অনুপম ভালোবাসা পর্ব ১১

0
59

#অনুপম_ভালোবাসা(১১)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

তিন মাস পর,
রাদ সুস্থ হলে নজরাত নিজের বাসায় ফিরে আসে।রাদ এর পরীক্ষার মুহূর্তে সে থাকলে রাদ পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না তাই ফিরে আসা। নজরাত চলে আসার দিন রাদ তাকে একদম ছাড়তে চাইছিল না। বেশ কিছুক্ষণ ঝাপটে ধরে বসে ছিল। আর বলেছিল,
__” এই কদিনে আমি তোমাতে আসক্ত হয়ে গিয়েছি প্রিয়। তুমি থেকে গেলে হয় না?
নজরাত কঠোর মুখভঙ্গি করে বলেছিল,
__” না হয় না।

রাদ মন খারাপ করে থাকলেও আর কিছু বলেনি।
নিজেই নজরাতকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়। তারপর পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখন আর আগের মত বন্ধুদের সাথে আড্ডা জামাতে পারেনা। ভাইয়ের মৃত্যুতে অনেকটা নীরব হয়ে যায় রাদ।

রাসেল এর ব‌উ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। লিপি বেগম তাকে নিয়ে এসেছেন। ছেলের মৃ ত্যুর পর এখন আর কোন রাগ নেই তার। হয়তো রাসেলের ব‌উ চৈতির সাথে পুরোপুরি স্বাভাবিক আচরণ করতে পারেন না তবে সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ।
তাছাড়া জুঁই বা জান্নাত কে দিয়ে সময় মতো খাবার দাবার পৌঁছে দেন চৈতির ঘরে। চৈতি সারাক্ষণ মনমরা হয়ে বসে থাকে নিজের ঘরে। বাহিরের কিছু নিয়ে তার কোন আগ্রহ জাগে না। সারাক্ষণ ঘরবন্দি হয়ে থাকতেই ভালো লাগে যেন।

রাসেল দের বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে একটা বাড়িতে চৈতির বাবা-মা ভাড়া থাকতেন। রাসেল ওই পথ দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করত। মাঝে মাঝেই চৈতিকে দেখতে পেত আর সেখান থেকেই ভালোলাগা তৈরি হয় তারপর দুজনের মধ্যে প্রেম।
লিপি বেগম কে একদিন জানিয়েছিল তাদের প্রেমের কথা। কিন্তু লিপি বেগম বলেছিলেন,
__” এসব হারাম সম্পর্ক আমি কিছুতেই মেনে নিব না। আমার পছন্দ করা মেয়েকে তোকে বিয়ে করতে হবে।

এদিকে চৈতির প্রচুর বিয়ের ঘর আসছিল। রাসেল একথা জানার পর সিদ্ধান্ত নেয় তারা পালিয়ে বিয়ে করবে। অতঃপর তাই করলো। বিয়ে করার পর লিপি বেগম মেনে না নিলে দুটো রুমের ছোট একটা বাসা ভাড়া করে তাদের ছোট্ট সংসার শুরু করে। খুবই আনন্দের দিন পান করছিল তারা। তার মধ্যে নতুন অতিথি এর আগমনী বার্তা সংসারে সুখ দ্বিগুণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বেশিদিন তা সইলো না চৈতির কপালে। রাসেলের মৃ ত্যু যেন দুমড়ে মুছে শেষ করে দিল চৈতির সুখের সংসার।
তার মতে, যেখানে আমার স্বামীকে হারাতে হয় এমন স্বাধীন দেশ তো আমি চাই না।
.
.
নজরাত আবার ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করেছে। এখন আর আগের মতো রাদ কে কোথাও দেখতে পায় না সে। আগে বিরক্ত লাগতো কিন্তু এখন দেখতে পেলে ভালো লাগতো। সবার আড়ালে লুকিয়ে তাকিয়ে থাকতো। কি আর করার সময় পাল্টায় সাথে মুহূর্ত গুলোও।

রাদ পড়া শেষ করে রাতে কল করে প্রতিদিন তাছাড়া আর তাদের মধ্যে কথা হয় না।
আজকে নজরাত কিছুতেই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে পারছে না, জোর করে সজাগ থাকলে ভীষণ মাথা ব্যথা করে তার। তাই ঘুমিয়ে পড়লো। সেই ঘুম রাত দুইটায় একটা স্বপ্ন দেখে ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠেই সে ব্যালকনিতে চলে গেল নিচে রাস্তায় কাউকে খুঁজলো। স্বপ্নে দেখেছে রাদ এসেছে, এখন ভালো করে খুঁজে বুঝলো এটা তার স্বপ্ন ছিল। রুমে ফিরে এসে কিছুক্ষণ বসে রইল। এখন ক্ষিদা অনুভব হচ্ছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন।

বাথরুম থেকে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে বসলো। ফোন ইউজ করছে আর বিস্কুট খাচ্ছে।
অনলাইনে গিয়ে দেখলো রাদ বেশ কয়েকবার কল করেছিল। নজরাত কল রিসিভ করেনি বলে মেসেজ দেয়, “ব‌উ ঘুমিয়ে পড়েছো”?
মেসেজ টা দেখে নজরাত এর খুব আফসোস হচ্ছে কেন সে ঘুমিয়ে গেল?
এখনি রিপ্লাই দিল, হুম ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হতে না হতেই কল আসে। কলের শব্দে নজরাত কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। নজরাত বুঝতে পারেনি রাদ জেগে আছে তার উপর নিস্তব্ধ রুমে হঠাৎ কলে ভয় চমকে উঠে। নিজেকে সামলে রুমের লাইট অন করে কল রিসিভ করে। রাদ বালিশের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নজরাত বলল,
__” আপনি কি ঘুমান নাই এখনো?
__” না।
__” কেন? রাত জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে না?
__” আমার বউ এর সাথে কথা হয়নি বলে ঘুম আসছিল না। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে, খাবার খেয়েছিলে?
__” ঘুমের জন্য খাবার খাওয়ার সময় ছিল না। তাই এখন বিস্কুট খাচ্ছি।
__” তুমি এমন ঘুম কাতুরে জানতাম না তো। এদিকে তোমার ঘুমের জন্য আমার ঘুমের আড়াইটা বেজে গেল। এই দায় এখন কে নিবে বল? তোমাকে শাস্তি দেওয়া উচিৎ।
__” ইশ আসছে। আমি কি আপনাকে নিষেধ করেছি ঘুমানোর জন্য? আপনি নিজ থেকেই ঘুমান নাই।
__” তোমার মত লবণ ছাড়া তরকারি তার কি বুঝবে?
__” হইছে। আমি তরকারিতে লবণ দিয়েই খাই। আপনার মত মুঠো করে লবণ খাই না। আসছে লবণখোর কোথাকার। আমি যখন পার্মানেন্টলি আপনাদের বাসায় আসবো তখন লবণ ছাড়া তরকারি রান্না করে আপনাকে খাওয়াবো। লবণ স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা আপনি জানেন?

রাদ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলল,
__” অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। এর কারণ হল, সোডিয়াম-জাতীয় খাবার রক্তের চাপ বাড়ায়। ফলে ধনীর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয়। সেইসঙ্গে এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার ঝুঁকি।

নজরাত বিরক্ত মুখে বলল,
__” এসব জানার পরেও কি করে পারেন এতো লবণ খেতে?
__” আমি অনেক পানি খাই সো লবণ আর শরীরে থাকে না ওটা ড্রেন হয়ে যায়।
__” আপনার এই কচুর মাথার যুক্তি আপনার কাছেই রাখেন। ঘুমাবেন কখন? আমি ঘুমাবো।

নজরাত যে রে গে গেল এটা বুঝতে পারলো রাদ। তাই বলল,
__” আগামীকাল দেখা করবে? তাহলে আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব।
__” ঠিক আছে। এখন রাখছি আপনি ঘুমান।
__” ঠিক আছে, আল্লাহ হাফেজ।
__” আল্লাহ হাফেজ।
_________________

এতদিন ব্যাপারটা আমলে না নিলেও এখন লিপি বেগমের কাছে চৈতির এভাবে ঘরবন্দি হওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না। মেয়েটা এভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে তাই তিনি চৈতির ঘরে গেলেন।
নাস্তা টেবিলেই পরে আছে। এতক্ষণে মনে হয় সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। মেয়েটা না খেয়ে জানলার গ্রিলে ধরে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। লিপি বেগমের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠলো। সেও সন্তান হারিয়েছে কিন্তু তার বাকি সন্তানদের দিকে তাকিয়ে হয়তো কিছুটা হলেও কষ্ট ভুলে থাকতে পারেন কিন্তু এই মেয়েটা তো কোন কিছু বিনিময়ে সেটা পারে না। তাদের উচিৎ সবাই মিলে মেয়েটাকে সময় দেওয়া যেন খারাপ চিন্তা গুলো মনের মধ্যে না আসতে পারে।

লিপি বেগম দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। চৈতি সামনে ঘুরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি বললেন,
__” খাবারটা খাওনি কেন? ঠান্ডা হয়ে গেল তো।
__” খেতে ইচ্ছা করছিল না।
__” সকালের ওষুধ আছে না?
__” জ্বি আছে।
__” আমি খাবারটা গরম পরে আনছি খেয়ে ওষুধ খেয়েও।
__” গরম করতে হবে না এমনিতেই খেয়ে নিতে পারব।

ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভুনা ঠান্ডা খেতে ভালো লাগে না। তাই লিপি বেগম শুনলেন না ওভেন থেকে গরম করে আনলেন। বললেন,
__” আমি খাইয়ে দেই?

এ কথা শুনে চৈতির চোখ পানিতে চিকচিক করছে।আজ রাসেল এই দৃশ্য দেখতে পেলে ভীষণ খুশি হত।
লিপি বেগম চৈতিকে খাইয়ে দুপুরের রান্নার কাজ শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর চৈতি রান্না ঘরে এসে বলল,
__” দিন আমি সবজি গুলো কে/টে দেই?

কাজের মধ্যে থাকলেও মেয়েটা একটু স্বাভাবিক হতে পারবে তাই লিপি বেগম নিষেধ করলেন না।

রাদ নাস্তা করে নজরাত কে নিয়ে একটা লেকে নিয়ে যায়। বেঞ্চে বসে রাদ বলল,
__” দুদিন পর পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে আর আমাদের দেখা হচ্ছেনা। আচ্ছা তোমার কি খারাপ লাগবে?
__” আমি অপেক্ষার প্রহর গুনবো। যেদিন পরীক্ষা শেষ হবে সেদিন আমাদের দেখা হবে ইনশা আল্লাহ।
__” ইনশা আল্লাহ।
শুনো তোমাকে একটা ছেলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করার আছে!
__” কোন ছেলে?…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here