিড়ে খাইয়ে দিতে পারোস না নিজে একা একা গিলছিস।
মামির কথা শুনে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে সায়ান ভাই। সবার সামনে যে মামি এভাবে তা কে বলবে বেচারা ভাবতেও পারে নাই। আমার হাসি পাচ্ছে সাইডে দেখি আয়ানা আপু মিটিমিটি হাসছে। লামিসা আপুটা রেগে যাচ্ছে।
– আজব খালামনি এতো বড় মেয়ে কে সায়ান কেনো খাইয়ে দিবে তোমার ও কি বুদ্ধি লোভ পেয়েছে।
লামিসা আপুর কথায় আয়ানা আপু এবার তাকে বলে।
– তোমার কি বুদ্ধি আছে লামিসা আপু বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলে এটা জানো না। আর তোমার সমস্যা কই আমার পিচ্চি সায়ুর যে হাতে ব্যাথা তাই ভাইয়া খাইয়ে দিবে।
উনাদের কথার মাঝে সায়ান ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো আমিই চুপচাপ খাচ্ছি। আজ শুক্রবার হওয়ায় ভাইয়ার ছুটি তাই ভাইয়া আজ বাসায় থাকবে। লামিসা আপুর আর আয়ানা আপুর কথা কাটাকাটির মাঝে আমার খাওয়া শেষ। ভাইয়া উঠে রুমে চলে গেলেন আর ফিরে আসলেন আমার মেডিছিন নিয়ে। আমাকে মেডিছিন খাওয়ানো হলে সে মামিকে বলে।
– আম্মু গরম পানি করে একটা বলে গরম পানি আরেকটায় ঠান্ডা পানি দুইটা নিয়ে তুমি আর আয়ানা আমার রুমে আসো। তুমি আর আয়ানা বাদে যেনো অন্যকেউ ভুলেও আমার রুমে না যায়। আর তুই টেলি আমার সাথে আয়।
ভাইয়া কাকে টেলি বলে ডাকলো বুঝতে পারলাম না তাই হা করে তাকিয়ে আছি উনার যাওয়ার দিকে।আয়ানা আপু এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে আর বলে।
– ভাইয়া তোকে টেলি বলেছে রে সায়ু আর তুই হা করে অইভাবে তাকিয়ে আছিস।
– আমাকে বলছে আমাকে কোনদিক দিয়ে টেলি লাগে। তোমার ভাই যে দিন দিন বুড়া হয়ে যাচ্ছে আর বুদ্ধি কমে যাচ্ছ৩ বুঝো না।
– এই মেয়ে এই সায়ান কে বুরো কেনো বলছো হ্যাঁ কি সুন্দর হ্যান্ডসাম দেখো। স্টুপিড গার্ল।
– লামিসা ওর নাম আছে সায়ারা হয় নামে ডাকবি আর নাহয় ডাকবি না। তুই সায়ারা থেকে অনেক বড় বয়সে ওকে স্নেহ আর ভালোবাসা দিলে ও তোকে রিটার্ন সম্মান আর শ্রদ্ধা দিবে।
সায়ান ভাইয়া দরজা থেকে চেচিয়ে কথাগুলো বললো। আমার কি তাতে আমি উঠে ভাইয়ার রুমে চলে গেলাম। ভাইয়া আমার হাত ড্রেসিং করবে আমি তা বুঝতে পেরেছি৷
..চলবে?