অনুভুতির মায়ার খেলা পর্ব ১০

0
528

#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_(১০)
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।

– আপনার মাথা ঠিক আমাকে এভাবে তু* লে নিয়ে আসার পড়ে বিয়ের কথা কিভাবে বলছেন?
– আমি সম্পূর্ন ঠিক আছি আমি তোকে বিয়ে করতে চাই আমি ভালোবাসি তোকে।
– আপনি আপনার মজা আপনি অব্দি সীমাবদ্ধ রাখুন, আর আপনি ভালোবাসেন হাসালেন।
– তোর দেখি অনেক সাহস বেরে গেছে সায়ারা সায়ান আসার পড়ে।
– সাহস দেখানোর মতো আমিতো কিছু করি নাই আর এসব মজা বাদ দিন আমাকে যেতে দিন।
– যেতে দেওয়ার জন্য তো আমি আনি নাই তোকে। আজ একটু পড়ে তোর আর আমার বিয়ে। আমি তোকে ভালোবাসি এটাই সত্য।
– ভালোবাসার অর্থ না জেনেও মানুষ নিজেদের চাহিদার জন্য ভালোবাসি শব্দটা কি সুন্দর ব্যাবহার করে তাই না সিয়াম ভাই?

-তুই ভুল বুঝছিস আমাকে সায়ারা আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি অনেক বেশি।

-আচ্ছা ভালোবাসা মানেই কি আমার সাথে রাত কাটানো?

-ভুল বুঝিস না আমাকে সায়ু?

-সিয়াম ভাই তুমি না আয়ানা আপুকে ভালোবাসো?

-না রে আমি শুধু তোকে ভালোবাসি আয়ানা শুধু আমার প্রয়োজন।

-একজন ভালোবাসা তো অন্যজন প্রয়োজন এ কেমন ভালোবাসা সিয়াম ভাই?

– সায়ু প্লিজ তোকে আমি বুঝাতে পারবো না তবে আমার দুইজন কেই চাই,যেমন তোর জন্য আয়ানা কে ছাড়বো না আর না আয়ানার জন্য তোকে।

– প্লিজ এভাবে আর কত নিচে নামবেন আপনার অই মুখে আমার নাম নিবেন না,আমার সায়ারা সায়ু না। আর আপনি না আমার যোগ্য আর না আয়ানা আপুর। আমি দোয়া করি আপনার মতো মানুষ যেনো আয়ানা আপুর আশেপাশেও না ঘেষতে পারে।

-এতোক্ষণ ধরে আমি খুব ভালোভাবে তোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু আমি ভুল তুই ভালোভাবে কথা বলার যোগ্য না।

– হাহ বেরিয়ে আসলেন না নিজের আসোল মুখোশে।

সিয়াম আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ সায়ারা কে বাধতে লাগলো৷ সায়ারা কোনো কথা সে কানে নিচ্ছে না। আজ যেভাবেই হোক তাকে সায়ারাকে বিয়ে করতেই হবে। ফোন বের করে তার মা কে বললো কাজি নিয়ে তাদের পুরান বাড়ি চলে আসতে। সিয়ামের মা আলমারি থেকে প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র বের করে বাড়ি তালা বের হয়ে গেলো। সিয়াম গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় তাকে সিএনজি করেই যেতে হবে৷ ফুপিকে এভাবে তারাহুরো করে বের হতে দেখে সায়ান ও নিজের গাড়িতে উঠে ফলো করতে লাগলো।সায়ান ফোন বের করে পুলিশ কে কল দিলো।

– হ্যালো স্যার আমি সায়ান মাহমুদ বলছি আমি আমার লোকেশন আপনাদের সেন্ড করছি আপনারা আমাকে ফলো করে আমার সাথে আসুন। আমি সায়ারার কাছে যাচ্ছি ওর খোঁজ পেয়েছি আমি।

– কি বলছেন ডক্টর মাহমুদ আপনি জলদি লোকেশন সেন্ড করুন আমরা আসছি।

সায়ান ফোন কেটে দিয়ে আবারো ফলো করতে লাগলো, ফুপি কাজি অফিসের সামনে নেমে ভিতরে গিয়ে কাকে নিয়ে আবার রওনা দিলো। ব্যাপার গুলা সায়ানের খুব সন্দেহ লাগছে। ফুপি তাদের পুরান বাড়িতে গিয়ে থামলো। সায়ান ওখান থেকে অনেক টা দূরেই তার গাড়ি থামিয়ে চুপিচুপি গেলো। সিয়াম বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওর মা কে জরিয়ে ধরলো।

– আম্মু তুমি গিয়ে সায়ারার পাশে বসো আর বুঝাও না বুঝলেও সমস্যা নাই আমাকেই ওর আজকে বিয়ে করতে হবে। আচ্ছা শুনো আমি একটু আসছি বুঝলা তুমি যাও।

– কই যাস তুই তাড়াতাড়ি আসিস ফিরে সাথে ২ জন লোক নিয়ে আসিস শাক্ষি লাগবে।
– আচ্ছা যাও।

সিয়াম যাওয়ার পড়ে ওর মা আর কাজি সাহেব বাড়িতে ঢুকলেন।সায়ান আবারো তাদের পিছে গিয়ে দরজার আড়ালে দাড়ালো। সায়ারাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে ফুপিকে দেখে তার চোখ দুটি জ্বলজ্বল করে উঠলো। সিয়ামের মা সায়ারার মুখের বাধন খুলে দিলো।

– খালা আমাকে বাঁচান সিয়াম ভাইয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে উনি আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন।

– এতো ঢং করার কি আছে তোর ভাগ্য ভালো আমার ছেলে তোকে বিয়ে করতে চায়। বিয়ে তো তোর সিয়ামের সাথেই হবে আর যাইহোক। নে এই পেপারে সাইন করে দে।

– এটা কিসের কাগজ খালা?
– এতো প্রশ্ন করোস কেন সাইন করে দিতে বলছি তুই দিবি।
– আমাকে যদি এটা কিসের কাগজপত্র নাই বলেন তাহলে আমি কেনো এখানে সাইন করবো?
– বাহ বাজ ২ দিনে এতোটা সাহস কিভাবে এলো তোর সিয়াম তো ঠিকি বলেছে তাহলে। শুন এটা সম্পত্তির কাগজ তোর মা তোর নামে আমার বাবার সমস্ত সম্পদ লিখে দিয়েছে তা এখন তুই নিজের ইচ্ছায় আমার নামে লিখে দিচ্ছিস।

খালার কথায় আমি ও অবাক হয়ে যাই প্রচুর সম্পদ তাও নানাভাইয়ের সব আমার নামে আম্মু লিখে দিছে। দরজার আড়ালে থাকা সায়ান ও এসব কথায় প্রচন্ড অবাক হয়ে যায়। সায়ান দেড়ি না করে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে রেকর্ড করা শুরু করে।

সায়ারা আশ্চর্য হয়ে তার খালার দিকে তাকিয়ে আছে কি থেকে কি হচ্ছে সব তার ভাবনার বাহিরে যাচ্ছে। ছেলে এতোক্ষন বিয়ে বিয়ে করে মাথা খাচ্ছিলো আর এখন মা আসছে সম্পত্তির দলিলে সাইন করাতে। এদের মা ছেলের মাথায় কি গন্ডগোল দেখা দিছে। ওইদিন হাসপাতালে বললো আয়ানার সাথে সিয়ামের বিয়েতে কোনো বাধা না দিতে আর আজ সিয়াম সায়ারাক্ব বিয়ে করবে ওটা তার ভাগ্য।

– খালা আমার মনে হচ্ছে আপনার ডাক্তার দেখানো উচিত মা ছলে আমাকে তুলে এনে কি মজা নিচ্ছেন। নানাভাইয়ের সম্পত্তি কিভাবে মা আমাকে লিখে দিবে।

– তোর কি মনে হয় সায়ারা আমি তোকে এভাবে এভাবেই রেখেছি? কিছু চিন্তা ভাবনা ছাড়া এতো বছর পেলে তোকে বড় করছি? আরে বলদ আমার বাবার বড় মেয়ে ছিলাম আমি অনেক আদরের ছিলাম।বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয় আমার কিন্তু আমি ভালোবাসতান সিয়ামের আব্বুকে। বিয়ের আগে আমি পালিয়ে যাওয়ায় বিয়েটা তোর মায়ের সাথে হয়। তখন থেকে আমার বাবা – মা আর আমাকে ভালবাসে না। পালিয়ে আসার পরে আমি আরো অবাক হই যা কে আমি ভালোবাসতাম যা জেনে তার প্রেমে পড়েছিলাম আসলে তার তেমন কিছুই নাই। উচ্চবিত্ত পরিবারে মানুষ হওয়া আমি যখন জানতে পারলাম আমার স্বামী বেকার অনাথ তখন আমার মাথায় কিছু আসছিলো না। ফিরে যাওয়ার ও কোনো পথ ছিলো না আমার। এরপর অনেক কষ্টে আমি দিন কাটাতাম সিয়ামের আব্বুর সাথে সিয়াম যখন হয় তখন তোর মায়ের সাথে আমার দেখা। আমাদের বড় ভাই সায়ানের আব্বু তো তখন ও বিদেশে সেটেলড ওখানেই বিয়ে করে থাকছে। এরমানে বাবার সব সম্পত্তি একা তোর মা গ্রাস করেছে এসব ভাবনা আর আমাকে ঠিক থাকতে দিলো না। আমি তোর বাবা-মায়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে কান্না কাটি করলাম আমার অবস্থা সব বললাম এতে তারা গলে গেলো। আমাকে সিয়ামের বাবা কে আবার ও ফিরত নিলো। সিয়ামের বাবার কিছু না থাকলেও তার আত্মসম্মান ছিলো তুখোর তাই বলেছে ওখানে থাকলেও সে যা আয় করে তা দিয়েই আমাদের চলতে হবে। বাবা আমাকে ক্ষমা না করলেও সিয়ামের বাবার উপর খুশি ছিলেন। এভাবেই চলতে লাগলো দিন গেলো মাস এরপর বছর। সিয়ামের তখন ১০ বছর ছিলো আর সায়ানের ১১ আর আয়ানার ৭ তখন ভাইয়া ভাবি দেশে ফিরত আসে। সব সুন্দর মতো চলছিলো আমাদের মাঝ্ব কিন্তু আমার মধ্যে চলছিলো অন্যকিছু। বিয়ের এতোগুলা বছরেও তোর মা কোনো সন্তাম জন্ম দিতে পারে নাই এতে তোর বাবার কোনো সমস্যা ছিলো না সে তোর মা কে সাপোর্ট করতো সবসময়। একদিন জানতে পারে তোর মা প্রেগন্যান্ট সবাই অনেক খুশি হলো। সায়ান ছিলো একদম শান্ত চুপচাপ ধরনের তাই সবার আদরের হয়ে উঠলো৷ সিয়াম সায়ানের পুরো উলটো ছিলো এইটুকু বয়স থেকেই বদমেজাজি বাচ্চাদের সাথে চলা মারামারি সব। তোর মায়ের অনেক প্রিয় ছিলো সায়ান খুব আদর কর‍্তো আমার যে আদরের ছিলো না তা না একমাত্র ভাইয়ের ছেলে আদর না করে আর কই যাবো। দিন যায় তোর জন্ম হয় তুই বড় হতে থাকিস আর সায়ান তুই বলতে পাগল। তোকে কোলে নিয়ে বসে থাকা খাওয়ানো এসব করতো। তুই সায়ান ভাই করে করে সারাদিন বাড়ি মাথায় তুলতি। এসবের মধ্যে আমার আসোল কাজ হচ্ছিলো না তাই ভাইয়া ভাবিকে ভুল বুঝালাম তোর কারণে সায়ানের পড়া লেখায় ক্ষতি হচ্ছে সে পড়ালেখায় অমনোযোগি। আমার কথায় ভাইয়া ভাবি একমত হওয়ায় তারা আবার রিটার্ন গেলো এব্রোড এরপর আমি আমার কাজ শুরু করলাম। ঘুরতে যাওয়ার প্লেন করে তোর মা কে নিয়ে বড় ব্রিজের উপর থেকে ধা* ক্কা মেরব ফেলে দিলাম তোর খালু এসব দেখে ফেলায় তাকেও সরাতে হলো। সব এতো সহজ ছিলো অনেক টাকা খরচ করে আমার এসব কাজ করানো লেগেছিলো। তারপর আমি তোর মায়ের হাতের লেখা নকল করে চিঠি লিখলাম তোর মা সিয়ামের বাবার হাত ধরে পালিয়েছেন। সবাই এসব শুনলো বাবা তো সব তোর মায়ের নামে আগেই লিখে দিয়েছিলো তোর মা তোর নামে দিয়েছিলো। তোর বাপ তোর মায়ের শোকে পাগল এখন কই আছে জানিনা। তোকে আমার কাছে আমি আজকের দিনের জন্য রেখেছি।

.চলবে.?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here